ঢাকা, সোমবার ২২, ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৩৩:১৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
নিরাপত্তা, অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে আবেদন ১৫ রাজনীতিবিদের ‘ভোটের গাড়ি’র প্রচার শুরু আজ আগামী বাজেটের রূপরেখা দিয়ে যাবে অন্তর্বর্তী সরকার গণভোট নিয়ে নানা শঙ্কা পশ্চিম তীরে নতুন ১৯টি বসতি স্থাপনের অনুমোদন দিল ইসরায়েল

নিরাপত্তা, অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে আবেদন ১৫ রাজনীতিবিদের

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:০৫ এএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ সোমবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সরকারের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ। কেউ চেয়েছেন পুলিশের একটি দল তাঁকে নিরাপত্তা দিক। কেউ চেয়েছেন অস্ত্রধারী দেহরক্ষী বা গানম্যান। কেউ চেয়েছেন আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে রাজনীতিবিদদের পক্ষ থেকে এসব আবেদন আসছে। কেউ কেউ নিরাপত্তা ও অস্ত্রের লাইসেন্স একই সঙ্গে চেয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নিরাপত্তা, গানম্যান অথবা অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে এখন পর্যন্ত ১৫ জন রাজনীতিবিদের আবেদন তাঁদের কাছে এসেছে। সংখ্যাটি দিন দিন বাড়ছে। অনেকে খোঁজ নিচ্ছেন, কীভাবে আবেদন করতে হয়। রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি ২৫ জনের মতো সরকারি কর্মকর্তা অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন।

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের জন্য সার্বক্ষণিক গানম্যান ও বাসভবনের নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র পুলিশ সদস্য চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুস আহম্মেদ সেখ প্রমুখের জন্য।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার পর নিরাপত্তা চেয়ে রাজনীতিবিদদের আবেদন ও খোঁজখবর নেওয়া বেড়েছে। তবে এর আগেও কয়েকজন আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, কাকে কাকে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স, কাকে গানম্যান দেওয়া হবে, তা নির্ধারণে চলতি সপ্তাহের মধ্যে বৈঠকে বসছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ভোটের আগে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ আগে থেকেই ছিল। এর মধ্যে ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে গুলি করা হয় শরিফ ওসমান হাদিকে। তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর রাতে মৃত্যুবরণ করেন। শহীদ হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। ফয়সালকে পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

১১ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ভোট গ্রহণ আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। ভোটের প্রচার শুরু হবে ২২ জানুয়ারি। রাজনৈতিক দলগুলো এখন প্রার্থী চূড়ান্ত করা, জোটের আলোচনাসহ নির্বাচন-সংক্রান্ত কাজ করছে। তবে নিরাপত্তার প্রশ্ন জোরেশোরে আলোচনা হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে ১৪ ডিসেম্বর ‘রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের অনুকূলে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স ও রিটেইনার নিয়োগ নীতিমালা-২০২৫’ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ও সশস্ত্র রক্ষী নিয়োগে এই নীতিমালা করা হয়।

জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের জন্য সার্বক্ষণিক গানম্যান ও বাসভবনের নিরাপত্তার জন্য পোশাকধারী সশস্ত্র পুলিশ সদস্য চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয় ১৭ ডিসেম্বর। দলের অফিস সেক্রেটারি আ ফ ম আবদুস সাত্তার আবেদনটি করেন। এতে বলা হয়, দলীয় প্রধান হিসেবে শফিকুর রহমানের দলীয় কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তিনি সারা দেশে পথসভা ও জনসভায় অংশগ্রহণের জন্য সফর করবেন। তাই তাঁর সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য গানম্যান ও বাসভবনের নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র পুলিশ সদস্য মোতায়েন জরুরি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের মুঠোফোনে বলেন, দেশে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এবং জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দলের আমিরের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে, যাতে সরকার বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের নিরাপত্তার জন্য একইভাবে আবেদন জানানো হবে।

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও কর্নেল অলি আহমদের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করা হয় শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনার আগে। অলি আহমদের আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন। নির্বাচনী প্রচারে যেতে তাঁর সঙ্গে সার্বক্ষণিক পুলিশের একটি গাড়ি চাওয়া হয় আবেদনে। আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর আবেদনেও একই ধরনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে অলি আহমদ ১৩ ডিসেম্বর বলেন, ‘আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। মাসখানেক আগে আমি নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছু জানায়নি।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি পুলিশ সদস্য এবং গানম্যান চেয়েছেন। তিনি গতকাল রোববার রাতে বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জন্য নানাভাবেই হুমকির পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। একজন দলীয় প্রধান হিসেবে প্রতিদিনই তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। কোথায়, কখন আততায়ীরা থাকে, তা বলা সম্ভব নয়। সে জন্য তিনি নিরাপত্তা চেয়েছেন, যাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জায়গাটাতে সরকারের বিবেচনা থাকে এবং এ ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা দলীয়ভাবেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে ভাবছি।’

বিএনপি মনোনীত মেহেরপুর-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী মাসুদ অরুণ, গোপালগঞ্জ-১ আসনের সেলিমুজ্জামান সেলিম ও গোপালগঞ্জ-৩ আসনের এস এম জিলানী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুস আহম্মেদ সেখ, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মুহাম্মদ শাখাওয়াত হোসাইন (হিরু) প্রমুখ গানম্যান চেয়ে আবেদন করেছেন। ঢাকা-৪ আসনের (যাত্রাবাড়ী) বিএনপি মনোনীত সম্ভাব্য প্রার্থী তানভীর আহমেদ (রবিন) ও পাবনা-৩ আসনের হাসান জাফির তুহিন চেয়েছেন আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স।

ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুস আহম্মেদ গতকাল রাতে মুঠোফোনে বলেন, দেশে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে দেশের পরিবেশ স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আবেদনের প্রয়োজন পড়ত না। এ ছাড়া প্রশাসনও দুর্বল অবস্থায় আছে। দাগি আসামিরা জামিনে বের হয়ে আবার অপরাধে জড়াচ্ছে। সরকারে উচিত বিশিষ্টজনদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া।

সতর্ক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঢালাওভাবে অস্ত্রের লাইসেন্স দিলে অপব্যবহার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কাকে কাকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হবে, তা ঠিক করা হবে বৈঠক করে। এর পর থেকে লাইসেন্স দেওয়া শুরু হবে।

নির্বাচনের সময় সাধারণত বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়ার নির্দেশনা দেয় নির্বাচন কমিশন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এবারও এমন নির্দেশনা আসেনি; বরং সরকার লাইসেন্স দিতে উদ্যোগী। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, ভোট গ্রহণ শুরুর আগে ও পরে মিলিয়ে ৯৬ ঘণ্টা বৈধ অস্ত্রও প্রদর্শন করা যায় না।

বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, নিরাপত্তা কখনোই কেবল অস্ত্রের মাধ্যমে অর্জিত হয় না। নিরাপত্তা আসে বিশ্বাসযোগ্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, পেশাদার পুলিশি ব্যবস্থা, রাজনৈতিক সহনশীলতা ও আইনের শাসন থেকে। নেতাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া রাষ্ট্রের সক্ষমতার প্রমাণ নয়; বরং এটি একধরনের স্বীকারোক্তি যে রাষ্ট্র নিজেই তার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে লাইসেন্স ও নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, ‘নতুন করে অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়ে কোনো কাজ হবে বলে আমি মনে করি না; বরং প্রার্থী বা রাজনীতিবিদদের কারও চিহ্নিত বড় ধরনের ঝুঁকি থাকলে তাঁর জন্য আলাদাভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কার কী মাত্রার ঝুঁকি রয়েছে, এই সমীক্ষাটা আরও আগেই করা উচিত ছিল।’