ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:১৮:৩৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় আগামী নির্বাচন নিয়ে জাতি গর্ব করবে : প্রধান উপদেষ্টা তলবের ১০ মিনিটেই হাজির জেডআই খান পান্না, চাইলেন নিঃশর্ত ক্ষমা ‘পরিবেশ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করছে সরকার’

জোটের সম্ভাবনা থাকলেও আপাতত একক প্রস্তুতি এনসিপির

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৫১ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০২৫ মঙ্গলবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

রাজনৈতিক দলগুলোতে নির্বাচনী ব্যস্ততা বেড়েছে। গণভোট, সংস্কার, আইনশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছাপিয়ে জোরেশোরে চলছে ভোটের প্রস্তুতি। জামায়াত গত বছর ৫ আগস্টের পরপরই কার্যক্রম শুরু করায় নির্বাচনী আয়োজনের প্রায় সব কাজই গুছিয়ে এনেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা গণসংযোগ শুরু করলেও এখনও প্রার্থী বাছাই শেষ হয়নি। পোলিং এজেন্ট নির্ধারণ ও প্রশিক্ষণ কাজ শুরু করতে পারেনি। অন্যদিকে এনসিপির ব্যস্ত সময় যাচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীর সাক্ষাৎকার গ্রহণে

বিএনপির সঙ্গে জোট বা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার সম্ভাবনা থাকলেও আপাতত এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এনসিপি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি রয়েছে– দলের বাইরে থাকা এমন ব্যক্তিদেরও শাপলা কলির প্রার্থী করা হবে। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে সাড়ে আট মাস আগে গঠিত এনসিপির নেতারা এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, প্রস্তুতির জন্য ১০ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও ১৬টি উপকমিটিও করা হয়েছে। প্রতীক জটিলতায় দেরি হলেও মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার শুরু হয়েছে। 

বিএনপি এবং জামায়াতের ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রচারে পুরোদমে নেমে পড়েছেন। এনসিপি এতে পিছিয়ে রয়েছে। তবে দলটির নেতাদের মধ্যে আখতার হোসেন, হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, আবদুল হান্নান মাসউদ, সারোয়ার তুষার, আতিক মুজাহিদ, ডা. মাহমুদা মিতুসহ কয়েকজন অনেক আগে থেকেই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় জোরেশোরে প্রচার শুরু করেছেন। 

এনসিপির নেতাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, আগে থেকেই সক্রিয় নেতাদের মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। অন্য আসনে দলের নেতাদের বাইরে বিভিন্ন পেশার সৎ ও যোগ্যদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এনসিপির প্রার্থী হতে এক হাজার ৪৮৪ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। ১০ সাংগঠনিক বিভাগের জন্য ১০টি বোর্ড মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে। একই আসনে একাধিক হেভিওয়েট মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আগে ডাকা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে চলতি মাসের মধ্যেই প্রথম ধাপে ১০০ থেকে ১৫০ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।

আগ্রহীদের মধ্য থেকে কীভাবে প্রার্থী বাছাই করা হবে জানতে চাইলে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, চিকিৎসক, শিক্ষক, আলেমসহ সব শ্রেণির মানুষ ফরম নিয়েছেন। এলাকায় মানুষের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা আছে, মানুষের জন্য এতদিন ধরে কাজ করেছেন এবং তাদের এলাকায় জিতে আসার সম্ভাবনা আছে– সে সম্ভাবনার ভিত্তিতে আমরা প্রার্থী করব। তবে শুধু সংসদ সদস্য প্রার্থী বাছাই নয়, আমরা একই সঙ্গে প্রার্থীদের নিয়ে একটা ডেটাবেজ তৈরি করছি। ভালো প্রার্থীদের আমরা বিভিন্ন জায়গায় কাজে লাগাব। কেউ পৌরসভার মেয়র নির্বাচন করবেন, কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন করবেন, কেউ কাউন্সিলর নির্বাচন করবেন। অর্থাৎ যাকে যেখানে প্রয়োজন কিংবা যোগ্য তাঁকে সেখানেই আগামীতে প্রার্থী করা হবে।

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ বলেন, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ক্ষেত্রে প্রার্থীর সার্বিক অবস্থান যাচাই করা হচ্ছে। প্রার্থীর পূর্ববর্তী রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রার্থীর নির্বাচনী এলাকা নিয়ে পরিকল্পনা ও নির্বাচন পরিচালনা সম্পর্কিত জ্ঞান ও কৌশল সম্পর্কে ধারণা যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাছাড়া প্রার্থীর নির্বাচনী খরচ ও পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হচ্ছে। সর্বোপরি যারা নতুনভাবে বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছেন তাদেরই মূল্যায়ন করা হবে।

২৪ দফাকে বিস্তারিত করে ইশতেহার

গত ৩ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের এক দফা ঘোষণার দিনে ‘দ্বিতীয় রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠায় নতুন সংবিধান প্রণয়ন, জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কারসহ ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

তাদের ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে– নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক, জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার,  গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার, ন্যায়ভিত্তিক বিচার ব্যবস্থা ও আইন সংস্কার, সেবামুখী প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গ্রাম পার্লামেন্ট ও স্থানীয় সরকার, স্বাধীন গণমাধ্যম ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ,  সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, জাতি গঠনে নতুন শিক্ষানীতি, গবেষণা, উদ্ভাবন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব, ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিসত্তার মর্যাদা, নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন,  মানবকেন্দ্রিক ও কল্যাণমুখী অর্থনীতি, তারুণ্য ও কর্মসংস্থান, বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ন নীতি, টেকসই কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব, শ্রমিক-কৃষকের অধিকার, জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা, নগরায়ণ, পরিবহন ও আবাসন পরিকল্পনা, জলবায়ু সহনশীলতা ও নদী-সমুদ্র রক্ষা, প্রবাসী বাংলাদেশির মর্যাদা ও অধিকার, বাংলাদেশপন্থি পররাষ্ট্রনীতি এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল।
এনসিপি নেতারা জানান, ২৪ দফাকে ধরে নির্বাচনী ইশতেহারে তৈরি করা হবে। এতে বিস্তারিতভাবে থাকবে কীভাবে ২৪ দফা বাস্তবায়ন করা হবে। ইশতেহার প্রণয়নে কাজ করছেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ এবং কয়েকজন নেতা। 

কূটনীতিক ও অন্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ

নির্বাচন সামনে রেখে কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে এনসিপি। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মিশনবিষয়ক উপকমিটির সেক্রেটারি আলাউদ্দিন মোহাম্মদ সমকালকে বলেন, কূটনীতিকদের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। প্রাক-নির্বাচনী টিমগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বসা হচ্ছে ও নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার ক্ষেত্রে কীভাবে কমিশনকে আরও কার্যকর করা যায়, সে বিষয়ে তাদের অবহিত করা হচ্ছে। 

শুধু বিএনপি, জামায়াত নয়– অন্য দলের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়েছে এনসিপি। একক নির্বাচনের কথা বললেও এবি পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এবং আপ বাংলাদেশের সঙ্গে শিগগির এনসিপির জোট হতে পারে। 

দলটির এক যুগ্ম আহ্বায়ক বলেছেন, এই জোটে আরও কয়েকটি দল যুক্ত হতে পারে। জোট হিসেবেই বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির দরকষাকষি হবে। যার সঙ্গে লাভ হবে, তার সঙ্গে জোট বা সমঝোতা করা হবে। লাভ না হলে এককভাবেই নির্বাচনের পক্ষে নেতাকর্মীরা। 

পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে 

এনসিপির পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ উপকমিটির প্রধান অ্যাডভোকেট হুমায়রা নূর বলেন, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি সংস্থা আছে, যারা রাজনীতিবিদদের প্রশিক্ষণ দেয়। সেখান থেকে আমাদের দলের ২০ জনের মতো একটি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আরও কয়েকজন নেতা প্রশিক্ষণ নেবেন। এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা সারাদেশের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেবেন। তাদের নির্বাচন শুরু হওয়া থেকে একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এজেন্টদের দায়িত্ব কী– সে বিষয়ে আমরা সারাদেশে প্রশিক্ষণের আয়োজন করব। 

অসচ্ছল প্রার্থীদের জন্য ‘ক্রাউড ফান্ডিং’

অসচ্ছল প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় বহনে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ করা হবে বলে জানিয়েছেন এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য হুমায়রা নূর। তিনি বলেন, অন্য দলের প্রার্থীদের মতো নির্বাচনে বেশি খরচ না করেও কীভাবে মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়– সে বিষয়ে আমরা প্রার্থীদের প্রশিক্ষণ দেব। এ ছাড়া অসচ্ছল প্রার্থীদের নির্বাচনে ন্যূনতম খরচ জোগাতে আমরা সমাজের বিত্তবানদের কাছেও আহ্বান জানাব। 

দলের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দলের ফান্ডিংটাই হয় ক্রাউড ফান্ডিং থেকে। একইভাবে আমরা আমাদের নির্বাচনী ফান্ড করব।