ঢাকা, শুক্রবার ২৬, এপ্রিল ২০২৪ ১৫:০৫:৩৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়াবে আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী চলতি মাসে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ

অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত ভোলা

বাসস | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:২১ পিএম, ৭ জানুয়ারি ২০২১ বৃহস্পতিবার

অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত ভোলা

অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত ভোলা

শীত এলেই প্রতিবছর ভোলার চরাঞ্চলে অতিথি পাখির দল এসে জড়ো হতে শুরু করে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জেলার বিভিন্ন চর অতিথি পাখিদের কলকাকলীতে মুখরিত হয়। এসব পাখিদের মধ্যে রয়েছে অনেক বিপন্ন পাখি। তারা ছুটে আসে নির্দিষ্ট খাবারের সন্ধানে। চরাঞ্চলগুলোতে তাদের পছন্দের আহার রয়েছে। বাংলাদেশে পাখিদের জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের মধ্যে ভোলা একটি। তাই বিশ্বের বহু বিপন্ন পাখির টিকে থাকার জন্য এ অঞ্চলটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন পাখি বিশেষজ্ঞরা।
২০২০ সালে ঢাকা থেকে ভোলায় জলপাখি গণনা করতে আসা বন্যপ্রাণী গবেষক ও পাখি পর্যবেক্ষক সামিউল মেহেসনিন জানান, ১৯টি কাঁদা চর পর্যবেক্ষণ করে সর্বমোট ৬২ প্রজাতির ৪০ হাজার ৫১টি পাখির দেখা মিলেছে ভোলার উপকূলে। যার মধ্যে ১৫ প্রজাতির ১৫ হাজার ৩২৭টি হাঁস ও ৩১ প্রজাতির ১২ হাজার ৬৫৭টি সৈকতপাখি রয়েছে।
এছাড়া মহা বিপন্ন পাখি চামুচঠুটো বাটানের সন্ধান মিলেছে ৩টি, বিপন্ন পাখি নর্ডম্যান সবুজপা ১টি, সংকটাপন্ন পাখি দেশি গাঙচষা ১১০টি, বড় নথ ১৮টি। প্রায় সংকটাপন্ন পাখি কালালেজ জৌরালির সন্ধান মিলেছে ৩ হাজার ১৮৪টি, দাগিলেজ জৌরালির ৮টি, এশীয় ডউচার ৩টি, ইউরেশিয়ান গুলিন্দা ২৫৭টি, নদীয়া পানচিল ১২টি, কালামাথা কাস্তেচড়া ৭৭৫টি, মরচেরং ভুতিহাস ১টি।
প্রতি বছর এসব পাখির মাঝে এসে ভিড় করে পৃথিবীর “মহাবিপন্ন” কিছু পাখি। যার দেখা খুব কম মেলে পৃথিবীর অন্য কোথাও। এমনটাই জানালেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পর্ন পাখি পর্যবেক্ষক ইনাম আল হক। এসব বিরল পাখির মধ্যে রয়েছে ছোট মদনটাক, নর্ডম্যান সবুজপা, কালামাথা কাস্তেচড়া, কালালেজ জৌরালি, ইউরেশিয়ান গুলিন্দা। বিশেষ করে চামুচঠুটো বাটান দেশি গাঙচষা, ঝিনুকমার, মরচেরং ভুতিহাস, নদীয়া পানচিল ও বড় মোটাহাটু জাতের অতি বিরল পাখির সন্ধান মিলেছে ভোলার চরাঞ্চলে। বিশ্বের বহু বিপন্ন পাখির টিকে থাকার জন্য এ অঞ্চলটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পাখির বিচরণ ক্ষেত্রগুলো মানুষের দখলমুক্ত করতে সরকারের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন পাখি পর্যবেক্ষকরা।