ঢাকা, মঙ্গলবার ২৩, এপ্রিল ২০২৪ ১৮:১৪:৫৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
‘পদ্মশ্রী’ গ্রহণ করলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা কাতার-বাংলাদেশ ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই কয়েক ঘণ্টায় ৮০ বারেরও বেশি কেঁপে উঠল তাইওয়ান ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল মাকে অভিভাবকের স্বীকৃতি দিয়ে নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা নতুন করে ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি

মাদাম কুরির সংগ্রাম ও সাফল্য

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:০৯ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০২২ রবিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

প্রচলিত প্রথা ভেঙে নিজেকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অনেক নারী। তবে এরে জন্য বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। ইতিহাসে তারা অমর হয়ে আছেন। তেমনই একজন মাদাম কুরি।

পোল্যান্ডের ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের পড়ার কোনো সুযোগ ছিল না। আর দশটা নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ‘মেল অনলি’ তকমা দেয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই শহরের সবচেয়ে মেধাবী তরুণী সেকেন্ডারি স্কুলের সেরা ছাত্রী মারিয়া স্ক্লোডোস্কার (জন্ম ৭ নভেম্বর, ১৮৬৭) পক্ষে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাই ভর্তি হওয়া সম্ভব হয়নি। তাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়েছে অপ্রাতিষ্ঠানিক ও গোপন পদ্ধতিতে—ইনফরমালভাবে।

শেষ পর্যন্ত নাছোড়বান্দা মারিয়া ছোট বোন ব্রন্যার সাথে একটা চুক্তিতে এসেছিলেন। দুবোনই বিদেশে গিয়ে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ করবেন। প্রথম পাঁচ বছর মারিয়া কাজ করবেন, ব্রন্যাকে পড়ার সুযোগ করে দেবে; পরের পাঁচ বছর তা সুদে-আসলে ফিরিয়ে দেবে ব্রন্যা। চুক্তি অনুযায়ী মারিয়া ৫ বছর অন্যের বাড়িতে গভর্নেস আর টিউটর হিসেবে কাজ করে গেলেন। অবসর সময়ে পড়তে লাগলেন পদার্থবিদ্যা, রাসয়ন আর গণিতের বই!

এই পড়াশোনা কাজে দিল। ১৮৯১ সালে মেরি ভর্তি হলেন প্যারিসের সোবর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজেকে তিনি পুরোপুরি সঁপে দিল পদার্থবিদ্যার মোহময় জগতে। তখনো পর্যন্ত পদার্থবিদ্যা বা গণিত কেবল পুরুষদের বিষয়—এমন একটা ধারণা পশ্চিমেও প্রচলিত। সেই অচলায়তন তিনি ভাঙলেন। পকেটে টাকাপয়সা নেই, খাবার বলতে কেবল পাউরুটি আর চা। এ সময়ের অপুষ্টি পরবর্তী জীবনে তাকে ভুগিয়েছিল অনেক। কিন্তু স্বপ্ন, আবেগ আর জেদের কমতি ছিল না। ১৮৯৩ সালে পদার্থবিদ্যায় এবং পরের বছর গণিতে দু-দুটো মাস্টার্স সম্পন্ন করলেন মারিয়া ওরফে মেরি। বিশ্ব তখনো জানতে না এই মেয়েটি প্রথম নারী হিসেবে নোবেল পুরস্কার জিতবেন একদিন, হবেন নারী পুরুষের মধ্যে প্রথম দুবার নোবেলজয়ী ব্যক্তি। ওয়ারশতে সুযোগ না পাওয়া সেই মেয়েটির নামই মেরি কুরি, পরবর্তীতে মাদাম কুরি হিসেবেই যিনি পরিচিত হন সারা বিশ্বে।

