ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:৩১:৩৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

কেন্দ্রে উত্তাপ, তৃণমূলে নির্বাচনি হাওয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:০১ এএম, ১০ নভেম্বর ২০২৫ সোমবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) মধ্যে তীব্র মতবিরোধ রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। অনেকে এ কারণে আগামী নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কথাও বলছেন। তবে মাঠপর্যায়ে এ শঙ্কার প্রভাব খুব বেশি নেই। ইতোমধ্যে দেশের প্রায় প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা মাঠে আছেন। কোথাও কোথাও এনসিপির প্রার্থীও দেখা যাচ্ছে। ঢাকায় কি হচ্ছে এ খবর জানলেও প্রার্থীদের কার্যক্রমে তার প্রভাব নেই। তারা দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন, ভোট প্রার্থনা করছেন। এলাকায় পোস্টার, ফেস্টুন ও লিফলেট বিতরণ করেছেন। উঠান বৈঠক, গণসংযোগ, চায়ের দোকানে আড্ডাসহ নির্বাচনের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি চলছে। ভোট নিয়ে চারদিকে সাজসাজ রব। তবে কোথাও কোথাও প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত ও সহিংসতার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। মোট কথা; মনোনয়নের সবুজ সংকেত পাওয়া বেশির ভাগ প্রার্থী নির্বাচনি মাঠে আছেন। এর আগে সরকার ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আশা করি রাজনৈতিক দলগুলো শিগগিরই বিদ্যমান পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবে। দূর হবে নির্বাচন নিয়ে সব ধরনের সংশয়-শঙ্কা। সবাই পুরোদমে ভোটের মাঠে নেমে পড়বে। বিএনপি ইতোমধ্যে ২৩৭টি আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করছে। আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছেন। তারা জনগণের কাছে যাচ্ছেন, ভোট চাচ্ছেন, একই সঙ্গে রাষ্ট্র কাঠামোর ৩১ দফা তুলে ধরছেন। সবমিলিয়ে দেশে এখন নির্বাচনি আবহ বিরাজ করছে।

কক্সবাজার-২ আসনের জামায়াতের প্রার্থী ও দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, জামায়াত এতদিন নির্বাচনি মাঠে ছিল, এখন বিএনপিও নেমেছে। প্রার্থীরা ভোট চাচ্ছেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রের পরিস্থিতি থেকে তৃণমূল আলাদা নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমের কল্যাণে জনগণ সব জেনে যাচ্ছে। ফলে প্রার্থীদের তৎপরতায় ভোটের প্রতি যেমন জনগণের আগ্রহ বেড়েছে। তেমনি নির্বাচন ঘিরে কেন্দ্রে সংকট থাকায় জনগণের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বও কাজ করছে। এই সংকট যত দ্রুত নিরসন হবে, নির্বাচনের বিষয়ে জনগণের উৎসাহ তত বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, নির্বাচনি আমেজের সঙ্গে বাংলাদেশের মূল রাজনৈতিক যে দৃশ্যপট, সেখান থেকে সংস্কার ও বিচার প্রসঙ্গ এক রকম উৎখাত করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, এনসিপি তার জায়গা থেকে সংস্কার, বিচার নিয়েও আলাপ করছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনকেন্দ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং দল গোছানোর কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে যায়, দলগুলোর মতবিরোধের কারণে ঢাকায় কিছুটা কম হলেও সারা দেশেই জমে উঠেছে ভোটের রাজনীতি। পাড়া-মহল্লার অলিগলি, চায়ের দোকান-সবর্ত্রই আলোচনায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। শুধু প্রার্থী নয়, ভোটারদের মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই। কোন দলে কে প্রার্থী হচ্ছেন, কোন দল কাকে মনোনয়ন দিয়েছে, কার জয়ের সম্ভাবনা বেশি বা কম, যে যার মতো করে এ ধরনের হিসাব মেলাতে ব্যস্ত। বিএনপি ও জামায়াতসহ সব দলের নেতারা নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। খোদ রাজধানীতেও বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে পোস্টার, ব্যানার সাঁটানো হয়েছে।