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বের “মহাবিপন্ন” পাখি চামচঠুটো -বাটান এবং সংকটাপন্ন পাখি দেশি গাঙচষা, বড় নট ও বড়গুটি ঈগল ছাড়াও অনেক প্রজাতির হাঁস ও সৈকতপাখি শীতে ভোলার চরগুলোতে এসে বাস করে। প্রতিটি পাখির আহার অন্য পাখির থেকে ভিন্ন। তাই যে পাখির আহার যেখানে থাকে সেখানেই তারা আসে। তিনি বলেন, যে প্রজাতির পাখিগুলো ভোলার চরাঞ্চলে আসে বুঝতে হবে এর আহার এখানেই আছে। পৃথিবীর আর কোথাও নেই। ফলে তাকে এখানেই আসতে হবে। এখানকার কাদা চরে ওই আহার না থাকলে সে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এমন পাখির মধ্যে চামুচঠুটো বাটান অন্যতম। এটি পৃথিবীর মহাবিপন্ন একটি পাখি। মিয়ানমারের মার্টবান চর এবং ভোলার চর শাহাজালাল ও দমারচর ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও এর খাবার নেই। তাই শীত মৌসুমে এরা ৬মাস ভোলায় অবস্থান করে।
চামুচঠুটো বাটান পাখি সম্পর্কে বলতে গিয়ে জলপাখি গণনা দলে থাকা পাখি পর্যবেক্ষক অনু তারেক জানান, প্রতিবছরই পৃথিবীর মহাবিপন্ন পাখির মধ্যে চামুচঠুটো বাটান’র দেখা মিলছে ভোলার চরাঞ্চলে। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে মহাবিপন্ন এ পাখিটি যে কোন সময় পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে পরে। তারা ধারনা করছেন বর্তমানে পৃথিবীতে মাত্র ১০০জোড়া চামুচঠুটো বাটান পাখি অবশিষ্ট রয়েছে। এরা শীত মৌসুমে সাইবেরিয়া থেকে ছুটে আসে বাংলাদেশে। আবার প্রজননের জন্য জুলাই-আগোস্ট মাসে এরা নিজ ভূমে ফিরে যায়। ভারতীয় উপমহাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার কোথাও গত একযুগে এ পাখিটির অস্তিত্ব মিলেনি। স্বভাবত কারণেই চামুচঠুটো বাটান পাখিটি অন্য পাখির ঝাঁকের মধ্যে থাকে। ভিজা বালি ও কাঁদার উপরের স্তর থেকে খাদ্য সংরহ করে। ভোলার দমার চর ও চর শাহাজালালে এ পাখিটির বিচরণ রয়েছে বলে জানন অনু তারেক।
কথা হয় পাখি-পর্যবেক্ষক ও পর্বত আরোহী এম.এ মুহিতের সাথে। তিনি ২০০০ সাল থেকে প্রতি বছর ভোলায় পাখি শুমারি করে আসছেন। তিনি জানান, ভোলার চরগুলোতে ৪ ধরনের বিরল পাখির দেখা মিলে। এগুলো হলো মহাবিপন্ন, বিপন্ন, প্রায় বিপন্ন ও সংকটাপন্ন। বলা হয় যে দেশে যত বেশি পাখি আসে সে দেশের প্রকৃতি তত নির্ভেজাল। যেহেতু পৃথিবীর মহাবিপন্ন পাখিরা তাদের আসার স্থল হিসেবে ভোলার এসব চরাঞ্চলগুলো বেছে নিয়েছে। সেহেতু দেশের পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষার জন্য সরকার এসব জায়গাগুলোকে সংরক্ষণ করবে বলে আশা করি। বিশেষ করে এসব চরে মানুষ যাতে অবাধে বিচরণ করতে না পারে। তিনি বলেন, আইন করে পাখিদের রক্ষা করা যাবেনা। এজন্য মানুষ কে সচেতন করতে হবে। অনেকে জানেও না যে পাখি মারা অপরাধ। তাই আমরা পাখি রক্ষায় বার্ড ক্লাবের পক্ষ থেকে মানুষকে সচেতন করার কাজ করে যাচ্ছি।