ঢাকা, বুধবার ১৮, জুন ২০২৫ ২১:০৫:৩১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সন্ধ্যায় হাসপাতালে যাবেন খালেদা জিয়া উপকূলে চলছে ভারী বর্ষণ, জনজীবন স্থবির বাসের ধাক্কায় মা-ছেলেসহ সিএনজির তিন যাত্রী নিহত ৬০ কিমি বেগে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টির আভাস এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় বাড়লো

সাংবাদিকতায় নারী: একটি পুনর্মূল্যায়ন

সজীব সরকার, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মেহেনাজ হাসান | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:২৫ পিএম, ২৭ মে ২০২৫ মঙ্গলবার

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা কিংবা কর্মস্থল হিসেবে গণমাধ্যম এখনো ঠিক আস্থাভাজন হয়ে উঠতে পারেনি। চাকরির স্থায়িত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং ন্যূনতম জীবনমান নিশ্চিত করার মতো বেতন না পাওয়া এর বড় একটি কারণ। এসবের সঙ্গে রয়েছে পেশাগত ঝুঁকির মতো বিষয়। আর নারীদের জন্যে বিষয়টি আরো জটিল : ‘মিডিয়া খারাপ জায়গা’ আর ‘মিডিয়ার মেয়েরা খারাপ’-পক্ষপাতমূলক, পুরুষতান্ত্রিক ও প্রচ- নারীবিদ্বেষী এমন অনেক ধারণা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের পক্ষে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে পাহাড়সম বাধা হয়ে দাঁড়ায়। নারীদের উচ্চশিক্ষা নিয়েও রয়েছে ভ্রান্ত অনেক ধারণা। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ার বিষয় হিসেবে সংবাদিকতা বা গণমাধ্যমকে বেছে নিতে চাইলে নারী শিক্ষার্থীদের ঘরে-বাইরে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। ফলে (নারী) শিক্ষার্থীর নিজের পছন্দ-অপছন্দের চেয়ে পরিবার ও সমাজ কী চায়, সেটিই তার কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে।
এমন প্রেক্ষাপটে নারীদের এসব বাধা-বিপত্তির মধ্যে থাকার বিষয়টি অনেক পুরোনো। তবে এসব বাধা-বিপত্তির কারণ ও ধরন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে এবং আগের জানা পরিস্থিতির চেয়ে বর্তমানের পরিস্থিতি ইতিবাচকভাবে বদলেছে কি না, সে বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্যে সম্প্রতি ‘সাংবাদিকতা শিক্ষা ও পেশায় নারীর চ্যালেঞ্জ : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। মার্চÑমে ২০২১ সময়ের মধ্যে পরিচালিত এ গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাংবাদিকতা বিষয় নিয়ে পড়ছেন বা পড়েছেন এবং সাংবাদিকতা করছেন- এমন নারীদের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হয়। সমস্যাগুলো জানার পাশাপাশি গবেষকরা এ পেক্ষাপটে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন ঘটেছে কি না, সেটিও জানার চেষ্টা করেছেন।
বর্তমান প্রবন্ধ রচনার জন্যে পুরোনো ধারণা ও তথ্যের ওপর নির্ভরশীল না থেকে নতুন গবেষণার আওতায় জরিপ থেকে পাওয়া বেশকিছু কেস স্টাডির ওপর নির্ভর করা হয়েছে।
গবেষণার মূল জিজ্ঞাসা
‘সাংবাদিকতা শিক্ষা ও পেশায় নারীর চ্যালেঞ্জ: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নারী শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমের নারী কর্মীদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে মূলত এই বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করা হয়েছে :
১. উত্তরদাতারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাংবাদিকতা/গণমাধ্যম বিষয়ে পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে পরিবারের বাধা বা সমর্থন পেয়েছেন কি না? পেয়ে থাকলে এসব বাধা বা সমর্থনের ক্ষেত্র-উৎস-ধরন কী?
২. উত্তরদাতারা গণমাধ্যমে কাজ করার ক্ষেত্রে পরিবারের বাধা বা সমর্থন পেয়েছেন কি না? পেয়ে থাকলে এসব বাধা বা সমর্থনের ক্ষেত্র-উৎস-ধরন কী? এবং
৩. জরিপ থেকে নতুন কোনো তথ্য বা অন্তর্দৃষ্টির অনুসন্ধান।

নমুনায়ন ও গবেষণা পদ্ধতি
২০২১ সালের ১ মার্চ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পরিচালিত ‘সাংবাদিকতা শিক্ষা ও পেশায় নারীর চ্যালেঞ্জ : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় সর্বমোট ৮৮টি নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের (৩টি সরকারি/পাবলিক ও ৩টি বেসরকারি) ১০ জন করে মোট ৬০ জন শিক্ষার্থী (সবাই সাংবাদিকতা বা গণমাধ্যম বিষয়ের বর্তমান বা সাবেক শিক্ষার্থী) এবং ৯টি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের (মুদ্রিত সংবাদপত্র, অনলাইন সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও রেডিও) মোট ২৮ জন সাংবাদিককে নমুনাভুক্ত করা হয়েছে।
গবেষণায় তথ্য সংগ্রহের জন্যে মূলত জরিপ (সার্ভে) পদ্ধতির ওপর নির্ভর করা হয়েছে। তবে জরিপের পাশাপাশি ঘটনার নিবিঢ় অধ্যয়ন (কেস স্টাডি) এখানে গুরুত্ব পেয়েছে। এর পাশাপাশি, নারীদের সার্বিক পরিস্থিতি এককভাবে বোঝার চেষ্টা না করে এর বিপরীতে সাধারণভাবে ‘সুবিধাজনক অবস্থানে’ থাকা পুরুষ সদস্যদের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা (কম্পেয়ার অ্যান্ড কনট্রাস্ট) করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্যে এ গবেষণায় প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রের (বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সাংবাদিকতা/গণমাধ্যম বিষয়ের শিক্ষার্থী) ২০ জন পুরুষ সদস্যের সমন্বয়ে দুটি ফোকাস দল আলোচনা (এফজিডি) ও ১০টি মূল তথ্যদাতার (পুরুষ সাংবাদিক) সাক্ষাতকার (কেআইআই) পরিচালনা করা হয়েছে।
নমুনা ভ্রান্তি (স্যাম্পল এরর) কমিয়ে আনতে সুবিধাজনক নমুনায়ন (কনভেনিয়েন্ট স্যাম্পলিং) এবং দৈবচয়ন (র‌্যানডম স্যাম্পলিং) Ñ উভয় ক্ষেত্রেই নতুন নমুনার স্বেচ্ছায় অন্তর্ভুক্তির সুযোগ রাখা হয়। গবেষকরা এজন্যে চেনা পরিসরে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ মুক্ত একাধিক পরিসরে এ বিষয়ে তথ্য চেয়ে একাধিকবার বার্তা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া বাস্তবচিত্রের সঠিক ধারণা পেতে এককভাবে কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নপত্রের (ক্লোজ এন্ডেড কোয়েশ্চনেয়ার) ওপর নির্ভর না করে মুক্ত মতামতকে (ওপেন এন্ডেড কোয়েশ্চনেয়ার) বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