এদিকে ১৭ অক্টোবর জাতীয় জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে বিএনপি, জামায়াতসহ ২৫টি রাজনৈতিক দল। তবে এনসিপি ওই সনদে স্বাক্ষর করেনি। এরপর থেকেই দেশের রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তাপ ছড়াতে শুরু করে। এই উত্তাপের পারদ ক্রমেই বাড়ছে।

২৮ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব জমা দেওয়ার পর তাতে আপত্তি জানায় বিএনপি। সনদ বাস্তবায়নে গণভোট কবে হবে, তা নিয়েও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে মতভিন্নতা শুরু হলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়। বিএনপি সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট করার পক্ষে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী চায় আগে গণভোট পরে জাতীয় নির্বাচন।

স্বাক্ষর না করলেও এনসিপি বলছে, সনদে নোট অব ডিসেন্ট থাকবে না। দলগুলোর ত্রিমুখী অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত ২ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের সভা থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। বলা হয়, নেতারা ব্যর্থ হলে সরকার তার নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে। সরকারের এই সময়সীমা শেষ হয়েছে রোববার। রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার বিষয়ে পর্দার আড়ালে কিছু আলাপ-আলোচনার কথা শোনা গেলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচন হবে কিনা-সে নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সুধী সমাজের মধ্যে নানা আলোচনা আছে।

দেশের চলমান পরিস্থিতি ও তৃণমূলে নির্বাচনি আমেজ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটাই স্বাভাবিক। কেন্দ্রে তারা (রাজনৈতিক দলগুলো) রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তৃণমূলে নির্বাচনই মুখ্য অগ্রাধিকার। তাই দলগুলো এবং ভোটাররা নির্বাচনের পথে হাঁটছে। জানা গেছে, রোববার দিনভর রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি সচিবালয়সহ সর্বত্র নির্বাচনের শঙ্কা নিয়ে নানা আলোচনা ঘুরপাক খায়।

এদিকে রাজশাহীতে এক মতবিনিময় সভায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। তিনি বলেন, আমি যেখানে যাই, পোস্টার দেখতে পাচ্ছি, মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখতে পাচ্ছি। নানা কারণে অনেকে ভাবেন, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। কিন্তু আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, সরকারের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে আমরা বদ্ধপরিকর।’

সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জিকে গউস বলেন, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দেশের মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। ঢাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কি হচ্ছে-তৃণমূলে তার কোনো প্রভাব পড়ছে না। সিলেটের প্রতিটি এলাকায় নির্বাচনি সাজসাজ রব। সব দলের প্রার্থীই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন, ভোট চাচ্ছেন। আমরাও ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। ভোটাররা ১৭ বছর ভোট দিতে না পারায় তাদের মধ্যে যে ক্ষোভ বিরাজ করছিল, এখন সেটি নেই।

কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ২৩৭টি আসনে প্রাথমিকভাবে দলীয় একক প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এসব আসনে প্রার্থীরা পুরোদমে মাঠে নেমেছে। যেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা হয়নি সেখানেও একাধিক প্রার্থী মাঠে কাজ করছেন। নির্বাচনের পুরোপুরি আমেজ বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে। তৃণমূলের প্রতিটি এলাকায় নির্বাচনি হাওয়া বইছে।

নাটোর-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও দলটির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে মানুষ ভোট দিতে পারেননি। ভোটকেন্দ্রেও যেতে পারেননি। বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এলাকা ছাড়া ছিলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বাহিনী কাউকে ভোট দিতে দেয়নি। দিনের ভোট রাতে হয়ে যাওয়ায়, সাধারণ ভোটাররাও ভোট দিতে পারেননি। মানুষের মধ্যে ভোটের যে একটা আমেজ সেটি ছিল না। একটা ভীতিকর পরিস্থিতি ছিল। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সেই ভীতিকর অবস্থা কেটে গেছে। রমজানের আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা আসতেই সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানে নির্বাচনি আমেজ দেখা গেছে। মানুষ এখন অপেক্ষায় আছে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য।

বরিশাল-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী মো. রাজীব আহসান বলেন, এলাকার মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এমন উৎসাহ-উদ্দীপনা বিগত ১৭ বছরে দেখিনি। এলাকায় ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ আছে। আশা করি ক্রমইে এই উদ্দীপনা আরও বাড়বে।