ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:২২:০৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

ডলি আনোয়ার: প্রতিভাবান টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৪৫ পিএম, ৩ জুলাই ২০২২ রবিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

সত্তর দশকের জনপ্রিয় ও প্রতিভাবান টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ডলি আনোয়ার। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম টেলিভিশন ড্রামা ‘একতলা দোতলা’য় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ডলি আনোয়ারের অভিনয়জীবন শুরু হয়। গত শতাব্দীর আশির দশকে ‘সাতদিন’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন তিনি। সূর্য দীঘল বাড়ী'র জয়গুন! আবু ইসহাকের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’র জয়গুন নামের একজন সংগ্রামী নারী চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ডলি আনোয়ারের চলচ্চিত্রযাত্রা শুরু হয় ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ দিয়ে। ছবির প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি।

ডলি আনোয়ার ১৯৪৮ সালের ১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন যশোরে। তার পিতা ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং মাতা ড. নীলিমা ইব্রাহিম। ডলি আনোয়ারের আসল নাম পিয়ারা ইব্রাহিম হলেও অভিনয় জগতে তিনি ডলি আনোয়ার নামেই পরিচিতি। ডলি আনোয়ার সত্তরের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। তবে তার আগেই তিনি অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। দক্ষ অভিনয়ে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন অনন্যা হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের আগেই ডলি বেতার ও টিভিতে অভিনয় করে একজন অসাধারণ শিল্পীর মর্যাদা লাভ করেন। দুয়ে দুয়ে চার, চিঠি রোজ রোজ ও জোনাকি জ্বলে প্রভৃতি নাটক ছাড়াও ‘সোনার শেকল’, ‘সুখের অপর নাম’, ‘আর এক বসন্ত’, ‘সূর্যাস্তের সমুদ্র অনেক দূর’ ‘বকুলতলা কতদূর’ ইত্যাদি ধারাবাহিকের অভিনয় করেন তিনি। ঢাকার মঞ্চনাটকের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন ১৩ বছর বয়স থেকে। সিনেমার পর্দায় খুব বেশি কাজ করেননি ডলি আনোয়ার। তবে যে’কটি সিনেমায় তিনি কাজ করেছেন, সেগুলো কালজয়ী হয়ে আছে। তার অভিনীত অন্যতম সিনেমা হচ্ছে ‘সুর্য দীঘল বাড়ি’, ‘দহন’ ও ‘হুলিয়া’। ডলি আনোয়ার ১৯৭৯ সালে মসিহউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলী পরিচালিত সূর্য দীঘল বাড়ী চলচ্চিত্রে জয়গুন চরিত্রে অভিনয় করেন। এটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ছবি। এতে আরও অভিনয় করে রওশন জামিল, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। এ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি সেরা অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ‘সুর্য দীঘল বাড়ি সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

তার দ্বিতীয় ছবি দহন। ১৯৮৬ সালে অভিনয় করেন শেখ নিয়ামত আলী রচিত ও পরিচালিত রাষ্ট্রীয় অনুদানে নির্মিত চলচ্চিত্র দহন-এ। মধ্যবিত্তদের টানাপোড়নের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এ চলচ্চিত্রে। ছায়াছবিটির অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেন বুলবুল আহমেদ, ববিতা, হুমায়ুন ফরীদি, আসাদুজ্জামান নূরসহ আরও অনেকে। তার তৃতীয় ও শেষ ছবি হুলিয়া। ডলি আনোয়ার অভিনীত হুলিয়া চলচ্চিত্রটি ১৯৮৯ সালে মুক্তি পায়। তিনি চাইলেই হয়ত অনেক ছবিতে কাজ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি বেছে বেছে তিনটি ছবি করেছেন। তিনি যেহেতু সিরিয়াস অভিনেত্রী ছিলেন, নিজের শ্রম এবং নিষ্ঠা দিয়ে ছবি গুলোকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

মসিহউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলী নির্মিত ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’-তে অভিনয়ের জন্য ১৯৭৯ সালে তিনি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নারী অভিনয়শিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ছাড়াও তিনি চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির পুরস্কার ও ফটোগ্রাফিতে জাতিসংঘের ইউনেস্কো পুরস্কার লাভ করেন ১৯৮৭ সালে।

সূর্য দীঘল বাড়ি ছায়াছবির শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক হিসেবে আনোয়ার হোসেন জাতীয় পুরস্কার পান। আনোয়ার হোসেন পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। এছাড়াও তিনি কমনওয়েলথ স্বর্ণপদকসহ আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন ৬৮টি। কিংবদন্তি আলোকচিত্রী এবং প্রখ্যাত সিনেমাটোগ্রাফার আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে 'সূর্য দীঘল বাড়ি' চলচ্চিত্র তৈরির সময় ডলির পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তারা বিয়ে করেন।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত নারীনেত্রী ও লেখক ড. নীলিমা ইব্রাহিম এবং প্রখ্যাত চিকিৎসক ও বারডেমের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিমের মেয়ে তিনি। পরিবার, সম্পদ, যশ, খ্যাতির কমতি ছিল না। তবুও ১৯৯১ সালের ৩ জুলাই মাসে ডলি আনোয়ার বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। আনোয়ার হোসেন তখন তার পাশে ছিলেন না। আত্মহত্যার পর নানা রকম গুজব শোনা যায়। বলা হয়, ডলি আনোয়ারের স্বামী আনোয়ার হোসেন তাকে তালাকনামা প্রেরণ করেন যা সহ্য করতে না পেরে ডলি আনোয়ার বিষপান করেন। এই গুজবের কোন সত্যতা প্রমাণিত হয়নি, ফলে আরও অনেকের মতই ডলি আনোয়ারের এই মৃত্যু রহস্যই থেকে যায়।