থেমে গেল মুক্তি বেটির বিপ্লবী চরণ
ঝর্ণা মনি | উইমেননিউজ২৪.কমআপডেট: ১০:৫৪ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার
পাকিস্তানি মেজর তাঁকে দেখে বলেছিলেন- একে তো বাঙালি মনে হয় না। মনে হয় অন্য জাত। হ্যাঁ তিনি বাঙালি নন, তিনি খাসিয়া নারী। খাসিয়া ‘মুক্তি বেটি’ হিসেবেই তিনি অধিক পরিচিত তাঁর এলাকায়। জাতিগত পরিচয়ের বাইরে তিনি নিজেকে মানুষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন মুক্তির কাতারে।(যদিও জাতে কি যায় আসে! কাঁকন বিবি প্রমাণ করেছেন, তিনি বাংলার। তিনি মানুষের। তিনি মানবতার।তিনি মাতৃস্বরূপা, অসুরদলনী। তিনি ধ্বংসের। তিনি রক্ষার।)
১৯৪৮ সালে সুনামগঞ্জের সীমান্তের কাছে নওত্রই গ্রামে এক খাসিয়া পরিবারে জন্ম আজীবন সংগ্রামী এই বীর মুক্তিযোদ্ধার। বাবার নাম নেহা ও মায়ের নাম দামেলি নিয়তা। তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট কাঁকন। মায়ের গর্ভে থাকতে বাবাকে আর জন্মের দেড় মাস পরে মাকে হারান তিনি। তারপর দিদিমার হাত ঘুরে বড় বোনের কাছে হয় তাঁর আশ্রয়।বিয়ের পর সংসারেও সুখ ছিল না তার। পাঁচ পাঁচটি ছেলে মারা যাবার পর একমাত্র কন্যা সখিনা পেটে থাকা অবস্থায় তাঁর তালাক হয়ে যায়। পরবর্তীতে বোনের উদ্যোগে বোগলা ক্যাম্পের সীমান্ত রক্ষী আব্দুল মজিদ খানকে বিয়ে করেন কাঁকন।
একাত্তরের শুরুতে কাঁকন বিবির স্বামী তার দেশ পাকিস্তানকে রক্ষা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, ভুলে যান স্ত্রী কাঁকনের কথা। এই অবস্থায় কাঁকন বিবি অর্থনৈতিক ও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে হন্যে হয়ে খুঁজতে শুরু করেন। তখন পর্যন্ত এই যুদ্ধ এবং যুদ্ধের কারণ নিয়ে মাথা ঘামানের মতো অবস্থা তাঁর ছিলনা। তবে এই খোঁজার মধ্যে দিয়েই কাঁকন বিবি আবিস্কার করেন ভয়ানক এক পৃথিবী। দেখেন শ্রেষ্ঠ জল্লাদখানাগুলোর অত্যাচার। পাকিস্তানি সৈন্যরা তাঁকে টেংরা ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং মুক্তিবাহিনীর লোক হিসেবে সন্দেহ করে নির্মম অত্যাচার চালায়। লোহার শিক গরম করে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে ঢুকিয়ে দিয়ে তথ্য আদায়ের চেষ্ট করে। কাঁকন বিবি বলেন যে তার স্বামী পাঞ্জাবী সৈন্য কিন্তু এখন তিনি স্বামীর কোন ঠিকানা জানেন না। এরপর পাকিস্তানীরা ওয়ালেসের মাধ্যমে খবর নিয়ে কাঁকন বিবির কথার সত্যতা খুঁজে পায়। এরপর তারা ভাবে তাঁর স্বামী যেহেতু পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করে তাহলে কাঁকনও তাদের পক্ষে কাজ করতে অবাধ্য হবেনা। তারা কাঁকন বিবিকে একটি কাগজ দিয়ে বলে পাকিস্তানীরা ধরলে এই কাগজ দেখাতে, কিন্তু মুক্তিবাহিনী ধরলে না দেখাতে। তারা তাঁকে ভিক্ষুক সেজে গ্রামে গ্রামে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর সংগ্রহ করতে বলে। প্রথমে ভয়ে কাঁকন বিবি তাতে রাজি হয় কারণ সে বুঝতে পারে এটা না করলে তাঁকে হত্যা করা হবে।
এরপর থেকে তাঁকে হাজিরা দিতে হতো বিভিন্ন পাকিস্তানি ক্যাম্পে। কেননা হাজিরা না দিলে তাঁর জীবনের ভয় ছিল। কিন্তু পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে যাতায়াতের সুবাদে তিনি দেখেন বাঙালি নারীদের উপর ভয়াবহ অত্যাচার। এতোদিনের যাপিত ভয় কোথায় যেন পালিয়ে যায়। তিনি হয়ে ওঠেন অসম্ভব সাহসী এক নারী। এরপর তিনি মুক্তিবাহিনীর কাছে এসে সব খুলে বলেন। মুক্তিবাহিনীও তাকে কাজে লাগাবার চেষ্টা করে এবং সফল হয়। তারপরই মুক্তিযোদ্ধারা দেখেন কাঁকন বিবির সব ভয়াবহ রুপ। এরপর থেকে কাঁকন বিবি নিয়মিত ভাবে খবর সংগ্রহ করতে থাকেন মুক্তিবাহিনীর কাছে, পাকিস্তানীরা কোথায় ক্যাম্প গেড়েছে, কোথায় কখন কিভাবে আক্রমনের পরিকল্পনা করছে, এইসব। যা মুক্তিবাহিনীকে সফলতা এনে দেয়। এরপর কাঁকন বিবি চলে আসেন ৫ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মীর শওকত আলী এবং ক্যাপ্টেন হেলাল উদ্দিনের কাছে। সেখানে গিয়ে তিনি ৫নং সেক্টরের লক্ষীপুর ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য কারার সুযোগ পান। এরপর সুযোগ পেয়ে যান মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কাজ করার। শহীদ কোম্পানীতে তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার ও অস্ত্র সরবারহ করতেন।
আগষ্টে এই অঞ্চলে পাকিস্তানীদের প্রতিরোধের পরিকল্পনা চলছিল। মুক্তবাহিনী গভীর রাতে ব্রিজ ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয়। এবং এর পুরো দায়িত্ব পড়ে কাঁকনের উপর। কাঁকন অপারেশন সফল করার জন্য কলাগাছের ভেলায় করে বোমা, অস্ত্র ও অন্যান্য রসদ বহন করে একাই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে জার্ডিয়া সেতুর কাছে পৌছান। তাঁর সিগন্যাল পেয়ে অন্য কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সেখানে পৌছান। মাইন বিস্ফোরণে এই সেতু ধ্বংসের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব কাঁকন বিবির। এই এলাকার সবগুলো গেরিলা অপারেশন এ অংশ নেনে তিনি। মহব্বতপুর, কান্দাগাঁয়ের যুদ্ধ,বসরাই টেংরাটিলার যুদ্ধ, বেটিরগাঁও নুরপুরের যুদ্ধ, দোয়ারাবাজারের যুদ্ধ, টেবলাইয়ের যুদ্ধ, সিলাইর পাড়ের যুদ্ধ, পূর্ব বাংলার যুদ্ধ এই রকম ২০টির মতো যুদ্ধে তিনি সামনে থেকে অংশগ্রহণ করেন।
নভেম্বর মাসের দিকে তিনি গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। তারপর তার উপর নির্মম পৈচাশিক অত্যাচার চালানো হয়, যা ভুলতে পারেননি কোনোদিন।
বাংলাদের স্বাধীন হবার পর এলাকায় খাসিয়া মুক্তিবেটি নামে পরিচিত হলেও তাঁর ওপর দিয়ে বয়ে যায় অসংখ্য ঝড়। একপ্রকার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন এই অসীম সাহসী নারী। এমনকি ভাইদের কাছে গেলেও তারা তাঁকে গ্রহণ করেনি।ভীষণ লজ্জার হলেও সত্য আশ্রয়হীন এই সাহসী যোদ্ধা জীবনধারনের জন্য একসময় শুরু করেন ভিক্ষাবৃত্তি। এসময় লক্ষীপুর গ্রামের দিনমজুর আব্দুল করিম যে ঘরটায় হাঁস মুরগী রাখতেন সেই ঘরে তাঁর কাঁকন বিবিকে থাকতে আশ্রয় দেন।
মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসী অবদানের জন্য সরকার ১৯৯৬ সালে এই বীরযোদ্ধাকে ‘বীরপ্রতীক’ উপাধীতে ভূষিত করে।আজ থেমে গেল তার বিপ্লবী চরণ।
বিনম্র শ্রদ্ধা মা। একে একে নিভে যাচ্ছে সব দেউটি!
- গরমে শিশু ও নবজাতকের যত্ন কীভাবে নিবেন
- যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস
- ঈশ্বরদীতে আজ তাপমাত্রা ৪১.২ ডিগ্রি
- তীব্র গরমে তাপের সাথে সাপও বাড়ে যে কারণে
- শেখ হাসিনার থাইল্যান্ড সফরে কী কী হবে?
- ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ফের কমল স্বর্ণের দাম
- মক্কা ও মদিনায় তুমুল বৃষ্টির শঙ্কা
- প্রবাসী বক্সার জিনাত ফেরদৌসের স্বর্ণজয়
- খালেদার গ্যাটকো মামলায় চার্জগঠনের শুনানি পেছাল
- অনেক প্রশংসা পাচ্ছি: তাসনিয়া ফারিণ
- কুড়িগ্রামে তাপদাহ: বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায়
- থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা
- ‘পদ্মশ্রী’ গ্রহণ করলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
- কেউ হিট স্ট্রোক করলে কী করবেন?
- সালমান আমার জীবন: ঐশ্বরিয়া
- খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরো বাড়ল
- ২৯ ফেব্রুয়ারি বা লিপ ইয়ার নিয়ে ১০টি মজার তথ্য
- জমজমাট ফুটপাতের ঈদ বাজার
- দেশে ধনীদের সম্পদ বাড়ছে
- এবার বাংলা একাডেমি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন যারা
- গুলবদন বেগম: এক মুঘল শাহজাদির সাহসী সমুদ্রযাত্রার গল্প
- বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা
- যে বিভাগে বিচ্ছেদের হার বেশি
- রোমান্টিক যুগের অন্যতম কবি জন কিটস
- ৭ই মার্চ পরিস্থিতি, কেমন ছিলো সেই দিনটি
- ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
- শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণের নেপথ্যে
- সদরঘাট ট্র্যাজেডি: সপরিবারে নিহত সেই মুক্তা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা
- দিনাজপুরে ব্যাপক পরিসরে শিম চাষের লক্ষ্য
- জিমন্যাস্টিকসে শিশু-কিশোরদের উৎসবমুখর দিন