প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পেরু
অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ০৯:১৪ এএম, ৪ অক্টোবর ২০১৯ শুক্রবার
পেরুর রাজধানী লিমা
বিশ্ব ফুটবলের কারণে পেরু নামের দেশটি কারো কারো কাছে বেশ পরিচিত। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরু। প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী এ দেশটির ভূপ্রকৃতিতে চরম বৈপরীত্যের সহাবস্থান লক্ষ্য করা যায়। এখানে আছে জনবিরল মরুভূমি, বরফাবৃত পর্বতমালা, উচ্চ মালভূমি আর গভীর উপত্যকা।
আন্দিজ পর্বতমালা পেরিয়ে দেশের অভ্যন্তরে রয়েছে ঘন ক্রান্তীয় অরণ্য। জনবসতি তেমন ঘন নয়। প্রশান্ত মাহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত লিমা দেশটির প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও রাজধানী।
১৫৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারি স্পেনিশ নাগরিক ফ্রান্সিসকো পিজারো লিমা আবিষ্কার করেন। এর আগে দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তৃত ইনকা সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল পেরু। ১৬শ শতকে স্পেনের বিজেতাদের হাতে ইনকা সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। আন্দিজের স্বর্ণ ও রুপার খনির আকর্ষণে স্প্যানিশরা খুব শীঘ্রই পেরুকে দক্ষিণ আমেরিকাতে তাদের সম্পদ ও শক্তির কেন্দ্রে রূপান্তরিত করে।
ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিকে দেশটি স্প্যানিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা লাভ করে। পেরুর মোট আয়তন ১২ লাখ ৮৫ হাজার ২১৬ বর্গকিলোমিটার।
পেরুর নাজকা মরুভূমিতে যদি একটি বিমান নিয়ে উড়ে যাওয়া যায়, তাহলে অপেক্ষা করবে এক অপার বিস্ময়। ককপিট থেকে দেখা যাবে মরুভূমির বুকে আঁকা অসংখ্য আঁকিবুঁকি, জ্যামিতিক নকশা আর পশু-পাখির ডিজাইন।
রাজধানী লিমা থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণে নাজকা এবং পালমা শহরের মাঝামাঝি স্থানে প্রায় ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ অসাধারণ শিল্পকর্ম। এখানে আঁকা চিহ্নগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্যামিতিক নকশা, হামিংবার্ড, মাকড়সা, হাঙ্গর আর নানা সরীসৃপের রেখাচিত্র।
চিত্রগুলো বিমান থেকে বা স্যাটেলাইটে স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। প্রায় ১৮০টির মতো নকশা রয়েছে এখানে। শ’খানেক জ্যামিতিক চিত্র বাদে বাকিগুলো পশু-পাখিদের প্রতিলিপি।
১৯৩০-এর দশকে সর্বপ্রথম বিমানযোগে ওই মরুভূমি পার হওয়ার সময় এ লাইনগুলো আবিষ্কৃত হয়। এরপর থেকে এ নিয়ে চিন্তা ও গবেষণার শেষ নেই।
গবেষকদের ধারণা, নাজকা সম্প্রদায়ের লোকেরা কাঠ ও কাঠজাতীয় সরঞ্জামাদি দিয়ে এ রেখাগুলো এঁকেছে। অনেকগুলো রেখার শেষপ্রান্তে কিছু কাঠের উপকরণ পাওয়া গিয়েছে, যা থেকে কার্বন টেস্টের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ওই রেখা অঙ্কনের সময়কাল বের করেছেন। তবে এ রেখাগুলো কী কারণে আঁকা হয়েছিল, তা নিয়ে গবেষণা শেষ হয়নি আজও।
বিখ্যাত পুরাতত্ত্ববিদ এরিক ফন দানিকেনের মতে, নাজকা লাইনগুলো মূলত আগন্তুকদের ব্যবহার করা এয়ারস্পেস ও সিগন্যাল সেন্টার হিসেবে কাজ করত। আগন্তুকদের তখনকার মানুষেরা স্বর্গ থেকে নেমে আসা দেবদূত ভেবেছিল এবং দেবতা হিসেবে তাদের পূজা করেছিল। তবে বেশির ভাগ গবেষকই এ মতের সঙ্গে ভিন্নতা প্রকাশ করেন।
