অরিত্রি : লজ্জিতবোধ করছি
নাদিয়া শারমিন | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ০৪:১০ পিএম, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮ বুধবার
লজ্জিতবোধ করছি। আজ সারাদিন। অথচ নিজের স্কুল+কলেজে গিয়েছিলাম। আমার তো খুশি থাকার কথা। পারছি না। সাধারণ অভিভাবকদের ভিড়ে কতগুলো অভিভাবক নামের জানোয়ার আর কয়টা ধান্ধাবাজ চোখে পড়লো। শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকাদের ভিড়ে কিছু শিক্ষিকা নামের ব্যবসায়ীকে চোখে পড়লো। বড় অংকের ডিলিং করে পাওয়া বড়সড় পদ আর ধান্ধার বড় সোর্স কেউ নষ্ট করতে চায় না! তাতে ২/৪ টা বাচ্চা মরলে কার কি! আরেকদল লাশ নিয়ে রাজনীতির গুজব গুজব খেলা খেলতে ব্যস্ত শকুন…।
আর চোখে পড়লো কতগুলো বাচ্চার ভীত, অসহায় মুখ আর কান্না। বছরের পর বছর যে বন্ধুটির সাথে ক্লাস-গল্প-আনন্দ করেছে, গত পরশুও যে বন্ধুটির পাশে বসে পরীক্ষা দিয়েছে সে আর আসবে না কোনদিন! ১৩/১৪/১৫ বছরের ছোট্টেএকটা বাচ্চা হঠাৎ বন্ধুটির লাশ দেখছে, আত্মহত্যার কথা শুনছে! কেমন হতে পারে তার মনের অবস্থা? ভাবতে পারছেন? কল্পনা করতে পারছেন? সেই বাচ্চাগুলোকে আজ বাধ্য হয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। গতকাল রাত ৪টা পর্যন্ত জেগে বন্ধুর অন্তেষ্টিক্রিয়া করে আসা বাচ্চাটি পরীক্ষার হলে বসে কি ভাবছিল? পাশের খালি চেয়ারটার দিকে কি পরীক্ষা দিতে দিতে চোখ চলে যাচ্ছে? চোখ বন্ধ করলে কি বন্ধুটির হাসিমুখ চোখে ভাসছে? নিজের বয়সী একটা মেয়ে আচমকা একদম নেই!
কেমন লাগছে সেটা ভাবতে? একবার চোখ বন্ধ করে ভাববেন? প্লিজ…?
আপনি ওখানে থাকলে কি করতেন? কেমন পরীক্ষা দিতেন? আমি অন্তত ভাল দিতাম না। কিন্তু এতকিছু ভাবার সময় বা আগ্রহ আমার স্কুলের টিচার এবং বর্তমানকালের অভিভাবকদের হয়নি। তারা পরীক্ষাটি নিয়েছেন। জোর করে কাঁদতে কাঁদতে ঢোকা বাচ্চাগুলোকে পরীক্ষা দিতে বাধ্য করেছেন। কারণ পরীক্ষা নির্বাচনের আগে শেষ করতেই হবে! সেটা এই শেষ সময়ে এসে কেন করতে হল? সে প্রশ্নের উত্তর নেই।
বাচ্চাটির আত্মহত্যার পোস্টমর্টেম সবাই যে যার মত করছে। কিন্তু যে বাচ্চাটি আত্মহত্যা করলো সে কেন নকল করার চেষ্টা করলো? কারো মনে কি এ প্রশ্নটা জেগেছে? পরপর ১২ দিন কোন গ্যাপ ছাড়া পরীক্ষা কেন নেয়া হল? ক্লাস নাইনের একটা বাচ্চাকে যখন টানা ৪ দিন ৪ টা পরীক্ষার পর পঞ্চম দিন বিশাল সাইজের সিলেবাসওয়ালা সমাজ পরীক্ষা দিয়েই পরেরদিন কেমিস্ট্রির মত জটিল এবং টেকনিক্যাল বিষয়ে পরীক্ষা দেয়ার চাপ থাকে তখন বাচ্চারা কি করবে? সবার পক্ষে কি পড়ে শেষ করা সম্ভব? সবার কি এত চাপ নেয়ার ক্ষমতা থাকে? প্রশ্ন করতে পারেন-তাই বলে কি নকলকে সমর্থন করবো? না। করবো না। কিন্তু একটা বাচ্চা যে টিনএজে এমনিই খানিকটা অপরাধপ্রবণ হয় তা জানা কথা। কিন্তু সে পথে তাকে হাঁটতে উৎসাহিত করার দায়টা আসলে কার? ভিকারুননিসা স্কুলে পড়ার সুবাদে সেখানে প্রত্যাশা আর প্রতিযোগিতার চাপ যে কত ভয়ংকর তা