ঢাকা, মঙ্গলবার ২৩, এপ্রিল ২০২৪ ১৫:০২:৫১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
‘পদ্মশ্রী’ গ্রহণ করলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা কাতার-বাংলাদেশ ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই কয়েক ঘণ্টায় ৮০ বারেরও বেশি কেঁপে উঠল তাইওয়ান ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল মাকে অভিভাবকের স্বীকৃতি দিয়ে নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা নতুন করে ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি

বিভিন্ন দেশে যেভাবে বর্ষবরণ উৎসব উদযাপিত হয়

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:২০ এএম, ১৪ এপ্রিল ২০২২ বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

আজ পহেলা বৈশাখ, বাংলা ১৪২৯। ১৪২৮ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বছর। এই দিনটি বাংলাদেশের সবচাইতে বড় উৎসবগুলোর একটি।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক বাণীতে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশবাসীকে।

শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। গতকাল (১৩ এপ্রিল)দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলেন, ‘জীবনের এই পথ, কে বলিতে পারে/বাকি আছে কত/...ক্ষমা করো আজিকার মতো পুরাতন বরষের সাথে/পুরাতন অপরাধ যত।’

পরপর দুই বছর করোনা মহামারির কারণে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সীমিত কিংবা ঘরোয়া পরিবেশে হলেও এবার নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাঙালি বরণ করছে নতুন বছরকে।

তবে কেবল বাংলাদেশই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছেও দিনটি বিশেষ উদযাপনের।

শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশে ১৪ই এপ্রিলে নতুন বর্ষবরণের উৎসব পালন করা হয়। এর মধ্যে ভারতের কয়েকটি রাজ্য, মিয়ানমার, নেপাল, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনাম অন্যতম।

১৪ই এপ্রিল কোন দেশে কেমন করে পালন হয় নতুন বছরের উদযাপন চলুন জেনে নেই:

বাংলাদেশ

সৌর পঞ্জিকা অনুসারে অনেক আগে থেকেই পালিত হত বাংলা ১২টি মাস।গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হত এই সৌর পঞ্জিকা।

এখন যেমন বাংলা নতুন বছরের শুরুর দিনটি একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, এক সময় তেমন ছিল না। তখন বাংলা নববর্ষ পালিত হত ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে।

ইতিহাসবিদদের হিসাব অনুযায়ী ১৫৫৬ সাল থেকে বাংলা সন প্রবর্তন করা হয়।

মুঘল সম্রাট জালালউদ্দিন মোহাম্মদ আকবর খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য তার সভার জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লা শিরাজীর সহযোগিতায় ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে 'তারিখ-এ-এলাহি' নামে নতুন একটি বছর গণনা পদ্ধতি চালু করেন।এটি কৃষকদের কাছে 'ফসলি সন' নামে পরিচিত হয়, যা পরে 'বাংলা সন' বা 'বঙ্গাব্দ' নামে প্রচলিত হয়ে ওঠে।

ঐ সময়ে প্রচলিত রাজকীয় সন ছিল 'হিজরি সন', যা চন্দ্রসন হওয়ার প্রতি বছর একই মাসে খাজনা আদায় সম্ভব হতো না।

বাংলা সন শূন্য থেকে শুরু হয়নি, যে বছর বাংলা সন প্রবর্তন করা হয়, সে বছর হিজরি সন ছিল ৯২৩ হিজরি।

সে অনুযায়ী সম্রাটের নির্দেশে প্রবর্তনের বছরই ৯২৩ বছর বয়স নিয়ে যাত্রা শুরু হয় বাংলা সনের।

বাংলা বর্ষের মাসগুলোর নামকরণ হয়েছে বিভিন্ন নক্ষত্রের নামে।

১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।

মিয়ানমার

স্থানীয়ভাবে মিয়ানমারের নববর্ষকে থিংইয়ান নামে ডাকা হয়। বার্মিজ ভাষায় এর অর্থ 'পরিবর্তন' বা 'এক জায়গা থেকে অন্যত্র স্থানান্তর'।

এ দিনটিতে মিয়ানমারে হয় থিংইয়ান উৎসব, যেখানে পানি উৎসব হয় বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকায়। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো পানি উৎসবের একটি। দেশটির মানুষ ৫০০ বছরের বেশি সময় ধরে পালন করে আসছে এ উৎসব।

নতুন বছরের প্রথম দিনটি সাধারণত মধ্য-এপ্রিলে হয়ে থাকে, তবে ঠিক কোন নির্দিষ্ট দিনে তা পালন হবে তা হিসাব করা হয় মিয়ানমারের সৌর এবং চন্দ্র পঞ্জিকার গণনা মিলিয়ে।

নববর্ষের চারদিন আগে থেকে পানি উৎসব শুরু হয়, চলে নববর্ষের দিন পর্যন্ত।

দেশটির মানুষের বিশ্বাস, পানি উৎসবের পানির ছোঁয়া লাগতে হবে সব মানুষের গায়ে, তাতে করে সব পাপ দূর হয়ে যাবে। এপ্রিলে মিয়ানমারের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে, যে কারণে পানি উৎসবের কারণে লোকের কষ্টের চেয়ে বরং এক ধরণের শান্তি হয়।

