ঢাকা, মঙ্গলবার ১৭, সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:০৪:১৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ইউরো সহায়তা দেবে জার্মানি ইরানে বাড়ছে চিকিৎসকদের আত্মহত্যা, কিন্তু কেন? ঢাবিতে গণবিয়ের আয়োজনে অনুমতি নেই কর্তৃপক্ষের আশুলিয়ায় সংঘর্ষ: ১ নারী শ্রমিক নিহত, আহত ৩ চরফ্যাশনে গলায় ফাঁস দিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা চিকিৎসকদের ৯৯ শতাংশ দাবি মেনে নিয়েছেন মমতা বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না ডিম-মুরগি ৭ দিনের রিমান্ডে শ্যামল দত্ত,মোজাম্মেল বাবু ও শাহরিয়ার কবির

খুলনায় নারী ফুটবল খেলোয়াড়দের ওপর হামলায় যা ঘটেছিল

খেলাধুলা ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:০২ পিএম, ৩১ জুলাই ২০২৩ সোমবার

হাসপাতালে ফুটবলার মঙ্গলী বাগচী

হাসপাতালে ফুটবলার মঙ্গলী বাগচী

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলায় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষে কয়েকজন নারী খেলোয়াড়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত একজন খেলোয়াড় এখনো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এই ঘটনায় চারজনকে অভিযুক্ত করে মামলা হয়েছে, একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বটিয়াঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শওকত কবির বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, শনিবার সন্ধ্যার পর ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পরদিন অর্থাৎ রোববার এ ঘটনায় একটি মামলা হয়। এরপর রোববারই পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে।

হামলার শিকার ফুটবলারদের একজন, সাদিয়া নাসরিন, যিনি মামলাটি দায়ের করেছেন, তিনি বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, সেই পরিবারের লোকজন এখন ফোন করে তাকে হুমকি দিচ্ছে।

কী ঘটেছিল সেদিন?
পুলিশ বলছে, বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা এলাকার একটি মাঠে মেয়েদের ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনার সূত্রপাত।

তেঁতুলতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বেশ কয়েক বছর ধরে সুপার কুইন ফুটবল অ্যাকাডেমি নামে মেয়েদের একটি ফুটবল ক্লাব পরিচালনা করছেন ওই স্কুলের শিক্ষক এবং স্থানীয় কয়েকজন ক্রীড়া সংগঠক।

ক্লাবে সেখানকার স্কুল ও কলেজে পড়ুয়া অনেক মেয়ে নিয়মিত ফুটবল প্র্যাকটিস করে থাকেন।

সাদিয়া নাসরিন এই ক্লাবে ফুটবলার হিসেবে অনুশীলন করছেন বেশ কয়েকবছর বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন। তিনি এখন স্থানীয় একটি কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করেন।

সাদিয়া নাসরিন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, গত বৃহস্পতিবার তিনি যখন ফুটবল খেলছিলেন তখন তার একটি ছবি তোলেন মাঠের সাথে লাগোয়া একটি বাড়িতে থাকা এক তরুণী।

সেদিন খেলা শেষে বাসায় ফিরে সাদিয়া জানতে পারেন ঐ তরুণী সাদিয়ার মা এবং আত্মীয়স্বজনকে মাঠে তোলা তার ছবি পাঠিয়ে তার "পোশাক নিয়ে কটুক্তি করেছে"।

এরপর শনিবার বিকেলে সাদিয়া ঐ তরুণীর বাসায় গিয়ে তার ছবি তোলা ও তা পাঠানোর কারণ জানতে চান। তখন ঐ তরুণী ও তার মা সাদিয়ার সাথে দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ করেন সাদিয়া নাসরিন।

“তার মা আমাকে বলছে যে ‘তুমি হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলবা আর আমরা সেটা নিয়ে কিছু বলতে পারবো না!", বিবিসি বাংলাকে বলেন সাদিয়া নাসরিন।

সাদিয়া জানান তাদের কথোপকথন এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে গড়ায়। তিনি বলেন ঐ তরুণী ও তার মা তাকে মারধর করেন।

সাদিয়া নাসরিন আরও বলেন, এরপর নিজের বাড়িতে ফিরে গিয়ে তিনি তার মাকে সব ঘটনা জানান।

“সন্ধ্যার পর আমার মা, নানি ও বন্ধু মঙ্গলী তাদের (ওই তরুণীর) বাসায় যাই। আমার মা তার বাবাকে জিজ্ঞেস করে যে আমাকে কেন মারধর করা হল,” বলছিলেন সাদিয়া।

এ সময় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ঐ তরুণীর মা সাদিয়ার মা’কে আঘাত করেন বলে অভিযোগ সাদিয়ার।

সাদিয়ার বন্ধু মঙ্গলী বাগচী বাধা দিতে গেলে তাকেও আঘাত করা হয় এবং পরে ঐ তরুণীর বাবা লোহার রড দিয়ে মঙ্গলীর মাথায় আঘাত করেন বলে অভিযোগ করেন সাদিয়া নাসরিন।

