ঢাকা, বৃহস্পতিবার ০২, মে ২০২৪ ১:৫৫:০৩ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
মহান মে দিবসে মেহনতি মানুষের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা মদিনায় ভারি বৃষ্টিতে বন্যা, রেড অ্যালার্ট জারি দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ ধরা শুরু ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ, পদ্মায় ঝাঁপ দিয়ে তরুণীর আত্মহত্যা মহান মে দিবস আজ ক্যারিয়ার সেরা র‍্যাংকিংয়ে জ্যোতি চুয়াডাঙ্গায় আজ ৪৩.৭ ডিগ্রি, ২৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ

আত্মসমর্পণ: একটি টেবিল এবং দু’টি চেয়ারের গল্প

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:১১ এএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ শুক্রবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

পাকিস্তানের তৎকালীন পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধে তাদের সর্বশেষ সামরিক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন। 
সর্বসাধারণের উপস্থিতিতে বিশ্বের প্রথম এই ধরনের আত্মসমর্পণ হিসাবে বিবেচিত অনুষ্ঠানটি একটি অস্থায়ী মঞ্চে মূলত একটি টেবিল এবং দু’টি চেয়ার দিয়ে সাজানো হয়েছিল যা এখন ১৯৭১ সালের যুদ্ধের একটি প্রধান নিদর্শন হিসাবে প্রদর্শনের জন্য জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত হয়েছে।
অনেকের কাছেই এখনো অজানা রয়েছে যে কিভাবে মঞ্চটি তাড়াহুড়ো করে তৈরি করা হয়েছিল। ২০১২ সালে ভারতীয় বীর যোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সান্ত সিং বাসস-এর প্রতিবেদককে বলেন, তিনিই সেই ব্যক্তি যাকে সে অনুষ্ঠানের আয়োজন করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।
সিং আগ্রহ উদ্দীপক এ তথ্য প্রকাশ করেছেন, যদিও একটি ঐতিহাসিক পর্বের পটভূমিতে তার বা অন্য কারও জন্য এটি খুব উদ্বেগের বিষয় ছিল না। তিনি ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানের ফাঁকে এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে এ তথ্য প্রকাশ করেছিলেন। 
প্রবীণ জেনারেলাকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা তার পোশাক - সাধারণ শিখ পাগড়ি ও দাঁড়ি এবং স্নেহময় মনোভাবের কারণে ‘ব্রিগেডিয়ার বাবাজি’ বলে ডাকতেন। তিনি আরও কয়েকজন বিদেশীর সাথে ঢাকায় এসেছিলেন যারা "মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু সম্মানে ভূষিত হন"। 
সেই সময় সিং (৯৪) স্মরণ করেছিলেন যে, পাকিস্তানি কমান্ডার ঢাকা সেনানিবাসে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জেনারেল স্টাফ চিফ মেজর জেনারেল জেএফআর জ্যাকবের সাথে আলোচনায় আত্মসমর্পণ করতে রাজি হওয়ায় তাকে রেসকোর্সে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছিল।
সিং আরো বলেন, "তখন আমি ভেবে দেখলাম যে, 'আত্মসমর্পণের দলিল' স্বাক্ষর করার জন্য একটি টেবিল এবং দুটি চেয়ারের প্রয়োজন হবে এবং তাই আমি জেনারেল নিয়াজির অফিসে একটি উপযুক্ত টেবিল এবং চেয়ারের জন্য চারপাশে তকালাম।" 
তিনি বলেন, "(তারপর) আমি টেবিলটি দেখলাম এবং দুটি চেয়ারসহ তা নিয়ে রেসকোর্স ময়দানে ছুটে যাই।"
জেনারেল এই প্রতিবেদকের দিকে হাসি দিয়ে কিছুটা বিস্ময়ের ভঙ্গির সাথে তাকালেন। সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে কেন তাকে কেবল "একটি টেবিল এবং দুটি চেয়ার" সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে।
সিং আরো বলেছিলেন যে, তিনি রেসকোর্সের ময়দানে সাধারণ অস্থায়ী মঞ্চ স্থাপন করতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত স্থান বেছে নেয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পাননি।
বহু বছর পর, মুক্তিযুদ্ধকালীন কে ফোর্স কমান্ডার এবং বাংলাদেশের প্রথম সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ, বাসস সাংবাদিকের সাথে এক কথোপকথনে বলেছিলেন যে, আসলে তাকে রেসকোর্সে মঞ্চ তৈরি করতে বলা হয়েছিল।
তৎকালীন মেজর শফিউল্লাহ উল্লেখ করেন, ঘটনাস্থলে পৌঁছে "আমি দেখলাম কাজটি ইতিমধ্যেই অন্য কেউ সম্পন্ন করেছেন।"
শফিউল্লাহ বলেছিলেন, "আজ পর্যন্ত (সেই দিন) আমি জানতাম না কে এটা করেছে।" তারপর এই প্রতিবেদক শফিউল্লাহাকে এ প্রসঙ্গে সিংয়ের গল্পটি বলেছিলেন এবং শফিউল্লাহ মজা করে হেসেছিলেন।
সিং দুইবার ভারতের সর্বোচ্চ বীরত্বসূচক পুরস্কার মহা বীর চক্র পেয়েছেন। তিনি বলেন যে, তিনি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের পরপরই গোয়েন্দা প্রয়োজনীয়তার সাথে সঙ্গতি রেখে নিয়াজিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিলেন।
সিং বলেছিলেন, "সামরিক প্রয়োজন বা নিরাপত্তার কারণে ... তার সৈন্যদের অবস্থান, তাদের পূর্বের পরিকল্পনা ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে সেই সন্ধ্যায় আমাদের তাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়েছিল।" 
পরে, তিনি বলেছিলেন, নিয়াজিকে ভারতীয় সেনারা তার বাসভবনে নিয়ে আসে "এবং আমিও তার বাড়িতে (ক্যান্টনমেন্টে) গিয়েছিলাম"।
তিনি বলেন, "আমি ৩০ জন ভারতীয় সৈন্যকে বাড়িটি পাহারা দেয়ার জন্য মোতায়েন করেছিলাম ... আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম যে, তিনি পালিয়ে যেতে পারেন কারণ আগের রাতে বেশ কয়েকজন উচ্চ পদস্থ পাকিস্তানি সামরিক অফিসার বার্মার ভিতর দিয়ে হেলিকপ্টারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন।" 
সিংকে বাংলাদেশের দেয়া সম্মাননাপত্রে উল্লেখ কর হয়েছে, ১৯৭১ সালে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর এফজে সেক্টর কমান্ডার হিসাবে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে "বাবাজি" বলে ডাকতেন যাদেরকে তিনি যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।
এতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, "ময়মনসিংহ দখলমুক্ত করার পর তিনি মধুপুর হয়ে ঢাকার দিকে অগ্রসর হন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের আগে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পৌঁছান। তিনি সর্বদা তার সৈন্যদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতেন।" 
সিং বাসসকে বলেন, তার জন্য সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল ঢাকার মুক্তি এবং "এটি আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন"।
সম্মননা পত্রে ঢাকা মুক্ত করার সময় তার সাহসিকতা এবং সিদ্ধান্তমূলক তার ভূমিকার স্বীকৃতি দিয়েছে।  
মাত্র একটি পদাতিক ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে থাকাকালীন বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ও মধুপুর দখল করার কৃতিত্বের জন্য সিংকে দ্বিতীয় এমভিসি পদক দেয়া হয়েছিল।