তথ্য উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ
গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে এদের অর্থ উদ্ধারের সুবিধার্থে মূল বিশ্লেষণে যাওয়ার আগে প্রতিনিধিত্বমূলক কয়েকটি ঘটনা (কেস স্টাডি) এখানে সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো :
কেস স্টাডি-১ : ‘বাসায় জানেই না আমি ভার্সিটিতে পড়ি’
“আমি যে শহরে থাকি, সেখানে সবাই খুব পুরোনো চিন্তার মানুষ। আমি কলেজে পড়ার সময় আমার বাবা হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি না থাকলে আমার কী হবে ভেবে তখন তিনি হঠাৎ করেই আমাকে বিয়ে দিয়ে দেন। আমি এটার জন্যে একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। আমি সবসময় চেয়েছি অনেক পড়ালেখা করবো। আমার বাবার অনুরোধের কারণে আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন পছন্দ না করলেও আমার পড়ালেখা বন্ধ করেনি। বিয়ের পরপরই আমি গর্ভধারণ করি। স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির সবার প্রচ- বিরোধিতার পরও বাবার বাড়িতে থেকে আমি পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষার ফল বের হওয়ার আগেই আমার বাবা মারা যান। এরপর থেকে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাকে একেবারে ঘরে বন্দি করে রাখতে চেয়েছে। অনেক বুঝিয়েও আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্যে তাদের রাজি করাতে পারিনি। আমাকে বলেছে, ‘অনেক লেখাপড়া হয়েছে, আর দরকার নাই। এখন সন্তান হয়েছে, তাকে নিয়ে থাকো আর সংসার সামলাও। বাড়ির বউ বেশি লেখাপড়া করলে চরিত্র খারাপ হয়ে যাবে।’ কিন্তু আমি এটা মানতে পারছিলাম না। এক বছর গ্যাপ পড়ে গেলেও পরের বছর ঘরের কাউকে না বলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হয়েছি। সবসময় ক্লাস করতে পারি না। মায়ের কাছে, বান্ধবিদের কাছে সন্তানকে রেখে মাঝে-মধ্যে ক্লাস করি, পরীক্ষাগুলো নিয়মিত দিই। যেদিন ভালোভাবে পাস করে বের হবো, সেদিন স্বামী আর শ্বশুর-শাশুড়িকে জানাবো।”
অনুসিদ্ধান্ত :
১. উত্তরদাতার বাবা পরিবারের অভিভাবক হিসেবে মেয়ের বিয়ে নিয়ে ভেবেছেন, তার পড়াশোনা বা ক্যারিয়ার নিয়ে নয়। মেয়েকে পড়ালে সে নিজেই নিজের ‘সহায়’ হয়ে উঠবেÑ এই ভাবনাটুকু অন্য অনেকের মতো এই উত্তরদাতার বাবার মনেও আসেনি। তাই নিজের অসুস্থতার পর আশঙ্কা থেকে তিনি মেয়েকে বিয়ে দিয়ে তার ‘গতি’ করে দেওয়ার কথা ভেবেছেন।
২. উত্তরদাতা কী চান, তা তার পরিবার যেমন গুরুত্ব দেয়নি, তেমনি তার স্বামী ও স্বামীর পরিবারের লোকজনও গুরুত্ব দেয়নি। পড়ালেখা বা সন্তান ধারণ- এর কোনোটাতেই উত্তরদাতার কোনো মতামত বা অধিকারের ব্যাপার এখানে দেখা যায়নি।
৩. স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের চাপে উত্তরদাতাকে পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। পরে তিনি কাউকে না জানিয়ে গোপনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন।
৪. স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন উত্তরদাতাকে বলেছেন, সন্তান লালন-পালন ও সংসার সামলানোই একজন নারীর কাজ। জেন্ডার ভূমিকা সম্পর্কিত পুরোনো ও অযৌক্তিক ধারণার প্রতিচ্ছবিই এই ঘটনায় পাওয়া যায়।
৫. এইচএসসি পরীক্ষা পাস করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা বললে উত্তরদাতার শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলেন, ‘বাড়ির বউ বেশি লেখাপড়া করলে চরিত্র খারাপ হয়ে যাবে।’ নারীর প্রতি অবজ্ঞা, অবিশ্বাস, সন্দেহ আর বিদ্বেষের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ এখানে দেখা যায়। আর এই বিদ্বেষ পুরুষতান্ত্রিক হলেও এতে অনেক নারীও আক্রান্ত (এই ঘটনার ক্ষেত্রে উত্তরদাতার শাশুড়ি ও ননদ)।
কেস স্টাডি-২ : ‘গণমাধ্যমে কাজ করতে পরিবার বাধা দেয়নি, তবে নিরাপত্তার কথা ভেবেছে’
“মিডিয়াতে কাজ করা নিয়ে পরিবারের নানা জনের নানা মত ছিলো। তবে কী কাজ করছি, তার ওপর নির্ভর করেছে পরিবারের মানুষের মতামত। অভিনয়, মডেলিং বা নাচের ক্ষেত্রে পরিবারের দ্বিমত ছিলো ১০০ ভাগ, যদিও সে ধরনের কাজ আমিও করতে চাইনি। আমার মনে হয়েছে, আমি যেভাবে বড় হয়েছি বা যে পরিবেশে বড় হয়েছি, সেই সিস্টেম আমাকে এমন কোনো কাজে আগ্রহ যোগায়নি। সেই সাথে ধর্মীয় এক ধরনের বাধা ছিলো প্রচ-। তবে আমি মিডিয়াতে যে ধরনের কাজ করছি (উপস্থাপনা, খবর পাঠ, আবৃত্তি), সে ধরনের কাজে কোনো ধরনের বাধা পরিবার থেকে ছিলো না। বরং আমাদেরকে (আমার ভাই-বোনদের) কাজের ক্ষেত্রে উৎসাহ দিয়েছেন বাবা-মা, খালামনি। আমার পছন্দের কাজে বাবা কিংবা মায়ের দিক থেকে কোনো বাধা ছিলো না। বাবা-মা দুজনই সবসময় পাশে ছিলেন, সাপোর্ট করেছেন সব কাজে। উপস্থাপনা বা সংবাদ পাঠ বাবার পছন্দনীয় জব ছিলো, তাই এ ধরনের কাজে তাকে পাশে বেশি পেয়েছি। আর সাংবাদিকতা নিজের খুব প্রিয় কাজ হলেও মায়ের দিক থেকে এটাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ আপত্তি ছিলো। তবে সেটা শুধু আমার জীবনের সিকিউরিটির জন্য ছিলো। সাংবাদিকদের জীবনের ঝুঁকিটা বেশি বলে মনে করতেন তিনি। সন্তানের নিরাপত্তার কথা সব বাবা-মাই ভাবেন। তবে পরিবারের কাছের মানুষ এবং সমাজের নানা মানুষের নানা নেগেটিভ মন্তব্যের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, যেটা কখনো কখনো পরিবারের মানুষের ওপরেও এক ধরনের প্রভাব ফেলেছে। আর কর্মক্ষেত্রে যদি বলি, তাহলে সে ধরনের কোনো অসুবিধা বা অসঙ্গতি আমি ফিল করিনি। বরং আমার সহকর্মীরা সবসময় আমাকে হেল্প করেছেন বা করেন। আমি মনে করি, মিডিয়ার কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা বা চ্যালেঞ্জ হলো সিকিউরিটি। যেহেতু কাজের ক্ষেত্রে সময়সীমা নেই, রাত-বিরাতে নানা জায়গায় যাতায়াত করাটা বড় সমস্যা। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের সিকিউরিটি এখনো কেউ এনসিউর করতে পারেনি। তাই এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ বলে আমি মনে করি।”
অনুসিদ্ধান্ত :
১. মিডিয়াতে কাজের ব্যাপারে পরিবারের সম্মতি ছিলো, তবে উত্তরদাতা সব ধরনের কাজের (যেমন : নাচ বা মডেলিং) ক্ষেত্রে পরিবারের সমর্থন পাবেনÑ এমন পরিবেশ ছিলো না। পরিবারের আবহে উত্তরদাতার নিজেরও সামাজিকীকরণ এমনভাবেই হয়েছে যে তিনিও বিষয়টিকে স্বাভাবিক মনে করেছেন।
২. নারী হিসেবে নিরাপত্তার বিষয়টি উত্তরদাতা ও তার পরিবার Ñ উভয়ের কাছেই উদ্বেগের ব্যাপার মনে হয়েছে।
৩. নারী হওয়ার কারণে উত্তরদাতার কাছে কাজের ধরন কিছু ক্ষেত্রে (যেমন : রাতে কাজ করা বা কোথাও যাতায়াত) সমস্যা মনে হয়েছে।
