শিক্ষকতা কঠিন দায়িত্ব : কাজী সুফিয়া আহমেদ
অনু সরকার | উইমেননিউজ২৪.কমআপডেট: ১২:১৪ পিএম, ৩ মার্চ ২০১৮ শনিবার
কাজী সুফিয়া আহমেদ
কাজী সুফিয়া আহমেদ মানুষ গড়ার কারিগর। লিটল জুয়েলস স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক তিনি। ৩০ বছরের শিক্ষকতা জীবনে শিশুদের অকৃত্রিম ভালোবাসাই তার শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। বাবা-মা, ভাইবোনদের অবদান তার জীবনে অপরিসীম। সহকর্মীরা তার কাছে আত্নিয়র মত। ভালোবাসেন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে আর কোমলমতি শিশুদের সাথে সময় কাটাতে।
সম্প্রতি উইমেননিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতাসহ জীবনের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অনু সরকার।
উইমেননিউজ : শিক্ষকতা পেশায় কেন এলেন?
সুফিয়া : আসলে বলা যায় এক ধরনের নেশা থেকে আমি এ পেশায় এসেছি। এ পেশাটাকেই আমার কাছে সেভ জোন বলে মনে হয়েছে। এখানেই আমি সাবলিলতা অনুভব করেছি। চেয়েছি বাচ্চাদের সাথে থেকে তাদের জন্য কিছু করতে।
বাচ্চাদের সাথে থাকতে থাকতে মনে হয় যেন আমি ওদেরই বয়সি, ওদের বন্ধু, সময় কাটে আনন্দে। বড় ক্লাস থেকে ছোটদের পড়াতেই আমার বেশি ভালো লাগে। শিশুরা কোমলমতি। ওদের নিজের মত করে সব শেখানো যায়। ঠিক যেন মাটির পুতুল। নিজের মন মত গড়ে তোলা যায়।
উইমেননিউজ : ৩০ বছরে কখনো একঘেয়ে লাগেনি।
সুফিয়া : না। একদম না। সেই যে ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতাম, রেডি হতাম। আজও যেন সেই নিয়মের মধ্যেই আছি আমি। একঘেয়ে হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। জীবনের অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে আজ মনে হয় এই সব বাচ্চাদের নিয়ে আমি বেশ ভালো আছি। শিশুদের অকৃত্রিম ভালোবাসাই আমার শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।
উইমেননিউজ : বাচ্চাদের পড়ানো তো ভীষণ কঠিন কাজ…।
সুফিয়া : শুধু কঠিনই নয়, এটি খুবই দায়িত্বশীল একটি কাজ। একটি মা যেমন সন্তানকে দেখে রাখেন ঠিক তা আমাদেরও করতে হয়। সারাদিন এতগুলো বাচ্চা আমাদের কাছে থাকে। তাদের দেখাশোনা করা, তাদের সৎ, ভালো ও দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব তো আমাদেরই। তারা ছোট্ট শিশু, তাদের জীবনের গোড়াপত্তন তো শিক্ষককেই করতে হয়। তাই এ এক কঠিন দায়িত্ব।
উইমেননিউজ : এত দীর্ঘ সময় শিক্ষকতা করছেন। অনেক ছাত্র-ছাত্রী বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে। তাদের কারো সাথে দেখা হয়?
সুফিয়া : হ্যাঁ। অনেকের সাথে দেখা হয়, অনেকে দেখা করতে আসে। আমাদের স্কুল ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত। আমাদের গড়ে তোলা বাচ্চারা এসএসসি পরীক্ষার সময় দোয়া চাইতে আসে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তি হওয়ার সময় দেখা করে। অনেকে বিয়ের দাওয়াতও দেয়। নাম তো ভুলে যাই। কিন্তু যখন পরিচয় দেয় তখন মনে হয়, আমি একদিন ছিলাম ওদের সাথে।
আমি হয়তো নিজের একমাত্র সন্তানকেও এতো সময় দেইনি যা ওদের দিয়েছি। আমার ছেলে অন্যেরে কাছে পড়েছে। কিন্তু আমি স্কুলের বাচ্চাদের নিয়েই থেকেছি সব সময়। আজও ওদের সাথেই আমার সময় কাটে।
উইমেননিউজ : শিক্ষকতা জীবনের এমন কোনো ঘটনা কি আছে যা মনে দাগ কাটে?
