ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:১৯:১৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় আগামী নির্বাচন নিয়ে জাতি গর্ব করবে : প্রধান উপদেষ্টা তলবের ১০ মিনিটেই হাজির জেডআই খান পান্না, চাইলেন নিঃশর্ত ক্ষমা ‘পরিবেশ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করছে সরকার’

খেলাপি ঋণ এক বছরে দ্বিগুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:৪৮ এএম, ২৭ নভেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়তে বাড়তে ব্যাপক পর্যায়ে চলে গেছে। মোট বিতরণ করা ঋণের ৩৬ শতাংশ এখন খেলাপি। খেলাপি ঋণের পরিমাণ গত এক বছরে বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে যার পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। তখন মোট ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ ছিল খেলাপি। সে বিবেচনায় এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে তিন লাখ ৫৯ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা বা দ্বিগুণের বেশি। খেলাপি ঋণের উচ্চহার অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট ঋণ ১৮ লাখ তিন হাজার ৮০ কোটি টাকা। মোট ঋণের মধ্যে খেলাপির হার ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলো প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রেখেছে মাত্র এক লাখ ৩০ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। প্রভিশন ঘাটতি তিন লাখ ৪৪ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। বিশাল প্রভিশন ঘাটতি ব্যাংকের আমানতকারীদের জন্য বড় ঝুঁকি নির্দেশ করে। 


বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোকে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণের আসল চিত্র সামনে আনতে হচ্ছে। আদায় না করে এখন আর নিয়মিত দেখানোর সুযোগ দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে বিদেশি অডিট ফার্ম দিয়ে কয়েকটি ব্যাংকের ঋণের তথ্য যাচাই হয়েছে। তাদের খেলাপি ঋণ বিশেষত একীভূতকরণের আওতায় থাকা পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের অঙ্ক অনেক বেড়েছে। এ ছাড়া গত এপ্রিল থেকে ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তিন মাস পর খেলাপি করা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড। ২০১৯ সালের আগে ওই সীমা ছিল ছয় মাস। বিশেষ সুবিধা দিয়ে অনেকের ক্ষেত্রে এক বছর সময়ও দেওয়া হতো। 

খেলাপি ঋণ প্রবণতার বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এই উল্লম্ফন অস্বাভাবিক ছিল না। কারণ, সরকারি ব্যাংকগুলো, একীভূতকরণের আওতায় থাকা পাঁচ ব্যাংক এবং আরও কিছু দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে এসেছে। ব্যবসায়িক কারণে নতুন করে খেলাপি হওয়ার প্রবণতা আছে কিনা, তা সুস্পষ্ট নয়। কারণ, অর্থনীতি দুর্বল হলেও প্রবৃদ্ধি রয়েছে। রপ্তানি অল্প হলেও বেড়েছে। রেমিট্যান্সে বড় প্রবৃদ্ধি রয়েছে। ফলে সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক কারণে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার অনুমান করা যাচ্ছে না। কিছু বিচ্ছিন্ন কেস থাকতে পারে। তবে পরবর্তী সরকারের আমলে রাজনৈতিকভাবে সুবিধা নেওয়ার আশায় কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হচ্ছে কিনা, তা দেখার বিষয়। 

খেলাপি ঋণ কমানোর উপায় জানতে চাইলে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, নীতি সহায়তা দিয়ে খেলাপি ঋণ যে কমানো যাবে না, তা আগের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ঋণ পুনঃতপশিল এবং অবলোপনে সুবিধা দিয়ে সেই পুরোনো পথে হাঁটছে। এটা এমন যে, মাদকাসক্তকে নতুন করে মাদক দেওয়া। এভাবে ঋণ আদায়ে সাফল্য আসার সম্ভাবনা কম। তার চেয়ে ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়ায় দুর্বলতা কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষত, অর্থঋণ আদালতের মাধ্যমে আদায় প্রক্রিয়ার সমস্যাগুলোর সমাধান জরুরি। ঋণখেলাপিদের জন্য সামাজিক শাস্তি বিশেষত তাদের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করাও একটি উপায় হতে পারে। তাঁর মতে, পাঁচটি ব্যাংক যেভাবে নিষ্পত্তির দিকে যাচ্ছে, একইভাবে অন্যদের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারা আদায় করতে পারলে ভালো, না হলে ব্যাংক নিষ্পত্তি আইনের আওতায় যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) আবিদুর রহমান বলেন, গত এপ্রিল থেকে ঋণ শ্রেণীকরণ নীতি কঠোর করার পাশাপাশি তা  অনুসরণ করার কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। শুধু মন্দ নয়, ভালো ব্যাংক বলে পরিচিত কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রেও এ ধারা ঊর্ধ্বমুখী। কয়েকটি ব্যাংকে বেক্সিমকো, এস আলম বা নাসা গ্রুপের মতো কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ রয়েছে। 

