ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ১:০৩:১৬ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ফের কমল স্বর্ণের দাম মক্কা ও মদিনায় তুমুল বৃষ্টির শঙ্কা খালেদার গ্যাটকো মামলায় চার্জগঠনের শুনানি পেছাল কুড়িগ্রামে তাপদাহ: বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

নারী দিবস: সহিংসতা বন্ধে নারী ও পরিবারকে নিরবতা ভাঙতে হবে

দিল মনোয়ারা মনু | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:২০ এএম, ৮ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার

দিল মনোয়ারা মনু : লেখক ও সাংবাদিক                                                                        

দিল মনোয়ারা মনু : লেখক ও সাংবাদিক                                                                        

নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের জন্য কি একই কথা আমরা বারবার বলছি? আবার সভা, সেমিনার, গোলটেবিলের আলোচনা শুনতে শুনতে কি ত্যাক্ত-বিরক্ত হচ্ছি? একই কথা বারবার শুনতে বা বলতে কারই বা ভালো লাগে। কিন্তু না বলে উপায় কি? বিশ্বজুড়ে নারী দিবস উদযাপনের প্রাক্কালে নারীর প্রতি নিয়ত ঘটে যাওয়া নির্মম সহিংসতাকে সমান গুরুত্ব না দিলে নারী উন্নয়ন-ক্ষমতায়নসহ সকল প্রক্রিয়া স্তব্ধ হয়ে যাবে।

তাই এই ইস্যুটি সমধিক গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। একই ঘটনা যদি বারবার ঘটতেই থাকে বা এর মাত্রা এবং নিমর্মতা যদি সমাজকে ক্রমাগত বিদীর্ণ করতে থাকে, নারীর অস্তিত্ব যদি হুমকির মুখে পড়ে ক্রমাগত বিপন্ন হয়ে ওঠে, তবে না বলে কি পারা যায়? যদিও জানি দীর্ঘ সময় ধরে বারবার বলেও এর তেমন কোন টেকসই প্রতিকার হচ্ছে না। 

কোন প্রাচীনকালে নারী নির্যাতনের সূত্রপাত হয়েছিল, তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। নির্যাতনের হার বৃদ্ধি এবং নিত্য নতুন ধরণ ও কৌশলের কথা বিবেচনা করলে শঙ্কিত না হয়ে পারা যায়না। কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে নির্যাতকরা শিখে নিয়েছে নানা নিপীড়ন ও নির্মমতার নানা উপায় ও কৌশল। এসিড থেকে আগ্নেয়াস্ত্র সবই প্রয়োগ করা হচ্ছে নারীর উপর। কিন্তু আমরা এও জানি নারীরা সব বাধাকে তুচ্ছ করে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে সামিল হচ্ছে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা উদ্যোগের মধ্য দিয়ে নারীরা অগ্রগতির পথে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও তারা ভূমিকা রাখছে। ভূমিকা রাখছে কৃষিতে, কলকারখানায়। পোষাক শিল্পে, সাহিত্য, বিজ্ঞান, ক্রীড়া, সাংবাদিকতা, জাতিসংঘ শান্তিমিশনে অংশগ্রহণ এবং সবশেষে পর্বতারোহনের মত চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগেও সফল হয়েছেন তারা। কিন্তু তারপরও বড় সত্য হচ্ছে সকল ক্ষেত্রে নারীরা এখনও সমানভাবে এগিয়ে আসেনি। নারীর ক্ষমতায়ন ঘটেনি সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবারসহ সকল অঙ্গনে। 

মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, আমরা আন্দোলন কর্মীরা অনেক ঘরে গিয়েছি কিন্তু সব ঘরে পারিনি। নারীর অগ্রগতির পথ অবাধ ও উন্মুক্ত করতে নারীর ক্ষমতায়নের কোন বিকল্প যে নেই তা সবাই বলছেন।

বেশ কিছুদিন আগে নেপালের কাঠমুন্ডুতে অনুষ্ঠিত নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে সম্মিলিত উদ্যোগ শীর্ষক দুইদিন ব্যাপী এক সেমিনারে দক্ষিণ এশিয়ার নারী নেত্রীরা নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তারা সহিংসতা বন্ধে নীরবতা ভেঙ্গে নারীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। 

যদিও আমরা জানি নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে বাংলাদেশ সরকার নানা ধরণের আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন এবং আন্তর্জাতিক নীতিমালায় স্বাক্ষর করেছে, কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে আইন প্রণয়ন করে তার সঠিক প্রয়োগের অভাবে এই সহিংসতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে আগামী জেন্ডার বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবী উঠেছে। 

কমনওয়েলথ সচিবালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নারী উদ্যোক্তারা ৭০০ মিলিয়ন ডলার অর্থের জন্য তহবিল গঠন করারও তাগিদ দিয়েছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব বিজনেস এন্ড প্রফেসন্যাল উইমেন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ফ্রেডা মিরিকলিস সেই সভায় আহ্বান জানিয়েছিলেন। 

তিনি বলেছিলেন নারীদের পেছনে বিনিয়োগ বাড়ালে তা শুধু পরিবার নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে নারীকে শুধু নারী বলেই বাধাগ্রস্ত হতে হয়। বিনিয়োগের স্বল্পতা ও জ্ঞানের অভাবই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। 

