ঢাকা, শুক্রবার ২৯, মার্চ ২০২৪ ১২:৫৬:২৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
টাঙ্গাইলে শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতীরা রমজানের অর্ধেকেও কমেনি মাছ ও মাংসের দাম সেতু থেকে খাদে পড়ে বাসে আগুন, নিহত ৪৫ রমজানের অর্ধেকেও কমেনি মাছ ও মাংসের দাম ঈদযাত্রা: ৮ এপ্রিলের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে আজ বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া

বিশ্বজুড়ে যৌন হয়রানির শিকার ৩৫ শতাংশ নারী

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৫৮ পিএম, ৮ অক্টোবর ২০২০ বৃহস্পতিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বে ৩৫ শতাংশ নারীই জীবনের কোন না কোন সময়ে যৌন হয়রানি, শারীরিক লাঞ্ছনা, শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৪০ শতাংশের কম নারীই আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন। আর বিচার পেয়েছেন মাত্র ১০ শতাংশ ভুক্তভোগী। এমনই পরিসংখ্যান দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান সংস্থা ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ। সম্প্রতি বাংলাদেশে ধর্ষণে অভিযুক্তদের বিচারের ক্ষেত্রে আইনের কঠরতা ও দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি উঠেছে।

ধর্ষণ হলো বেআইনী যৌন ক্রিয়াকলাপ। সাধারণত জোর করে বা কোন ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে আঘাতের হুমকির মধ্যমে যৌন মিলনে বাধ্য করা। ওয়াল্ড পপুলেশন রিভিউ বলছে- ভুক্তভোগী নারী বা পুরুষরা বেশিরভাগ সময়ই যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা বিচারালয়ে অভিযোগ দায়ের করেন না। এসব কারণে যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের সঠিক পরিসংখ্যান দেওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।

অনেক দেশেই যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতার বিরুদ্ধে আইন থাকলেও তা অনেকাংশে অপ্রতুল, অসংগতিপূর্ণ এবং অনিয়মিত। বিশ্বজুড়ে পুরুষেরাও প্রতিদিন যৌন হয়রানি, যৌন নিপীড়ন এবং ধর্ষণের শিকার হন।

সংস্থাটি বলছে- ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের তুলনায় ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সের কিশোরীরা চার গুণ বা তার বেশি পরিমাণে ধর্ষণের শিকার হন। কলেজছাত্রীরা (১৮ থেকে ২৪ বছর বয়স) যৌন নিপীড়নের শিকার হন তিন গুণ পরিমাণে। হিজড়া সম্প্রদায়ের ব্যক্তি এবং প্রতিবন্ধীদের যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান দুই গুণ হয়ে থাকে। খোদ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৭০ শতাংশ ধর্ষণের ঘটনা ভুক্তভোগীর পরিচিতদের দ্বারাই সংগঠিত হয়।

ধর্ষণে শীর্ষ ১০ দেশ:

ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংগঠিত ধর্ষণের পরিসংখ্যান তুলে ধরে। যে সব ঘটনায় অভিযোগ পাওয়া গেছে, শুধুমাত্র সে সব ঘটনাই এ পরিসংখ্যানে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। প্রতি ১ লাখ নাগরিকদের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা কতটা ঘটেছে তারা তা তুলে ধরেছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা: দেশটির প্রতি এক লাখের মধ্যে ১৩২ জনেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন। দেশটির মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়- প্রতি চার জনের মধ্যে একজন ধর্ষণ করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

বোতসোয়ানা: আফ্রিকার দেশ বোতসোয়ানায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। দেশটির প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৯৩ জন ধর্ষণের শিকার হন।

লেসোথো: প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৮৩ জন ধর্ষণের শিকার হন। দেশটির মোট জনসংখ্যা ২১ লাখ ২৫ হাজার ২৬৮ জন।

সোয়াজিল্যান্ড: আফ্রিকার এই দেশটির জনসংখ্যা ১১ লাখ ৪৮ হাজার ১৩০ জন। যেখানে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৭৮ জন ধর্ষণের শিকার হন। সেই হিসেবে ২০১৯ সালে এ দেশে ৮৯৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

বারমুডা: দেশটির প্রতি এক লাখের মধ্যে ৬৭ জনেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন। অনেক দেশেই যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতারিবোধী আইন থাকলেও নানান অসঙ্গতিতে এখানে তা ঠিকমতো প্রয়োগই হয় না।

সুইডেন: ইউরোপের এই দেশটিতে প্রতি এক লাখের মধ্যে ৬৩ জনেরও বেশি নারী ধর্ষিত হন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও দেশটিতে পুরুষরাও প্রতিদিন যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

সুরিনাম: দক্ষিণ আমেরিকার দেশ সুরিনামের প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৪৫ জন ধর্ষণের শিকার হন। দেশটিতে পাঁচ লাখ ৮১ হাজার ২৭২ জন মানুষ বসবাস করেন। গত বছর দেশটিতে ২৬২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

