ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ১৮:০৪:৫৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
চট্টগ্রামে আজ শুরু উইম্যান এসএমই এক্সপো হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি

‘নারীকে মূলধারায় আনার বিশেষ উদ্যোগ বাজেটে নেই’

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৭:৫৪ পিএম, ২১ জুন ২০২২ মঙ্গলবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের আনোয়ারা বেগম- মুনিরা খান মিলনায়তনে ‘বাজেট  ২০২২-২০২৩ : জেন্ডার সংবেদনশীলতা পর্যালোচনা' বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত এ সভায় নারীবাদি এ সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম সভাপতিত্ব করেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। সম্মানিত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এমএম আকাশ, কেয়ার বাংলাদেশের অ্যাক্টিং ডিরেক্টর (উইমেন অ্যান্ড গার্লস এমপাওয়ারমেন্ট প্রোগ্রাম) রওনক জাহান।  

সংগঠনের পক্ষে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরমিন্দ নিলোর্মী।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স অনুসারে বাংলাদেশ একটি ভালো অবস্থানে আছে। এই অবস্থান কতদিন থাকবে তা শঙ্কার বিষয়। অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলেও রাজনীতিতে নারীর সরাসরি অংশগ্রহণ এখনো সক্রিয় নয়। স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নারীর কাজের ক্ষেত্রে বাধা আছে। জেন্ডার বাজেটে নারীকে মূলধারায় এগিয়ে আনতে বিশেষ উদ্যোগ বাজেটে নেই। সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড পরিস্থিতি স্তিমিত হলেও কোভিডের অভিঘাত নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ সকল ক্ষেত্রের অর্জনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।’ তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ করার দাবি জানান।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ‘অর্থনীতির মূলধারায় নারীকে সম্পৃক্ত করতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ শুরু থেকেই কাজ করছে। এমন এক সময়ে বাজেট ঘোষিত হলো যখন বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে। দেশের এই আর্থিক উন্নয়নে নারীদের অবদান রয়েছে। কিন্তু নারীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র বৃদ্ধি, শিল্পক্ষেত্রে অটোমেশনের সাথে সাথে শিল্পে  নারীর অংশ্রগহণ বৃদ্ধি করতে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণসহ সকল ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য বাজেটে নারীর জন্য বরাদ্দ কতটা করা হয়েছে, বরাদ্দকৃত ব্যয় কীভাবে করা হচ্ছে এবং মনিটরিং কিভাবে করা হবে, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালার আলোকে বাজেট বাস্তবায়িত হচ্ছে কীনা তা পর্যালোচনার জন্য আজকের কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।’
  
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী। তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেটের ইতিবাচক দিক হলো রাজস্ব খাতে প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রবাসীর আয়ের হার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ব্যক্তিখাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে। তবে এর সাথে অন্যান্য সূচক বাড়ছে কীনা তা দেখতে হবে। মুদ্রাস্ফীতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষায় ঝড়ে পড়া কমাতে এবারের জেন্ডার বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই, পরিকল্পনা নেই। পরিস্থিতি পরিবর্তনে আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে যে গ্যাপ আছে তা কমাতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার পর্যাপ্ত রিজার্ভ রাখতে হবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৫ তম। এই অগ্রগতির মধ্যে প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে উন্নত অবস্থানে যেতে পারছে কীনা তা দেখতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা, জননিরাপত্তা ক্ষেত্র সহ কয়েকটি ক্ষেত্রে বরাদ্দ কমেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের নিজের টাকায় ঋণ পরিশোধ করতে হয়। কাজেই মানবসম্পদের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং দাতা সংস্থার প্রতি নির্ভরতা কমাতে হবে, গার্মেন্টসের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে হবে। তবে রপ্তানির অনুপাতে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। তিন দশকে গার্মেন্টস খাত থেকে আয় হলেও আয়ের সুষম বন্টন নিশ্চিত হয়নি। অন্যদিকে প্রবাসী আয় বাড়লেও প্রবাসী অভিবাসীরা সার্বিকভাবে কেমন আছেন তা দেখতে হবে। শুল্ক কাঠামোর মধ্যে থাকা বৈষম্য দূর করতে হবে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি বলেন, ‘নারীর অধিকার অর্জনে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। উন্নয়ন কার হচ্ছে এবং উন্নয়নে কোন লিকেজ আছে কিনা তা দেখতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়নে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে।’ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এমএম আকাশ বলেন, ‘প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প আছে। নারীদের জন্য বরাদ্দ কতটা তা বার করার কিছু উপায় আছে। উদাহরণস্বরূপ নারীর জন্য তৈরি করা অবকাঠামো যেমন হাসপাতাল, স্কুল  থেকে তারা কতজন সার্ভিস পাচ্ছে তা মনিটরিং করা এবং তার জন্য বরাদ্দ কত দেখা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত জেন্ডার গ্যাপে বাংলাদেশ অবস্থান ভালো। রাজনীতিতে নারীরা এগিয়েছে বলা হচ্ছে। কিন্তু কতটা এগিয়েছে তা দেখতে হবে।’

কেয়ার বাংলাদেশের অ্যাক্টিং ডিরেক্টর(উইমেন অ্যান্ড গার্লস এমপাওয়ারমেন্ট প্রোগ্রাম)রওনক জাহান বলেন, ‘নারী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেটে বিশেষ উদ্যোগ নেই।’ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কমেছে এবং নারী বান্ধব আইনের প্রকৃত বাস্তবায়নের জন্য জন্য যে সম্পদ বরাদ্দ দরকার তা বাজেটে নেই উল্লেখ করে বলেন, ‘নারী ও কন্যা শিশুর প্রায়োরিটি কী তা বিবেচনায় নিতে হবে, আইনের প্রভিশন ও বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকতে হবে।’

সভায় বাংলাদেশ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, জাতীয় পরিষদ সদস্য, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধি,সংগঠনের কর্মকর্তা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।