তাঁর উচ্চতা হিমালয়কে ছাড়িয়ে যায়: শান্তা মারিয়া
শান্তা মারিয়া | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ০১:৫৭ এএম, ১৫ আগস্ট ২০২০ শনিবার
তাঁর উচ্চতা হিমালয়কে ছাড়িয়ে যায়: শান্তা মারিয়া
আমি যখন তাঁর দিকে তাকালাম তখন তাঁকে পাহাড়ের মতোই দীর্ঘ মনে হলো। এক বিশাল উচ্চতা থেকে যেন ভেসে এলো তাঁর কণ্ঠস্বর। আমি বলছি মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা।
সময়টা ১৯৭৪ সাল। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ। পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনী ও রাজাকারের দল সোনার বাংলাকে শ্মশান করে দিয়েছে ১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে। এর আগেই ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে এদেশের উপকূলীয় অঞ্চল। সে ক্ষতি পূরণের আগেই মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশ আক্ষরিক অর্থেই ‘পোড়া মাটি’ হয়ে গেছে।
সদ্য জন্ম নেয়া বাংলাদেশে তখন শিল্প কারখানা, ফসলের ভূমি সব কিছুই বিধ্বস্ত। এর মধ্যে ১৯৭৪ সালে শুরু হলো ব্যাপক খরা। বৈশ্বিকভাবেই সে বছরটি ছিল খরা এবং দুর্ভিক্ষের বছর।
সেসময় দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে। আমি তখন ছোট্ট। সাড়ে তিন কিংবা চার বছর বয়স। বিটিভিতে শিশুদের অনুষ্ঠানে কবিতা বলতাম। সবই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা। দুর্ভিক্ষের জন্য বিটিভির সব শিল্পীরা তাদের একদিনের সম্মানী বঙ্গবন্ধুর ত্রাণ তহবিলে দান করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। স্থির হলো আমরা বঙ্গভবনে গিয়ে জাতির জনকের হাতে চেক তুলে দিব। সম্ভবত বিটিভির অফিস তখন ছিল ডিআইটি ভবনে। যতদূর মনে পড়ে আমাদের সঙ্গে ছিলেন নিমা রহমান, শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, ড.শামসুজ্জামান খান এবং আরও অনেকে। আমি সম্পূর্ণ স্মৃতি থেকে বলছি। তাই যতদূর মনে আছে ততটুকুই বলবো। তিন-চার বছর বয়সের ঘটনা খুব বেশি মনে থাকার কথা নয়। তবে বিশেষ দিনের বিশেষ ঘটনা বলেই সম্ভবত মনে আছে।
শিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী ছিলাম আমি। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমার হাত দিয়ে চেকটা দেওয়া হবে এমন কথা হলো।
দুতিনটি গাড়িতে করে আমরা গেলাম বঙ্গভবনে। বঙ্গবন্ধুর কাছ পর্যন্ত পৌঁছালাম। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম। কি বিশাল লম্বা একজন মানুষ। চেকটা তাঁর হাতে তুলে দিতেই তিনি আমাকে একটি টেবিলের উপর উঠিয়ে দিলেন। আগেই শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল আমি একটি কবিতা শোনাবো। দম দেওয়া পুতুলের মতো, রবীন্দ্রনাথের ‘সোনার তরী’ আবৃত্তি করলাম। তিনি মন দিয়ে পুরোটা শুনলেন। তারপর তাঁর উদাত্ত কণ্ঠে বললেন, ‘এতদিন শুনে আসছি, আমার স্মৃতিশক্তি খুব ভালো। আমি নোটবই ছাড়া রাজনীতি করি। কিন্তু মা মণি তোমার স্মৃতিশক্তিও তো কম না দেখছি।’
তিনি দরাজ গলায় হেসে উঠলেন। বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভক্ত ছিলেন। তাই সোনার তরী আবৃত্তি শুনে সত্যিই খুব খুশি হয়েছিলেন। বললেন, ‘তুমি আমার কবিগুরুর কবিতা আমাকে শুনিয়েছ। তোমার জন্য অনেক অনেক দোয়া করি’। তিনি আমার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন। কাছাকাছি আমার মা দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমার বাবা-মা দুজনেই বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পরিচিত। বাবার রাজনৈতিক জীবনের সূত্রেই এই পরিচয়। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একই ওয়ার্ডে ছিলেন বাবা (কমরেড মুহম্মদ তকীয়ূল্লাহ)। মাকে দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তকীয়ূল্লাহ কেমন আছে?’
