ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ১:১৯:০৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই দেশ আরও উন্নত হতো টাইমের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা নান্দাইলে নারী শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা তীব্র গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ, বাড়ছে জ্বর-ডায়রিয়া কারাগার থেকে সরিয়ে গৃহবন্দী অবস্থায় সুচি কৃষকরাই অর্থনীতির মূল শক্তি: স্পিকার মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ক্লারা জেটকিন: নারীর মুক্তির দিশারী

আসমা জেরিন | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:১৯ এএম, ৮ মার্চ ২০২০ রবিবার

ক্লারা জেটকিন

ক্লারা জেটকিন

ক্লারা জেটকিন জার্মানীর কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, মার্কসবাদী তাত্ত্বিক এবং রাজনীতিবিদ। ‘নারী অধিকার’ আন্দোলনের বিশিষ্ট নেত্রী। ১৯১১ সালে তিনি প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস সংগঠিত করেন। ১৯১৭ সাল পর্যন্ত তিনি জার্মানির সমাজ গণতান্ত্রিক দলের কর্মী ছিলেন, পরে তিনি জার্মানির স্বাধীন সমাজ গণতান্ত্রিক দলে যোগদান করেন। সেই দলের দূর-বামপন্থী গ্রুপ স্পার্টাকাস লিগ থেকেই পরে জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টি (KPD) গঠিত হয়। তিনি সেই স্পার্টাকাস লিগের হয়ে ১৯২০ থেকে ১৯৩৩ পর্যন্ত রাইখস্ট্যাগে প্রতিনিধিত্ব করেন।

১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জুলাই তারিখে জার্মানির স্যাক্সোনি প্রদেশের ওয়াইডোরায়ু নামক গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন ক্লারা জেটকিন। তার পিতা গটফ্রাইড আইজেনার ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক এবং ধর্মপ্রাণ প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ সংগঠক। কিন্তু মা জোসেফিন ভিটালে আইজেনার ছিলেন লেইপজিগের সম্ভ্রান্ত এবং সুশিক্ষিত বর্গেইস পরিবারের মেয়ে।

সে সময়ে জার্মানিতে মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ খুব বেশি ছিল না। তারপরেও তিনি লেইপজিগের একটি কলেজে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন।

শৈশবে জেটকিন শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছা নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করলেও, অচিরেই তিনি সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে উঠেন। ১৮৭৪ সালের দিকে তার সাথে বিশেষ যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল জার্মানির নারী আন্দোলন এবং শ্রম-আন্দোলনের সাথে জড়িত সংগঠনগুলোর। নারীদের মাঝে ব্যাপকভাবে কাজ করার লক্ষ্যে ক্লারা ১৮৭৮ সালে জার্মানির সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক দলে যোগ দেন। এই দলটি গড়ে ওঠার এক ইতিহাস আছে।

১৮৭৫ সালে দুটি দল একত্রিত হয়ে এই দলটি গড়ে উঠে। দল দুটি ছিল ফের্দিনান্দ লাসালে কর্তৃক গঠিত সাধারণ জার্মান শ্রমিক সংগঠন এবং আগস্ট বেবেল ও ভিলহেল্ম লাইবনেখত কর্তৃক গঠিত জার্মানির সমাজগণতান্ত্রিক শ্রমিক দল। পরে ১৮৯০ সালে এই দলটির আধুনিক সংস্করণ তৈরি হয়েছিল এবং নাম গ্রহণ করেছিল জার্মানির সমাজ গণতান্ত্রিক দল।

১৮৭৮ সালে বিসমার্ক জার্মানিতে সমাজতন্ত্র-বিরোধী জরুরি আইন এবং সমাজতান্ত্রিক কাজকর্মের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে জেটকিন ১৮৮২ সালে জুরিখ চলে যান। সেখান থেকে প্যারিসে নির্বাসনে যান। প্যারিসে থাকাকালীন তিনি সমাজতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এর কিছুদিন পর তিনি রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসা মার্কসবাদী বিপ্লবী এবং তার অন্যতম বন্ধু ওসিপ জেটকিনকে (১৮৫০ - ১৮৮৯) বিবাহ করেন এবং তার নামের জেটকিন অংশটুকু গ্রহণ করেন। ১৮৮৯ সালের জানুয়ারি মাসে যক্ষ্মা রোগে তার স্বামী ওসিপ মৃত্যুবরণ করেন। পরে জেটকিন শিল্পী জর্জ ফ্রিডরিখ যুন্ডেলকে বিয়ে করেন।

তিনি জার্মানিতে সমাজ-গণতান্ত্রিক নারী আন্দোলন বিকশিত করেন; ১৮৯১ সাল থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত জার্মানির সমাজ গণতান্ত্রিক দলের পত্রিকা সমতা বা Die Gleichheit সম্পাদনা করেন। ১৯০৭ সালে দলের নারীবিষয়ক বিভাগ "Women`s Office" প্রতিষ্ঠিত হলে, তিনি এই বিভাগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯১০ সালে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক কর্মজীবী নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় কোপেনহেগেন শহরে। এই সভায় ১৭টি দেশের শতাধিক নারী-প্রতিনিধি যোগদান করেন। এই সম্মেলনে জার্মানির সমাজতান্ত্রিক দলের নারী-কার্যালয়ের (Women`s Office) নেত্রী হিসাবে তিনি যোগদান করেন এবং ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস করার প্রস্তাব পেশ করেন। কংগ্রেস ক্লারা জেটকিনের প্রস্তাব গ্রহণ করে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রস্তাবে তিনি বলেন, প্রতি বছর একই দিনে প্রত্যেকটি দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করতে হবে। একই সাথে তিনি ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে নিজে পালন করেন। এরপর থেকেই পৃথিবীব্যাপী ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

১৯১৬ সালে স্পার্টাকাসপন্থী লিগের তিনি সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৯১৭ সালে জার্মানির সমাজ গণতান্ত্রিক দল বা SPD ভেঙে Independent Social Democratic Party of Germany বা সংক্ষেপে USPD গঠিত হলে এটিরও তিনি সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৯১৯ সালের জানুয়ারি মাসে জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টি বা Communist Party of Germany বা সংক্ষেপে KPD প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এর সাথে সম্পৃক্ত হন এবং ১৯২০ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত রাইখস্ট্যগে (Reichstag) এই দলের প্রতিনিধিত্ব করেন।

১৯২০ সালে তিনি লেনিনের একটি সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারটির শিরোনাম ছিলো - The Women`s Question. ১৯২৪ সাল পর্যন্ত তিনি জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় অফিসের সদস্য ছিলেন। ১৯২৭ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯২১ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল বা কমিন্টার্নের এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য পদে ছিলেন। এসবের ভিতরেই ১৯২৫ সালে জার্মান বাম সংগঠন Rote Hilfe বা “লাল সাহায্য”-এর সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হন। ১৯৩২ সালে প্রবীণ সদস্য হিসাবে রাইখস্ট্যাগের চেয়ার-ওম্যান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

১৯৩৩ সালের ২০ জুন তিনি ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

(উইকিপিডিয়া অবলম্বনে)