ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ২৩:১৬:১৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

বাবা যে আদালতের পিয়ন, মেয়ে সেই আদালতে বিচারক

মনির হোসেন জীবন | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:২৪ পিএম, ৮ জুন ২০২০ সোমবার

বাবা যে আদালতের পিয়ন, মেয়ে সেই আদালতে বিচারক

বাবা যে আদালতের পিয়ন, মেয়ে সেই আদালতে বিচারক

বাবা গৌরনন্দ ছিলেন যে আদালতের পিয়ন-মেয়ে অর্চনা সেই আদালতে বিচারক (জজ)। বিচারক অর্চনা ভারতের বিহার রাজ্যের কানকার বাগ গ্রামের মেয়ে। বাবা ছিলেন একজন আদালতে (কোর্টের) সামান্য পিয়ন। অনেকদিন বাবার হাত ধরে ছোট্ট পা ফেলে কোর্টে গেছেন। খুব কাছ থেকে দেখেছেন বাবার জীবন সংগ্রাম। এসব দেখে শিশুটি সিদ্ধান্ত নেয় বড় হয়ে একদিন সে বিচারক হবে। সারা জীবন বাবা যাদের পিছনে দাঁড়িয়ে নীরবে কাজ করেছেন একদিন তাদের মতো হয়ে বাবার কষ্ট দূর করবেন। ছোট্ট সেই শিশুমনের স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে। সেদিনের সেই অর্চনা আজ বিচারক।

এদিকে, ভারতীয় গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্চনা বলেছেন, তার এই সফলতার পিছনে স্বামী-শাশুড়ি এবং মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন অর্চনা। সঙ্গে বাবার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, কেউ যদি কোন স্বপ্ন মনে ধারণ করে তবে সে যেন পিছিয়ে না যায়। যত বাধাই আসুক না কেন ওই স্বপ্নের পিছনে ছুটতে হবে।

অর্চনার বাবা বছরের পর বছর সামান্য কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছেন সেই আদালতেই বিচারকের আসনে বসতে যাচ্ছেন তিনি। অর্চনা ভারতের বিহার রাজ্যের কানকার বাগ গ্রামের মেয়ে।

তবে, এই আনন্দের সঙ্গে অর্চনার বুকে পাহাড়সম কষ্টও ভর করেছে। কারণ যার জীবন সংগ্রাম তাকে বিচারক হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল সেই বাবা আজ আর নেই। ইহলোকের মায়া কাটিয়ে বাবা গৌরনন্দ আজ অন্যলোকের বাসিন্দা। সম্ভবত সেখান থেকেই মেয়ের সাফল্য দেখে হাসছেন, দু’হাত তুলে করছেন আশীর্বাদ। ওদিকে বাবার কথা ভেবে বারবারই মেয়ের চোখের কোণে জমে ভালোবাসার আশ্রু।

আজ যে অর্চনার সাফল্য দেখে সবাই ধন্য ধন্য করছে সেই অর্চনার জীবন কিন্তু একদমই মসৃণ ছিল না। অকালেই তাকে একা ফেলে বাবা মারা যান। শিশু অর্চনাকে নিয়ে শুরু হয় বিধবা মায়ের জীবন সংগ্রাম। বেশ কষ্ট করেই তাকে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হয়েছে। এর পেছনে একমাত্র অনুপ্রেরণা ছিল বাবার সেই কোর্টের চাকরি।

পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে অর্চনা স্থানীয় একটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। কিছুদিন পর পাটনা মেডিকেল কলেজের কেরানি রাজীভ রঞ্জনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের কোল আলো করে আসে একটি শিশুসন্তান। সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মেই চলছিল। তবে কোথায় যেন একটি অভাব বোধ হচ্ছিল তার।

কী এক তাড়না তাকে তাড়া করে ফিরছিল সারাক্ষণ। সেই তাড়না আর কিছুই নয়, শৈশবে লালিত স্বপ্ন- বিচারক হবেন তিনি। বারবার তখন ভেসে উঠত বাবার মুখ। কিন্তু ততদিনে বেশ দেরি হয়ে গেছে। অনেক দায়িত্ব চেপে বসেছে কাঁধে। স্বামী-সন্তান-সংসার সামলে আবারও পড়ালেখা শুরু করতে পারবেন কি না এই দুশ্চিন্তাও ছিল তার মনে। সাত পাঁচ ভাবনার মধ্যেই নিজের ইচ্ছার কথা স্বামী ও শাশুড়িকে জানান অর্চনা। উভয়েই তাকে অভয় দেন। শুরু হয় অর্চনার জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়।

আবারও পড়ালেখা শুরু করেন অর্চনা। ভর্তি হন আইন কলেজে। সেখান থেকে এলএলবি ও এলএলএম শেষ করেন। এরপর দিল্লিতে গিয়ে বিচারক নিয়োগের পরীক্ষার কোচিং করেন। প্রস্তুতি শেষ করে দেন বিচারক নিয়োগের পরীক্ষা। প্রথমবারের প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হন অর্চনা। হতাশা কাটিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো পরীক্ষায় বসেন। এবার উত্তীর্ণ হন তিনি। বর্তমানে বিচারক হিসেবে যোগদানের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।