কেস স্টাডি-৩ : ‘সাংবাদিকতা নিয়ে পড়তে বাধা পাইনি, কাজ করতে গিয়ে বাসায় বোঝাতে হয়েছে, নারী হওয়ার কারণে হয়রানির শিকার হতে হয়’
“আমি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ালেখা করেছি। আমার সাংবাদিকতায় পড়া বা এ পেশায় যাওয়া নিয়ে পরিবারের কোনো সমস্যা ছিলো না। আমি যখন প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করি, তখন থেকেই টুকটাক সাংবাদিকতা করি। আমার প্রথম লেখা যখন একটি নামকরা পত্রিকায় ছাপা হয়, সেই লেখা দেখে আমার চাচা আমাকে নোটবুক উপহার দিয়েছিলেন। আমি যখন স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে পত্রিকায় কাজ শুরু করি, তখন আমার মা কিছুটা বিচলিত ছিলেন। সন্ধ্যা সাতটা বাজলেই ফোন দেওয়া শুরু করতেন। আমি আমার মাকে কোনোভাবেই বুঝাতে পারতাম না, সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত আমাদের পিক আওয়ার। এরপর একদিন আমার বাবা সন্ধ্যায় পত্রিকা অফিস ঘুরে যখন দেখলেন সেখানে ছেলে-মেয়ে সবাই কাজ করে, তখন বাবা আমার মাকে বুঝিয়েছেন। তখন আমার মা বলতেন, ‘রাত করো কিন্তু অফিসের গাড়িতে আসবা। নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কাজ করবা।’ আমরা নারীরা যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকতার চাকরি নিয়ে কাজ শুরু করি, তখন একটা ছেলে যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়োগ পায়, একজন নারীকেও সমপরিমাণ শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং মেধা প্রমাণ করে চাকরি পেতে হয়। এরপরও একজন নারীকে নানাভাবে হেনস্থা হতে হয়। প্রথমত : একজন পুরুষ সহকর্মী তার নারী সহকর্মীকে সহকর্মী মনে করে নাÑ একজন নারী মনে করে। নারী মানে অবলা, ললনা, পরস্ত্রী ইত্যাদি। দ্বিতীয়ত : অফিসের ঊর্ধ্বতন ও অন্য সহকর্মীরা যৌন নিপীড়ন করতে চান। বসেরা বলেন, ‘তুমি একটু আমার বিশেষ খেয়াল রাখতে পারো না?’ নারীদের এসব সমস্যার মধ্য দিয়ে কাজ করতে হয়।”
অনুসিদ্ধান্ত :
১. সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে এ উত্তরদাতা পরিবারের বাধা পাননি। তবে কাজ করতে গিয়ে কিছু সমস্যায় পড়েছেন যে কারণে বাবা-মাকে ‘বোঝাতে’ হয়েছে।
২. উত্তরদাতা নারী হওয়ার কারণে পরিবার তার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
৩. উত্তরদাতা মনে করেছেন, পুরুষের মতো সমান মেধা ও যোগ্যতা থাকার পরও কেবল নারী হওয়ার কারণে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্যে নারীদের বাড়তি চাপ নিতে হয়।
৪. উত্তরদাতা একজন নারী হিসেবে সহকর্মী ও ঊর্ধ্বতনদের কাছে অবজ্ঞা ও হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন।
কেস স্টাডি-৪ : ‘জোর করে সাংবাদিকতা পড়তে এসেছি, কাজ করতে হিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছি’
“আমার পরিবার সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়তে দিতে চায়নি। কিন্তু আমি জেদ করে নিজের পছন্দের বিষয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে অনার্স পড়েছি। পড়তে এসে অনেক ভালো লেগেছে, মিডিয়া সম্পর্কে অনেককিছু জেনেছি। একসময় নতুন চালু হওয়া একটি পত্রিকায় কাজ করতে যাই। সেখানে সম্পাদক একদিন তার রুমের ভেতরে আমাকে জড়িয়ে ধরেন এবং আরো বাজে স্পর্শ করেন। আমি জোর করে বেরিয়ে যাই। অফিসে এ বিষয়ে অন্যদের সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু সবাই আমাকে বলে, ‘তিনি সম্পাদক, কেউ তার বিরুদ্ধে কিছু বলবে না; তুমি বরং এসব ভুলে যাও।’ আমি ওই চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। মনে হচ্ছে, সাংবাদিকতা আর করা হবে না।”
অনুসিদ্ধান্ত :
১. নারী হওয়ার কারণে এ উত্তরদাতা সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়তে গিয়ে পরিবারের বাধার মুখে পড়েছেন; নিজের পছন্দের বিষয়ে পড়তে তাকে পরিবারের মতের বিরুদ্ধে যেতে হয়েছে।
২. কাজ করতে গিয়ে উত্তরদাতা তার ক্যারিয়ারের শুরুতেই যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
৩. নিপীড়নের শিকার হওয়ার পর উত্তরদাতা তার কর্মস্থলে এর প্রতিকার পাননি।
৪. সহকর্মীদের প্রকাশ্য সমর্থন ও সহযোগিতার অভাবে প্রতিকার না পেয়ে এ উত্তরদাতা পছন্দের পেশাটি (এবং তার প্রথম চাকরি) ছেড়ে দিয়েছেন কাজ শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই।
৫. কর্মজীবনের শুরুতেই এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে এ উত্তরদাতা ভেবেছেন, তার পছন্দের পেশা হলেও গণমাধ্যমে তিনি আর কাজ করবেন না।
কেস স্টাডি-৫ : ‘মিডিয়ায় কাজের ব্যাপারে পরিবারের সহযোগিতা পাই, গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকায় কাজ করি বলে ব্যাপারটা গুরুত্ব পায়’
“আমি মিডিয়াতে কাজের ব্যাপারে সবসময়ই উৎসাহ পেয়ে এসেছি। এর কারণ হিসেবে মনে হয়েছে, আমি যেহেতু দেশের প্রথম সারির একটি পত্রিকায় কাজ করি, তাই এই বিষয়টিকে সবাই বেশ সম্মানের চোখে দেখে। আমাদের পেশায় কাজের নির্ধারিত সময় বলতে কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে সংসার সামলানো বেশ কঠিনই বটে। এ বিষয়ে আমার স্বামীসহ পরিবারের সব সদস্য আমাকে সহযোগিতা করেন। পাশাপাশি, এই পেশায় পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে মানসিক সাপোর্ট পাওয়াও একটা বড় বিষয়।”
অনুসিদ্ধান্ত :
১. মিডিয়ায় কাজ করতে গিয়ে এ উত্তরদাতা পরিবার থেকে কোনো বাধা পাননি বরং পরিবারের সব সদস্যের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন। বিষয়টিকে এভাবেও দেখা যায় : সাংবাদিকতা করার জন্যে একজন নারীর জন্যে তার ‘স্বামী’র (পুরুষ সঙ্গীর) সমর্থন দরকার হয়েছে যেখানে একজন পুরুষ সাংবাদিকের তার ‘নারী সঙ্গীর’ সমর্থনের ওপর নির্ভর করতে হয় না।
২. উত্তরদাতা মনে করেছেন, তিনি প্রথম সারির একটি পত্রিকায় কাজ করার কারণে আলাদা গুরুত্ব ও সবার সমর্থন পেয়েছেন। অর্থাৎ, খুব নামকরা একটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে কাজ না করলে হয়তো এই সমর্থন এভাবে পেতেন না।
৩. পরিবারের সব সদস্য সহযোগিতা করলে একজন নারীর পক্ষে সংসার সামলানোর পাশাপাশি ঘরের বাইরে কাজ করা সম্ভব।
কেস স্টাডি-৬ : ‘বাবা সাংবাদিক ছিলেন বলে সহযোগিতা পেয়েছি, তবে নারী হিসেবে খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে’
“পরিবার থেকে আমি অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। কারণ আমার বাবা নিজেই সাংবাদিক ছিলেন। তবে কর্মক্ষেত্রে এসে কিছু বাজে লোক পেয়েছি যারা নোংরা ইঙ্গিত দিত। এটা অনেক সময় অসহনীয়।”

অনুসিদ্ধান্ত :
১. উত্তরদাতার বাবা সাংবাদিক ছিলেন বলে তিনি গণমাধ্যমে কাজ করার ব্যাপারে পরিবার থেকে বাধা পাননি। বিষয়টিকে এভাবেও দেখা যায় : সাংবাদিকতা করার জন্যে একজন নারীর একজন ‘পুরুষ অভিভাবকের’ সমর্থন দরকার হয়েছে।
২. উত্তরদাতা নারী হওয়ার কারণে কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের দ্বারা উত্যক্ত হয়েছেন বা হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন।
কেস স্টাডি-৭ : ‘কর্মক্ষেত্রে একজন নারী সাংবাদিককে নিজের যোগ্যতা বার বার প্রমাণ করে দেখাতে হয়, একজন পুরুষ কর্মীর ক্ষেত্রে যার প্রয়োজন হয় না’
“নারীদের সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিতে চাইলে প্রথম বাধা পরিবার থেকেই আসে। পরিবার তার মেয়ের জন্য সাংবাদিকতাকে নিরাপদ পেশা মনে করে না। ব্যক্তিগতভাবে আমি ছোটবেলা থেকেই খুব জেদি ছিলাম বলে আমার পরিবার তেমন বাধা দেয়নি। তবে কাজ করতে গিয়ে অন্যের এমন পরিস্থিতি দেখেছি। নারীরা নিজের পরিবারের ওপর জোর করে, দাবি খাটিয়ে সাংবাদিকতা করে। কিন্তু বিয়ের পর আবার নতুন করে চাপ আসে শ্বশুরবাড়ি থেকে। স্বামী শুরুতে মেনে নিলেও সন্তান জন্ম নেওয়ার পর পেশা ছেড়ে দিতে চাপ দেয়। সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্যরা তো থাকেই। আমার বড় ভাই বরং আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। তবে বাসায় ফিরতে দেরি হলে বাবা-মায়ের কাছে বকা খেতে হয়েছে। এখনও আমি কাজের জন্য ঢাকার বাইরে গেলে আমার মা চিন্তা করেন, ভয় পান। বলেন, ‘তুই স্কুলের শিক্ষক হলে তো চিন্তা করতে হতো না।’ কর্মক্ষেত্রে একজন নারী সাংবাদিককে নিজের যোগ্যতা বার বার প্রমাণ করে দেখাতে হয়, একজন পুরুষ কর্মীর ক্ষেত্রে যার প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ, পুরুষের ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয় সে পারবে। আর একজন নারী সাংবাদিককে করে দেখাতে হয়, আমি পারি।”