তো নিজেই দেখে এসেছি। তার উপর এখন আবার সেখানে ভর্তি করা একটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা! সেখানে পড়ানো মানে টাকা আর ক্ষমতা দেখানোর প্রতিযোগিতা! সেখানে বাচ্চা একটা মেয়েকে এতকিছু করে ভর্তি করার পর অভিভাবক, সহপাঠী, শিক্ষক, স্বজনদের প্রত্যাশার চাপের পারদ কতটা উপরে থাকতে পারে? সেই চাপে দমবন্ধ করে দেয়া বাচ্চাটাকে কি কখনো বলেছে কেউ-‘ তুই নিজে যতটুকু পারিস ততটুকুই কর। কোন টেনশন করার দরকার নেই। ’ মনে তো হয় না।
তার উপর যখন সোজা-বাঁকা যেমনভাবেই হোক বিশাল জেনারেশন গ্যাপওয়ালা ব্যস্ত অভিভাবক আর নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত শিক্ষককে ফাঁকি দেয়ার শর্টকাটটা জানা হয়ে গেল তখন কি ভয়ংকর চাপের সাগরে ডুবতে থাকা বাচ্চাটা খড়কূটোর মত এ সমাধান আঁকড়ে ধরবে না? সেটা না করার পরিপূর্ণ শিক্ষা ও কারণ কি তাকে সরবরাহ করা হয়েছে?
বাচ্চাটা যখন অপরাধটা করেই ফেললো তখন কি আতঙ্কে লজ্জায় কুকড়ে যাওয়া তার চেহারায় নিজের সন্তানের প্রতিচ্ছবি দেখেছেন শিক্ষকেরা? নিজের সন্তানের মত এ অপরাধের কারণ খোঁজা, কেন সেটা অপরাধ তা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন তারা? তাকে এ অপরাধ থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দিতে না পারার ব্যর্থতা কি শুধুই পরিবারের নাকি ঐ শিক্ষকদেরও? সে ব্যর্থতার দায় না নিয়ে মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলার মত বাবা-মাকে ডেকে অপমান করে টিসি দেবার ভয় দেখানোর মধ্যে কি কৃতিত্ব আছে? আগে থেকেই প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রনায় থাকা যে বাচ্চার সামনে তার বাবাকে অপমান করা হচ্ছে তার মনের অবস্থা বোঝার দায় কি শিক্ষকের ছিল না? বাবার কি এ বাচ্চাটিকে আগে মানসিক সাপোর্ট দেয়ার দায়িত্ব ছিল না? বাচ্চাটা নকল করতে গিয়ে ধরা পড়েছে-সে অপমান, লজ্জা, বাসার পরিস্থিতি, বন্ধু-টিচার-প্রতিবেশী-আত্মীয়দের রিঅ্যাকশনের ভয়, বাবাকে চোখের সামনে অপমানিত হতে দেখা- এরপর সবাই কি বলবে সে টেনশন-ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা, এসব কি ভয়ংকর প্রভাব ফেলতে পারে একটি বাচ্চার উপর তা কি তার পরিবার, শিক্ষক কেউ ভেবেছেন? সে অনুযায়ী আচরণ করেছেন? সব বাচ্চা যে এক রকম মানসিক শক্তি নিয়ে বেড়ে ওঠেন না সে উপলব্ধি কি শিক্ষকদের ছিল? নিজের বাচ্চাটি যে সব চাপ নিতে সক্ষম না সেটুকু কি পরিবারের সদস্যরা জানার/পর্যবেক্ষণের কোন চেষ্টা কখনো করেছে?সে ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছে? বাচ্চাটার এমন অবস্থায় কি ধরনের মানসিক সাপোর্ট প্রয়োজন তা কি শিক্ষক , অভিভাবক কারোরই জানা ছিল?
এ মৃত্যুর জন্য আসলে দায়ী কে? এককভাবে কেউ দায়ী নাকি অনেক কিছু একসাথে দায়ী? এর পরের সম্ভাব্য এমন মৃত্যু ঠেকানোর জন্য কি আমরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি? নাকি এখনো ভাবছি- ‘আমার সাথে তো এমন ঘটবে না!’
