ঢাকা, শুক্রবার ২৯, মার্চ ২০২৪ ০:৪৬:৪১ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু গাজায় নিহত বেড়ে ৩২ হাজার ৪৯০ অ্যানেস্থেসিয়ার ওষুধ বদলানোর নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঈদ কেনাকাটায় ক্রেতা বাড়ছে ব্র্যান্ড শপে বাঁচানো গেল না সোনিয়াকেও, শেষ হয়ে গেল পুরো পরিবার

কচুরিপানায় ঢাকা পড়ছে কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্য

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:০১ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০২২ রবিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

পার্বত্য শহর রাঙ্গামাটিকে ঘিরে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাই হ্রদ। ৭২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে হ্রদের অবস্থান। এই হ্রদ দিয়েই জেলা শহর রাঙ্গামাটির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে অন্যান্য উপজেলার। পাশাপাশি কাপ্তাই হ্রদ পর্যটকদের কাছে আকষর্ণের মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবেও সমাদৃত। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত কচুরিপানা যেন গিলে খাচ্ছে কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্যকে। পাশাপাশি কচুরিপানার কারণে লঞ্চ চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে।

শহরের রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি ঘাট, ফিসারি ঘাট সংলগ্ন হ্রদ এলাকা, আসামবস্তি, ঝুলন্ত সেতু, সমতাঘাটসহ বেশির ভাগ এলাকায় এখন কচুরিপানাতে পূর্ণ। এতে এক দিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে কাপ্তাই হ্রদ অন্যদিকে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।

রাঙ্গামাটি টুরিস্ট বোট চালক সমিতির সিনিয়র সদস্য মো. নাছির উদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানার পরিমাণ খুব বেশি হয়ে গেছে। এতে করে আমাদের বোট নিয়ে চলাচল করতে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। কচুরিপানাগুলো আমাদের ছোট বোটগুলোর ফ্যানে আটকে গিয়ে মাঝপথেই ইঞ্জিন বিকল করে দিচ্ছে।

টুরিস্ট বোট সার্ভিস প্রোভাইডার আহমদ রশিদ বলেন, রাঙ্গামাটিতে আসা পর্যটকদের কাছে আকষর্ণের মূল কেন্দ্র হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদ। বোটে করে কাপ্তাই হ্রদে ভ্রমণ করতে আগ্রহ বেশি থাকে পর্যটকদের। কিন্তু ইদানিং হ্রদে যে পরিমাণ কচুরিপানা হয়েছে তাতে করে হ্রদ প্রায় দেখা যায় না বললেই চলে। এতে পর্যটকরা হতাশা বোধ করছেন। তাছাড়া বোটের ফ্যানে কচুরিপানা আটকে গিয়ে ইঞ্জিন নষ্ট হওয়ার মতো ঘটনা তো হরহামেশাই ঘটছে। প্রশাসন যদি কচুরিপানাগুলো অপসারণের ব্যবস্থা করে, তাহলে খুবই উপকার হয়।

 দেখা যায়, সিম্বল অব রাঙ্গামাটি খ্যাত ঝুলন্ত সেতুর নিচেও কচুরিপানার জটলা। ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক রুবেল মিয়া বলেন, রাঙ্গামাটির সৌন্দর্য হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদকে ঘিরে। সেই হ্রদে যদি কচুরিপানা জমা হয়ে থাকে, তাহলে হ্রদে আর দেখার মতো কিছুই থাকে না। ঝুলন্ত সেতুর আশপাশেও কচুরিপানার জটলা সত্যিই হতাশাজনক। পর্যটন কর্পোরেশনের এই ব্যাপারে আরও মনোযোগী হওয়া উচিত।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থা রাঙ্গামাটি জোনের চেয়ারম্যান ও রাঙ্গামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে এই কচুরিপানাগুলো নিচে নেমে এসে হ্রদে স্থির হয়ে থাকছে। জেলার ১০ উপজেলার মধ্যে সাত উপজেলার সঙ্গেই নৌপথে যাতায়াত করতে হয়। কিছু উপজেলা আছে যেখানে নৌপথ ছাড়া আর কোনো পথ নেই। কিন্তু কচুরিপানার জটে নৌপথে ট্যুরিস্ট বোটসহ ইঞ্জিনচালিত ছোট-বড় যাত্রী এবং পণ্যবাহী নৌকা চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

পরিবেশবাদী সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজের পরিচালক হেফাজত বারী সবুজ বলেন, কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানা ইদানিং মানুষের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন কচুরিপানা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে এটি ভবিষ্যতে হ্রদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। গত বছর কাইন্দারমুখ নামক স্থানে (যেখান থেকে চারটি উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের নৌপথ মিলিত হয়েছে) কচুরিপানার জন্য যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। একই বছরে কচুরিপানার জটে পর্যটকদের একটি ছোট বোট আটকে গিয়ে পরবর্তীতে জাতীয় জরুরি সেবায় ফোন করে উদ্ধার পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। যখনই কচুরিপানা সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে তখন সনাতন পদ্ধতিতে সাময়িকভাবে অপসারণ করা হলেও স্থায়ী কোনো সমাধান আজও হয়নি।

কচুরিপানা বাড়ার কারণ বলতে গিয়ে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বলেন, কচুরিপানা সাধারণত ভাসমান পানিতে জন্মায় না। যেহেতু কাপ্তাই হ্রদের পানি আবদ্ধ এবং হ্রদে এখন পানির প্রবাহ কমে গেছে, তাই উজান থেকে নেমে আসা কচুরিপানা স্থির হয়ে আছে। যদিও কচুরিপানা মাছের বংশ বৃদ্ধিতে ভালো ভূমিকা রাখে কিন্তু এটি ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেমে ব্যাঘাত ঘটায়।

কচুরিপানা অপসারণের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, কাপ্তাই হ্রদে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে মাছ রয়েছে তাই এখানে কোনো কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করা সম্ভব নয়। হ্রদ থেকে কচুরিপানা তুলে ফেলার মাধ্যমেই অপসারণ করতে হবে।

স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্পাদক ফজলে এলাহী বলেন, সাধারণত পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের মিজোরাম থেকে এই কচুরিপানার ঝাঁক উজানের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদে প্রবেশ করে। এখানকার জেলেরা মাছ আহরণের জন্য এই কচুরিপানা আটকে রেখে জাঁক সৃষ্টি করেন। সেই জাঁক দিন দিন বৃদ্ধি পায়। এক সময় যখন জাঁক ভাঙা হয় তখন এই কচুরিপানা হ্রদে ছড়িয়ে পড়ে। তখন যাতায়াতসহ নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ দিনের এই সমস্যা সমাধানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।

কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, এই বছর হ্রদে কচুরিপানার পরিমাণ আসলেই বেড়ে গেছে। কচুরিপানা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে রাঙ্গামাটির কয়েকটি ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গেও আমরা আলোচনা করছি। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু তারা আসলে খুব বেশি আগ্রহী নন। তবুও আমরা এই সমস্যা সমাধানের জন্য খুব সিরিয়াসলি ভাবছি। কিছু দিনের মধ্যে আমরা এই বিষয়ে একটি মিটিংয়েরও আয়োজন করতে যাচ্ছি।