কমনওয়েলথ নারীদের সেই সম্মেলনে প্রতিনিধিরা নারীকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে বেশি করে যুক্ত হওয়ার রূপরেখা প্রণয়নে উদ্যোগী হবার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, এতে দেশের দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বাড়বে এবং দেশের অর্থনীতিতে নারীর ভূমিকা শক্ত মজবুত হবে। 

নারীর ক্ষমতায়নের প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার মূল্য বুঝতে পেরেছেন বলেই আজকের নারীরা অনেকেই বিস্তৃত কর্মক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ছেন। নারীরা বুঝতে পেরেছেন পুরুষের সমকক্ষ হওয়া মানে নারীত্ব বিসর্জন দেয়া নয়। সত্যিকার অর্থে নারীর কল্যাণময়ী মূর্তির সাথে আধুনিক ভাবমূর্তির কোন বিরোধ নেই। নারী সমাজ, পরিবার, রাষ্ট্র- সকল ক্ষেত্রে সমানভাবে ক্ষমতায়িত হলে নারীর প্রতি সহিংসতা বহুলাংশে হ্রাস পাবে। 

ইদানীং নারী  নির্যাতনের অসংখ্য ঘটনা আমাদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে। এর কারণ নির্যাতনকারী পুরুষের পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা, অপরাধ করে শাস্তি না পাওয়ার দৃষ্টান্তের আধিক্য, রাষ্ট্রের কার্যত উদাসীনতা এবং পুরুষ সমাজে নারীর চরম অসহায়তা। নারীর ক্ষমতায়ন ঘটলে এই অসহায়তার বিরুদ্ধে সে রুখে দাঁড়াতে পারবে। যদিও আমাদের সমাজের নারীরা ক্রমশ পুরুষের আধিপত্য ভাঙছে। তবুও একথা অনস্বীকার্য যে, প্রগতিশীলতা স্বাধিকার ও অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতার তাৎপর্য অনুভব করতে পারছেন আমাদের নারী সমাজের সীমিত একটা অংশ মাত্র। 

তাই বিস্তৃত অঙ্গনের প্রতিটি নারীকে নিজের উপর আস্থা রাখতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, তাদের অনুপ্রাণিত করতে হবে, ভাবতে হবে পুরুষের সমকক্ষ মানুষ হিসেবে। প্রচলিত মানদন্ডে নিজেকে না মেপে, গতানুগতিক স্রোতে গা না ভাসিয়ে শক্তি অর্জন করতে হবে তাকে স্রোতের মুখ ঘুরিয়ে দেবার বিরল ক্ষমতা অর্জনে।

সবশেষে বলতে হয় নারীর ক্ষমতায়ন, সম অধিকার প্রতিষ্ঠা, উন্নয়ন দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক পরিকল্পনার সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। তাই অব্যাহত শোষণ, নির্যাতন, বৈষম্য থেকে নারী সমাজকে মুক্ত করার জন্যে শোষণ বৈষম্য নির্যাতনহীন সুস্থ সমতাপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র প্রস্তুত থাকতে সরকার, রাজনৈতিক দলকে। 

সুশীল সমাজকে নিতে হবে সমন্বিত প্রয়াস গ্রহণ করার উদ্যোগ। পরিবারকেও নারীর ক্ষমতায়নের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। নারী অধিকার সচেতন, শিক্ষিত এবং সুনাগরিক হয়ে ওঠার শিক্ষা সে পরিবার থেকেই পেয়ে থাকে। সেই প্রতিবাদী সত্ত্বা, মানবিকতা, সৎ সাহস, নির্ভীক, মুক্ত মানসিকতা গঠনে যা হতে পারে তার যথার্থ দিশারী, শিক্ষক এবং স্বপ্নদ্রষ্টা।

পাশবিকতা ও নিষ্ঠুরতার ব্যাপক প্রসারে আজ আমাদের মানবতা, গণতন্ত্র বিপন্ন, লাঞ্ছিত। শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে লক্ষ্যমুখী লড়াইয়ের মাধ্যমেই কেবল এই অপশক্তি রোধ এবং উৎখাত করতে পারে। 

কাজে লাগাতে হবে নারী ও পুরুষের সম্মিলিত প্রয়াস ও শক্তিকে। সেই লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে একমাত্র ক্ষমতায়িত নারী আর এর পেছনে সাহস প্রেরণা যোগাবেন তার শিক্ষা সচেতন পরিবার, মুক্তবুদ্ধির সমাজ এবং সাথে গণতন্ত্রের সত্যিকার অর্থবহ চর্চা। 

এর পাশাপাশি এই মুহূর্তে যা জরুরি তা হলো বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠায় পারিবারিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সমান অংশীদারীত্বের যথাযথ শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহারের নিরবচ্ছিন্ন, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, রাজনীতিতে নারীর সমানাধিকার, আদিবাসী নারীদের জীবন মানের নিশ্চয়তা, সম্পত্তিতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সিডও সনদ দুই এর অনুমোদন, কৃষিতে নারীর অধিকার অধিকার প্রতিষ্ঠা। তা হলেই আজকের ক্ষমতায়িত নারীই উপহার দিতে পারবে আগামীর জন্য এক সৃজনশীল নতুন প্রজন্ম। 

৥ দিল মনোয়ারা মনু : লেখক ও সাংবাদিক