ঢাকা, শুক্রবার ০৩, মে ২০২৪ ১১:১৬:৩৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
জনগণ তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করুক: প্রধানমন্ত্রী সবজির বাজারে স্বস্তি নেই যুদ্ধকে ‘না’ বলতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছি ভারী বর্ষণে মহাসড়কে ধস, চীনে ২৪ প্রাণহানি রাজবাড়ীতে ট্রেন লাইনচ্যুত, রেল যোগাযোগ বন্ধ

‘অভিশাপ’ ভেবে মেরে ফেলা হয় কন্যাসন্তানদের, খুনের দায়িত্ব পান ‘মা’

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৪৯ পিএম, ১ নভেম্বর ২০২৩ বুধবার

রাজস্থানে ‘অভিশাপ’ ভেবে মেরে ফেলা হয় কন্যাসন্তানদের

রাজস্থানে ‘অভিশাপ’ ভেবে মেরে ফেলা হয় কন্যাসন্তানদের

ভারতের রাজস্থানের জয়সলমের এবং বারমের জেলা। এই দুই জেলায় এখনও এমন কয়েকটি গ্রাম রয়েছে, যেখানে জন্ম এবং মৃত্যু আসে একই সঙ্গে। জন্মের পরই মেরে ফেলা হয় কন্যাসন্তানদের।

বহু বছর ধরে এই গ্রামগুলিতে কন্যাসন্তানদের অভিশাপ বলে মনে করা হয়। বহু পরিবারে কন্যাসন্তান জন্ম নিলেই তাকে মেরে ফেলার রীতি রয়েছে। এই প্রথায় বিশ্বাসী নন, এমন স্থানীয়দের একাংশের দাবি, সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে অবগত। পুলিশও জানে। সরকারের তরফে বহু বার এই ঘটনা আটকানোর চেষ্টা করেও বিশেষ লাভ হয়নি।

যদিও বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী, সম্প্রতি সদ্যোজাত কন্যাসন্তানদের মেরে ফেলার ঘটনা কমেছে। তবে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।

গণমাধ্যম ‘ক্রাইম তক’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জয়সলমের এবং বারমের জেলায় এমন ছয়টি গ্রাম রয়েছে, যেখানে কন্যাসন্তান জন্মের হার খুবই কম।

এই ছয়টি গ্রাম হলো, দেও়ড়া, তেজমালতা, মোরা, রাসলা, ডোগরি এবং মোরান। যার মধ্যে এমন একটি গ্রাম আছে যে গ্রামে মেয়ের বিয়ে হয়েছে ১১০ বছর পর।

‘ক্রাইম তক’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই গ্রামের নাম দেওড়া। ১১০ বছর পর সেই গ্রামে কোনও মেয়ের বিয়ে হয় ২০১৯ সালে। বর, বরকন্দাজ নিয়ে বরযাত্রী সেই গ্রামে ঢুকেছিল ১১০ বছর পর।

দেওড়া গ্রামের এক সময় প্রধান ছিলেন ইন্দ্র সিংহ নামে এক ব্যক্তি। তার ছেলে ছিলেন যশবন্ত সিংহ। বছর পঁচিশেক আগে যশবন্তের স্ত্রী এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু মেয়েকে বাঁচাতে যশবন্তের স্ত্রী বিষয়টি পরিবারের সকলের থেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। তার ভয় ছিল, কন্যাসন্তান জন্ম নিয়েছে জানতে পারলে সেই ছোট শিশুটিকে মেরে ফেলা হবে। ছেলেদের পোশাক পরিয়ে মেয়েকে বড় করা শুরু করেন তিনি।

কিছু দিন পর মেয়েকে নানিহালে এক আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দেন যশবন্তের স্ত্রী। কিন্তু বিষয়টি বেশি দিন চাপা থাকেনি। কন্যার বিষয়ে জেনে যায় যশবন্তের পরিবার।

তবে তত দিনে সেই কন্যা অনেকটাই বড়। স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেছে সে। তত দিনে যশবন্ত এবং ইন্দ্রের চিন্তাভাবনাতেও বদল এসেছে। মেয়েকে খুশি হয়ে মেনে নেন তারা। ঠিক করেন, মেয়েকে ভালভাবেই লালনপালন করবেন তারা।

নানিহাল থেকেই পড়াশোনা চালাতে থাকে যশবন্তের কন্যা। উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর পরিবারের তরফে তার বিয়ে ঠিক হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মেয়ের বিয়ে নানিহাল থেকে নয়, দেওড়া থেকে হবে।