অনুসিদ্ধান্ত :
১. উত্তরদাতা পরিবার থেকে উৎসাহ ও চাপ Ñ দুটোই পেয়েছেন।
২. উত্তরদাতার অভিভাবক (মা) নারীদের জন্যে সাংবাদিকতার চেয়ে শিক্ষকতাকে ‘নিরাপদ’ পেশা মনে করেছেন যা এ সমাজের স্টেরিওটাইপড ধারণারই চিহ্ন বহন করে।
৩. উত্তরদাতা তার সহকর্মীদের অভিজ্ঞতা থেকে মনে করেছেন, নারীদের সাংবাদিকতা করার পথে বিয়ে ও মাতৃত্ব বাধা হয়ে ওঠে।
কেস স্টাডি-৮ : ‘ক্যামেরা নিয়ে রাস্তায় ছেলেদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করলে মেয়ের বিয়ে হবে না’
“আমি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ছি। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে সাংবাদিকতা করার ইচ্ছে আছে। আমার আত্মীয়-স্বজনরা বিষয়টা পছন্দ করেন না। অনেকেই আমার বিয়ের জন্যে বাবা-মাকে বলছে। একজন আত্মীয় আমার বাবা-মাকে বলেছে, ‘সাংবাদিক হয়ে ক্যামেরা নিয়ে রাস্তায় ছেলেদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করলে এই মেয়ের বিয়ে দিতে পারবেন না।’ তবে আমি কৃতজ্ঞ, আমার পরিবার বিশেষ করে বাবা এ ব্যাপারে আমাকে সহযোগিতা করেছেন।”
অনুসিদ্ধান্ত :
১. উত্তরদাতা সাংবাদিকতা বিষয় নিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে পরিবারের সমর্থন পেয়েছেন।
২. পরিবারের সমর্থন পাওয়ায় উত্তরদাতা ভবিষ্যতে সাংবাদিকতায় পেশায় যাওয়ার কথা ভাবতে পারছেন।
৩. চারপাশের অনেকেই মেয়েদের সাংবাদিক হওয়াটা ভালো চোখে দেখে না। তাদের দৃষ্টিতে মেয়েরা সাংবাদিক হওয়া মানে ‘ছেলেদের’ (পুরুষ সাংবাদিক) সঙ্গে ‘ধাক্কাধাক্কি’ করা। আর এই ‘ধাক্কাধাক্কি’ নিতান্ত পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হলেও তা একটি মেয়ের বিয়ের পথে বাধা। অর্থাৎ, বিয়েকে একজন নারীর জীবনে সবসময় অন্য সবকিছুর চেয়ে বেশি বড় করে দেখার প্রবণতা এই ঘটনাতেও দেখা যাচ্ছে। তবে এর বিপরীতে একজন পুরুষ সাংবাদিককে কখনো বলা হয় না, ‘ক্যামেরা নিয়ে মেয়েদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করলে ছেলের বিয়ে হবে না’।
কেস স্টাডি-৯ : ‘মেয়েদের এতো পড়াশোনার দরকার নেই, সাংবাদিকতা করলে বিয়েও হবে না’
“আমি সাংবাদিকতা নিয়ে পড়তে চেয়েছিলাম, কিন্তু পরিবার দেয়নি। আমার পরিবার মনে করে, মেয়েদের বেশি পড়াশোনা করা অপ্রয়োজনীয়। আর আমি যদি সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ি ও সাংবাদিক হই, তাহলে আমাকে বিয়ে দেওয়া যাবে না। তবু আমি নিজের জোরে সাংবাদিকতা করছি।”
অনুসিদ্ধান্ত :
১. উত্তরদাতা তার পরিবারের বাধার কারণে নিজের পছন্দের বিষয় (সাংবাদিকতা) নিয়ে পড়াশোনা করতে পারেননি।
২. উত্তরদাতার অভিভাবকরা মনে করেছেন সাংবাদিকতা নিয়ে পড়লে বা সাংবাদিকতা পেশায় গেলে মেয়ের বিয়ে হবে না।
৩. উত্তরদাতার অভিভাবকরা মনে করেন, মেয়েদের জন্যে পড়াশোনা নয় বরং বিয়ে-সংসারই করাটাই বেশি জরুরি।
৪. সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে উত্তরদাতাকে তার অভিভাবকদের মতের বিরুদ্ধে যেতে হয়েছে।
কেস স্টাডি-১০ : ‘খরচ কম বলে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়েছি’
“সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনায় বাধা পাইনি। অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনার খরচ কিছুটা কম বলে এ বিষয়ে পড়েছি।”
অনুসিদ্ধান্ত :
১. সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়ার ‘খরচ অপেক্ষাকৃত কম’ মনে করায় উত্তরদাতা এ বিষয়ে পড়েছেন এবং তার পরিবারও এতে সম্মতি বা সমর্থন দিয়েছে।
২. মেয়েরাও সাংবাদিকতা পড়তে পারে বা এ পেশা বেছে নিতে পারে Ñ এমন অবস্থান নয় বরং পড়াশোনার ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধার (কম খরচ) বিষয়টিই উত্তরদাতা ও তার পরিবারের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে।
কেস স্টাডি-১১ : ‘পরিবারের সিদ্ধান্তে সাংবাদিকতা পড়েছি’
“সাংবাদিকতা পড়তে গিয়ে কোনো বাধা পাইনি। পরিবারের সিদ্ধান্তে পড়তে এসেছি। সাংবাদিকতা ও মিডিয়া বিষয়টি কেমন এবং নারীরা এখানে পুরুষের মতই কদর পায় কিনা সেটা নিয়ে পরিবারের আগ্রহের কারণে এই বিষয় নিয়ে পড়েছি। ভবিষ্যতে সাংবাদিকতার ওপর উচ্চশিক্ষা নিতে দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আর পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা বেছে নিয়ে পরিবারের উৎসাহ ও সমর্থন দুটোই পেয়েছি।”
অনুসিদ্ধান্ত :
১. উত্তরদাতা সাংবাদিকতা বিষয়ে তার পরিবারের আগ্রহের কারণে এ বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।
২. উত্তরদাতা সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও পরিবারের উৎসাহ ও সমর্থন পেয়েছেন।
৩. অর্থাৎ, পরিবার যদি প্রথাগত ও ভ্রান্ত সংস্কার ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে এবং উৎসাহ ও সমর্থন যোগায়, তাহলে নারীরা জেন্ডার ভূমিকা নিয়ে সমাজের প্রচলিত ধারণার বিপরীতে সব ক্ষেত্রেই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে।
কেস স্টাডি-১২ : ‘নারী হিসেবে রিপোর্টার হতে বাধা দেওয়া হয়’
“বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবার থেকে বাধা দেওয়া হয়। ডেস্কে বসে কাজ করতে উৎসাহ দিলেও রিপোর্টার হতে বেশি বাধা দেওয়া হয়। নারী হিসেবে রিপোর্টার হতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমার ইচ্ছে না থাকলেও লাইফস্টাইল, ফিচার বা নারী বিষয়ে আমার কাজের ক্ষেত্র সীমিত রাখা হচ্ছে। আমার পরিবার থেকে মায়ের ইচ্ছা ছিল না; ভাইয়ের সমর্থনে কাজ করতে পারছি। আমার মনের জোর আর দৃঢ়তার কারণে কাজ করে যাচ্ছি। সহযোগিতাও যথেষ্ট পেয়েছি। রাতে কাজ করতে, ঢাকার বাইরে যেতে অফিস উৎসাহ দেয়, নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বোঝানোর পর পরিবার থেকেও আর বাধা দেওয়া হয়নি।”
অনুসিদ্ধান্ত :
১. উত্তরদাতা শুরুর দিকে তার পরিবার থেকে কিছু হলেও বাধা পেয়েছেন।
২. সাংবাদিকতা করার জন্যে পরিবারের অন্য সদস্যের সমর্থন উত্তরদাতার প্রয়োজন হয়েছে।
৩. উত্তরদাতা মনে করেছেন, ডেস্কে কাজ করার ব্যাপারে সমর্থন আদায় করা গেলেও রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে সবার সমর্থন সবসময় পাওয়া যায় না।
৪. উত্তরদাতা কাজের ব্যাপারে তার কর্মস্থলে সহযোগিতা পেয়েছেন।
কেস স্টাডি-১৩ : ‘পরিবারের অনেকেই সাংবাদিক, তাই বাধা পাইনি; তবে কাজ করতে গিয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা হয়’
“পেশায় আমি একজন চিত্র সাংবাদিক। আমরা দেশের নারীরা সবসময় অবহেলিত সব ক্ষেত্রে, এমনকি যে-কোনো পেশায় নারীরা কখনোই পুরোপুরি স্বাধীনতা আর স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে কাজ করতে পারে না। বাংলাদেশে মিডিয়ায় বা সাংবাদিকতা পেশায় কাজ করাটা বিশেষ করে নারীদের জন্যে তো অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। একটা উদাহরণ দিতে পারি : ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের সময় আমি যখন অ্যাসাইনমেন্ট কাভার করছিলাম, তখন অনেক ঝুঁকি নিতে হয়েছে আর বাধার সম্মুখীন তো হয়েছিই। পুলিশ আমাকে বলেছে, ‘আপনি চলে যান; মেয়েমানুষ হয়ে কেন এসব ঝামেলায় আসেন?’ আমি তখন বলেছিলাম, ‘আমি আমার ডিউটি করছি আপনি আপনার ডিউটি করুন। আর মেয়েমানুষ না, আমি একজন মানুষ।’ এ ছাড়াও একটা ভালো ছবি তুলতে গেলে ধাক্কাধাক্কির একটা ব্যাপার থাকে; সেখানে দেখা যায় কিছু মানুষ খারাপ স্পর্শ করে যা নিয়ে ওইসময় চাইলেও কিছু বলা যায় না। এরপরও যখন দিন শেষে নিজের তোলা ছবি পত্রিকায় দেখি নিজের নামসহ, তখন সারাদিনের ক্লান্তি-কষ্ট সব দূর হয়ে যায়। আর আমি সাংবাদিকতা করতে গিয়ে পারিবারিক কোনো বাধার মুখে পড়িনি। এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার মায়ের। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, পরিবারে আমার স্বামী, বাবা, চাচা, ভাইসহ আরো অনেকেই সাংবাদিকতা করেছেন। তাই বাইরে থেকে ঘরে এসে কখনো কথা শুনতে হয়নি; বরং কীভাবে আরো ভালো কাজ করা যায়, সেই উপদেশ পেয়েছি পরিবারের কাছ থেকে।”
অনুসিদ্ধান্ত :
১. সাংবাদিকতা করার ক্ষেত্রে উত্তরদাতা পরিবারের সমর্থন পেয়েছেন।
২. উত্তরদাতার পরিবারের একাধিক সদস্য সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে তার পেশাগত জীবনে সবার সহযোগিতা ও পরামর্শ পেয়েছেন।
৩. পরিবারের সমর্থন পাওয়ার পরও উত্তরদাতা উপলব্ধি করেছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের পক্ষে সাংবাদিকতা করা খুব কঠিন।
৪. পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের মতো দায়িত্বশীল একটি বাহিনীর সদস্যের কাছে উত্তরদাতাকে অবজ্ঞা ও তিরস্কারের মুখে পড়তে হয়েছে কেবল নারী হওয়ার কারণে।
৫. পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে উত্তরদাতাকে প্রায়ই যৌন হয়রানি (খারাপ স্পর্শ) বা এ ধরনের নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়।
কেস স্টাডি-১৪ : ‘চাকরির অনিশ্চয়তা আর নাইট শিফটের জন্যে চাকরি ছেড়েছি’
“সাংবাদিকতায় পড়তে কোনো বাধা পাইনি। তবে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে অনেক সমস্যা হয়েছে। চাকরির নিশ্চয়তা নেই; বেতন-ইনক্রিমেন্ট অনিয়মিত দেয়। নাইট শিফট করতে গিয়ে নানা ধরনের ভোগান্তি হতো। পরে যখন সন্তান হলো, তখন নিজেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।”
অনুসিদ্ধান্ত :
১. উত্তরদাতা কর্মক্ষেত্রে পূর্ণ সহযোগিতা পাননি।
২. নিয়মিত বেতন বা ইনক্রিমেন্ট কিংবা চাকরির নিশ্চয়তা না থাকা এখনো বাংলাদেশের গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বড় সমস্যা।
৩. রাতের শিফটে কাজ করা বা সন্তান লালন-পালনের ভার নেওয়া Ñ এসব কারণে এখনো নারীকে চাকরি ছাড়তে হয়।

