ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ৫:১৭:০৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

নরসিংদী লটকনের রাজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৩:৩৪ পিএম, ২৩ জুলাই ২০২৩ রবিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

স্থানীয়ভাবে ‘বুগি’ নামে পরিচিত হলেও দেশের প্রায় সর্বত্রই ফলটি লটকন নামে পরিচিত। প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ দেশীয় জাতের এই ফলটি নরসিংদীতে এত বেশি জন্মে যে, মনে হয় পুরো নরসিংদী জেলা লটকনের রাজ্য।

বর্তমান সময়ে নরসিংদীর প্রায় প্রতিটি উপজেলায় কম-বেশি লটকন জন্মালেও জেলার শিবপুর, বেলাব এবং রায়পুরা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লটকন জন্মায়। এক সময় স্থানীয় লোকজন জংলি ফল বলে ডাকত অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ওষুধি গুণে ভরপুর লটকনকে। শুরুর দিকে বন-বাদাড় আর ঝোপ-ঝাড়ে জন্ম নেওয়া এ ফলের তেমন কদর না থাকলেও সময়ের ব্যবধানে এ ফলের কদর বেড়েছে গুণ থেকে বহু গুণ। যার কারণে বর্তমানে এ ফলটি দেশের চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে রফতানি হচ্ছে।
নরসিংদীতে লটকন চাষের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, প্রায় ১২০ বছর পূর্বে শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের আজকিতলা গ্রামে লটকন চাষের গোড়াপতন করেন মরহুম হাজি আব্দুল আজিজ। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে তা ছড়িয়ে পরে রায়পুরা এবং বেলাব উপজেলার লাল মাটির এলাকায়। সময়ের ব্যবধানে সম্পূর্ণ নরসিংদীতে এ লটকন বাণিজ্যিকভাবে ছাড়াও প্রায় বাড়ির আঙ্গিনাতে পারিবারিক ফলের চাহিদা মেটাতে লটকন গাছ লাগাচ্ছে।

কৃষি বিভাগের কর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী, নরসিংদীর মাটি ও আবহাওয়া লটকন চাষের জন্য বেশ উপযুক্ত। সেই সঙ্গে আর্থিক লাভের কারণে চাষিদের মধ্যে লটকন চাষে আগ্রহ বাড়ছে বহুগুণ। এছাড়াও ঝোপ ঝাড়ে লটকন ভাল জন্মায় বলেও জায়গার যথাযথ ব্যবহার হয়ে অনেক। কারণ অন্যান্য ফলগুলো ছায়া এবং ঝোপ ঝাড়ে তেমন না হলেও লটকন বেশ ভালো জন্মায়।

নরসিংদী জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র ঢাকা মেইলকে জানিয়েছে, নরসিংদীতে চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমিতে লটকনের বাগান করা হয়েছে। আর প্রতি হেক্টরে সাড়ে ১৫ টন হারে মোট ২৬ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতি কেজি লটকন ৭০ টাকা কেজি দরে প্রায় ১৮৭ কোটি টাকা বিক্রির আশা করছেন।

সরেজমিনে জানা যায়, জেলা সদর, বেলাব, শিবপুর, মনোহরদী, পলাশ, রায়পুরার আংশিক অঞ্চলে লটকন ভালো জন্মে। তবে সংখ্যার দিক থেকে বেলাব উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লটকনের বাগান রয়েছে।

চাষিরা বলেন, নরসিংদীতে বেশ কয়েক বছর ধরেই বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছ লটকন। যার কারণে আজ থেকে ২০ বছর আগেও লটকনের স্বতন্ত্র বাগান নরসিংদীতে না থাকলেও বর্তমান সময়ে আছে অনেক লটকন বাগান। শুরুর দিকে অন্যান্য ফল গাছের সঙ্গে দুই একটি গাছ লাগানো হলেও এখন জেলার প্রায় সকল এলাকায় প্রচুর পরিমাণে লটকনের বাগান দেখা যায়।

লটকনের ফলন নিয়ে কৃষি অধিদপ্তর জানায়, রোপণের তিন বছরের মধ্যে লটকন গাছে ফলন আসে। প্রতিটি গাছ ফল দেয় টানা ২০ থেকে ৩০ বছর। লটকন গাছের রোগবালাই তেমন দেখা যায় না। জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে এ লটকন ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হচ্ছে।

মনোহরদীর লটকন চাষি তোফাজ্জল হোসেন তোতা মিয়া বলেন, সাধারণত লটকন গাছে তেমন রোগ বালাই হয় না। ছত্রাকসহ ছোট খাট কিছু রোগ দেখা দিলে কীটনাশক দিলে তা সেরে যায়। যার কারণে কম খরচে লটকনে লাভ অনেক বেশি।

আজকিতলা গ্রামের লটকন চাষি লোকমান হায়দার বলেন, একটি পূর্ণবয়স্ক লটকন গাছে ৫ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। আর দিন দিন এর ফলন বাড়তেই থাকে। তবে লটকন বিক্রির জন্য বাজারে যাওয়ার খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। বাগানে এসে দূরের ক্রেতারা লটকন কিনে নিয়ে যায়।

বেলাব উপজেলার লটকন চাষি কামাল হোসেন জানান, ফল ধরার পর থেকেই পাইকারি ক্রেতারা যোগাযোগ করতে থাকে। তখন বাগানেই লটকন বিক্রি করে দেওয়া যায়। যার যলে আমাদের পরিবহন খরচের পাশাপাশি সময়ও বেঁচে যায়।

সিলেট থেকে বাগান ক্রেতা হোসেন আলী বলেন, আগে বাজার ঘুরে লটকন কিনতাম। এতে কিছু সমস্যা হতো।  এখন কয়েক বছর যাবৎ বাগান কিনে ফেলি। এতে ভালই পুষাচ্ছে।

এদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরার মরজাল, বেলাবরের বারৈচা, পলাশের রাবান ও শিবপুর উপজেলা সদরে ও যোশরে প্রত্যেক দিন বসে লটকনের পাইকারি বাজার। সকাল থেকে শুরু করে বিকেল পর্যন্ত এসব বাজারে লটকন বিক্রির ধুম পরে। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ক্রেতারা এসে এসব বাজার থেকে লটকন কিনে নিয়ে যায়। আর এদকল ক্রেতাদের হাত বদল হতে হতে নরসিংদীর লটকন চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রাণন্তে এমন কি দেশের বাহিরে।

লটকন বাগানের মালিক মনির হোসেন জানান, বাগান থেকে শুধু লটকনই নয়, লটকন চারা বিক্রি করেও আমরা ভালো পয়সা পেয়ে থাকি। ১০০ টাকা থেকে শুরু করে আকার ভেদে ৫ থেকে ৬শ টাকা দরে প্রতি লটকন চারা আমরা বিক্রি করতে পারি।

নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রশীদ বলেন, নরসিংদীর সুস্বাদু লটকন জেলাসহ দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করা হয়। তাই লটকন চাষকে আরো সম্প্রসারণ ও রফতানি বাড়াতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে স্থানীয় চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ফলন বাড়াতে উন্নত জাতের চারা উৎপাদনের প্রচেষ্টা চলছে।