থাইল্যান্ডের সংক্রান উৎসব

থাইল্যান্ডের নতুন বছরের শুরুর দিনটি সংক্রান উৎসব নামে পরিচিত।সংক্রান শব্দটি সংস্কৃত ভাষার শব্দ সংক্রান্তি থেকে এসেছে। এপ্রিলের ১৩ তারিখে শুরু হয় এ উৎসব চলে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত।

থাইল্যান্ডে সংক্রানের দিনে পানি উৎসবে মেতে ওঠে পুরো দেশ।

এ সময়ে দেশটিতে সাধারণ ছুটি থাকে। থাই এবং মালয়েশিয়ান সিয়ামিজ গোত্রের মানুষেরাই মূলত ধর্মীয় রীতি মেনে এ উৎসব পালন করেন, কিন্তু উদযাপন হয় দেশজুড়ে।

সিনহালা নববর্ষ

সিনহালা নববর্ষকে স্থানীয়ভাবে আলুথ আবুরুদ্ধাও বলা হয়। মূলত সিনহালিজদের উৎসব হলেও দেশটির সকল মানুষ দিবসটি উদযাপন করে থাকে।

দিনটিতে শ্রীলঙ্কায় সরকারি ছুটি থাকে।

১৪ই এপ্রিল পালন করা হয় শ্রীলংকার এই নববর্ষ । উৎসব চলে এক সপ্তাহ ধরে।

এ উৎসবটিও সৌর পঞ্জিকা অনুসারে পালন করা হয়, কিন্তু ঠিক কোন দিনে পালন করা হবে দিনটি সেটি নির্ধারণ করা হয় নতুন চাঁদের হিসাবে। উৎসবে নানা রকম পিঠা, মিষ্টি আর পায়েস বানানো হয়। এছাড়া বর্ষবরণে গরু দৌড়ের মত বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতা হয়।

এতে বিভিন্ন খেলাধুলা আর প্রতিযোগিতার আয়োজন বেশি দেখা যায়।

সবচাইতে উল্লেখযোগ্য খেলাধুলার মধ্যে রয়েছে গরুর দৌড়, ডিম খেলা-এতে হাওয়ায় ছুড়ে দেয়া ডিম লুফে নেয়ার প্রতিযোগিতা হয়, ফসলি মাঠে কাদা খেলা ইত্যাদি।

কম্বোডিয়ার খেমার নববর্ষ

১৪ই এপ্রিল কম্বোডিয়াতে খেমার নববর্ষ পালন করা হয়।

দেশটিতে দিনটিকে বলা হয় 'চউল সানাম থামাই', এর মানে নতুন বছরে প্রবেশ করা।

উৎসবের শুরু হয় বৌদ্ধ মন্দিরে সকাল বেলায় ধর্মীয় আচার পালনের মধ্য দিয়ে। এরপর প্যাগোডা বা বৌদ্ধমন্দির চত্বরে ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে শুরু করেন অধিবাসীরা।

খেমার নববর্ষে কম্বোডিয়াতে নানা ধরণের লোকজ খেলা এবং প্রতিযোগিতা হয়।

এর মধ্যে একটি হচ্ছে রশি বা দড়ি টানাটানি খেলা হয়, অধিকাংশ এলাকায় নারী বনাম পুরুষের মধ্যে হয় এই খেলা। তাতে অংশ নেন ছোট বড় সবাই।

নেপাল

১৪ই এপ্রিল নেপালের আনুষ্ঠানিক বর্ষ পঞ্জিকা বিক্রম সাম্বাতের প্রথম দিন।

সৌর পঞ্জিকা, যা মূলত প্রাচীন হিন্দু রীতি অনুযায়ী তৈরি করা হয়, তার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় কোন দিনে পালন হবে উৎসব, তবে সাধারণত ১৪ই এপ্রিলেই হয় উৎসবটি।

লাওস

লাওসেও সৌর পঞ্জিকা অনুযায়ী বৈশাখের প্রথম দিনটি পালন করা হয়।

স্থানীয়ভাবে এর নাম সংক্রান বা পি-মেই, যার মানে নতুন সংক্রান্তি বা নতুন বছর।

দেশটিতে তিন দিন ধরে চলে উৎসব।

ভারত

ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সময় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রচলন শুরু হয়।

কিন্তু তারও বহু বছর আগে থেকে পঞ্জিকা দেখে যেসব দিন আর ক্ষণ উদযাপন হত, সেগুলো এখনো দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে পালন করা দেশটির সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।

ভারতের কয়েকটি রাজ্যে বৈশাখ মাসের প্রথম দিন নববর্ষ উদযাপন করা হয়। হিন্দু সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, মনিপুর, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়ু এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন নামে পালন হয় বৈশাখের প্রথম দিন:

* পাঞ্জাব- বৈশাখী

* কেরালা- ভিষু

* আসাম- বিহু

* তামিল নাড়ু- পুথান্দু

* উড়িষ্যা- পান সংক্রান্তি

* পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা- পহেলা বৈশাখ

সুত্র : বিবিসি