সুফিয়া : শিক্ষকতা শুরুর প্রথম পাঁচ বছর আমি সেন্ট জোনস টিওটোরিয়ালে পড়াতাম। সেই স্কুলে আমার ক্লাসের সব বাচ্চাদের একদিন আমাদের বাসায় নিয়ে এসেছিলাম। ওরা সারা দিন আমাদের বাসায় ছিলো। আমাদের বাসায় বিভিন্ন রকম পাখি, ময়ূর, প্রাণীর সাথে সময় কাটিয়েছিলো। সারা দিন ওরা খুব খুশি ও আনন্দে ছিলো। আজ মনে পড়ে সে দিনটির কথা। ওরা পরে সব সময় বলতো সুফিয়া মিসের বাসায় জু আছে।
আর একটি ঘটনা বলি। তখন আমি সেন্ট জোনস টিওটোরিয়ালেই। মনির মাটানি ওয়ানে পড়তো। আমার ছাত্র। ও স্কুলের পরে আমার কাছে প্রাইভেট পড়তো। তাই স্কুল ছুটির পর আমার সাথে আমার বাসায় চলে আসতো। আমার বাসা আর স্কুল কাছাকাছি। হেমন্তদাস রোড থেকে আমি রুপলাল দাস লেনের বাসায় হেটেই আসতাম। সে সময় আমি প্রেগন্যান্ট। ছোট্ট মনির আর আমি হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরতাম। প্রতিদিন ওই ছোট্ট ছেলেটা আমাকে দেখভাল করে বাসায় নিয়ে আসতো। রাস্তায় কোথাও ইট পড়ে আছে কিনা, কোথাও রাস্তা ভাঙা কি না সব সে নজর রাখতো। আমি ওর পাকামো দেখে হাসতাম। মনির আমাকে অসম্ভব ভালোবাসতো। মনিরের মত এত ভালোবাসা কেউ আমায় দেয়নি। আজ মনির অনেক বড়। দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ায় কাজের প্রয়োজনে। ওর দুই মেয়ে।
উইমেননিউজ : একজন সচেতন ও শিক্ষিত নারী হিসেবে নারীদের নিয়ে কি ভাবেন?
সুফিয়া : কোনো মেয়েই মেধা ও যোগ্যতায় কম নয়। পুরুষের চেয়ে নারী কোনো দিক দিয়েই কম নয়। পুরুষ-নারীর মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। ভেদাভেদ করার মানসিকতার পরিবর্তন হওয়া জরুরী। আমাদের মেয়েরা যেমন ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে তেমনি পাহাড় জয় করছে, প্লেন চালাচ্ছে। সম্পত্তি, ভালোবাসা সব কিছুতে সমান অধিকারে আমি বিশ্বাস করি। নারী তো যোদ্ধার জাত। সংসারে নারীকে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হচ্ছে। সংসার জীবন তো যুদ্ধক্ষেত্র, নারী দক্ষতার সাথে সে দায়িত্ব পালন করছে।
উইমেননিউজ : দেশে মেয়েদের বর্তমান অবস্থা কেমন বলে আপনি মনে করেন?
সুফিয়া : আমাদের মেয়েদের অনেক উন্নতি হয়েছে। ওই যে বললাম নারী অনেক কিছু করছে। অর্থনৈতিক মুক্তি মিলছে মেয়েদের। ঘরে ঘরে মেয়েরা এখন চাকরি করছে। আয় করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। একটি দেশের উন্নয়নের জন্য এটি খুবই ইতিবাচক। ঘরে ঘরে মেয়েরা পড়াশুনা করছে, তারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। আসলে শিক্ষা ছাড়া উপায় নেই। প্রতিটি মেয়েকে শিক্ষিত হতে হবে। সবার আগে পড়াশুনা। মনে রাখতে হবে পড়াশুনাই একজন মানুষকে এগিয়ে নিতে পারে অনেক দূর।
উইমেননিউজ : তার মানে শিক্ষাই মূল….।
সুফিয়া : অবশ্যই। আমাদের দেশে নারীরা এখন বেশ শিক্ষা সচেতন। প্রতিটি পরীক্ষায় মেয়েরা ভাল ফলাফল করছে। নারী অনেক এগিয়ে যাবে। কারণ একজন নারী ঠিকমত সবকিছু করতে পারে। বুদ্ধিমত্তা ও ধৈর্য দিয়ে সন্তানকে স্বযত্নে গড়ে তোলেন একজন মা-একজন নারী। নারী ছাড়া পুরুষ কিছুই করতে পারবে না। একটি শিক্ষিত মেয়ে সংসার-সন্তান, সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে অনেক দূর। শিক্ষা ছাড়া জীবনে কিছুই নেই। আসলে পড়াশনায় ফাঁকি দিলে কিছুই থাকে না, সে নারী-পুরুষ যেই হোক না কেন। সুতরাং সব কিছুর প্রথম শর্ত শিক্ষা গ্রহণ। আগেই বলেছি, শিক্ষাই আপনাকে এগিয়ে নিতে পারে।
উইমেননিউজ : অবসর পান? অবসরে কি করেন?
