ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ৮:৫৫:১০ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই দেশ আরও উন্নত হতো টাইমের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা নান্দাইলে নারী শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা তীব্র গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ, বাড়ছে জ্বর-ডায়রিয়া কারাগার থেকে সরিয়ে গৃহবন্দী অবস্থায় সুচি কৃষকরাই অর্থনীতির মূল শক্তি: স্পিকার মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে জলের পাখি ডাহুক

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:২৩ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ রবিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

মাঝারি আকৃতির জলের পাখি ডাহুক। ডাহুক খুব সতর্ক পাখি। আত্মগোপনে পারদর্শী। এই পাখিটি খুব ভীরু বলেই কি এত সুন্দর?

পুকুর, খাল, জলাভূমি, বিল, নদীর পাড়ের গর্ত তাদের বসবাসের জন্য প্রিয় স্থান। তবে দ্রুত নগর বিস্তৃতির ফলে হারিয়ে যাচ্ছে সুন্দর এই পাখি।

দুই দশক আগেও মৌলভীবাজার জেলার হাওর-বাওর, খাল, বিল-ঝিল, ডোবা, নালা-দীঘির পাশের ঝোপঝাড়ে দল বেঁধে বাস করতো ডাহুক পাখি।
গ্রামাঞ্চলের পুকুর পাড়ের ঝোপঝাড়ে সন্ধ্যেবেলা ডাহুকের ডাক শোনা যেত। গভীর রাতেও ডাহুকের ডাকে অনেকের ঘুম ভাঙতো। তবে আজকাল আর ডাহুকের কণ্ঠ শোনা যায় না।

একসময় বর্ষা ও শরতে ডাহুকরা বাড়ির গৃহপালিত হাঁস মুরগির সঙ্গে বেড়াতো। এখন আর তাদের আনাগোনা দেখা যায় না। চোখে পড়ে না। ডাহুক পাখি এখন হারিয়ে যেতে শুরু করেছে।

বর্ষাকাল এদের প্রজনন ঋতু। এসময় তারা বাসা করে পানির কাছেই ঝোপঝাড়ের ভেতরে অথবা ছোট গাছের ঝোপযুক্ত ডালে। নিরাপত্তা ঠিকঠাক থাকলে মাটিতেও বাসা করে এই পাখি। ৫-৭টি ডিম পাড়ে এরা, ডিমের রং ফিঁকে হলুদ বা গোলাপি মেশানো সাদা।

ডাহুক-ডাহুকি দু’জন মিলেই ডিমে তা দেয়। বাচ্চার রং সব সময় হয় কালো। ডিম ফোটে প্রায় ২১-২৪ দিনে। আর ২৪-৩০ ঘণ্টা পরই বাচ্চারা বাসা ছাড়ে।

মাস তিনেক পরে বাচ্চারা আলাদা জীবন বেছে নেয়। প্রজননের সময় একটি পুরুষ ডাহুক অন্য একটি পুরুষ ডাহুককে সহ্য করতে পারে না। দেখলেই তারা মারামারি করে। এই পাখি লড়াকু প্রকৃতির।

ডাহুকের প্রিয় খাদ্য জলজ পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ। এছাড়াও শাপলা-পদ্ম ফুলের নরম অংশ, কচি পানিফল, জলজ শেওলা, লতাগুল্মের নরম অংশ, ধান, কাউন, ডাল, সরিষা, শামুক, কেঁচো, জোঁক, মাছ, ছোট মাছ, শাকসবজি ও ফল খেয়ে থাকে।

পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এরা বিস্তৃত, প্রায় ৮৩ লাখ ৪০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাস।

তবে বর্তমানে তাদের আবাস্থল ধ্বংস হচ্ছে। খাদ্য সংকট ও প্রজননকালীন সময়ে শিকারীদের উৎপাতসহ নানা কারণে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব এ প্রজাতির পাখি। শিকারিদের হাত থেকে শেষ পর্যন্ত রক্ষা পাচ্ছে না গভীর বনজঙ্গলে বসবাসকারী ডাহুকগুলো।

সম্প্রতি আই.ইউ.সি.এন এই প্রজাতিটিকে নুন্যতম বিপদগ্রস্থ বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।

কাওয়াদীঘি হাওর পারের পৈতুরা গ্রামের সানা মিয়া বলেন, ‘ডাহুক অনেকটা বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে দেখা যায়। ঝোপঝাড় ধ্বংসের ফলে ডাহুকের বর্তমান অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়। প্রকৃতিতে এদের নিরাপত্তা দিতে অবশ্যই এদের বাসস্থান ধ্বংস বন্ধ করতে হবে। না হলে সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন বিপন্নের লাল তালিকায় লেখা হবে ডাহুক পাখির নাম।’

রাজনগর উপজেলার বলদার সাগর দীঘির পারের সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ওই দীঘিতে এক শিকারি এসে ডাহুক ধরার ফাঁদ পেতে ছিল। বিষয়টি রাজনগর থানায় জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে খাঁচার পাখিটি নিয়ে পালিয়ে যায় শিকারি।’

বনরেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকৃতিকে সুন্দর রাখতে পাখপাখালিকে নিরাপত্তা দিতে হবে। আমরা গত নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ১৫টি ডাহুক পাখি শিকারির হাত থেকে উদ্ধার করে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যোনে অবমুক্ত করেছি। কোথাও পাখি আটকের খবর পেলে আমরা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে থাকি।’