ঢাকা, বৃহস্পতিবার ০৯, মে ২০২৪ ৫:৪৯:২৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন রবীন্দ্রনাথ মানুষের পরিশুদ্ধতার কথা ভাবতেন: সিমিন হোসেন মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে: প্রধানমন্ত্রী আজ পঁচিশে বৈশাখ, কবিগুরুর জন্মদিন যৌন হয়রানি: ঢাবি অধ্যাপক নাদিরকে অব্যাহতি হজ কর্মসূচি উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

সান্ধকোর্স পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে

বাসস | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৩৮ এএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চালু হওয়া বিভিন্ন ইভিনিং কোর্সের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, একশ্রেণীর শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন, যাতে সার্বিক শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বলেন, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ডিপার্টমেন্ট কোর্স, ইভিনিং কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স ও ইনস্টিটিউটের ছড়াছড়ি। নিয়মিত কোর্স ছাড়াও এসব বাণিজ্যিক কোর্সের মাধ্যমে প্রতি বছর হাজার হাজার গ্রাজুয়েট বের হচ্ছে। এসব ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষার্থীরা কতটুকু লাভবান হচ্ছে এ ব্যাপারে প্রশ্ন থাকলেও একশ্রেণীর শিক্ষক ঠিকই লাভবান হচ্ছেন। তারা নিয়মিত নগদ সুবিধা পাচ্ছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছেন।
রাষ্ট্রপতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন দিনে সরকারি ও রাতে বেসরকারি চরিত্র ধারণ করে। বিশ্ববিদ্যালয় সন্ধ্যায় মেলায় পরিণত হয়। এটা কোনভাবেই কাম্য নয়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, কিছু শিক্ষক আছেন যারা নিয়মিত কোর্সের ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন। কিন্তু ইভিনিং কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার ব্যাপারে তারা খুবই সিরিয়াস। কারণ, এগুলোতে নগদ প্রাপ্তি থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত মূল সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে রাষ্ট্রপতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, মনে রাখবেন বিশ্ববিদ্যালয় চলে জনগণের টাকায়। সুতরাং এর জবাবদিহিও জনগণের কাছে।
রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সান্ধ্য কোর্সগুলো পুনর্বিচনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমি এই সান্ধ্য কোর্স পদ্ধতি পছন্দ করতে পারি না। সন্ধ্যার পর শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ থাকে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলার রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভাইস-চ্যান্সেলার ও শিক্ষকদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা পয়সা সততার সঙ্গে সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অভিভাবক ও একাডেমিক লিডার অভিহিত করে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, কোনো কোনো উপাচার্য ও শিক্ষকের কর্মকান্ড দেখলে মনে হয় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল কাজ কি- তা ভুলে গেছেন। অনেক শিক্ষক প্রশাসনিক পদ-পদবি পেয়ে নিজে যে একজন শিক্ষক সে পরিচয় ভুলে যান।
গবেষণা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অত্যন্ত মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এখন গবেষণার মান নিয়েও নানা কথা ওঠে। অনেক বিভাগেই অন্যান্য পদের শিক্ষকের চেয়ে অধ্যাপকের সংখ্যা বেশি।
রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পদোন্নতির ক্ষেত্রে গবেষণা মৌলিক, নাকি কেবল পদোন্নতির জন্য একটি গবেষণা তা বিবেচনায় নেয়ার নির্দেশ দেন।
সম্প্রতি দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অমানবিক ও অনভিপ্রেত ঘটনার প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, একে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও শিক্ষার্থীদের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।
ছাত্র-ছাত্রীরা জ্ঞান অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, লাশ হয়ে বা বহিষ্কৃত হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য নয়। কর্তৃপক্ষ সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভিসি ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের ডিসেম্বরের আগে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে নেয়ার পরামর্শ দেন, যাতে ভর্তিচ্ছুদের বাড়তি ঝামেলা এড়ানো যায়।
রাষ্ট্রপতি গ্রাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে তাদের দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার এবং পরবর্তীতে পরিবারসহ দেশের জন্য ভালো কিছু করার উপদেশ দেন। তিনি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এমনকি শহর এলাকায়ও ভেজাল ওষুধ সরবরাহের কঠোর সমালোচনা করেন। চিকিৎসক ও ফার্মাসির ছাত্রদের ভেজাল ও নকল ওষুধের বিরুদ্ধে জোরালো প্রচারণা চালানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, এসব ওষুধ মানুষের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।
রাষ্ট্রপতি ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ঢাবি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন যে, পরবর্তী নির্বাচন কোনো ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছাড়া অনুষ্ঠিত হবে।
ডাকসু নেতৃবৃন্দের ভূমিকার সমালোচনা করে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ডাকসু নেতাদের ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণে কাজ করা উচিত।
রাষ্ট্রপতি হামিদ ২০২০ সালে মুজিববর্ষকে সামনে রেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মরণোত্তর সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি প্রদান করার সিদ্ধান্তের জন্য ঢাবি কর্তৃপক্ষের প্রতি কতৃজ্ঞতা জানান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উৎকর্ষ ও উন্নত মানবসম্পদ গড়ার কেন্দ্র অভিহিত করে বলেন, ১৯২১ সালের ১ জুলাই যাত্রা শুরুর পর থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬-দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান সর্বোপরি ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘনিষ্ট যোগ রয়েছে।
পদার্থ বিজ্ঞানী নোবেল বিজয়ী ও জাপানের ইনস্টিটিউট ফর কসমিক রে রিসার্চ অব টোকিও ইউনিভার্সিটির ডিরেক্টর প্রফেসার তাকাকি কাজিতা সমাবর্তন বক্তা হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মো. আকতারুজ্জামান, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভিসি (শিক্ষা) প্রফেসর ড. নাসরিন আহমেদও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে ২০,৭৯৬ জন শিক্ষার্থীকে গ্রাজুয়েট ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে ৯৮ জন রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেন। এছাড়া, ৫৭ জনকে ডক্টর অব ফিলসফি (পিএইডি) ও ১৪ জনকে মাস্টার অব ফিলসফি (এমফিল) ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৭টি কলেজের শিক্ষার্থীরাও ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সমাবর্তনে অংশ নেন।
১৯২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।
ডাকসু নেতৃবৃন্দ, কূটনীতিক এবং সিনিয়ার বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।