ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ৬:৩০:১৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

ফরিদপুরে গ্রাম-বাংলার হারানো ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:২৭ পিএম, ২ জুলাই ২০২৩ রবিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

আধুনিক সভ্যতা ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার হারানো ঐতিহ্যকে বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো বিলুপ্তপ্রায় লাঠিখেলা।

শনিবার বিকেলে জেলার চর সুলতানপুর হাইস্কুল মাঠে ঢাঁক-ঢোলের বাজনায়, গানের তালে তালে এ আনন্দময় উৎসবের আয়োজন করা হয়।

আনোয়ারা মান্নান বেগের আয়োজনে ও আর্কিটেক্ট মুজাহিদ বেগের ব্যবস্থাপনায় গ্রাম-বাংলার হারানো ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলার শুরুতে ঢাক, ঢোল আর কাঁসার ঘন্টার তালে তালে চলে লাঠির কসরত।

প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা ও পাল্টা আঘাত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন লাঠিয়ালরা। তাতে উৎসাহ দেন শত শত দর্শক।

আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজনকে ঘিরে স্থানীয়দের মাঝে ছিলো উৎসবের আমেজ। লাঠি খেলা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শকরা।

সমাজ থেকে অন্যায় অপরাধ দূর করতে আর হারানো ঐতিহ্য ধরে রাখতেই এই আয়োজন। পথগামী যুব সমাজের মাদকাসক্ততা মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে লাঠি খেলার মত আয়োজন পথ দেখাবে, যুক্ত করবে সম্প্রীতির বাঁধনে। নিয়মিত আয়োজনের জন্য পৃষ্ঠপোষকতার দাবি করেন আয়োজকরা।

এ লাঠি খেলার প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন- ফরিদপুরের সুনামধন্য চক্ষু চিকিৎসক ও সমাজসেবক ডা. মহাসিন বেগ।

এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা পরিষদের সদস্য ইলিয়াস বেগ, শিল্পপতি ও ক্রীড়ামোদী ব্যক্তিত্ব শামসুল হক বেগ, আর্কিটেক্ট মুজাহিদ বেগ প্রমূখ।

এতে ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী লাঠিয়াল দল ফরিদপুর সদরের শাপলা শালুক বনাম যমুনা ধোপাডাঙ্গা চাঁদপুর দল অংশগ্রহণ করেন।

প্রসঙ্গ, লাঠি খেলা একটি ঐতিহ্যবাহী বাঙালি মার্শাল আর্ট–লাঠির দ্বারা এক ধরনের লড়াই–যা ভারত ও বাংলাদেশ অনুশীলন করা হয়। 'লাঠি খেলা' অনুশীলনকারীকে 'লাঠিয়াল' বলা হয়। এছাড়াও, লাঠি চালনায় দক্ষ কিংবা লাঠি দ্বারা মারামারি করতে পটু কিংবা লাঠি চালনা দ্বারা যারা জীবিকা অর্জন করে, তিনি/তারা লেঠেল বা লাঠিয়াল নামে পরিচিতি পান।

লাঠি খেলাটি লাঠি দিয়ে আত্মরক্ষা শেখায়। ব্রিটিশ শাসনামলে অবিভক্ত বাংলার জমিদাররা (পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বঙ্গ) নিরাপত্তার জন্য লাঠিয়ালদের নিযুক্ত করতো। চরাঞ্চলে জমি দখলের জন্য মানুষ এখনও লাঠি দিয়ে মারামারি করে। মহরম ও পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানে এই খেলাটি তাদের পরাক্রম ও সাহস প্রদর্শনের জন্য খেলা হয়ে থাকে। এই খেলার জন্য ব্যবহৃত লাঠি সাড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা এবং প্রায়ই তৈলাক্ত হয়।

অত্যাশ্চর্য কৌশলের সঙ্গে প্রত্যেক খেলোয়াড় তাদের নিজ নিজ লাঠি দিয়ে রণকৌশল প্রদর্শণ করে। শুধুমাত্র বলিষ্ঠ যুবকেরাই এই খেলায় অংশ নিতে পারে। কিন্তু বর্তমানে শিশু থেকে শুরু করে যুবক, বৃদ্ধ সব বয়সের পুরুষেরাই লাঠিখেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। উত্তরবঙ্গে, ঈদের সময়ে চাদি নামক একটি অনুরূপ খেলা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশে পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানের সময় "লাঠি খেলা" এর প্রদর্শনী এখনও আছে। বাংলায় গুরুসদয় দত্ত কর্তৃক ব্রতচারী আন্দোলনের সময়ও লাঠি খেলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।

লাঠিখেলার অসাধারণ ইতিহাস আছে কিন্তু বাংলাদেশে এর জনপ্রিয়তা এখন পড়তির দিকে। ঈদ উপলক্ষে লাঠিখেলার আয়োজন ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, জয়পুরহাট, পঞ্চগড়, নড়াইল প্রভৃতি জেলায় ভিন্ন নামে দেখা যায়। লাঠি খেলা নিয়ে বর্তমানে নতুন দল তৈরি হচ্ছে না। এছাড়া পৃষ্ঠপোষকতার অভাবেও লাঠি খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে।