ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮, মার্চ ২০২৪ ১৯:৩৮:৫১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু গাজায় নিহত বেড়ে ৩২ হাজার ৪৯০ অ্যানেস্থেসিয়ার ওষুধ বদলানোর নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঈদ কেনাকাটায় ক্রেতা বাড়ছে ব্র্যান্ড শপে বাঁচানো গেল না সোনিয়াকেও, শেষ হয়ে গেল পুরো পরিবার

কিংবদন্তি অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গম্যান: জন্ম-মৃত্যু দিনে শ্রদ্ধা

অনু সরকার | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৩:৩০ পিএম, ২৯ আগস্ট ২০২০ শনিবার

কিংবদন্তি অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গম্যান

কিংবদন্তি অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গম্যান

‘জোয়ান অব আর্ক’ খ্যাত হলিউডের সুইডিশ অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গম্যান। ‘ক্যাসাব্ল্যাঙ্কা’র সেই নায়িকা যিনি তিনবার অস্কার জিতেছেন। ইনগ্রিড বার্গম্যান জন্মেছিলেন ১৯১৫ সালের ২৯ আগস্ট সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে। আর ১৯৮২ সালের একই দিন অর্থাৎ ২৯ আগস্ট মারা যান তিনি।

জন্ম-মৃত্যুর হিসেবে আজ তার ১০৫তম জন্মবার্ষিকী আর ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। অমর অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গম্যানের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

সর্বকালের সেরা রোম্যান্স ঘরানার সিনেমার যে কোনো তালিকায় একদম উপরের দিকে যে সিনেমাগুলোর নাম ঘুরে-ফিরে আসে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো সিনেমাটি হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত ১৯৪২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মার্কিন ক্ল্যাসিক রোমান্টিক ড্রামা ছবি ‘ক্যাসাব্লাঙ্কা’।

এ সিনেমাটি ১৯৪৩ সালে ১৬তম অস্কার আসরে আটটি বিভাগে মনোনয়ন পায় আর সেরা সিনেমা, পরিচালক ও চিত্রনাট্য বিভাগে পুরস্কার জয় করে হামফ্রে বোগার্ট ও ইনগ্রিড বার্গম্যান অভিনীত এ সিনেমাটি। ক্লাব মালিক রিক ব্লেইন ও তার প্রাক্তন প্রেমিকা এলসা লুন্ডকে ফিরে পাওয়ার এক মর্মস্পর্শী গল্প নিয়ে এ ছবির পটভূমি রচিত। ছবিটি পরিচালনা করেছেন মাইকেল কার্টিজ।

এ ছবিতেই প্রথম উঠে এল সেই দর্শন "মহৎ প্রেম শুধু কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলিয়া দেয়"। বলা হলো সেই দর্শনের কথাও, ‘তোমার প্রেমকে মুক্ত করে দাও। সে যদি তোমার থাকে, তবে অবশ্যই তা আবার তোমার কাছেই ফিরে আসবে। আর যদি ফিরে না আসে, জানবে, সে তোমার কখনোই ছিল না।’

এই সিনেমায় নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন ইনগ্রিড বার্গম্যান। সিনেমাটিতে এই তারকা অভিনেত্রীর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন তার স্বামী অভিনেতা রবার্তো রসেলিনি। আজ এত বছর পরেও ক্যাসাব্ল্যাঙ্কা সমান জনপ্রিয়। ক্যাসাব্লাঙ্কা ছবিটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হিসাবে গণ্য করা হয়।

এছাড়াও আলফ্রেড হিচককের নটোরিয়াস, স্পেলবাউন্ড, জর্জ ক্যুকরের গ্যাসলাইট-এর মতো সিনেমায় ইনগ্রিড বার্গম্যানের অভিনয় একইসাথে সমালোচকের প্রশংসা এবং দর্শকদের সমাদর দুই-ই কুঁড়িয়েছিল।

ইনগ্রিড বার্গম্যান বিখ্যাত তার কান্না আর হাসির প্রাকৃতিক বৈচিত্রের জন্য। বিখ্যাত অনেক নির্মাতাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী। এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য জর্জ কুকর, ভিক্টর ফ্লেমিং, আলফ্রেড হিচকক, রবার্তো রোসেলিনি, জ্যঁ রেনোয়ার এবং ইঙ্গমার বার্গম্যান।

১৯৪৬ সালের গ্যাসলাইট চলচ্চিত্রের জন্য আবারও সেরা অভিনেত্রীর অস্কার লাভ করেন তিনি। ১৯৯৯ সালে আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট তাকে ক্ল্যাসিকাল আমেরিকান সিনেমার জগতে সর্বকালের চতুর্থ সেরা কিংবদন্তি হিসেবে মনোনীত করেছে। প্রতিথযশা লাস্যময়ী এই অভিনেত্রকে বলা হয়ে থাকে হলিউডকে দেয়া এক মহাশঙ্খ সুইডিশ উপহার।

তার সুইডিশ পিতা, জাস্টাস স্যামুয়েল বর্গম্যান, একজন শিল্পী ও ফটোগ্রাফার। তার জার্মান মায়ের নাম হেনরিয়েটা অ্যাডলার। বার্গম্যান তার শৈশবে বেশ কিছু বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। মাত্র দুই বছর বয়সে তিনি তার মাকে হারান। ১২ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে চাচাদের সংসারে বড় হতে থাকেন। স্কুলের পাট চুকানোর পর নিজেই সিদ্ধান্ত নেন অভিনেত্রী হওয়ার।

১৯৩০ এর দশকের প্রথম দিকে, তিনি স্টকহোমের রয়েল ড্রামাটিক থিয়েটার স্কুলে ভর্তি হন। অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গম্যানের অভিনয় জীবনটা ওলট-পালট হয়ে গেল ইতালির চলচ্চিত্র পরিচালক রবের্তো রসেলিনির প্রেমে পড়ে।

রসেলিনির সিনেমা দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে একটি চিঠি লিখেছিলেন বার্গম্যান। চিঠিতে তিনি তাকে প্রস্তাব দেন একসঙ্গে একটি সিনেমা তৈরি করার। ‘আপনি যদি এক সুইডিশ অভিনেত্রীকে চান, যে ভালো ইংরেজি বলতে পারে, যে জার্মান ভাষাটা এখনো ভুলে যায়নি, যার ফ্রেঞ্চ ভালো বোঝা যায় না, যে ইতালিয়ান ভাষায় শুধু একটি কথাই বলতে পারে "তি আমো", আমি প্রস্তুত আপনার সঙ্গে একটি ছবিতে কাজ করতে।’ এই ছিল সেই চিঠির বক্তব্য।

তারই ফল ১৯৫০ সালের স্ট্রম্বোলি ছবিটি। আর সেটিতে অভিনয় করতে গিয়েই দুজনের প্রেম। এভাবেই শুরু হলিউডের অন্যতম আলোচিত প্রেমকাহিনীর। বিবাহিত থাকা অবস্থায় আরেকজনের সঙ্গে প্রেম, এমন ঘটনা তো হলিউডে রোজই ঘটছে। তবে সেটা ছিল পঞ্চাশের দশকের কথা।

প্রেমের একপর্যায়ে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন বার্গম্যান। তার স্বামীও এত সহজে ছাড়ার পাত্র নন। ফলে বিয়ে না করেই রসেলিনির সন্তানের জন্ম দিতে হয় তাকে।

সে সময় তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘মানুষ আমাকে জোয়ান অব আর্ক হিসেবে দেখে, সন্ন্যাসিনী মনে করে। আমি তা নই। আমি শুধু এক সাধারণ নারী, একজন মানুষই।’

২ ফেব্রুয়ারি সন্তান জন্মদানের পর একই বছর ২৪ মে বিয়ে করেন তারা। যমজ কন্যার জন্ম হয় তাদের সংসারে। এরপর রসেলিনির পরিচালনায় আরও কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন বার্গম্যান। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তাদের দাম্পত্যজীবনের। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৭ সাল এই কয় বছরই টিকে ছিল তাদের সম্পর্ক।

১৯৫৭ সালে জওহরলাল নেহরুর আমন্ত্রণে ভারতে আসেন রসেলিনি। আর সেখানেই তার পরিচয় সোনালী দাশগুপ্তার সঙ্গে। এই বাঙালি নারীর প্রেমে পড়ে আবার গণমাধ্যমের চক্ষুশূল হন তিনি। সোনালীও তখন অন্যের স্ত্রী, সন্তানের জননী। সব ফেলে তিনি পালিয়ে আসেন রসেলিনির সঙ্গে। রসেলিনির জীবনে ‘ইনগ্রিড’ অধ্যায়েরই যেন পুনরাবৃত্তি ঘটল, অন্য এক মহাদেশে। আর ইনগ্রিড ফিরে আসেন হলিউডে।

সত্যিকারের ইন্টারন্যাশনাল স্টার বলতে যা বুঝায় তাই ছিলেন বার্গম্যান। কখনো অভিনয় করেছেন হলিউডে, কখনোবা ইটালিতে আবার কখনো নিজের দেশ সুইডেনে। কিন্তু সব জায়গাতেই ছিল তার সমান দৃপ্ত পদচারণা।

আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট তাদের সর্বকালের সেরাদের তালিকায় তাকে রেখেছে চারে। অমর অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গম্যানের জন্মশতবর্ষকীতে ২০১৫ সালে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সাজানো হয়েছিলো কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল পোস্টার। ১৯৩২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত অনেক ছবি এবং সেগুলোর পোস্টারের শোভা বেড়েছিল ইনগ্রিডের মুখখানার সুবাদে।

নানা চড়াই উৎরাই পার করে ১৯৮২ সালের আজকের দিনে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি ইংল্যান্ডের লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৭ বছর।