প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের সুবিধার্থে এই দুটি ভাগে বিন্যস্ত করে নেওয়া যেতে পারে :
১. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাংবাদিকতা/গণমাধ্যম বিষয়ে পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে পরিবারের বাধা বা সমর্থন পাওয়ার হার, এবং
২. গণমাধ্যমে কাজ করার ক্ষেত্রে পরিবারের বাধা বা সমর্থন পাওয়ার হার।

দুটি ছকের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো তুলে ধরা হলো :
মোট নমুনা    বাধা পেয়েছেন    সমর্থন পেয়েছেন
৬০    ৫৬    ৪

ছক-১ : বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাংবাদিকতা/গণমাধ্যম বিষয়ে পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে পরিবারের বাধা বা সমর্থনের চিত্র।
ওপরের তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ার বিষয় হিসেবে সাংবাদিকতা/গণমাধ্যমকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে ৯৩.৩৩ শতাংশ উত্তরদাতা পরিবারের বাধা পেয়েছেন এবং এর বিপরীতে পরিবারের সমর্থন পেয়েছেন মাত্র ৬.৬৭ শতাংশ উত্তরদাতা। এই তথ্য থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের সিংহভাগই পড়ার জন্যে নিজের পছন্দের বিষয় হিসেবে সাংবাদিকতা/গণমাধ্যমকে বেছে নিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন।

মোট নমুনা
বাধা পেয়েছেন    সমর্থন পেয়েছেন    বাধার কারণে সাংবাদিকতা ছেড়েছেন
২৮    ২৫    ৩    ০

ছক-২ : গণমাধ্যমে কাজ করার ক্ষেত্রে পরিবারের বাধা বা সমর্থনের চিত্র।
ওপরের ছকে দেখা যাচ্ছে, পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নিয়েছেন Ñ এমন মোট ২৮ জন উত্তরদাতার মধ্যে ২৫ জনই (৮৯ শতাংশের বেশি) বলেছেন পরিবার থেকে নানা ধরনের বাধা পেয়েছেন যার বিপরীতে মাত্র ৩ জন (প্রায় ১০ শতাংশ) পরিবারের সমর্থন পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। যারা বাধা পেয়েছেন, তারা পরিবারের বাধাকে উপেক্ষা করে এখনো সাংবাদিকতা করছেন। এখানে উল্লেখ্য, যেহেতু গণমাধ্যমে এখনো কর্মরতদেরই এই নমুনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তাই এখানে ‘বাধার কারণে সাংবাদিকতা ছেড়েছেন’ Ñ এমন উত্তরদাতার সংখ্যা শূন্য (০)। তবে উত্তরদাতাদের কেউ কেউ তাদের পরিচিত বা সহকর্মীদের মধ্যে কয়েকজন চাকরি ছেড়েছেন বলে জানিয়েছেন।
এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, সাংবাদিকতা পেশায় থাকা নারীরা এখনকার সময়ে এসেও পরিবারের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। নিজের পেশা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীর পছন্দ বা তার স্বাধীনতা পরিবারের কাছে গুরুত্বহীন; বরং সমাজে জেন্ডার ভূমিকা সম্পর্কিত প্রথাগত ও অযৌক্তিক ধারণাই এখানে প্রবল। তবে ওপরের ছকের পরিসংখ্যান থেকে একটি ইতিবাচক দিকও উঠে এসেছে : ২৮ জন উত্তরদাতার সবাই গবেষণা চলাকাল পর্যন্ত পরিবারের বাধা বা চাপের কাছে পরাজিত না হয়ে নিজেদের পেশায় থেকেছেন পরিবারের বাধা উপেক্ষা করেই।

প্রাসঙ্গিক আরো পরিসংখ্যান
৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৭ জন পরিবারের বাধার কারণে নিজের পছন্দের বিষয় সাংবাদিকতা/গণমাধ্যম ছেড়ে অন্য বিভাগে যাওয়ার কথা ভেবেছেন বলে জানিয়েছেন। তবে ওই ১৭ জন উত্তরদাতার মধ্যে ৪ জন বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪ জন সাংবাদিকতা/গণমাধ্যম বিষয়ে পড়ার ক্ষেত্রে পরিবারের সমর্থন পেলেও ওই ৪ জনের মধ্যে ১ জনের পরিবার সাংবাদিকতা পেশায় যাওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে।
৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৬ জন সাংবাদিকতা/গণমাধ্যম বিষয়ে পড়ার ক্ষেত্রে পরিবারের বাধা পেলেও ‘জোর খাটিয়ে’ নিজের পছন্দের বিষয়ে পড়েছেন। তবে এই ৫৬ জনের মধ্যে ৮ জন উত্তরদাতা বলেছেন, পরিবারের বাধা থাকায় নিজের পছন্দের বিষয়ে পড়ার জন্যে তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া এই ৮ জন উত্তরদাতার মধ্যে ৭ জন সাংবাদিকতা/গণমাধ্যম বিষয়ে ভর্তি হলেও পরিবারকে অন্য বিভাগে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন এবং ১ জন উত্তরদাতা তার পড়াশোনায় স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির আপত্তি থাকায় সাংবাদিকতা/গণমাধ্যম তো বটেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার তথ্যই পরিবারের কাছে গোপন করেছেন।
২৮ জন নারী সাংবাদিকের মধ্যে ৭ জন আশঙ্কা জানিয়েছেন, পরিবারের চাপের কারণে তাদের যে-কোনো সময় এই পেশা বদল করতে হতে পারে অথবা চিরতরে চাকরি ছেড়ে দিতে হতে পারে।
২৮ জন নারী সাংবাদিকের মধ্যে ৯ জন বলেছেন, পরিবারের বাধা বা চাপের কারণে তাদের নারী সহকর্মীদের কেউ কেউ চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ওই ৯ জন উত্তরদাতার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাদের পরিচিতজনদের মধ্যে সাংবাদিকতা ছেড়ে দেওয়া নারীর সংখ্যা মোট ১৪। সাংবাদিকতা ছেড়ে দেওয়া ওই ১৪ জনের মধ্যে ৬ জন পেশা বদল করেছেন (২ জন শিক্ষকতায়, ৩ জন ব্যাংকে ও ১ জন অনলাইনে ব্যবসায়) এবং বাকি ৮ জন এখন আর কোনো পেশাতেই নেই।
২৮ জন নারী সাংবাদিকের মধ্যে ১১ জনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে, মাতৃত্বজনিত কারণে বিগত ৫ বছরে তাদের মোট ১২ জন সহকর্মী চাকরি ছেড়েছেন। চাকরি ছেড়ে দেওয়া এই ১২ জনের মধ্যে ৭ জন সন্তান জন্মদানের প্রয়োজনে ছুটি নেন। কিন্তু ছুটি শেষে তারা কাজে ফিরতে চাইলে তাদের প্রতিষ্ঠান নানা অজুহাতে আর তাদের যোগ দিতে দেয়নি। বাকি ৫ জন একই কারণে ছুটি নিতে চাইলে তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি চাকরি ছেড়ে দিয়ে একেবারে চলে যেতে বলা হয়।
২৮ জন নারী সাংবাদিকের মধ্যে ৪ জন বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা সাংবাদিকতা/গণমাধ্যম বিষয়ে পড়তে চেয়েছিলেন কিন্তু পরিবারের বাধার কারণে অন্য বিষয় বেছে নিয়েছেন। তবে নিজের আগ্রহের পেশা হওয়ায় পরে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