জয়সলমেরের বিভিন্ন এলাকায় কোনও বাড়িতে মেয়ের বিয়ে হলে বাড়ির বাইরে এক বিশেষ নকশাযুক্ত তিনকোনা কাঠামো লাগানোর চল রয়েছে। যা দেখে বোঝা যায় যে বাড়িতে মেয়ের বিয়ে হচ্ছে। যশবন্তের মেয়ের বিয়েতে দেওড়া গ্রামে সেই নকশা লাগানো হয়েছিল ১১০ বছর পর। বর্তমানে যশবন্ত-কন্যা স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির বাকি সদস্যদের সঙ্গে কোটায় রয়েছেন।

তবে দেওড়ার সব মেয়ে যশবন্ত-কন্যার মতো ভাগ্যবতী নয়। অনেক কন্যাসন্তানকেই নাকি পৃথিবীর আলো দেখার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মেরে ফেলা হয়। একই প্রথা প্রচলিত রয়েছে তেজমালতা, মোরা, রাসলা, ডোগরি এবং মোরান গ্রামেও।

কিন্তু কেন এমনটা করা হয় রাজস্থানের ওই গ্রামগুলিতে? প্রচলিত রয়েছে, মুঘলরা রাজস্থানের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে আধিপত্য বিস্তারের পর মুঘল সেনারা মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন গ্রাম থেকে রাজপুত মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করত। বিভিন্ন ভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হত তাদের।

মূলত রাজপুতদের অপমান করতেই নাকি এই জুলুম চালাত মুঘলরা। আর তাই বাড়ির মেয়েদের মুঘল সেনাদের লালসা এবং অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচাতেই নাকি জন্মের পরে কন্যাসন্তান মেরে ফেলার প্রথা চালু হয় রাজস্থানের বহু গ্রামে।

মুঘলদের পর ব্রিটিশরা এসেছে। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীনও হয়েছে। তবে কন্যাসন্তানকে মেরে ফেলার এই প্রথা বন্ধ হয়নি। কেবল মেরে ফেলার কারণ বদলেছে।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেয়েদের পড়াশোনা এবং বিয়েতে খরচ বাঁচানোর জন্যই নাকি এখন জন্মের পর তাদের মেরে ফেলা হয় রাজস্থানের বহু গ্রামে। সেই প্রথা এখনও প্রচলিত বহু পরিবারে।

কিন্তু কী ভাবে কন্যাসন্তানদের মেরে ফেলার পরও শাস্তির হাত থেকে বেঁচে যান রাজস্থানের ওই গ্রামগুলির বিভিন্ন পরিবার?

সেই গ্রামগুলিতে বেশির ভাগ সময়ই সন্তানসম্ভবাদের প্রসবের জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় না। গ্রামের বয়স্ক মহিলাদের সাহায্যেই সন্তান জন্ম নেয়। এই মহিলাদের ‘দাই মা’ বলে ডাকা হয়। সেই দাই মাকেই নির্দেশ দেওয়া হয়, কন্যাসন্তান জন্ম নিলে যেন তাকে মেরে ফেলা হয়। দাই মা রাজি না হলে সন্তানকে মেরে ফেলার দায়িত্ব এসে পড়ে জন্মদাত্রীর উপরেই।

জন্মের ১-২ ঘণ্টার মধ্যেই কন্যাসন্তানটিকে মেরে ফেলা হয়। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ভারী বালিশ বা মাটির ছোট বস্তা বাচ্চাটির মুখের উপর রেখে দেওয়া হয়। যাতে মনে হয়, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যু হয়েছে সন্তানের।

এ ছাড়াও নবজাতিকাদের আফিম খাইয়ে দেওয়া, মুখে এবং নাকে বালি বা তুলো ঢুকিয়ে মেরে ফেলারও প্রথা রয়েছে। মারার পর রাজস্থানের মরুভূমির বালির নীচে ওই শিশুদের দেহ চাপা দিয়ে দেওয়া হয়।

তবে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পর সরকার উদ্যোগী হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই বদলেছে। তবে পুরোপুরি ভাবে এই প্রথা বন্ধ হয়নি বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি।

এই প্রথার প্রভাব পড়ছে গ্রামের পুরুষদের উপরেও। দেওড়াসহ ওই ছয় গ্রামের বহু পুরুষ অবিবাহিত থেকে যান। বিয়ের জন্য মেয়েই খুঁজে পাননি তারা। গ্রামে কন্যাসন্তান মেরে ফেলার রীতির কারণেও অনেক পরিবার এই গ্রামগুলিতে মেয়েদের বিয়ে দিতে রাজি হন না।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন