ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ২৩:০২:৪৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

বীর মুক্তিযোদ্ধা রমা দাস, স্বীকৃতিহীন এক যোদ্ধা

অনু সরকার | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৭:০৪ পিএম, ১১ মার্চ ২০২১ বৃহস্পতিবার

বীর মুক্তিযোদ্ধা রমা দাস, স্বীকৃতিহীন এক যোদ্ধা

বীর মুক্তিযোদ্ধা রমা দাস, স্বীকৃতিহীন এক যোদ্ধা

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নয় নম্বর সেক্টরে ১১৮ জন সদস্যের নারী মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন রমা দাস৷ যুদ্ধ চলাকালে নানা ঝুঁকিপূর্ণ ও হৃদয় বিদারক ঘটনার মুখোমুখী হয়েছেন রমা৷ দীর্ঘ চার দশক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন তিনি৷

তিনি বলেন, আমরা একবার সাতক্ষীরা গিয়েছিলাম মেয়েদের নিয়ে৷ আমি যখন স্পায়িং করছিলাম, সব খোঁজ খবর নিচ্ছিলাম, তখন একজন রাজাকার আমাদের খুব সন্দেহ করে এবং বলে, এরা নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগ৷ তরপর বলে, এরা নিশ্চয়ই মুক্তি৷ তখন একজন পাকিস্তানি সেনাও এসে বলল, মুক্তি হ্যায়? তখন আমরা বহুকষ্টে এক পরিবারের কাছ থেকে বোরখা নিয়ে সেটি পরে ওদের ফাঁকি দিয়ে চলে আসি৷ সেই ভয়ংকর ঘটনার কথা মনে পড়লে এখনও গা শিউরে ওঠে৷ কারণ আমাদের দেহ তল্লাশি করলে তারা বোমা পেতো৷ আমাদের সাথে বোমা ছিল৷ কিন্তু ভাগ্য ভালো ছিল বলে ধরা পড়িনি৷'

একবার ভুল করে শান্তিবাহিনীর চেয়ারম্যানের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েও কীভাবে বেঁচে যান, সেসস্পর্কে রমা দাস বলেন, ‘আরেকবার শান্তি বাহিনীর এক চেয়ারম্যানের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম৷ প্রথমে আমাদের ভুলটা বুঝতে পারিনি৷ তবে সেই ভদ্রলোক শান্তি বাহিনীর চেয়ারম্যান হয়েও আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন৷ আমাদের খেতে দিয়েছেন৷ এরপর যখন দেখছেন, আমরা খুব বিপদগ্রস্ত নারী তখন তিনি আমাদের রাতের আঁধারে গরুর গাড়িতে করে যশোর সিএন্ডবি রোড থেকে পার করে দিয়েছেন৷ আমাদের সামনে কিন্তু পাক সেনারাও পড়েছিল৷ তারা গাড়ি তল্লাশি করতে চাইলো৷ কিন্তু শান্তি বাহিনীর চেয়ারম্যান আমাদের সাথে একজন লোক দিয়ে দিয়েছিলেন৷ সেই লোক তখন একটা জায়গার নাম জানিয়ে তাদের বললো শান্তি বাহিনীর ঐ চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্য গাড়িতে আছে৷ তখন আর আমাদের গাড়ি তল্লাশি করেনি পাক সেনারা৷ তারপর ওই লোক এভাবে আমাদের সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে৷ সেখানে আমাদের লোক ছিল৷ তাদের সাথে আমরা সীমান্ত পেরিয়ে চলে যায়৷'

মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশবাসীর সহায়তার কথা উল্লেখ করে রমা দাস বলেন, ‘আমরা মুক্ত এলাকায় যেতাম৷ তথ্য সংগ্রহ করে আনতাম৷ দেশবাসী আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন৷ তারা যদি দেখতো, রাজাকার আসছে তাহলে তারা আমাদের গোপনে বলে দিতো৷ এছাড়া যারা আওয়ামী লীগের ছিল সাধারণত তাদের বাড়িতে গিয়েই আমরা থাকতাম এবং সেই অঞ্চলের খোঁজ খবর নিতাম৷'

মুক্তিযুদ্ধের সময়ের নানা দৃশ্য ও ঘটনা নিয়ে জহির রায়হানের তৈরি কিছু তথ্যচিত্রে তার সাক্ষাৎকার ও প্রশিক্ষণের ছবি রয়েছে বলে জানিয়েছেন রমা দাস৷

স্বাধীন দেশে জাতি গঠনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন তিনি৷ এছাড়া শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি মহিলা সংস্থা, গালর্স গাইড এবং রেড ক্রিসেন্ট এর কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি৷

কিন্তু এতো নিষ্ঠার সাথে ঝুঁকি নিয়ে দেশের মুক্তির জন্য কাজ করেও দীর্ঘ প্রায় চার দশক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি কিংবা কোন সুযোগ-সুবিধা পাননি মুক্তিযোদ্ধা রমা দাস৷

তিনি বলেন, ‘দুঃখ হলো সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কিছুই পাইনি৷ আমার স্বামী এখানে একটি সরকারি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন৷ তিনিও কিছু পাননি, আমিও কিছু পাইনি৷ কোন বেতন বৃদ্ধি, আর্থিক সুবিধা কিংবা কোন সম্মানী কিছুই পাইনি আমরা৷ আমাদের ছেলেমেয়েরাও সরকারের পক্ষ থেকে কোন চাকরি কিংবা কোন সুযোগ-সুবিধা পায়নি৷'

এমনকি ২০০১ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের যাচাই বোর্ড তার কাছে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যোগদান এবং সমাপ্তির দলিল-প্রমাণ দেখতে চেয়েছিলেন৷ সেগুলো দেখাতে না পারায় তাকে অপমাণ করা হয়৷ তবে কয়েক বছর আগে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক অশোক কুমার বিশ্বাস বিশেষভাবে উদ্যোগ নিয়ে তাকে মাসিক ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেন বলে জানান রমা দাস৷ এজন্য জেলা প্রশাসক বিশ্বাসের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এই ত্যাগী নারী মুক্তিযোদ্ধা৷

কৃতজ্ঞতা: ডয়েচে ভেলে