সোরবন থেকে ডক্টর অফ সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করেন ১৯০৬ সালে। তারপর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনারেল ফিজিকসের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন মেরি কুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই বিষয়ে তিনিই প্রথম নারী অধ্যাপক। ততদিনে পদার্থবিজ্ঞানের আরেক দিকপাল পিয়েরে কুরির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তিনি। ফিজিকস পাগল দম্পতি খেয়ে না খেয়ে, কাজ করে যান কুরি ল্যাবরেটরিতে। প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিয়াম ইনস্টিটিউটে অবস্থিত এই গবেষণাগারের পরিচালক হন তিনি ১৯১৪ সালে।

১৮৯৬ সালে হেনরি বেকরেল রেডিওঅ্যাকটিভিটি বা তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেছেন। এই আবিষ্কার প্রেরণা যুগিয়েছিল কুরি দম্পতিকে। দিন রাত খেটে এক সময় তেজস্ক্রিয় পদার্থ রেডিয়াম ও পোলানিয়াম আলাদা করতে সক্ষম হয়েছিলেন তাঁরা। বের করেছিলেন, এই তেজস্ক্রিয় পদার্থের চালচলন ও স্বভাব। ১৯০৬ সালে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পিয়েরে কুরির অকালমৃত্যু হয়। কিন্তু মাদাম কুরি তাঁর গবেষণা চালিয়ে যান। নিজের জীবন তিনি উৎসর্গ করেছিলেন মানব জাতির কল্যাণে, রেডিয়ামের ব্যবহারবিধি জানতে, এক্স-রে আবিষ্কারসহ আরও নানা কিছুতে। পরে কন্যা আইরিনও যোগ দেয় তাঁর সঙ্গে। ১৯০৩ সালে স্বামী পিয়েরের জীবদ্দশায় এই দম্পতি পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। সে বছর তাদেঁর সঙ্গে নোবেল ভাগাভাগি করেছিলেন হেনরি বেকরেল। ১৯১১ সালে মেরি কুরি আবারও নোবেল পুরস্কার পান রসায়নে।

মাদাম কুরিকে আজও সারা বিশ্বের বৈজ্ঞানিকরা তাঁর প্রশান্ত মনোযোগ, গভীর আত্নবিশ্বাস ও মগ্নতা এবং আত্মমর্যাদার জন্য স্মরণ করেন। এমন আত্নোৎসর্গোকারী বিজ্ঞানী পৃথিবী কমই পেয়েছে। এর জন্য তাকে কম মূল্য দিতে হয়নি। তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে জীবনভর কাজ করেছেন। ফলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন মারণব্যাধি অ্যাপ্লাস্টিক এনিমিয়ায়—যে রোগে অস্থিমজ্জা ধ্বংস হয়ে যেতে থাকে। ডাবল নোবেল পুরস্কারের চেয়েও বেশি সম্মানিত ছিলেন তিনি বিজ্ঞানীদের মধ্যে। ছিলেন কাউন্সিল দ্যু ফিজিক সলভ্যে বা ইন্টেলেকচুয়াল কো অপারেশন অফ লিগ অফ ন্যাশনসের মতো সংগঠনের সম্মানিত আজীবন সদস্য। পেয়েছেন রয়্যাল সোসাইটির ড্যেভি মেডেল। ইউরেনিয়াম রশ্মি বিষয়ক তাঁর থিওরির ওপরই গড়ে উঠেছে আজকের অ্যাটমিক ফিজিকসের ধারণা। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় তাঁর তৈরি এক্স-রে যন্ত্র পৃথিবীর বহু মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছিল। তাঁর মেয়ে আইরিন জোলিও কুরিও নোবেল পুরস্কার পান ১৯৩৫ সালে, স্বামী ফেডেরিক জোলিওর সঙ্গে যৌথভাবে।

বিশ্বের নারী বিজ্ঞানীদের পথিকৃৎ ও তাবৎ বিজ্ঞানীদের নমস্য মাদাম মেরি কুরির জন্মগ্রহণ করেন ১৮৬৯ সালের ৭ নভেম্বর।

তিনি বলেছিলেন—কী করা হয়েছে সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে এখনও যা করা হয়নি, বাকি আছে, সেটা নিয়েই ভাবতে হবে! সূত্র: বিজ্ঞান চিন্তা