ঢাকা, শনিবার ০৯, নভেম্বর ২০২৪ ২০:১৮:৩৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ তীব্র শীত কবে থেকে, জানাল আবহাওয়া অফিস ইলিশের দাম নাগালের বাইরে সেন্টমার্টিন প্রবেশে লাগছে লিখিত অনুমতি ও এনআইডি গাজায় নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু: জাতিসংঘ

যে বিভাগে বিচ্ছেদের হার বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:২৯ পিএম, ৩ মার্চ ২০২৪ রবিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

দাম্পত্য ভাঙনে প্রধানভাবে দায়ী পরকীয়া। এটির কারণে সারাদেশে ২৩ শতাংশ তালাক ও দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন হয়, যা ঢাকায় ২৮ শতাংশের বেশি। পরকীয়া প্রায় মহামারি রূপ নেওয়ায় দ্বিগুণ হয়েছে তালাকের ঘটনা। দেশে সবচেয়ে বেশি দাম্পত্যে ভাঙন হচ্ছে ধনীদের মধ্যে। দেশে বহুগামিতার মতো ঘটনাও বেড়েছে। সম্প্রীতি এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২২ (এসভিআরএস) এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে।

স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (এসভিআরএস) বিবিএসের মৌলিক জরিপগুলোর অন্যতম। এতে জনমিতির ১৩৮টি সূচকের তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। এ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ২৭ সূচক এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ১৭টি সূচকের তথ্য-উপাত্ত যুক্ত করা হয়েছে। সারাদেশের ২ হাজার ১২টি নমুনা এলাকার প্রায় ১৩ লাখ মানুষের কাছ থেকে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপে উঠে আসা এসব তথ্যকে উদ্বেগজনক মনে করে বিবিএস।

বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারি নীতিনির্ধারক, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগীসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কী কারণে দাম্পত্য বিচ্ছেদের ঘটনা বেড়েছে, তারও জবাব বোঝার চেষ্টা করেছে বিবিএস।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে সাধারণ বিয়ের হার পাওয়া গেছে ২৫ এর কিছু বেশি। ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে ওই বছর যত জনের বিয়ে হয়েছে, সেটা সাধারণ বিয়ের হার। এই হার ২০২১ সালে ছিল ১৮.৫।

জরিপ প্রতিবেদনে ২০০৬ সাল থেকে সাধারণ বিয়ের হারের গতিধারাও তুলে ধরা হয়েছে। জরিপে দেখা যাচ্ছে, সাধারণ বিয়ের হার এক বছরের ব্যবধানে অনেকটা বেড়েছে। এর আগের বছরগুলোতে তা ১৭ থেকে ২১ এর মধ্যে ছিল।

২০২২ সালে সাধারণ বিয়ের হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে করোনাকালের অর্থনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তার সম্পর্ক দেখছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ২০২০ ও ২১ সালের ধাক্কা অনেকটা কাটিয়ে ওঠার পর ২০২২ সালে বিয়ের হার বেড়েছে। গ্রামে এ হার বেশি।

সাধারণ বিয়ের হারে নারী-পুরুষের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। তবে ধর্মভেদে তারতম্য দেখা যায়। মুসলমানদের মধ্যে হারটি বেশি ২৬। অন্যদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে তা ১৮ এর কিছু বেশি। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর ক্ষেত্রে সাধারণ বিয়ের হার ১৫ এর মতো।

জরিপে নারী ও পুরুষেরা প্রথম বিয়ে কত বছর বয়সে করেছেন, তার একটি গড় হিসাব উঠে এসেছে। বিবিএস বলছে, পুরুষের বিয়ের গড় বয়স ছিল ২৪ বছর। নারীর ক্ষেত্রে তা ১৮ দশমিক ৪ বছর। শহরে পুরুষ ও নারীদের প্রথম বিয়ের গড় বয়স একটু বেশি। গ্রামে কম।

তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদের দুই ধরনের হার বিবিএসের জরিপে পাওয়া পায়। একটি হলো স্থুল, অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার অনুপাতে বিবাহবিচ্ছেদের হার। অন্যটি সাধারণ বিবাহবিচ্ছেদের হার, যেখানে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের হিসাব করা হয়।

বিবিএস বলছে, তারা বিচ্ছেদ হওয়া মানুষের নিবিড় সাক্ষাৎকার নিয়ে জরিপ করেছে। ফলে এই জরিপের মাধ্যমেই বিচ্ছেদের আসল কারণ উঠে এসেছে।

বিবিএসের হিসাবে, ২০০৬ থেকে ২০২১ সাল সময়ে স্থূলবিচ্ছেদের হার শূন্য দশমিক ৬ থেকে ১ দশমিক ১ এর মধ্যে ওঠানামা করেছে। ২০২২ সালে তা বেড়ে ১ দশমিক ৪ এ দাঁড়ায়।