অনেকে মনে করেন, স্থানীয়রা তাদের উপাস্য দেবতাদের খুশি করার জন্য এ ধরনের বিশালাকৃতির রেখাচিত্র এঁকেছিল, যাতে দেবতারা স্বর্গ থেকেও তা দেখতে পান। আবার কেউ কেউ মনে করেন, জ্যোতির্বিদ্যা ও নক্ষত্র পর্যবেক্ষণের কাজে এ রেখাগুলো আঁকা হয়েছিল। মানব সভ্যতার বিকাশে এ এক অসামান্য উপাদান। কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি বা প্রযুক্তি ছাড়া শুধুমাত্র মানবিক প্রচেষ্টায় তৈরি এমন নান্দনিক নকশা সত্যিই অসাধারণ।
প্রশ্ন হচ্ছে খ্রিস্টপূর্ব যুগের এই অগভীর পাতলা রেখাগুলো এ কয়েক হাজার বছর পরেও কিভাবে এত নিখুঁত আর অক্ষত আছে? এর উত্তর পেরুর ওই অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতির মাঝেই লুকিয়ে আছে। নাজকা মরুভূমি বৃষ্টিশূন্য একটি এলাকা, বায়ুপ্রবাহও খুব কম। সারা বছরই সেখানকার তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকে। এ কারণেই হয়তো আজও অক্ষত থেকে আমাদের বিস্ময়ের জোগান দিয়ে চলেছে এই নাজকা লাইনস।
তবে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে সেখানেও। ২০০৭-এর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে ব্যাপক বন্যা আর ভূমিধসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই অঞ্চলটি।
ইউনেস্কো ১৯৯৪ সালে পেরুর এই নাজকা লাইনসকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করেছে। সারা বিশ্বের অসংখ্য পর্যটক আজও আসেন এ বিস্ময়কীর্তি দেখার জন্য।
কৃষি ও পর্যটন পেরুর অর্থনীতির বড় জোগানদাতা। ইনকা সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ, বিশেষ করে মাচু পিচু শহর দেখতে এখানে বেড়াতে আসেন বহু পর্যটক। আন্দিজ পর্বতমালার পেরুর অংশে একটি পর্বতের চূড়ায় অবস্থিত ইনকাদের হারানো শহর মাচু পিচু। এখন অবশ্য পুরো পাহাড়টির নামই হয়ে গেছে মাচু পিচু। সুরক্ষিত শহরটি পর্বতের চূড়া থেকে একেবারে খাড়াভাবে ৬০০ মিটার নিচে উরুবাম্বা নদীর পাদদেশে গিয়ে মিশেছে।
অন্যদিকে হুয়ানা পিচু নামের আরেকটি পর্বত খাড়া উঠে গেছে আরও কয়েক হাজার ফুট উঁচুতে। দুই দিক দিয়েই নিরাপদ শহরটিকে ইনকাদের প্রাচীন দুর্গনগরী নামেও ডাকা হয়।
স্থানীয়দের বেশিরভাগই ইনকা বা অন্য আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত। ইনকাদের ভাষা কেচুয়া। এর সঙ্গে সম্পর্কিত আরেকটি ভাষা আইমারা স্প্যানিশ ভাষার পাশাপাশি দেশটির সরকারি ভাষার মর্যাদা লাভ করেছে।
পঞ্চদশ শতাব্দীর ইনকা সম্রাটরা অভিজাত আমলাতন্ত্রের সাহায্যে রাজ্য শাসন করতেন। জনসাধারণ ছিলেন কৃষক শ্রেণির। তারা ভুট্টা, কড়াই শুঁটি, টমেটো, শুকনা মরিচ, তুলা প্রভৃতি উৎপাদন করতেন। তখন কাউকে কর দিতে হতো না, কিন্তু প্রত্যেকেরই কিছু সময়ের জন্য সৈন্য বিভাগে কাজ করতে হতো। অথবা রাস্তা, প্রাসাদ, মন্দির নির্মাণ অথবা খনিজ পদার্থ উত্তোলনে সাহায্য করতে হতো। ইনকারা ঝুলায়মান পুল, মন্দির, পার্বত্য অঞ্চলের স্তরে স্তরে সাজানো গৃহ, কৃষি ভূমিতে জলদানের সুবিধার জন্য খাল এবং বিরাট বিরাট দুর্গ তৈরি করতেন। আন্দিজ অঞ্চলে এখনও ইনকাদের তৈরি সেচ ব্যবস্থা, প্রাসাদ, মন্দির ও দুর্গগুলো দেখতে পাওয়া যায়।
তাদের শল্যচিকিৎসা অনেক উন্নত ছিল। পশম ও তুলা দিয়ে ইনকারা বস্ত্র প্রস্তুত করতেন। প্রত্যেকেই নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও বস্ত্র উৎপাদন করতেন।
পঞ্চদশ শতাব্দীতে স্প্যানিশ অভিযাত্রী ফ্রান্সিসকো পিভারো মাত্র ১৮০ জন সৈন্য নিয়ে ইনকা সাম্রাজ্যে প্রবেশ করেন। ইনকাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন পেরুর নিয়ন্ত্রণ। স্প্যানিশ উপনিবেশে পরিণত হয় পেরু। নতুন উপনিবেশে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালায় স্প্যানিশরা। ধ্বংস করা হয় ইনকা সভ্যতার বহু প্রতিষ্ঠান। এভাবে চলতে চলতে এক পর্যায়ে পতন হয় ইনকা সভ্যতার। অনেক ঐতিহাসিকদের মতে, স্প্যানিশরা যে সভ্যতা ধ্বংস করেছিল তা ছিল তাদের নিজেদের সভ্যতার চেয়ে অনেক উন্নত।
এক নজরে পেরু
পুরো নাম : পেরু প্রজাতন্ত্র, রাজধানী ও সবচেয়ে বড় শহর : লিমা, দাপ্তরিক ভাষা : স্প্যানিশ, অন্যান্য ভাষা : কুয়েচুয়া, আয়মারা, জাতিগোষ্ঠী : ৪৫ শতাংশ আমেরিনডিয়ান, ৩৭ শতাংশ মেসটিজো, ১৫ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ ও অন্যান্য ৩ শতাংশ, সরকার পদ্ধতি : ইউনিটারি সেমি-প্রেসিডেনশিয়াল রিপাবলিক, আইনসভা : কংগ্রেস অব দ্য রিপাবলিক, স্বাধীনতা : স্পেন থেকে ১৪ আগস্ট ১৮২৪, আয়তন : ১২ লাখ ৮৫ হাজার ২১৬ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা : তিন কোটি ১৮ লাখ ২৬ হাজার, ১৮ ঘনত্ব : প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৩ জন, জিডিপি : মোট ৪২৯.৭১১ বিলিয়ন ডলার, মাথাপিছু : ১৩ হাজার ৫০১ ডলার, মুদ্রা : সোল (পেন), জাতিসংঘে যোগদান : ৩১ অক্টোবর ১৯৪৫।
- থাইল্যান্ড সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী
- ছবির জন্য ওজন বাড়িয়ে বিপাকে পরিণীতি
- বসুন্ধরা গ্রুপে নিয়োগ, আবেদন ২ মে পর্যন্ত
- তিল চাষে ঝুঁকছেন সদরপুরের কৃষকরা
- কাটাখালী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হলেন রিতু
- তীব্র গরমে শরীরে পানিশূন্যতারোধে উপকারী যেসব ফল
- অব্যাহত তাপপ্রবাহের মধ্যে শিলাবৃষ্টির আভাস
- আজ সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল
- মাত্র ১০ মিনিটের ঝড়ে লন্ডভন্ড মৌলভীবাজার
- আজ দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী
- ৩৭ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ‘ফিলস লাইক’ ৪৫ ডিগ্রি কেন?
- দেশের ইতিহাসে হিটস্ট্রোকে একদিনে ১৭ মৃত্যুর রেকর্ড
- রাত ১১টার পর চায়ের দোকান বন্ধ করার নির্দেশ
- মাঠে সেদিন কি হয়েছিল, জানালেন মুশফিক, রিয়াদ ও সেই নারী আম্পায়ার
- ঢাকাসহ ৫ জেলার স্কুল-কলেজ বন্ধ আজ, প্রাথমিক খোলা
- খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরো বাড়ল
- জমজমাট ফুটপাতের ঈদ বাজার
- দেশে ধনীদের সম্পদ বাড়ছে
- বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা
- যে বিভাগে বিচ্ছেদের হার বেশি
- ৭ই মার্চ পরিস্থিতি, কেমন ছিলো সেই দিনটি
- ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
- শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণের নেপথ্যে
- সদরঘাট ট্র্যাজেডি: সপরিবারে নিহত সেই মুক্তা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা
- দিনাজপুরে ব্যাপক পরিসরে শিম চাষের লক্ষ্য
- জিমন্যাস্টিকসে শিশু-কিশোরদের উৎসবমুখর দিন
- কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকার নেতৃত্বে সাজ্জাদ-মোশাররফ-শরীফ
- বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের
- বিরল পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বিশ্ব
- ‘এক মাসে ৫৩ নারীর আত্মহত্যা’