খেলাপি ঋণের মোট আকার বাড়লেও সব ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা বাড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেমন গত ডিসেম্বরে সাউথইস্টে খেলাপি ঋণ ১৪ দশমিক ৮১ শতাংশ ছিল। তৎপরতা বাড়ানোয় এখন ১২ শতাংশের নিচে নেমেছে। ব্যবসা মন্দার কারণে নতুন করে খেলাপি ঋণ বাড়ছে কিনা– এমন প্রশ্নে সাউথইস্টের এমডি বলেন, এটা কম। কারণ, ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক রীতিনীতির আলোকে ব্যাংক খাত পরিচালিত হচ্ছিল। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পুনঃতপশিল ব্যবস্থা চালু হয়। এর পর থেকে নানা শিথিলতায় খেলাপি ঋণ কম দেখানো হচ্ছিল। এ ক্ষেত্রে কখনও ঋণ পরিশোধ না করেই নিয়মিত রাখা, নামমাত্র ডাউনপেমেন্ট দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে পুনঃতপশিল কিংবা ভুয়া ঋণ নিয়ে দায় সমন্বয়ের সুযোগ দেওয়া হতো। 

বাংলাদেশ ব্যাংক বছরে একবার দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের তথ্য প্রকাশ করে। সর্বশেষ প্রকাশিত ২০২৪ সাল পর্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ বেড়ে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকায় ঠেকেছে। ব্যাংক খাতের মোট ঋণের যা ৪৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০২৩ সাল শেষে এ রকম ঋণের পরিমাণ ছিল চার লাখ ৯৭ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এক বছরে খারাপ ঋণ বেড়েছে দুই লাখ ৫৯ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা বা ৫২ শতাংশ। 

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ মনে করেন, শুধু আগে লুকিয়ে রাখার কারণে খেলাপি ঋণ এত বেড়েছে, তা নয়। আগে যেখানে ৯ মাস ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে খেলাপি দেখানো হতো, তা দুই ধাপে তিন মাসে নামিয়ে আনার কারণে অনেক ব্যবসায়ী এখন খেলাপি হয়ে পড়ছেন। 

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, গত পাঁচ বছরে কোনো ব্যবসায়ী স্বস্তিতে ব্যবসা করতে পারেননি। প্রথমে করোনাভাইরাস মহামারি পুরো ব্যবসাকে বসিয়ে দিয়েছিল। এর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আরেক দফা সংকট বাড়ায়। এর মধ্যে সাবেক সরকার দফায় দফায় তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ায়। আবার এর মধ্যে ডলার সংকট, ডলারের বিনিময় হার সমন্বয়, জ্বালানি সংকট ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি ডেকে আনে। সুদের হার বেড়ে ১৫ শতাংশ অতিক্রম করেছে। এসব অভিঘাতে ব্যবসায়ীরা কোণঠাসা।

তাসকিন আহমেদ বলেন, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ছিল সমস্যার গভীরে মনোযোগ দেওয়া। খেলাপি ঋণের অঙ্ক বড় করে কারও লাভ নেই। অনাদায়ী ঋণকে ৯ মাসের বদলে তিন মাসে খেলাপি দেখানো দুই ধাপে করা যেত। আগাম ঘোষণা থাকলে ব্যবসায়ীরা আগাম ব্যবস্থা নিতে পারতেন। পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে আসা সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের থেকে এমন আত্মঘাতী পদক্ষেপ তিনি আশা করেননি।