ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ০:৩৩:৫৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনের শাক-সবজি উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি শিশু হাসপাতালের আগুন সম্পূর্ণ নিভেছে

ইয়েমেন: যুদ্ধ গিলে খেয়েছে শৈশব, সাত বছরের শিশুর ওজন সাত কেজি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:১০ এএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২১ বুধবার

সংগ্রহ করা ছবি।

সংগ্রহ করা ছবি।

ইয়েমেন মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ। ছয় বছর ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা দেশটির। জনজীবনে নেই কোনো নিরাপত্তা। যুদ্ধ-অর্থ ও খাদ্য সংকট বিপন্ন করে তুলেছে সাধারণ মানুষের জীবন।

খাদ্য সঙ্কট সেখানে কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা এই বাচ্চাটির ছবি দেখলেই আন্দাজ করা যায়। ইয়েমেনের সানায় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে সাত বছর বয়সী বাচ্চাটিকে।

সাত বছরের বাচ্চা। ওজন মাত্র সাত কেজি। অপুষ্টি, অনাহার গিলে খেয়েছে তার শৈশব। ফায়িদ সামিম নামের সেই বাচ্চাটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত।

সেরিব্রাল প্যালসি ও অপুষ্টিতে ভুগছে বাচ্চাটি। হাসপাতালে যখন আনা হয়েছিল তখন তার মরনাপন্ন অবস্থা। কিন্তু চিকিত্সকদের চেষ্টায় ফায়িদ এখন বিপদ মুক্ত।

হাসপাতালের বেডে ভাঁজ করে রাখা কম্বলের এক তৃতীয়াংশ দিয়েই ফায়িদের গোটা শরীর ঢেকে যায়। তার জীর্ন শরীর যেন এই স্বার্থকেন্দ্রিক, লোভ, হানাহানিতে ভরা পৃথিবীর আসল প্রতিবিম্ব। শরীরের হাড়গুলো যেন উপহাস করছে বিশ্ব রাজনীতিকে।

চিকিৎসা ও ওষুধের খরচ বহন করার সামর্থ নেই শিশুটির পরিবারের। ফায়িদের চিকিৎসা আপাতত চলছে অনুদানের অর্থে। তবে সেটা বড় কথা নয়। কারণ, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই এখন ত্রাণের উপর নির্ভরশীল। চারদিকে হাহাকার সত্ত্বেও সেখানে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির ঘোষণা করা হচ্ছে না। ছয় বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত এক লাখের বেশি সাধারণ মানুষ মারা গেছে। খাদ্য সঙ্কটও চরমে। তবুও চুপ বিশ্ববিবেক।

মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির বিভিন্ন অংশে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। বলা হয়ে থাকে, ইয়েমেনের যুদ্ধের আড়ালে আদতে লড়াই চলছে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে। ওদিকে আবার সৌদি আরব ও ইরানের পেছনে কলকাঠি নাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মতো পরাশক্তিরা।

ইয়েমেনের ২ কোটি জনগণ। দেশটির উত্তর ও উত্তর-পূর্বে সৌদি আরব এবং পূর্বে ওমান অবস্থিত। সৌদি আরব ও ওমান ইয়েমেনের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। ইয়েমেনের আয়তন ৫,২৭,৯৭০ বর্গকিমি। আরব বসন্তের পর দেশটি গরিব হয়। ২০১৭সালে ইতিহাসের ৮ দশকের সবছে বড় দুর্বিক্ষ হয়।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মার্চের পর থেকে এ পর্যন্ত সাত হাজারেরও বেশি মানুষ যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ১১ হাজারের বেশি মানুষ। নিহতদের ৬৫ শতাংশের মৃত্যুর কারণ সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের ফেলা বোমা। আর বাকিদের মৃত্যুর কারণ হুতি বিদ্রোহীরা।

তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডাটা প্রজেক্টের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালের জানুয়ারির পর থেকে এ পর্যন্ত ইয়েমেনে সহিংসতায় নিহত মানুষের সংখ্যা ৬৭ হাজারের বেশি। অন্যদিকে ইয়েমেনের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশের বা ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষের প্রয়োজন মানবিক সহায়তা।

সেভ দ্য চিলড্রেনের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ইয়েমেনে প্রায় ৮৫ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। এ সব শিশু মারাত্মক পুষ্টিহীনতায় ভুগছিল। দেশটির প্রায় ২ কোটি মানুষ পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের সুবিধা পাচ্ছে না।

এ সব কারণে ২০১৭ সালের এপ্রিলে ইয়েমেনে ভয়ংকর রূপে ছড়িয়ে পড়েছিল কলেরা রোগ। ওই সময় কলেরায় প্রায় তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। সম্প্রতি আবার সেখানে কলেরা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ অন্যান্য দেশের দেওয়া অবরোধের কারণে দেশটিতে জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট এতটাই তীব্র যে, আবর্জনাবাহী গাড়ি চালানোর মতো তেলও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সানাসহ কিছু এলাকায় আবর্জনা ও বর্জ্য পদার্থের স্তূপ তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে ফের কলেরা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করবে।

ইউনিসেফের মতে, শিক্ষকদের বেতন দুই বছর ধরে বন্ধ থাকায় অচিরেই অন্ধকারে তলিয়ে যেতে পারে ইয়েমেনের প্রায় ৩৭ লাখ শিশুর ভবিষ্যৎ। যুদ্ধের কারণে এমনিতেই দেশটিতে প্রায় ২০ লাখ শিশু-কিশোর নিয়মিত পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়েছে। আবার দেশটির পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ১৮ লাখ শিশু ভুগছে মারাত্মক পুষ্টিহীনতায়।

ইয়েমেন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দরিদ্র দেশ। ইউএনডিপির দেওয়া সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান গৃহযুদ্ধ যদি ২০২২ সাল পর্যন্ত চলে, তবে ইয়েমেন পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র দেশে পরিণত হবে। তখন দেশটির মোট জনসংখ্যার ৭৯ শতাংশ চলে যাবে দারিদ্র্যসীমার নিচে। অন্যদিকে গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট অনুযায়ী, লৈঙ্গিক সমতার দিক থেকে ইয়েমেনে নারীদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।

চলমান যুদ্ধে ঘরছাড়া হয়েছে ইয়েমেনের লাখ লাখ মানুষ। সংঘাতে ঘর ছেড়েছে দেশটির ৩৩ লাখেরও বেশি মানুষ।