সুফিয়া : অবসর সময় আমি নিউজ দেখি, টিভি দেখি, পরিবারকে সময় দেই। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেই। পৃথিবীর যে প্রান্তেই আমার আত্নিয় বা পরিচিত থাকুক তার খবরাখবর নেই। যে আমার বন্ধু তার খবর আমি সব সময় নেই। এটা আমার হবি বলা যায়।
উইমেননিউজ : এ সময়ের অভিভাবক/শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু বলতে চান কি?
সুফিয়া : আসলে মা-বাবার অনেক দায়িত্ব। শিক্ষকের কাছে পাঠিয়ে দিলাম সব হয়ে যাবে, এমনটি ভাবা ঠিক নয়। সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। একটি শিশুর প্রথম শিক্ষা শুরু হয় তার বাড়ি থেকেই। তাই আমরা সব সময় বাবা-মাকে বলি, সঠিকভাবে যত্ন নেবেন তবেই বাচ্চা সঠিকভাবে সঠিক পথে বড় হবে। সঠিকভাবে যত্ন না নিলে কিছু হবে না। একটি গাছ লাগালে যত্ন না নিলে সে গাছ ডালপালা ছাড়বে না। বাচ্চাও এই রকম। তার যত্ন না নিলে তার বিকাশ হবে না।
আর শিক্ষার্থীদের বলবো, প্রথমে লেখাপড়া, তারপর অন্য সব। লেখাপড়া ছাড়া কেউ কখনো জীবনে প্রকৃত সফল হতে পারে না।
উইমেননিউজ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সুফিয়া : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। ধন্যবাদ উইমেননিউজকে।
- মানুষ এখন ডাল-ভাত নয়, মাছ-মাংস নিয়ে চিন্তা করে
- ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট
- আজ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন
- তীব্র তাপপ্রবাহ, সতর্ক থাকতে মাইকিং
- ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপ আজ শুরু
- ২০২৩ সালে দেশে ধর্ষণের শিকার দুই শতাধিক শিশু
- বিশিষ্ট প্রচ্ছদ শিল্পী ধ্রুব এষ আইসিইউতে
- অফিসার নেবে সেভ দ্য চিলড্রেন
- ফের এক হচ্ছেন তাহসান-মিথিলা
- জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই দেশ আরও উন্নত হতো
- গরম লাগলেই ঠান্ডা পানি খান? জানুন কী ভুল করছেন
- হত্যাচেষ্টা মামলার প্রতিবেদন দাখিল, জেলে যেতে পারেন পরী
- যেসব অঞ্চলে শিলাবৃষ্টির শঙ্কা
- ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিল ইইউ
- ডেঙ্গু প্রতিরোধে একযোগে মাঠে নামছে ডিএসসিসির ৫৪ ওয়ার্ড
- বইমেলায় কানিজ কাদীরের কবিতার বই ‘মন’
- খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরো বাড়ল
- ২৯ ফেব্রুয়ারি বা লিপ ইয়ার নিয়ে ১০টি মজার তথ্য
- জমজমাট ফুটপাতের ঈদ বাজার
- ২৬৩ সাংবাদিকের জন্য ২ কোটি টাকা অনুমোদন
- জাপার সভায় গান গাইলেন রওশন এরশাদ
- কচি-কাঁচার আয়োজনে ভাষা দিবসে সাংস্কৃতিক আয়োজন
- দেশে ধনীদের সম্পদ বাড়ছে
- এবার বাংলা একাডেমি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন যারা
- গুলবদন বেগম: এক মুঘল শাহজাদির সাহসী সমুদ্রযাত্রার গল্প
- বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা
- যে বিভাগে বিচ্ছেদের হার বেশি
- রোমান্টিক যুগের অন্যতম কবি জন কিটস
- ৭ই মার্চ পরিস্থিতি, কেমন ছিলো সেই দিনটি
- ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