ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:৪২:২০ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

বিকৃত ছবি-ভিডিওর শিকার সাত নারী চিকিৎসক

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:০০ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০২৫ মঙ্গলবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ডিগ্রি নেওয়ার পর বছর খানেক হলো বিয়ে করেছেন তরুণী। বর্তমানে মিরপুরে ঢাকা ডেন্টাল কলেজে কর্মরত। গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে তাঁর স্বামীকে ফোন করেন এক বন্ধু। ডেন্টাল সার্জন তরুণীর মেসেঞ্জার থেকে বিকৃত ছবি ও ইঙ্গিতপূর্ণ খুদে বার্তা পাওয়ার পর বন্ধুর কাছে ফোন করে জানতে চান প্রকৃত ঘটনা। এরপর জানা গেল, এই তরুণীর ছবি ও নাম ব্যবহার করে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ভুয়া আইডি খুলে পরিচিত অনেকের কাছে প্রায় একই ধরনের খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে। অনেকের কাছে এসব আইডি থেকে গেছে বিকৃত ভিডিও। 

সামাজিক মাধ্যমে একই ধরনের ঘটনার শিকার চার ডেন্টাল সার্জনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। মিরপুরের মার্কস মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেছেন তারা। ঘটনা পর্নোগ্রাফি-সংক্রান্ত হওয়ায় তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না। ভুক্তভোগী চিকিৎসকরা জানান, এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছেন অন্তত সাতজন। 

গত ১৬ সেপ্টেম্বর মিরপুর থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন একজন চিকিৎসক। মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। পরে মামলাটি স্থানান্তর হয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগে। পুলিশ তদন্ত করে এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ফাইজুর রহমান রূপক নামে একজন ডেন্টাল সার্জনকে গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করেছে। তাকে দুই দিনের হেফাজতে নিয়ে তথ্য জানতে চেয়েছে পুলিশ। কেন, কী কারণে ফাইজুর এই ঘটনায় জড়াবে– তা বের করার চেষ্টা করছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। ঘটনার শিকার ডেন্টাল সার্জনরা এক সময় ফাইজুরের সহপাঠী ছিলেন। তারা একসঙ্গে মার্কস মেডিকেল কলেজে পড়তেন।  

রোববার মিরপুর ডেন্টাল কলেজের ভুক্তভোগী এক সার্জন বলেন, ‘যাদের কাছে আমার বিকৃত ছবি গেছে, তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে পরিচিত। কয়েকজন আমার স্বামীর বন্ধুবান্ধব। আমার প্রকৃত ফেসবুক অ্যাকাউন্টের প্রোফাইলে সর্বশেষ যে ছবি রয়েছে, সেটি যুক্ত করে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। মেডিকেলের বন্ধু, পরিচিত বড় ভাইদের কাছে খুদে বার্তা গেছে। কয়েকটির ভাষা ছিল এমন– যেন আমার স্বামী সময় দেন না। ভুল একটি সম্পর্কে আছি। আবার কারও কাছে খুদে বার্তায় টাকার বিনিময়ে একান্তে সময় কাটাতে রাজি– এমন সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। যাদের কাছে এমন খুদে বার্তা গেছে তাদের কয়েকজন আমার স্বামীকে ফোন করে জানতে চেয়েছেন, দাম্পত্য জীবনে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা। আমার বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনের অনেকে ফোন করতে থাকে। আমি এখনও ট্রমায় আছি। রাতে ঘুমাতেও কষ্ট হয়।’   

এই ডেন্টাল সার্জন আরও বলেন, ‘এটা কী যে লজ্জাজনক পরিস্থিতি, ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমি অন্তঃসত্ত্বা এবং জটিল কিছু সমস্যা ধরা পড়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শে বিশ্রামে থাকছি। এমন একটি সময়ে সামাজিক মাধ্যমে অন্যের আইডিতে আমার বিকৃত ও ভুয়া ছবি ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা বড় ধরনের মানসিক চাপ তৈরি করেছে। আবার অপরিচিত কিছু নম্বর থেকে ফোন করে বাজে প্রস্তাব দিচ্ছে। এতে বুঝলাম পরিচিত গণ্ডির বাইরেও ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই চাপ নিতে না পেরে কিছু দিন মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ রেখেছিলাম।’ 
তিনি বলেন, কলেজের কোনো একটি প্রোগ্রামে তোলা ছবি ফেসবুকে ছিল। সেই ছবি নিয়ে বিকৃত করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মা-বাবার সঙ্গে শেয়ার করতে পারিনি। তারা বিষয়টি কীভাবে নেন– এমন ভয় কাজ করেছে। 

ভুক্তভোগী আরেক তরুণী বলেন, ‘সামাজিক মাধ্যমে আমার ভুয়া আইডি খুলে অনেকের সঙ্গে চ্যাট করা হচ্ছে। কেউ ধরে নিচ্ছে, আমি তাদের সঙ্গে কথা বলছি। ২০২৩ সাল থেকে এটা শুরু হয়েছে। আবার কিছু দিন বন্ধ ছিল। এর পর আবার শুরু হয়। আমার নকল আইডি তৈরি করে লাইন অ্যাপ ও স্ন্যাপ চ্যাটে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হতো। আমাদের বন্ধু ফাইজুর এটা করেছে বিশ্বাস হচ্ছিল না। তবে ২০২২ সালে আমাদের আরেক সহপাঠীর কিছু একান্ত ছবি ব্যবহার করে ফাইজুর তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে বিষয়টি ধরা পড়লে মুচলেকা দিয়ে সে রেহাই পায়। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও ফাইজুরের পরিবারও বিষয়টি জানে। আমি লক্ষ্যবস্তু হওয়ার পর একটি বিষয় মাথায় আসে। এক সময় মেডিকেল কলেজে আমার চারজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। আমরা একসময় অনেক ঘোরাঘুরি করেছি। তার মধ্যে ফাইজুর ছিল। তবে ২০২৩ সালের দিকে ফাইজুর আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। সেটি নাকচ করেছিলাম। পরে আমার সঙ্গে যে ছেলের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তার কাছে আমার বান্ধবী সেজে সামাজিক মাধ্যমে নানা বিকৃত ছবি ও তথ্য পাঠাতে থাকে। আমাদের বিয়ের পরও সেটি অব্যাহত থাকে।’ 

এই তরুণী আরও বলেন, ‘কলেজে গেলে সিনিয়র অনেক ভাই বলতেন, তোমার সঙ্গে তো রাতে কথা হলো। তখন বলতাম কীসের কথা। অনেকে মুচকি হাসত। স্যারদের কাছে বাজে ছবি গেছে। অনেককে বোঝাতাম– আমার নামে ভুয়া আইডি থেকে ফোন পেয়েছেন। সবাইকে তো বোঝানো কঠিন। অনেকে আবার আমাকে খারাপ ভাবত।’ 

আরেক ডেন্টাল সার্জন কাছে তাঁর ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘ডেন্টাল কলেজে কয়েকজন পরিচিত ডাক্তার ও বড় ভাইদের কাছে আমার বিকৃত ছবি ও খুদে বার্তা পাঠানো হয়। এ ছাড়া বাইরের অনেক অপরিচিত লোকের কাছে একই ধরনের ছবি গেছে। তারা আমার প্রকৃত আইডি খুঁজে আমাকে কল করে বাজে প্রস্তাব দেয়। অপরিচিত নম্বর থেকে একদিন কল এলে বলেছি, কোথায় আমার নম্বর পেয়েছেন সেটা না জানালে পুলিশকে জানাব। ওই লোকটি ভয় পেয়ে একটি টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে থাকা নম্বর শেয়ার করেন। সেটি পাওয়ার পর মামলা করেছি। এর আগে একই ধরনের ঘটনার প্রতিকার চেয়ে জিডি করেছিলাম।’ 

তিনি বলেন, ‘কেন আমাকে টার্গেট করা হলো এটা নিশ্চিত নই। তবে মেডিকেলে পড়ার সময় ফাইজুর এক সময় আমাদের ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিল। এক সহপাঠীর ছবি ব্যবহার করে ফাঁসানোর ঘটনায় ক্যাপ্টেন থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর পর আমার আরেক সহপাঠীকে ক্যাপ্টেন করা হয়। ওই সহপাঠীর সঙ্গে পরে আমার বিয়ে হয়। ক্যাপ্টেন নিয়ে বিরোধ থেকে আমাকে টার্গেট করা হতে পারে। এর বাইরে আর কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।’   

ঘটনার শিকার আরেক সার্জন বলেন, জড়িত যেই থাকুক দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। জীবনে কারও যাতে এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে না হয় সেটা প্রত্যাশা তাঁর। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোরশেদুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে একজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রযুক্তিগত তদন্ত চলছে। 

এ ব্যাপারে মার্কস মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক গোলাম মাহমুদ পাভেল বলেন, দুই-তিন বছর আগে ওই ছাত্রের ব্যাপারে একটি অভিযোগ এসেছিল। তখনকার ডেন্টাল ইউনিটপ্রধান অধ্যাপক আজিজুর তাকে নিয়ে বসেছিলেন। আমাকেও একদিন ডেকেছিলেন। এরপর কী হয়েছিল জানি না। 

মার্কস মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর এ এস এন সাফিউর রহমান বলেন, ২০২২ সালে ফাইজুরের ব্যাপারে প্রায় একই ধরনের অভিযোগ আনেন তার এক সহপাঠী। তখন তাকে ডেকে কাউসেলিং করানো হয়েছে। দুপক্ষের অভিভাবক ডেকে বিষয়টি এক ধরনের সমঝোতা করা হয়। ২০২৪ সালের পর থেকে একই ধরনের অভিযোগ আসতে থাকে। মানসিক অসুস্থতা ছাড়া এ রকম কাজে কারও জড়ানো কঠিন।  

কারা হেফাজতে থাকা অভিযুক্ত ফাইজুরের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার মা বলেন, ‘আমার ছেলে এ কাজে জড়িত– এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। তদন্ত হোক, তারপর প্রকৃত সত্য বের হবে। তবে ছেলের একটি মোবাইল হারিয়েছে। সেই ঘটনায় জিডি করা হয়নি। ওই মোবাইল ব্যবহার করে কেউ সেটি করেছে কিনা এই সন্দেহ আছে।’