ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ১০:৩৮:২৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ফের কমল স্বর্ণের দাম মক্কা ও মদিনায় তুমুল বৃষ্টির শঙ্কা খালেদার গ্যাটকো মামলায় চার্জগঠনের শুনানি পেছাল

নুসরাত হত্যার দুই বছর, বিচারের আশায় স্বজনরা

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:০৬ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০২১ শনিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে অন্যতম আলোচিত ঘটনা ছিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতরে আলিম পরীক্ষার্থী ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়ে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড। এদিকে, নুসরাত জাহান রাফি হত্যার দুই বছর আজ অতিবাহিত হচ্ছে। নিম্ন আদালতে অপরাধীদের ফাঁসি হলেও আটকে আছে উচ্চ আদালতে। করোনা মহামারির কারণে বন্ধ হয়ে রয়েছে আলোচিত এ মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম। এদিকে বিচারের আশায় প্রহর গুনছে নুসরাতের পরিবার।

২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল সকালে আলিম (এইচএসসি) পরীক্ষা দিতে গেলে হল থেকে ডেকে পাশের ভবনের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় তাকে তার সহপাঠীরা গায়ে কেরোসিন ঢেলে হত্যার চেষ্টা চালায়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। চারদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় মারা যায় নুসরাত।

১০ এপ্রিল বিকালে সোনাগাজী মোহাম্মদ ছাবের সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুল মাঠে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। নুসরাতের ওপর অগ্নি সন্ত্রাসের দুই বছর উপলক্ষে তার বাড়িতে গেলে দেখা যায় সুনশান নীরবতা। নুসরাতের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় তিনজন পুলিশ বাড়ি পাহারায় রয়েছেন।

নুসরাতের পরিবারের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু বলেন, ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) মামলার যাবতীয় কার্যক্রম হাইকোর্টে পৌঁছে। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলে তা অনুমোদনের জন্য মামলার যাবতীয় কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। সে অনুসারে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অগ্রাধিকারভিত্তিতে পেপারবুক (মামলার যাবতীয় নথি) ছাপানো শেষ করা হয়েছিল।

পরে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে শুনানির জন্য মামলাটি প্রধান বিচারপতি বরাবর উপস্থাপন করা হয়। আপিল অগ্রাধিকারভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করেছিলেন প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি হাসান ইমাম ও সৌমেন্দ্র সরকার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ মামলার শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে বেঞ্চ করোনার কারণে বাতিল হয়ে গেছে। এরপর বেঞ্চ গঠন হয়নি। তাই মামলাটির শুনানি হচ্ছে না। করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতি কেটে গেলে অগ্রাধিকারভিত্তিতে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মাদ্রাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।

নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বলেন, আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি। শুনেছি উচ্চ আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করেছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসামিদের রায় দ্রুত কার্যকরের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

আবেগ আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, আজ দুই বছর আমি আমার মেয়ের কণ্ঠে মা ডাকটি শুনতে পাই না। রাতে ঘুম হয় না। কারণ আমার মেয়ের হাত-পা বেঁধে যখন তারা আগুন লাগিয়েছিল, তখন আমার মেয়ে কী করেছিল? আমার মেয়েকে জানোয়ারেরা হাত-পা বেঁধে আগুন দিয়ে পুড়ে মেরেছে। আইনমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন ১০ এপ্রিল নুসরাত দিবস পালন করা হবে। কিন্তু গত বছর পালন হয়নি। এই বছর থেকে হলেও এই দিবস পালনের দাবি জানাচ্ছি।

মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি। উচ্চ আদালতেও আমরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশী। আমাদের পরিবারের জন্য খুনিরা ও তাদের স্বজনরা মারাত্মক হুমকি হচ্ছে তাদের ফেসবুক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে যা ইচ্ছা তাই লেখে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা এই মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানি না। তবে, কিছুদিন আগে আমাদের আইনজীবী শাহাজাহান সাজুর মাধ্যমে জেনেছি করোনা পরিস্থিতির কারণে মামলাটির বেঞ্চ গঠনে বিলম্ব হচ্ছে।

২০১৯ সালের ২৭ মার্চ নিজ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা কর্তৃক যৌন নিপীড়নের শিকার হয় রাফি। ওই ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেন। একই দিন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ওই মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষের অনুসারী ওই মাদ্রাসার ছাত্ররা রাফি ও তার পরিবারের সদস্যদের চাপ দিতে থাকে। ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল খুনিরা সিরাজের সঙ্গে কারাগারে পরামর্শ করে এসে ৪ এপ্রিল মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে নুসরাতকে খুন করার পরিকল্পনা নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৬ এপ্রিল নুসরাত মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে খুনিরা পরিকল্পিতভাবে সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে নুসরাতকে হত্যার চেষ্টা চালায়।

ঘটনাস্থল থেকে নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর তাকে স্থানান্তর করা হয় ফেনী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় সেখান থেকে নুসরাতকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।

এদিকে ৯ এপ্রিল মারা যান নুসরাত। এই মামলায় ২৮ মে অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০ জুন অভিযোগ গঠন করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। পরে সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত রায়ের জন্য ২৪ অক্টোবর নির্ধারণ করেন। মামলাটি মাত্র ৬১ কার্যদিবসে ৮৭ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্ততর্ক গ্রহণ করা হয়। ২৪ অক্টোবর রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন।


-জেডসি