ঢাকা, শনিবার ১১, মে ২০২৪ ৯:১৭:১১ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ফের অস্থির ডিমের বাজার, স্বস্তি নেই মাছ-মাংসেও এখনও ভিসা পাননি ৩৮ হাজার হজযাত্রী ভেস্তে গেল যুদ্ধবিরতির আলোচনা, রাফায় ইসরায়েলের হামলা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা গুচ্ছের ‌‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বসছে ৪০ হাজার শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নিজ বাড়ি গেলেন প্রধানমন্ত্রী

যশোরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মীরা রানী সরকার

অনু সরকার | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:২৯ পিএম, ২০ মার্চ ২০২১ শনিবার

যশোরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মীরা রানী সরকার

যশোরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মীরা রানী সরকার

দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর স্বাধীন হয়েছিল বাংলাদেশ৷ তবে এই স্বাধীনতার প্রধান চালিকাশক্তি বীর মুক্তিযোদ্ধারা এখনও লোকচক্ষুর অন্তরালে অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছেন৷ অনেকে আবার এই লড়াই করতে করতেই প্রাণ হারিয়েছেন। মীরা রানী সরকার ছিলেন তেমনই একজন সাহসী কিন্তু বঞ্চিত নারী মুক্তিযোদ্ধা৷ নড়াইলের কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীরা রানী সরকার (৭৪) এ বছর ২১ জানয়ারি মারা গেছেন। তাকে নিজ গ্রামে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়েছে।

নড়াইল জেলার পাইকড়া গ্রামে ১৯৪৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন মুক্তিযোদ্ধা মীরা রানী সরকার৷ তার বাবা রসিক লাল এবং মা তপি বালা৷ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন তিনি৷

এ সময় তাদের এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আনাগোনা শুরু হলে অনেক হিন্দু পরিবার এলাকা ছেড়ে ভারতে চলে যায়৷ তিনিও ও তার পরিবারের সঙ্গে হেঁটে নড়াইলের পাইকড়া গ্রাম ছেড়ে চৌগাছা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান৷ বনগাঁও হাসপাতালের পাশে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে তারা সেখানে ছিলেন৷

স্থানীয় কালু বাবুর বাড়িতে আওয়ামী লীগের অফিস ছিল৷ সেখানে গিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ইচ্ছার কথা বলেন৷ কেন তিনি মুক্তিযুদ্ধের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন - এমন প্রশ্নের উত্তরে মীরা রাণী বলেছিলেন, ‘আমি যুদ্ধে গিয়েছি এই কারণে যে দেশ স্বাধীন করবই৷ আমি অফিসে গিয়ে খুব কান্নাকাটি করেছি৷ তখন তারা জিজ্ঞেস করল, তুমি কি পারবে? এই গোলাগুলির মধ্যে তুমি কি কাজ করতে পারবে? আমি বলেছিলাম, হ্যাঁ আমি পারবো৷ আমার বুকে সেটুকু বল আছে৷'

সেখানে সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণের পর টালিখোলা মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেন৷ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি নড়াইলের মতিউর রহমান তাদের কমান্ডার ছিলেন৷ পরবর্তী সময়ে তিনি কলকাতা জাদুঘরের পেছনে ১২ দিন মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন৷ এরপর তাকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জোগানোর কাজ দেওয়া হয়৷

তিনি ভারতের হেলাঞ্চা, বাগদা, গোপালনগর, চাঁনপাড়া মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল চাঙ্গা করার জন্য নানাভাবে সাহস জুগিয়েছেন৷ পাশাপাশি আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা শুশ্রূষা করেছেন৷ ঝিনাইদহ ও যশোরের বিভিন্ন শিবিরেও তিনি চিকিৎসা সেবায় সহযোগিতা করেছেন৷

জানা যায়, একদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মীরা রানীদের শিবিরে যান৷ মীরা তার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন৷ তিনি তার কাজের প্রশংসা করেন এবং উৎসাহ দেন৷ এছাড়া তাকে একটি প্রশংসা পত্রও দেন ইন্দিরা গান্ধী৷

এরপর মীরা রানী সহযোদ্ধাদের সঙ্গে চৌগাছা সীমান্তে যান৷ ঐ সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ হয়৷ সে যুদ্ধে তার এক সঙ্গি শহীদ হন৷ বিভিন্ন অভিযানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মাইলের পর মাইল পথ হেঁটে গিয়েছেন। তাদের খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন মীরা রানী৷

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে মীরা বলেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের কাজে আমরা ১২ জন মেয়ে ছিলাম৷ আমাদের মধ্যে একজন মেয়ে শহীদ হয়েছিল৷ তার বাড়ি ছিল মাগুরায়৷ তাকে কবর দেওয়া হয়েছিল বনগাঁ হাসপাতালের সামনে৷ সেসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীও সেখানে এসেছিলেন৷'

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে ফিরে আসেন মীরা রানী সরকার৷ তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে ঢাকায় নিয়ে যান৷ বঙ্গবন্ধু তার প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘শাবাশ বেটি'৷ সে সময় তাকে এক হাজার টাকা পুরস্কারও দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু৷

স্বাধীনতার দুই বছর পর পূর্ব পরিচিত মুক্তিযোদ্ধা পশুপতি সরকারের সঙ্গে বিয়ে হয় মীরা রানীর৷ এর মধ্যে তার শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে যায়৷ টাকার অভাবে ভালো চিকিৎসক দেখাতে পারেন না৷ তার এক মেয়ে বিএ পাস করেছেন৷ কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মুক্তিযোদ্ধার কোটায় তিনি কোনো চাকরি পাননি৷