সাধারণ বিবাহবিচ্ছেদের হারটি হিসাব করা হয়েছে নারী ও পুরুষ আলাদাভাবে। দেখা যায়, ২০২১ সালে নারীদের সাধারণ বিবাহবিচ্ছেদের হার ছিল ২ এর সামান্য কম। সেটা পরের বছর বেড়ে ৩ দশমিক ৬-এ দাঁড়ায়। একইভাবে পুরুষের ক্ষেত্রে হারটি ২০২১ সালে ছিল ২-এর সামান্য বেশি। পরের বছর তা বেড়ে ৩ দশমিক ৮ এ দাঁড়ায়।

বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে বড় কারণ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক। জরিপে উত্তরদাতাদের প্রায় ২৩ শতাংশ এই কারণ সামনে এনেছেন। এরপর রয়েছে দাম্পত্যজীবন পালনে অক্ষমতা ২২ শতাংশ।

ভরণপোষণের ব্যয় বহন করতে অসামর্থ্য অথবা অস্বীকৃতি, পারিবারিক চাপ, শারীরিক নির্যাতন, যৌন অক্ষমতা বা অনীহা ইত্যাদিও রয়েছে বিবাহবিচ্ছেদের কারণের তালিকায়।

বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণে সবচেয়ে বেশি বিচ্ছেদ হয়েছে ঢাকা বিভাগে, কম ময়মনসিংহ বিভাগে। দাম্পত্যজীবনে অক্ষমতায় বিবাহবিচ্ছেদ বেশি বরিশালে, কম সিলেটে। ভরণপোষণ দিতে অসমর্থতার কারণে বিবাহবিচ্ছেদ বেশি রাজশাহীতে, কম চট্টগ্রামে।

পারিবারিক চাপে বিবাহবিচ্ছেদ বেশি ময়মনসিংহে, কম ঢাকায়। নির্যাতনের কারণেও বিবাহবিচ্ছেদ বেশি হয়েছে ময়মনসিংহে, কম রাজশাহীতে। যৌন অক্ষমতা অথবা অনীহার কারণে রংপুরে বিবাহবিচ্ছেদ বেশি হয়েছে। বরিশালে এ ক্ষেত্রে হার শূন্য। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকায় তালাকের ঘটনা বেশি ঘটছে সিলেটে।

বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মুসলমানদের মধ্যে তালাকের ঘটনার কারণগুলো জাতীয় হারের মতোই। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘আলাদা’ হওয়ার কারণের দিক দিয়ে ব্যতিক্রমী চিত্র দেখা যায়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আলাদা হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ দাম্পত্যজীবন বজায় রাখতে অক্ষমতা ও শারীরিক নির্যাতন।

যেমন শারীরিক নির্যাতনকে বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন মুসলমানদের ১০ শতাংশের কম। হিন্দুদের ক্ষেত্রে হারটি ২০ শতাংশের কাছাকাছি।

সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথও মনে করেন, হিন্দু নারীদের পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার হার বেশি। এর সঙ্গে যৌতুকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। হিন্দু নারীরা যেহেতু বাবার সম্পত্তির ভাগ পান না, সেহেতু তাদের ওপর যৌতুক আনার চাপ থাকে। তিনি বলেন, আইনত হিন্দু সম্প্রদায়ে বিবাহবিচ্ছেদের সুযোগ নেই। তবু অনেকে ‘আলাদা’ হচ্ছেন। হিন্দু নারীদের মধ্যে মুখ বুঝে সবকিছু সহ্য না করার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে।

বিবিএসের পরিসংখ্যানের বাইরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তথ্য বলছে, বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন সাধারণত বেশি করেন নারীরা। ২০২২ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মোট বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে ৭ হাজার ৬৯৮টি। এর মধ্যে স্ত্রীরা আবেদন করেছিলেন ৫ হাজার ৩৮৩টি, যা মোট আবেদনের ৭০ শতাংশ। ঢাকা উত্তরের চিত্রও প্রায় একই। সেখানে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনের ৬৫ শতাংশ নারীর।

সমাজবিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য মাহবুবা নাসরীন বলেন, অনেকেই দাম্পত্যজীবনে সুখী হন না। কিন্তু নানান পারিপার্শ্বিক কারণে সেটা মেনে নিয়ে সংসার করে যান। অবশ্য অনেকেই দাম্পত্যজীবনে সুখী হওয়াকেই প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

২০২২ সালে কেন হঠাৎ বিয়ে বাড়ার কারণ বিষয়ে তিনি বলেন, তারা গবেষণা করে দেখেছেন এর সঙ্গে করোনা মহামারির সংযোগ আছে। মহামারির সময়ে অর্থনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তার কারণে বিয়ে উৎসাহিত হয়নি। ২০২২ সালে সংকটটি অনেকটা কেটে যাওয়ায় বিয়ে বেড়েছে। নানা আর্থসামাজিক কারণে বাল্যবিবাহও বেড়েছে। বিবিএসের জরিপেও সেটি পাওয়া যায়। জরিপ বলছে, ১৮ বছরের আগে বিয়ে হওয়া নারীর অনুপাত (২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী) ২০২২ সালে পাওয়া যায় প্রায় ৪১ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৩২ শতাংশের আশপাশে।