ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৫১:২৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

বিশুদ্ধ স্ফটিকের সবচেয়ে সেরা মুক্তো ‘লতা মঙ্গেশকর’

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:১৫ এএম, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সোমবার

লতা মঙ্গেশকরকে মালা পরিয়ে দিচ্ছেন ছোট বোন সঙ্গিতশিল্পী আশা ভোঁসলে।  সংগৃহিত ছবি।

লতা মঙ্গেশকরকে মালা পরিয়ে দিচ্ছেন ছোট বোন সঙ্গিতশিল্পী আশা ভোঁসলে। সংগৃহিত ছবি।

‘নাইটিঙ্গেল অব ইন্ডিয়া’ বলে আখ্যা পাওয়া লতা মঙ্গেশকর ৭৩ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ভারতের ৩৬টি ভাষায় প্রায় ৩০ হাজার গান গেয়েছেন।

দশকের পর দশকজুড়ে তিনি ছিলেন ভারতের সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন সঙ্গীত শিল্পী। বলিউডের প্রত্যেক শীর্ষ অভিনেত্রী চাইতেন, চলচ্চিত্রে তাদের গানটি যেন লতাকে দিয়ে গাওয়ানো হয়।

একটি সাক্ষাৎকারে লতা মঙ্গেশকর বলেছিলেন যে, তার পরিবার শাস্ত্রীয় সঙ্গীত চর্চা করতো এবং চলচ্চিত্রের গান বাড়িতে খুব একটা ভালো চোখে দেখা হত না।

তিনি কখনোই প্রথাগত আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পাননি। একজন গৃহকর্মী তাকে মারাঠি বর্ণপরিচয় শিখিয়েছেন এবং স্থানীয় একজন পুরোহিত তাকে সংস্কৃত শেখান। আত্মীয়স্বজন এবং শিক্ষকরা তাদের বাড়িতে এসে তাকে অন্যান্য বিষয় শেখাতেন।

কিন্তু তাদের জন্য সময়টা কঠিন হয়ে ওঠে, যখন তারা বাবা স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ফলে তিনি চলচ্চিত্র আর তার থিয়েটার কোম্পানি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।

মহারাষ্ট্রের সাঙ্গলিতে তাদের পারিবারিক বাসস্থানটি নিলাম হয়ে গেলে পরিবারটি পশ্চিমের শহর পুনায় (এখন পুনে) চলে আসতে বাধ্য হয়। পিতার মৃত্যুর পর পরিবারটি বোম্বাই (এখনকার নাম মুম্বাই) শহরে চলে আসে।

সেই সময়ে, উনিশশো চল্লিশের দশকে চলচ্চিত্রে তত বেশি গানের সুযোগ না থাকায় তরুণী লতা আয়-রোজগারের জন্য অভিনয় করতে শুরু করেন।

তিনি প্রায় আটটি মারাঠি আর হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

১৯৪৩ সালে মারাঠি চলচ্চিত্র 'গজাবাউ'-তে তিনি 'কিছু কথা, কিছু শব্দ' শিরোনামের একটি গান গেয়েছেন, যা ছিল চলচ্চিত্রে তার গাওয়া প্রথম গান।

১৯৪৭ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রে অভিনয় করে প্রতি মাসে তাঁর আয় হতো দুইশ রূপি।

'‘মেকআপ, লাইট এগুলো কখনোই আমার ভাল লাগেনি। মানুষজন আপনাকে আদেশ দিচ্ছে, এই কথা বলো, ওই কথা বলো, আমার খুব অস্বস্তি লাগতো’। চলচ্চিত্রে তাঁর সময় নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেছিলেন।

যখন একজন পরিচালক তাকে বলেছিলেন, তার ভুরু ছাঁটতে হবে। কারণ এগুলো বেশি ছড়ানো। তখন তিনি খুবই আহত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেটা মেনে নিয়েছিলেন।

১৯৪৯ সালে মহল চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার পর থেকে তিনি সবার নজরে চলে আসেন। পরবর্তী চার দশক ধরে তিনি মনে রাখার মতো এবং জনপ্রিয় অনেক গান গেয়েছেন।

এসবের মধ্যে আছে অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্র- পাকিজা, মাজবর, আওয়ারা, মুঘল ই আজম, শ্রী ৪২০, আরাধনা এবং দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গের মতো সিনেমা, যেটি রেকর্ড বিশ বছর ধরে টানা চলেছে।

চীনের সঙ্গে ভারতের ১৯৬২ সালের যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের স্মরণে একটি জনসভায় গভীর আবেগে যখন তিনি 'ইয়ে মেরে ওয়াতান কে লোগো' (ও আমার দেশের মানুষ) গাইছিলেন, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর চোখ থেকেও পানি গড়িয়ে পড়ে।

বলিউডের সকল বিখ্যাত গায়কের সঙ্গে তিনি গান গেয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন মোহাম্মদ রফি, কিশোর কুমার।

সেই সঙ্গে বলিউডের শীর্ষ সকল পরিচালকের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন, যাদের মধ্যে আছেন রাজ কাপুর এবং গুরু দত্ত থেকে শুরু করে মনি রত্নম এবং করন জোহর।

মোহাম্মদ রফির মতো যে পুরুষ গায়করা অনেক গান গেয়েছেন বলে দাবি করতেন, তাদের চ্যালেঞ্জ করার মতো সাহস ছিল মঙ্গেশকরের। তিনি ছিলেন প্রথম গায়িকা যিনি গান গাওয়ার জন্য ভালো পারিশ্রমিক এবং লভ্যাংশ দাবি করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘আমি হচ্ছি একজন স্ব-প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। আমি জানি কীভাবে লড়াই করতে হয়। আমি কখনো কাউকে ভয় পাইনি। আমি খানিকটা ভয়হীন ধরণের মানুষ। কিন্তু আমি কখনো কখনো ভাবি যতটা পেয়েছি, এতটা আমি পাবো’।

গীতিকার এবং চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার তার সুরেলা কণ্ঠ এবং আন্তরিক গান গাওয়াকে বর্ণনা করেছেন, ‘এতোটাই বিশুদ্ধ এবং পরিষ্কার যেন স্ফটিকের সবচেয়ে সেরা মুক্তো’।

বলিউডে কোন গানগুলো সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়, জানতে চাওয়া হলে মঙ্গেশকর একবার বলেছিলেন, ‘প্রেমের গানগুলো সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। নায়িকা দৌড়াচ্ছে আর নায়ক তার পেছনে দৌড়াচ্ছে’।

তার কালজয়ী সঙ্গীত অবশ্যই ভারতের কোটি কোটি মানুষের জন্য আনন্দ বয়ে এনেছে, তাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে সঙ্গীত।