এফজিডি থেকে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
বর্তমান গবেষণায় নারী শিক্ষার্থীদের অবস্থার চিত্র কেবল নারীদের বক্তব্য বা অভিজ্ঞতা থেকে দেখার মধ্যে সীমিত না থেকে পুরুষের বিপরীতে নারীর অবস্থানকেও তুলনা করে দেখার চেষ্টা করা হয়। এজন্যে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের (২টি সরকারি/পাবলিক ও ৩টি বেসরকারি) সাংবাদিকতা/গণমাধ্যম বিষয়ে অধ্যয়নরত মোট ২০ জন পুরুষ শিক্ষার্থীকে নিয়ে দুটি এফজিডি পরিচালনা করা হয়। এফজিডিতে নানা প্রসঙ্গে প্রশ্ন ও আলোচনা থেকে উঠে আসা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় হলো :
১. ২০ জনের মধ্যে ৩ জনের পরিবার সাংবাদিকতা/গণমাধ্যম নিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে আপত্তি করেছে। আপত্তির কারণগুলো হলো জীবনের ঝুঁকি ও আর্থিক অনিশ্চয়তা।
২. ২০ জনের মধ্যে ১৩ জন বলেছেন, তারা সাংবাদিকতা/গণমাধ্যম বিষয়ে পড়লেও এ পেশায় স্থায়ী হওয়ার ইচ্ছে নেই। ‘বিসিএস বা অন্য সরকারি চাকরি’র জন্যে চেষ্টা করবেন বলে তাদের পরিবার এ বিষয়ে পড়া নিয়ে আপত্তি করেনি।
৩. ২০ জনের মধ্যে ১৬ জন বলেছেন, তারা কোন বিষয়ে পড়বেন বা কী পেশায় যাবেন- এ ব্যাপারে পরিবারের সিদ্ধান্ত বা মতামত গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাকি ৪ জন বলেছেন, তারা ক্যারিয়ারের ব্যাপারে পরিবারের সঙ্গেও আলোচনা-পরামর্শ করবেন।
৪. ২০ জনের সবাই বলেছেন, তাদের ভবিষ্যত জীবনসঙ্গীর আপত্তি বা অপছন্দের কারণে তারা নিজের পেশা পরিবর্তন করবেন না। এর বিপরীতে ২০ জনের মধ্যে ১৪ জন বলেছেন, তাদের ভবিষ্যত জীবনসঙ্গীরা কর্মজীবী হলে তারা আপত্তি করবেন না বা বাধা দেবেন না। তবে এই ১৪ জনের মধ্যে ১১ জন বলেছেন, বিয়ের আগে সাংবাদিকতা করলেও বিয়ের পর নারীদের এই পেশা বদল করা উচিত। এই ১৪ জনের মধ্যে সবাই মনে করেছেন, একজন নারীর তার পরিবার-স্বামী-সন্তানের প্রয়োজনকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে পরে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবা দরকার এবং সেভাবেই পেশা বেছে নেওয়া উচিত। ২০ জনের মধ্যে বাকি ৬ জন মনে করেছেন, নারীদের চাকরি করাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

কেআইআই থেকে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
বর্তমান গবেষণায় নারী সাংবাদিকদের অবস্থার চিত্র কেবল নারীদের বক্তব্য বা অভিজ্ঞতা থেকে দেখার মধ্যে সীমিত না থেকে পুরুষের বিপরীতে নারীর অবস্থানকেও তুলনা করে দেখার চেষ্টা হিসেবে ১০টি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান থেকে ১ জন করে মোট ১০ জন পুরুষ সাংবাদিককে নিয়ে ১০টি মূল তথ্যদাতার সাক্ষাতকার পরিচালনা করা হয়েছে। এসব সাক্ষাতকারে উঠে আসা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় হলো :
১. সাক্ষাতকারদাতাদের ১০ জনই মনে করেছেন, পুরুষ হওয়ার কারণে এই পেশায় নারী সহকর্মীদের চেয়ে তাদের ঝুঁকি বা সমস্যা অনেক কম।
২. সাক্ষাতকারদাতাদের ১০ জনই মনে করেছেন, সংসার বিশেষ করে সন্তান থাকলে তা নারীদের কাজের পক্ষে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
৩. সাক্ষাতকারদাতাদের ১০ জনের মধ্যে ৬ জন মনে করেছেন, নারীদের এসব প্রতিকূলতার কথা বিবেচনায় রেখে অফিসগুলো আরেকটু ‘নমনীয়’ হলে নারীদের জন্যে তা সহায়ক হবে। বাকি ৪ জন নারীদের প্রতিকূলতার কথা স্বীকার করলেও মনে করেছেন, কাজের ক্ষেত্রে সবাই সমান; কাউকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
৪. সাক্ষাতকারদাতাদের ১০ জনই বলেছেন, কর্মক্ষেত্রে নারীরা প্রায়ই যৌন হয়রানির শিকার হয়।
৫. সাক্ষাতকারদাতাদের ১০ জনই বলেছেন, মাতৃত্বজনিত কারণে অনেক নারী সাংবাদিককে চাকরি ছাড়তে বা হারাতে হয়।
৬. সাক্ষাতকারদাতাদের ১০ জনের মধ্যে ২ জন মনে করেছেন, যোগ্যতা থাকার পরও কিছু ক্ষেত্রে কেবল নারী হওয়ার কারণে কেউ কেউ সঠিক মূল্যায়ন পায় না। বাকি ৮ জন মনে করেছেন, পুরুষ সাংবাদিকরা রাতে কাজ করা বা দূরে গিয়ে খবর যোগাড় করার মতো বিষয়ে আপত্তি করে না কিন্তু নারীদের অনেকেই এ কাজগুলো করতে চায় না বা পারে না; এ কারণে তাদের কাজের মূল্যায়ন হয় না যা স্বাভাবিক।

প্রাপ্ত ফলের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ও অনুসিদ্ধান্তগুলো থেকে এমন সিদ্ধান্তে আসা যায় :
পড়ার জন্যে নিজের পছন্দের বিষয় বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষের বিপরীতে নারীর স্বাধীনতা অনেক কম। আর বিষয় যদি হয় সাংবাদিকতা, তাহলে পরিবারের আপত্তি বা বাধা বেশি আসে।
নারীদের জন্যে পড়াশোনা বা ক্যারিয়ারের চেয়ে বিয়ে বেশি জরুরি বিষয় Ñ এমন ভাবনা এখনো পরিবার বা সমাজে রয়ে গেছে।
নারী সাংবাদিকদের জন্যে পরিবারের বিরোধিতা এখনো একটি বড় বাধা। আর পরিবারের বাধার কারণে নারীদের সাংবাদিকতা ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে হচ্ছে এমনকি সারাজীবনের জন্যেও চাকরি ছেড়ে দিতে হচ্ছে। এই বিষয়টি আগেও ছিলো, এখনো রয়ে গেছে।
মাতৃত্বের কারণে পরিবারের চাপে এখনো অনেক নারীকে সাংবাদিকতার মতো পেশা ছেড়ে দিতে হয়। একই ইস্যুতে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর অসহযোগিতা এমনকি চাপের কারণেও অনেক নারী সাংবাদিককে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়।
সাম্প্রতিক একটি পরিবর্তন হলো, সংখ্যায় খুব কম হলেও বর্তমান সময়ে কিছু পরিবার সাংবাদিকতা পড়তে বা এই পেশা বেছে নিতে নারীদের সম্মতি বা সমর্থন দিচ্ছে। অবশ্য সংবাদ পাঠ বা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা কিংবা ‘ডেস্ক জব’ হলে এই সমর্থন বেশি পাওয়া যাচ্ছে; রিপোর্টার হতে গেলে খুব কম নারীই এই সমর্থন পান।
আরেকটি ইতিবাচক পরিবর্তন হলো, এখন অনেক নারীই পরিবারের আপত্তি বা সমাজের চাপ উপেক্ষা করে পড়ার জন্যে নিজের পছন্দের বিষয় বা পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নিচ্ছেন এবং অনেকেই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকছেন।
গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীরা এখনো যৌন হয়রানি, অবজ্ঞা ও অবমূল্যায়নের শিকার হচ্ছেন।

উপসংহার
পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, বিয়ে বা সন্তানের মতো বিষয়গুলোতে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার এখনো পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এসব বিষয়ে নারীর মতামতকে উপেক্ষা করা হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। শিক্ষা, ক্যারিয়ার বা সংসারের মতো বিষয়ে নারীরা আগের চেয়ে সরব হচ্ছেন। পরিবারগুলোতে কম হারে হলেও নারীর পড়াশোনা বা ক্যারিয়ার বিষয়ে ভাবনা-চিন্তায় পরিবর্তন ঘটছে। তবে নারীর ক্ষমতায়ন এখনো কাক্সিক্ষত মাত্রায় উন্নীত হয়নি। তবে এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়, পরিবারের সমর্থন ও সহযোগিতা বাড়লে, কর্মক্ষেত্রে নারীর জন্যে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে এবং নারীর যোগ্যতার মূল্যায়ন হলে ঘরে-বাইরে জীবনের সব ক্ষেত্রে নারীদের যে প্রতিকূলতা, তা দূর হবে। এতে নারীর জীবনমান উন্নত হওয়ার পাশাপাশি পরিবার ও গোটা সমাজের গুণগত পরিবর্তন ঘটবে। সমাজের একটি জনগোষ্ঠীকে পিছিয়ে রাখলে সমাজ স্থায়ীভাবে কাক্সিক্ষত উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে পারবে না। এজন্যে পরিবার, প্রতিষ্ঠান ও সমাজের সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষসহ সমাজের সব জনগোষ্ঠীকে আন্তরিক ও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

