ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ৯:৪৫:০৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ফের কমল স্বর্ণের দাম মক্কা ও মদিনায় তুমুল বৃষ্টির শঙ্কা খালেদার গ্যাটকো মামলায় চার্জগঠনের শুনানি পেছাল কুড়িগ্রামে তাপদাহ: বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

সবুজের মাঝে কালো ধান নজর কেড়েছে সবার

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৩৪ পিএম, ৬ নভেম্বর ২০২২ রবিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

দিগন্তজোড়া ধানক্ষেত। মাঝখানে টুকরো জমিতে সবুজের মাঝে কালচে রঙের ধান। প্রথমবারের মতো ক্যানসার প্রতিরোধী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পুষ্টি সমৃদ্ধ উচ্চ ফলনশীল ‘ব্ল্যাক রাইস’ বা ‘কালো ধান’ চাষ করে সাড়া ফেলেছেন । উপজেলার নিয়ামতপুর দেওয়ানিপাড়া গ্রামের মাঠে নতুন প্রজাতির এই ধান নজর কেড়েছে সবার।

বাজারে নতুন প্রজাতির এই ধান বা চালের দাম বেশি হওয়ায় আগামী মৌসুমে এই ধান চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন স্থানীয় চাষিরা। এ ধরনের ধান চাষে তেমন কোনো রোগবালাই না থাকায় ভালো ফলনের আশা কৃষক শফিকুলের। উচ্চ ফলনশীল এসব ধানের আবাদ বৃদ্ধি করতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস উপজেলা কৃষি বিভাগের। 
সরেজমিনে দেখা গেছে, চারপাশে সবুজ ধানক্ষেত। মাঝখানে কালো রঙের ধান। অন্যান্য ধানের মতো এই ধান গাছ দেখতে সবুজ। তবে ধানগুলো কালো। প্রতিটি গাছের ডগায় ঝুলছে কালো ধানের শিষ। এ ধান দেখতে ভিড় করেছে এলাকার মানুষ। ‘ব্ল্যাক রাইস’ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহলের কমতি নেই।

কৃষক শফিকুল ইসলাম  বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করছি। আমার আগ্রহ একটাই- কীভাবে নতুন জাতের ধান বা অনান্য ফসল বেশি ফলানো যায়। টিভির মাধ্যমে এই কালো ধানের বিষয়ে জানতে পারি। পরে আমার এ ধানের প্রতি আগ্রহ জাগে। দীর্ঘ দিন ওই কোম্পানির সঙ্গে কাজ করার ফলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে আমি জানতে পারি যে, ব্ল্যাক রাইস ধান বাংলাদেশে আছে, পাওয়া যায়। সেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এক কৃষককে ছোট একটা ডোমো ট্রায়াল করেন। সেখানে সেই কৃষক ঠিকমতো চাষ করতে পারেন নাই। পরে আমাকে ওই কর্মকর্তা ৫০০ গ্রাম ধানবীজ দেন। আমি খুশি হয়ে ধানের জন্য ৫০০ টাকা এবং উনাকে নাস্তা খাইতে ৫০০ টাকা দেই। এরপর এই ধান চাষ করি। তেমন একটা সার-কীটনাশকের প্রয়োজন হয়নি। পোকামাকড় নাই বললেই চলে।

তিনি বলেন, এই ধান যখন হয়ে গেল তখন স্থানীয় কৃষক, এলাকার জনগণ ধান দেখার জন্য আগ্রহী হয়ে ক্ষেতের চারপাশে ঘিরে ধরে। প্রতিদিনই লোকজন ধান দেখার জন্য আসে। এ ধানের ফলন দেখছি মোটামুটি ভালো। সবাই এ ধানের বীজ নেওয়ার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে। যদি আমি বীজের ভালো দাম পাই তাহলে আমার দেশের ও এলাকার কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবো। আমার ২২ শতক জমিতে বীজসহ সবমিলে খরচ হয়েছে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। আশা করছি ৬ থেকে ৭ মণ ধান পাব। এবারের ধান কেটে এগুলো বীজের জন্য সংরক্ষণ করা হবে এবং তা বিক্রি করবো। এবারের ফলন, দাম এবং বাজারের ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী সময়ে আবাদ সম্প্রসারণের বিষয়টি।