নিজের কথা বলি। এখনো মনে আছে-সকালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরে খেয়েদেয়ে খেলতে ছুটতাম। যদি কোনদিন না বের হতাম তবে মা ঠেলে পাঠিয়ে দিত খেলতে। কোনদিন বাসা থেকে ফার্স্ট-সেকেন্ড হওয়ার কোন আবদার ছিল না। পাশ করে ফিরলেই তারা খুশি। বাসায় নিয়মিত পড়ার অভ্যাস মোটেই ছিল না। ফাঁকিবাজ ছিলাম বলে পড়তাম পরীক্ষার আগে শেষরাতে। শুধু স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পারতপক্ষে মিস দেইনি। ফলে যা পড়েছি-যা বুঝেছি মন থেকে পড়েছি, মোটামুটি ঠিকঠাক বুঝেছি। কোনদিন তোতাপাখি হয়ে উঠিনি। মানবিক গুনসম্পন্ন সৎ মানুষ হিসেবে আমাকে গড়ে তোলার মিশনে পরিবার সফল। আমি আমার মত স্বপ্নপূরণ করে যাহোক নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে তাদের হতাশ হবার সুযোগই দেইনি।
ধরেন তা না করে আমার পরিবার যদি বলতো ফার্স্টই হতে হবে সবসময়। নইলে অমুক করবো-তমুক করবো। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৭ ঘন্টা স্কুলে, ৮ ঘন্টা ৮ টা কোচিং এ, ৫ ঘন্টা বাসায় পড়াতো- তাহলে? খেলা কাকে বলে, আড্ডা-হাসি-গান কি জিনিস তা যদি কোনদিন বোঝার সুযোগই না হত? ছোটবেলার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু গল্পের বইটা যদি হত নিষিদ্ধ গ্রন্থ!? তারপর আমার গর্বের স্কুলটি আমার উপর যে মানসিক চাপের বোঝাগুলো চাপিয়ে দিয়েছিল তা যদি সামলানোর সাপোর্ট এবং শিক্ষা আমি আমার পরিবার থেকে না পেতাম তাহলে কি হত? হাজারো মানসিক চাপের মধ্যে বেরিয়ে আসার মত-মনের ক্ষত সারানোর মলম যদি না পেতাম আমার চারপাশ থেকে? আমার পরিবার, শিক্ষকরা যদি আমাকে ভালমন্দের ভেদাভেদ খুব শক্তভাবে না শেখাতো? তারা যদি আমাকে এ অনুভব গড়ে না দিত যে আত্মহত্যা কোন সমস্যার সমাধান না-কখনোই না? তাহলে কি হত?
আমার সমাজ তাহলে একটা পঁচে যাওয়া মানুষ কিংবা এই বাচ্চাটির মত আরেকটি লাশ পেত ।
এখন চয়েজ করেন- আপনার এমন লাশ বা পঁচা মানুষ দরকার নাকি ফার্স্টের পিছনে না ছুটে মানুষ হবার চেষ্টা করা শিক্ষার্থী দরকার।
নাদিয়া শারমিন, সাংবাদিক
- ভারতে হরলিক্স আর স্বাস্থ্যকর পানীয় নয়!
- তানজানিয়ায় বন্যা ও ভূমিধসে ১৫৫ জনের মৃত্যু
- নতুন করে বেড়েছে সবজি-মাংসের দাম
- এক মিনিটের জন্য শেষ বিসিএসের স্বপ্ন, হাউমাউ করে কান্না
- ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বিদ্যা বালানের বিস্ফোরক মন্তব্য
- তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়াবে আগামী সপ্তাহে
- থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী
- চলতি মাসে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই
- ‘হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে দিনে লক্ষাধিক মুরগি’
- ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু
- গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার
- অগ্রণী ব্যাংকের ভল্ট থেকে ১০ কোটি টাকা উধাও, গ্রেপ্তার ৩
- হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
- থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ
- ভৈরবে বোরো ধানের বাম্পার ফলন
- খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরো বাড়ল
- ২৯ ফেব্রুয়ারি বা লিপ ইয়ার নিয়ে ১০টি মজার তথ্য
- জমজমাট ফুটপাতের ঈদ বাজার
- দেশে ধনীদের সম্পদ বাড়ছে
- এবার বাংলা একাডেমি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন যারা
- বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা
- গুলবদন বেগম: এক মুঘল শাহজাদির সাহসী সমুদ্রযাত্রার গল্প
- যে বিভাগে বিচ্ছেদের হার বেশি
- ৭ই মার্চ পরিস্থিতি, কেমন ছিলো সেই দিনটি
- ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
- শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণের নেপথ্যে
- দিনাজপুরে ব্যাপক পরিসরে শিম চাষের লক্ষ্য
- সদরঘাট ট্র্যাজেডি: সপরিবারে নিহত সেই মুক্তা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা
- জিমন্যাস্টিকসে শিশু-কিশোরদের উৎসবমুখর দিন
- কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকার নেতৃত্বে সাজ্জাদ-মোশাররফ-শরীফ