এখন যতবারই সেই স্মৃতির কথা ভাবি শিহরিত হই। আমার পরম সৌভাগ্য যে সেদিন তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়েছিল।
আরও একবার তাঁর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেওয়ার কথা ছিল। ১৯৭৫ সাল। আমি ইউনিভারসিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে কেজি ক্লাসে ভর্তি হয়েছি। ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে আসবেন। সেই সঙ্গে ইউনিভারসিটি ল্যাবরেটরি স্কুলও দেখে যাবেন। কারণ আমাদের স্কুলের প্রিন্সিপাল আপা ছিলেন রাজিয়া মতিন চৌধুরী। তাঁর স্বামী বিখ্যাত বিজ্ঞানী মতিন চৌধুরী, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। ইউনিভারসিটি ল্যাবরেটরি স্কুলেরই ছাত্র বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ রাসেল। তাই তিনি আমাদের স্কুলে আসবেন বলে কথা দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু আমাদের স্কুলে আসবেন। সাজ সাজ রব। কেমন করে তাঁকে অভ্যর্থনা করা হবে তা নিয়ে স্কুলের শিক্ষক ছাত্রদের জল্পনা কল্পনা, উৎসাহ উদ্দীপনার শেষ নেই।
স্থির হলো, কেজি ক্লাসের তিনটি শিশু তাঁর হাতে ফুল তুলে দিবে। এই তিনজনের মধ্যে একজন আমি। সপ্তাহখানেক ধরে রিহার্সাল চললো। মা আমার জন্য নতুন ইউনিফর্ম বানিয়ে দিলেন। আগের দিন রাতে খালি ভাবছি, না জানি কালকের দিনটিতে কত আনন্দ হবে।
১৫ আগস্ট খুব ভোরবেলায় আমার ঘুম ভেঙে গেল। এখুনি স্কুলের জন্য তৈরি হতে হবে। কিন্তু দেখি বাবা স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন। তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। ফোনে খবর পেয়েছেন তিনি। তারপরই রেডিওতে মর্মান্তিক দুঃসংবাদটি প্রচারিত হচ্ছিল। আমাদের বাড়িতে যেন শোক ও আতংকের এক বিভীষিকা।
এরপর যখন ১৫ আগস্টের ভয়ংকর ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের কথা শুনলাম আতংকে আমরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। খুনিদের প্রতি ঘৃণার অবধি ছিল না। বিশেষ করে শিশু রাসেল, নবপরিণীতা সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেসা মুজিবের হত্যাকাণ্ড ছিল ইতিহাসের নির্মমতম ঘটনা।
আমি পরে বাবার মুখে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছি। শুনেছি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তিনি যখন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বন্দী ছিলেন সেই সময়ের অসংখ্য স্মৃতি। অসংখ্য বই পড়েছি। পড়েছি তাঁর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী। পড়েছি ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটি। তাঁকে নিয়ে লিখেছি কবিতা, প্রবন্ধ, খবরের কাগজের জন্য অসংখ্য লেখা। ৭ মার্চের ভাষণ শুনে মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছি। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এই মহান নায়কের বিজয় দেখে গৌরব অনুভব করেছি।
তিনি জাতির জনক। মহান নেতা। ইতিহাসের মহান নায়ক। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।
কিন্তু আমার কাছে আজও তিনি সেই পাহাড়ের মতো উঁচু একজন মানুষ। আমি যত তাঁকে দেখি, তাঁর লেখা পড়ি, তাঁর অবদানের কথা ভাবি, এদেশের জন্য, মানুষের জন্য তাঁর ভালোবাসার কথা চিন্তা করি, যখন জাতিসংঘে তাঁর বাংলায় ভাষণ দেয়ার সেই অনন্য গৌরবের কথা স্মরণ করি আমার কাছে তিনি বিশাল থেকে বিশালতর হয়ে ওঠেন। তিনি হিমালয়কে ছাড়িয়ে যান তাঁর মহত্ব ও আত্মত্যাগে।
শান্তা মারিয়া : কবি ও সাংবাদিক।
- মরণব্যাধি জয় করে বিসিএস ক্যাডার হলেন প্রিয়াংকা
- রোববার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের
- থাইরয়েডের লক্ষণ: অবহেলা করলেই বিপদ!
- মেটার ‘ফিনিক্স’ মিক্সড রিয়েলিটি চশমার উদ্বোধন পেছাল
- প্রতি রাতে এক কোয়া রসুন খেলে কী হয়?
- খালেদা জিয়ার অবস্থা এখনও উদ্বেগজনক
- আরও পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা
- খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন, থামানো গেছে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ
- আগারগাঁওয়ে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারীসহ দগ্ধ ৬
- প্রবাসীদের নিবন্ধন ছাড়াল এক লাখ ৯৩ হাজার
- মিরপুর চিড়িয়াখানার খাঁচা থেকে বেরিয়ে গেল সিংহ
- খালেদা জিয়া জন্য জার্মানি থেকে আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
- ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ২০০
- পিঠা খেতে ঢাকা ছাড়লেন পরীমণি
- এআই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করলেন রোনালদো
- মিরপুর চিড়িয়াখানার খাঁচা থেকে বেরিয়ে গেল সিংহ
- বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে
- লিভার ভালো রাখতে যে ৩ খাবার খাবেন
- ইউএনও হলেন লাক্স সুন্দরী সোহানিয়া
- পিঠা খেতে ঢাকা ছাড়লেন পরীমণি
- খালেদা জিয়া জন্য জার্মানি থেকে আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
- কনার নতুন ছবি ঘিরে বিয়ের গুঞ্জন
- আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল
- বিশৃঙ্খলায় ডুবছে গ্রোকিপিডিয়া
- খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান
- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত
- ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’
- বন্যায় সহায়তা
বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী - নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকার ৫০ থানার ওসি বদলি
- বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে

