ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ৪:২৪:২৩ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনের শাক-সবজি উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি শিশু হাসপাতালের আগুন সম্পূর্ণ নিভেছে

বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহেরুন্নেসা মেরীর একাত্তরের স্মৃতিচারণ

অনু সরকার | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৫:৫৬ পিএম, ৩ মার্চ ২০২১ বুধবার

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহেরুন্নেসা; ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধচলাকালে বয়সে তরুণী। যুদ্ধ চলাকালে অস্ত্র সংরক্ষণ, অস্ত্র পরিবহণ ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দানের কাজ করেছেন মেরী৷ আজও পেশার পাশাপাশি নিরলসভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন সাংগঠনিক এবং লেখালেখির কাজ৷

১৯৫৫ সালের ১২ নভেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানায় জন্ম গ্রহণ করেন মেহেরুন্নেসা মেরী৷ তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকছেদ আলী উজির এবং মা রহিমা বেগম৷

১৯৭০ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে কলেজে ভর্তি হন মেহেরুন্নেসা৷ এর কিছুদিন পরেই অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ৷

মুক্তিযুদ্ধে নিজের অংশগ্রহণের পটভূমি ও নিজের কাজ সম্পর্কে স্সৃতিচারণ করেছেন তিনি। মেরী বলেন, ‘আমার আব্বা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন৷ আমাদের বাড়িতেই মুক্তিযোদ্ধাদের শিবির ছিল৷ তখন আমাদের গ্রামের আরো ছেলে-মেয়েরাও মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করত৷ আমিও তাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের কাজে অংশ নেই৷ রাতইল বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন নূরুদ্দোহার কাছে আমরা নকল অস্ত্র দিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম৷ ওই অঞ্চলে মূলত ভাটিয়াপাড়া রণাঙ্গনে যুদ্ধ হতো৷ সেই যুদ্ধের সময় আমরা কাজ করেছি৷’

তিনি বলেন, ‘আমরা মেয়েরা সাধারণত যুদ্ধের মাঠে থাকতাম না৷ বরং আহত মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা চিকিৎসা সেবা দিতাম এবং সেবা শুশ্রূষা করতাম৷ ডা. সাইদুল ইসলামের অধীনে একটি দল ছিল৷ সেই দলের সদস্য হিসেবে আমরা চিকিৎসা সেবা প্রদান করতাম৷’

মেহেরুন্নেসা মেরী আরও বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা যে অস্ত্রগুলো নিতো এবং পরে আবার ফেরত দিতো, সেগুলোর বর্ণনা আমি খাতায় লিখে হিসাব রাখতাম এবং সংরক্ষণ করতাম৷ কতগুলো অস্ত্র হারালো কিংবা কতগুলো যোগ হলো তা লিখে রাখতাম। অনেক সময় পাক সেনাদের পরাজিত করে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অস্ত্রগুলো নিয়ে আসতেন সেগুলোরও হিসাব রাখতাম আমি৷'

মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় কৌশলে কীভাবে গোলা ও অস্ত্র পৌঁছে দিতেন মেহেরুন্নেসা এবং তার সঙ্গিরা, সে সম্পর্কে তিনি জানান।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘লঞ্চে হামলা চালানো হতো যেই গোলা দিয়ে, সেগুলো আমাদের কয়েকজনকে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিয়ে যেতে হতো৷ বালতির ভেতরে সেই গোলাগুলি সাজিয়ে দেওয়া হতো৷ তার উপরে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হতো৷ তখন তো মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক অজ্ঞাত শত্রু ছিল৷ সেসময় তাদের ‘ক্ষুধারু' বলা হতো৷ তো এই ক্ষুধারুরা যেন বুঝতে না পারে সেজন্য বালতিতে কাপড় দিয়ে তার উপর সাবান রেখে দিতাম৷ যেন মনে হয়, আমরা নদীর ঘাটে কাপড় কাঁচতে যাচ্ছি৷ আর সাংকেতিক কথায় বলে দেওয়া হতো, অমুক ঘাটে অমুক রঙের জামা গায়ে মাঝি থাকবে তার কাছে গোলাগুলো পৌঁছে দিতে হবে৷ আসলে মাঝি বলতে মুক্তিযোদ্ধাদের বোঝানো হতো৷ আমরা তাদের কাছে অস্ত্র তুলে দিয়ে ফিরে আসতাম৷'

মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস বাংলাদেশেই অবস্থান করে এসব কাজ করেছেন বীর সাহসী নারী মেহেরুন্নেসা মেরী৷ এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক তার বাবা গ্রামের বড় বড় মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য তাদের বাড়িতেই এনে রাখতেন৷ তবে পাকিস্তানের সেনারা যখন গ্রামের দিকে কিংবা ভেতরে এগিয়ে আসতো তখন মেয়েদের নৌকায় করে পার করে নদীর ওপারে রেখে আসা হতো৷ আবার পরিস্থিতি বুঝে তারা বাড়িতে ফিরে যুদ্ধের কাজ করতেন বলে জানান মেহেরুন্নেসা৷

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবারও লেখাপড়া শুরু করেন এই তরুণী মুক্তিযোদ্ধা৷ উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন তিনি৷ পরে আবার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে এমএ করেন মেহেরুন্নেসা৷ শিক্ষাজীবন শেষে ব্যাংকিং পেশায় যোগ দেন৷

পেশার পাশাপাশি সামাজিক ও সাংগঠনিক কাজেও সক্রিয় তিনি৷ একইসাথে চালিয়ে যাচ্ছেন লেখালেখির কাজ৷
তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১২টি৷ এগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও নারী মুক্তিযোদ্ধা' শিরোনামে একটি বই৷ নারী মুক্তিযোদ্ধাদের ঘটনাবলী সমৃদ্ধ এই বইটি দুই খণ্ডে প্রকাশিত৷

এ বইটি লেখার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর যখন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠিত হলো, তখন আমি এই সংসদের নারীবিষয়ক সম্পাদক হই৷ এরপর কয়েক দফায় আমি নির্বাচিত, আবার কখনও মনোনীত নারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি৷ ফলে সবসময় আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত৷ তাছাড়া বিভিন্ন সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সম্মেলনে নারী মুক্তিযোদ্ধারা আসতেন৷ এছাড়া আমিও নিজে বিভিন্ন জেলায় গিয়ে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনী সংগ্রহ করে এই বইটি লিখেছি৷'

কৃতজ্ঞতা : ডয়চে ভেলে।