দেওয়ানীপাড়া এলাকার কৃষক মাজেদুল বলেন, আমার চাচাতো ভাই শফিকুল ইসলাম বাবু প্রথমবারের মতো ব্ল্যাক রাইস বা কালো ধান আবাদ করে সাড়া ফেলেছেন, আলোচনায় এসেছেন। আমরা সবাই এখানে আসতেছি, দেখতেছি- এটা কি রকম হয়েছে। যদি এটা উন্নতমানের হয়, তাহলে আমরাও ভবিষ্যতে এটা আবাদ করবো। 

একই ইউনিয়নের কলাগাছ গ্রামের কৃষক শহিদুল  বলেন, আমি শুনলাম নতুন জাতের ধান চাষ হয়েছে এই এলাকায়। এসে দেখলাম ধান খুব সুন্দর হয়েছে। ধানের শীষের গঠন প্রণালীও ভালো, ধান দেখতেও সুন্দর, ধানের ওজনও দেখছি ভালো। আগামী সিজনে এই কালো ধান আমিও চাষাবাদ করবো।

এলাকার আরেক কৃষক মজনু বলেন, আমাদের চিন্তায় আসেনি এ রকম জাতের ধান আছে, কিন্তু শফিকুল ভাই আবাদ করে দেখিয়েছেন। তিনি অবশ্য ফসল নিয়ে নানাভাবে ভাবেন এবং বিভিন্ন গবেষণার মতো কাজ করে থাকেন।

স্থানীয় কৃষক নুর আলম বলেন, সবার মুখে শুনতেছি বাবু কালো ধান লাগাইছে। এসে দেখি সবাই দেখতেছে। এই ধানটার দামও ভালো। এই ধানের চালের ভাত খেতে নাকি সুস্বাদু। এ ধান আগামীতে আমি চাষ করব।

সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিনা বেগম  বলেন, আমাদের সৈয়দপুর উপজেলা ভৌগোলিক কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমাদের একটি ট্রেন্ড আছে- নীলফামারী জেলার মধ্যে সৈয়দপুর উপজেলায় অনেক বেশি পরিমাণে আগাম সবজি আবাদ হয়। পাশাপাশি বোরো ধানও ভালো পরিমাণে আবাদ হয়। আমাদের এখানে শফিকুল ইসলাম বাবু নামে এক কৃষক ব্যক্তিগতভাবে নিজের সোর্স থেকে ব্ল্যাক রাইসের বীজ সংগ্রহ করেন এবং সৈয়দপুর উপজেলার দেওয়ানী পাড়ায় ২২ শতক জমিতে রোপণ করেন। সেটি আমাদের নজরে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ধারণা করছি এই ধানে পুষ্টিগুণ বেশি। পুষ্টিগুণ কতটুকু থাকবে এই বিষয়টি কিন্তু গবেষণার বিষয়। গবেষণায় যদি পাঠানো যায় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান যদি বিষয়টি নজরে নিয়ে আসে, তাহলে হয়তো তারা রিসার্চ করে বলতে পারবে যে এখানে পুষ্টিগুণ কতটুকু আছে। এই ধান আবাদের ক্ষেত্রে পোকামাকড়ের আক্রমণ অথবা অনান্য সমস্যার ব্যাপারে যদি কেউ পরামর্শ চায়, তাহলে অবশ্যই কৃষি অফিস তার পাশে থাকবে। 

প্রসঙ্গত, কৃষি অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক ও ধান গবেষক ড. মেহেদি মাসুদ বাংলাদেশে এই জাতের ধান আবাদের জন্য নিয়ে আসেন। থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভারত, জাপান, চীন ও ভিয়েতনাম থেকে সংগ্রহ করা ব্ল্যাক রাইস এখন চাষ হচ্ছে বাংলাদেশে। কুমিল্লা, নওগাঁ, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওসহ কয়েকটি জেলায় আবাদ শুরু হয়েছে এই জাতের ধানের। এ ধানে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বক পরিষ্কার করে ও শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে ফুরফুরে রাখে। এতে থাকা ফাইবার হার্টকে রাখে সুস্থ। কালো চাল ডায়েবেটিস, স্নায়ুরোগ ও বার্ধক্য প্রতিরোধক।