সুপারিশ
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এবং বিদ্যমান পরিস্থিতির পরিবর্তনে অনুসিদ্ধান্ত-সিদ্ধান্ত-উপসংহারের ভিত্তিতে গবেষকরা সার্বিকভাবে এই সুপারিশমালা প্রস্তাব করছেন :
পূর্ণাঙ্গ মানুষ ও স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে শিক্ষা, ক্যারিয়ার ও নিজের জীবনের সার্বিক বিষয়গুলোতে নিজের আগ্রহ, পছন্দ বা প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার নারীর রয়েছে। ব্যক্তি-পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র Ñ সব পর্যায়ে এই সরল যুক্তিটিকে মূল্যায়ন করতে হবে।
 একজন নারীর জীবনের একমাত্র ও চূড়ান্ত উদ্দেশ্য কেবল বিয়ে করে সন্তান ধারণ ও সংসারের দায় সামলানো নয়। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে একজন নারীরও পুরুষের মতোই বহুমুখী ভূমিকা রাখার যোগ্যতা ও প্রয়োজন রয়েছে। পরিবারের সব সদস্য ও রাষ্ট্রের সব নাগরিককে নারীর এই ভূমিকার বিষয়ে সচেতন ও সংবেদনশীল হতে হবে।
অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়ে অনিয়ম রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বশীল হতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থাগুলোকে (যেমন : প্রেস কাউন্সিল, তথ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ইত্যাদি) এসব বিষয় নজরদারিতে আনতে হবে। প্রেস ক্লাব ও সাংবাদিক সমিতিগুলোকেও এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল হতে হবে।
অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে নারী কর্মীরা যৌন হয়রানিসহ নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। এজন্যে অবিলম্বে প্রতিটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে একটি ‘যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটি’ এবং জাতীয় পর্যায়ে একটি কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল করা যেতে পারে।
রাতের শিফটে কাজ বা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে দূরে যাতায়াতের প্রয়োজন হলে নারীরা যেন যথাযথ নিরাপত্তা ও স্বস্তির সঙ্গে কাজ করতে পারে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে আন্তরিকভাবে ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
নিরাপদ কর্মক্ষেত্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলোকে নারীর কাজের নিরপেক্ষ মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে। নারীসহ সব কর্মীর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও এসব প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
সার্বিকভাবে বলা যায়, সমাজে নারী-পুরুষের ভূমিকা (জেন্ডার রোল) সম্পর্কে যেসব সেকেলে ও ছকবদ্ধ ধারণা (স্টেরিওটাইপ) এবং নারীবিদ্বেষী যে প্রবণতা রয়েছে, সে বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা দরকার। পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাসহ সামাজিকীকরণের সব পর্যায়ে এ বিষয়ে শৈশব থেকেই সবাইকে সংবেদনশীল ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানসিকতা নিয়ে গড়ে তোলা দরকার।

ভবিষ্যত গবেষণার জন্যে দিক-নির্দেশনা
বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার বর্তমান চিত্র বোঝার জন্যে উক্ত গবেষণা পরিচালনা করতে গিয়ে গবেষকদের কিছু উপলব্ধি তৈরি হয়েছে যা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভবিষ্যত গবেষণার ক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে। এমন কিছু বিষয় এখানে সুপারিশ হিসেবে তুলে ধরা হলো :
‘বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার বর্তমান চিত্র’ বুঝতে এ গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে বলে গবেষণার ফোকাস এর মধ্যেই সীমিত রাখা হয়েছে। ভবিষ্যত গবেষণায় প্রাসঙ্গিক আরো বিষয় যুক্ত করা হলে গবেষণায় অনুসন্ধানের আওতা ও নতুন তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে।  
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকতা পড়া ও করার ক্ষেত্রে নারীর বাধাপ্রাপ্ত হওয়া একটি বহুল আলোচিত ও প্রতিষ্ঠিত বিষয়। ফলে বর্তমান গবেষণায় এ বিষয় নতুন করে আবিষ্কারের পরিবর্তে বরং একে বিদ্যমান সমস্যা ধরে নিয়েই এ সমস্যার স্পষ্ট কারণ ও এদের প্রকৃতি সম্পর্কে অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে ভবিষ্যত গবেষণায় বিষয়টিকে নতুন করে অনুসন্ধান করলে ভিন্নতর ফল আসার সম্ভাব্যতা যাচাই করা সম্ভব হবে।
ভবিষ্যত গবেষণায় সময়ের পরিধি ও নমুনার আকার আরো বাড়ানো গেলে আরো বেশি প্রতিনিধিত্বশীল ও বেশি নির্ভরযোগ্য ফল পাওয়া যেতে পারে। এজন্যে রাজধানী ঢাকার বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
বর্তমান গবেষণায় অনুসন্ধানের আওতা শুধু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সীমিত রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে নতুন গবেষণায় অন্যান্য দেশের প্রেক্ষাপটকে অন্তর্ভুক্ত করলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তুলনা (কম্পেয়ার অ্যান্ড কনট্রাস্ট) করে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান যেমন জানা যাবে, তেমনি বৈশ্বিক মানদ-ে কাক্সিক্ষত অবস্থান অর্জন করতে করণীয় সম্বন্ধে নির্দেশনা পাওয়াও সম্ভব হবে। 

গবেষণার সীমাবদ্ধতা
বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার বর্তমান চিত্র বুঝতে ‘সাংবাদিকতা শিক্ষা ও পেশায় নারীর চ্যালেঞ্জ : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শীর্ষক যে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে, তার কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন :
এই গবেষণায় সাংবাদিকতাকে পড়ার বিষয় হিসেবে বেছে নেওয়া এবং সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া Ñ কেবল এই দুটি বিষয়ের ওপর ফোকাস রাখা হয়েছে। এর বাইরেও নিরীক্ষণের আরো অনেক দিক রয়েছে যা এ গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
নমুনা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেবল রাজধানী ঢাকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে (বিশ্ববিদ্যালয় ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নমুনার আকার (স্যাম্পল সাইজ) নির্ধারণে প্রতিষ্ঠিত গাণিতিক সূত্র প্রয়োগ না করে নারী শিক্ষার্থী ও নারী গণমাধ্যমকর্মীর আনুপাতিক হার বিবেচনায় নিয়ে অনুমাননির্ভর নমুনার আকারকে প্রতিনিধিত্বশীল হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে।
কেবল বর্তমান প্রবন্ধ রচনার প্রয়োজনে হালনাগাদ তথ্য পেতে কম সময়ের মধ্যে ও অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের নমুনা নিয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে।
এসব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে বৃহত্তর পরিসরে গবেষণা করা গেলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরো অনেক তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে যা এ বিষয়ে স্পষ্টতর চিত্র তুলে ধরতে সহায়ক হবে।

লেখক পরিচিতি :
সজীব সরকার : সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি।
মো. জাহাঙ্গীর আলম : এমএসএস শিক্ষার্থী, প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক, দৈনিক আমাদের সময়।
মেহেনাজ হাসান : এমএসএস শিক্ষার্থী, প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

লেখাটি আইরীন নিয়াজী মান্না ও সোমা দেব সম্পাদিত ‘সাংবাদিকতায় নারী : অন্তরায় ও উত্তরণ’ বই থেকে নেয়া।