ওই রাতে লোহার রড দিয়ে আঘাত করার পর মঙ্গলী অচেতন হয়ে যায় এবং এরপর ওই তরুণীর বাড়ির লোকজন মঙ্গলীকে বাড়ির ভেতর নিয়ে বেঁধে রাখে বলে দাবি করেন সাদিয়া নাসরিন।

এরপর পরিস্থিতি দেখে সাদিয়া ও তার মা ফুটবল ক্লাবের সভাপতিকে ঘটনাটি জানান এবং পরবর্তীতে পুলিশের শরণাপন্ন হন।

পুলিশের কাছে খবর দেয়ার কিছুক্ষণ পরই মঙ্গলীকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং তাকে বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিতে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান সাদিয়া।

মঙ্গলী বাগচী এখনো বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।

বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কমকর্তা মিজানুর রহমান জানিয়েছেন মঙ্গলী এখন আশঙ্কামুক্ত অবস্থায় রয়েছেন।

পুলিশ কী বলছে?
বটিয়াঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শওকত কবির বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন ঘটনার পরদিন সাদিয়া নাসরিন ঐ তরুণী, তার মা, বাবা ও ভাইকে আসামি করে বটিয়াঘাটা থানায় মামলা করেছেন।

“মামলার এজাহারে সাদিয়া উল্লেখ করেছে যে অনুমতি না নিয়ে তার ছবি তোলার বিষয়ে অভিযুক্তের কাছে জানতে চাইলে তাকে মারধর করা হয়। পরে এই বিষয়ে তার মা ও বন্ধুকে সাথে নিয়ে অভিযুক্তের বাড়িতে গিয়ে আবার জিজ্ঞাসা করলে তাকে আবার মারধর করা হয় ও ‘হত্যার উদ্দেশ্যে’ তার বন্ধুকে আঘাত করা হয়”, বলছিলেন মি. কবির।

পুলিশ এ পর্যন্ত একজনকে গ্রেফতার করেছে।

অভিযুক্ত বাকি তিন আসামি পলাতক রয়েছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানান মি. কবির।

পুলিশ জানিয়েছে পলাতক আসামিরা মামলার বাদি সাদিয়া ও তার বন্ধুদের হুমকি দিচ্ছে বলে থানায় অভিযোগ করেছেন তারা। সাদিয়া ও তার বন্ধুদের নিরাপত্তার বিষয়টির উপরও পুলিশ নজরে রাখছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানান শওকত কবির।

বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত তরুণীর পরিবারের বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করে বিবিসি, কিন্তু তাদের ফোন করে উত্তর পাওয়া যায়নি।

‘হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলিস, লজ্জা-শরম নাই!’
মঙ্গলী বাগচীর সাথে বিবিসি কথা বলেছে। তিনি বলেন, "ওই দিন কথা কাটাকাটির সময় তারা (অভিযুক্ত তরুণীর পরিবারের সদস্যরা) বারবার বলছিল যে "হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলিস, লজ্জা-শরম নাই। তাছাড়া তারা আমার ধর্ম তুলেও গালাগাল করে।”

ঐ তরুণীর পরিবারের সাথে আগে থেকে সাদিয়া বা তার পরিবারের কোনো বিরোধ ছিল না বলে জানান মঙ্গলী বাগচী।

তিনি বলেন, তাদের গ্রামের মানুষ সাধারণত মেয়েদের ফুটবল খেলা নিয়ে কখনো বাধা দেয়নি, বরং সহযোগিতা করেছে।

“তবে গ্রামে কিছু মানুষ মেয়েদের খেলার বিষয়টি পছন্দ করে না। তারা কখনো সুযোগ পেলেই আমাদের কটু কথা শোনাতো,” বলছিলেন মঙ্গলী।

সাদিয়া নাসরিনও বলেছেন তাদের গ্রামের মানুষ কখনো মেয়েদের ফুটবল খেলায় বাধা দেয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে নারীদের খেলাধুলার বিরোধিতা করে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার নজির বিরল নয়।

দুই হাজার আঠারো সালে কুড়িগ্রামে ইসলামী আন্দোলন নামের একটি দলের বিরোধিতার মুখে বন্ধ করে দিতে হয় নারীদের একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট।

সেসময় তারা দাবি করেছিল, ফুটবল খেলায় অংশ নেয়া মেয়েদের পোশাক "শালীন নয়"।

কয়েক বছর আগে হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলার কারণে জাতীয় দলের এক নারী ফুটবলারকে বাসে হেনস্থা হতে হয়েছিল।

এরপর একজন নারী ফুটবলারের বাবাকে নিজের এলাকায় মারধর করা হয়, কারণ তার মেয়ে হাফপ্যান্ট পরে মাঠে ফুটবল খেলে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা