ঢাকা, শনিবার ১৩, ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:৫০:৩৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা বিশ্বে প্রতি ২০ নারীর মধ্যে একজন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ভোটে প্রার্থী হতে পারবেন না পলাতক ব্যক্তিরা ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান হাদির পরিবারের পাশে ডা. জুবাইদা রহমান

নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:০৭ এএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ শনিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর বিজয়নগরে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। রাজনৈতিক দল, নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজ একযোগে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বলছে, এই হামলা কেবল একজন প্রার্থীকে লক্ষ্য করে নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রগতি ও নির্বাচনী পরিবেশকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা। নির্বাচনের আগে নিরাপত্তা জোরদার করা না হলে শঙ্কা আরও বাড়বে। হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ, মশাল মিছিল, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তপশিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় ওসমান হাদিকে গুলি করে মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা। তাঁর মাথায় গুলি লেগেছে। বর্তমানে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়। 

এতে বলা হয়, এই আক্রমণ সুদূরপ্রসারী অশুভ পরিকল্পনার অংশ। নিঃসন্দেহে এটি নির্বাচনী পরিবেশ বানচাল করার জন্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিস্তার করার নীলনকশা। গণতন্ত্রের পথচলাকে রুদ্ধ এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। এই নাশকতাকারী সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমনের বিকল্প নেই। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নইলে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন করতে মরিয়া হয়ে উঠবে। 

ওসমান হাদির ওপর হামলা এবং এর আগে বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্ত ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাকে গণসংযোগকালে গুলিবিদ্ধ করার ঘটনায় দুষ্কৃতকারীদের শাস্তির দাবিতে আজ শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। 

এদিকে হাদির ওপর গুলিবর্ষণকে নির্বাচন বানচাল ষড়যন্ত্রের অংশ বলে আখ্যা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল সন্ত্রাসীদের রুখে দিতে আরেকটি অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং জড়িতদের বিচার দাবিতে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। 

গতকাল বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাদিকে দেখতে যান জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে বলেন, তপশিল ঘোষণার পরদিন একজন জুলাইযোদ্ধা ও সংসদ সদস্য প্রার্থীর ওপর প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সব প্রার্থী, দলীয় কর্মী ও সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তায় কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। 

গণঅভ্যুত্থানের পর পুনরুদ্ধার হওয়া গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার উদ্দেশ্যেই হাদির ওপর এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। দলটি জানিয়েছে, হাদি আগে থেকেই প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এনসিপি কার্যালয়ের সামনে একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনাও উপেক্ষা করা হয়েছে। বিবৃতিতে সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজ, গণতান্ত্রিক শক্তি এবং তরুণদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানায় দলটি। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে যান দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। গতকাল রাত ৮টার দিকে হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে বাংলামটরে রূপায়ণ টাওয়ারের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে এনসিপি। 

এদিকে হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা-১০ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও অন্তর্বর্তী সরকারের সদ্য সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, সরকার যদি এটা করতে সফল না হয়, তাহলে আমরা মনে করব, এই নির্বাচন আয়োজনের কোনো সক্ষমতা এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নেই। 

এদিকে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টাও পার হয়নি; এরই মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ও এমপি পদপ্রার্থীকে গুলিবিদ্ধ করার ঘটনা ঘটেছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও ন্যক্কারজনক।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও দলীয় মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা বারবার বলে আসছি– আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনুন। সন্ত্রাসীদের দমনে কঠোর হোন।

এদিকে গণঅধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ওসমান হাদির ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা প্রকাশ করা হয়। দলটির নেতারা বলেন, এ হামলা শুধু একজন প্রার্থীর ওপর নয়; গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার হওয়া দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার ওপরেও সরাসরি আঘাত। এটি সুদূরপ্রসারী অশুভ পরিকল্পনার অংশ এবং নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করতে পরিকল্পিত সন্ত্রাসী তৎপরতারই স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। দলের সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বহুবার সতর্ক করা হলেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সবকিছু স্বাভাবিক দাবি করে জনগণকে ভুল বার্তা দিয়েছেন।

এদিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক ‘ইলেকশন অবজার্ভার সোসাইটি’ (ইওএস) এক বিবৃতিতে বলেছে, একজন প্রার্থীকে লক্ষ্য করে এমন হামলা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও নিরাপদ নির্বাচনী পরিবেশের প্রতি বড় ধরনের হুমকি। আসন্ন নির্বাচনে সব প্রার্থী, পর্যবেক্ষক এবং সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

হামলার পর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)। শাহবাগে জরুরি বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিলের পাশাপাশি দেশব্যাপী দোয়া কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে অংশ নিয়ে দলটির আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য ওসমান হাদির মতো সংগ্রামী তরুণ নেতাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ 

হাদির ওপর হামলাকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ। দলের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের বলেন, নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পরপরই তরুণ এক নেতার ওপর হামলা নিঃসন্দেহে পরিকল্পিত।