কোস্টারিকা: মধ্য আমেরিকার দেশ কোস্টারিকার প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৩৭ জন ধর্ষণের শিকার হন। গবেষণা বলছে- এখানে ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সের নারীদের ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।

নিকারাগুয়া: মধ্য আমেরিকার এ দেশটির প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৩২ জন ধর্ষণের শিকার হন। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৬৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫০২ জন। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ ডটকম বলছে- অনেক নারী যৌন সহিংসতার ঘটনা নিয়ে অভিযোগই করেন না।

গ্রানাডা: ক্যারিবীয় এই দ্বীপ দেশটির প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৩১ জন ধর্ষণের শিকার হন। দেশটির মোট জনসংখ্যা এক লাখ ১২ হাজার তিন জন। ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সি কলেজ ছাত্রীরাও যৌন নির্যাতনের ঝুঁকিতে থাকেন এখানে।

১১৮টি দেশের মধ্যে চালানো এই জরিপে ১৪ তম অবস্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪০তম। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বাংলাদেশের উপরের অবস্থানে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- অস্ট্রেলিয়া (১২), নিউজিল্যান্ড (১৬), নরওয়ে (২৪), ইসরাইল (২৬), ফ্রান্স (২৭), ফিনল্যান্ড (২৯)।

বাংলাদেশে প্রতি ১ লাখ নারীর মধ্যে প্রায় ১০ জন ধর্ষণের শিকার হন। ৪২তম অবস্থানে থাকা জার্মানিতে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৯ জনেরও বেশি ধর্ষিত হন। আর ভারতের প্রতি লাখ নারীর মধ্যে এক দশমিক ৮ জন ধর্ষণের শিকার হন।

সংস্থাটি বলছে- ধর্ষণের সমস্যা সমাধানের জন্য আইন-কানুনের বাইরেও নজর দেওয়া দরকার বলে মনে করছে বিভিন্ন দেশের কর্তৃপক্ষ। দেশগুলোকে তাদের সংস্কৃতি এবং সামাজিক রীতিনীতিগুলোর গভীর, নিয়মতান্ত্রিক কর্মহীনতার দিকে নজর দেওয়া উচিত। প্রচলিত কর্মপদ্ধতি যৌন সহিংসতা রোধ বা প্রতিরোধ করে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বলছে- চলতি বছরের আগস্টে ৭২টি ধর্ষণের ঘটনায় ৪৯টিই কন্যাশিশু। ৩২টি গণধর্ষণের ঘটনায় শিশু ১৪টি।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে- চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ৯৭৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৮ জন। এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৩ জন এবং ১২ জন আত্মহত্যা করেছেন। একইসঙ্গে এই আট মাসে ধর্ষণচেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৯২ জন নারী এবং ৯ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ জন নারী ও ৯ জন পুরুষ।

আসক জানায়, গত ৯ মাসে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৩২ জন নারী। এর মধ্যে হত্যার শিকার হন ২৭৯ নারী এবং পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭৪ নারী। যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ১৬৮ নারী। এর মধ্যে যৌতুকের কারণে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭৩ জন। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬৬ জনকে এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৭ জন নারী। এছাড়া স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছেন ১২ নারী।

এছাড়া এ সময়ের মধ্যে ১১ জন গৃহকর্মী হত্যার শিকার হয়েছেন এবং বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩২ জন গৃহকর্মী। আর ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ২ জন।

এদিকে এই ৯ মাসে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ২১ জন নারী। শিশু নির্যাতন ও হত্যার দিক দিয়েও গত ৯ মাসের পরিসংখ্যান অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ১ হাজার ৭৮ জন শিশু শারীরিক নির্যাতনসহ নানা সহিংসতার শিকারসহ হত্যার শিকার হয়েছে ৪৪৫টি শিশু। এছাড়া ৬২৭টি শিশু ধর্ষণ ও ২০টি বলাৎকারের ঘটনা ঘটেছে।

দেশে বর্তমানে ধর্ষণের এক সংস্কৃতি চলমান। ধর্ষণের সংস্কৃতি বলতে- শিশু থেকে শুরু করে সমাজের প্রত্যেক নারী, কিশোরী, বালিকা ধর্ষণের মতো পরিস্থিতির শিকার হতে পারেন এমন পরিস্থিতি।  

গত বছরে বাংলাদেশে ধর্ষণের চিত্র আরও ভয়াবহ। শুধুমাত্র বাংলাদেশ পুলিশের পরিসংখ্যান দেখলেই মাথা চড়ক গাছ হয়ে যায়। তাদের পরিসংখ্যান বলছে- গত বছরে বাংলাদেশে ৫ হাজার ৪০০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালের তুলনায় এ সংখ্যা ঢের বেশি। ২০১৭ সালের সংখ্যাটি ২০১৮ সালের চেয়ে অবশ্য একটু কম।

-জেডসি