ঢাকা, বুধবার ২৪, এপ্রিল ২০২৪ ১০:৪৬:৩৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
‘পদ্মশ্রী’ গ্রহণ করলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা কাতার-বাংলাদেশ ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই কয়েক ঘণ্টায় ৮০ বারেরও বেশি কেঁপে উঠল তাইওয়ান ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল মাকে অভিভাবকের স্বীকৃতি দিয়ে নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা নতুন করে ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি

মগবাজার বিস্ফোরণ: স্বজনহারাদের মর্মাান্তিক অভিজ্ঞতা

বিবিসি বাংলা অনলাইন | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৬:৪২ পিএম, ২৮ জুন ২০২১ সোমবার

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

মগবাজারে বিস্ফোরণের পর থেকেই স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন একটি ফার্মেসির কর্মচারী মোঃ সুজন। কারণ তিনি জানতেন, সেখানকার শরমা হাউজে নয় মাসের মেয়ে আর ১৩ বছরের ভাইকে নিয়ে শরমা খেতে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী জান্নাত বেগম।

বিস্ফোরণের পরপর তিনি মগবাজারের কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মেয়ে সুবহানার লাশ পান।এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে পান স্ত্রীর মৃতদেহ। তার শ্যালক আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে।

রবিবার রাতে মোঃ সুজন সাংবাদিকদের বলেন, ''আমার সব শেষ হয়ে গেল, আর কিছুই রইল না। আমার বেঁচে থেকে আর কি হবে?''

মগবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে ঢাকার বেশ কয়েকটি হাসপাতাল আহাজারিতে ভরে ওঠে। কেউ কেউ তাদের স্বজনদের খোঁজ করছিলেন, আবার কেউ আহত বা নিহত স্বজনদের পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছিলেন।

সুজনের স্বজনেরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, একটি ফার্মেসিতে কাজ করেন সুজন। কিছুদিন আগে তাদের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন তার ১৩ বছর বয়সী শ্যালক রাব্বী। রবিবার তার কাছ থেকেই টাকা নিয়ে ওই রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন তারা।

শুধু মোঃ সুজন নয়, রবিবার মগবাজারের আউটার সার্কুলার রোডের ভবনটিতে বিস্ফোরণের পর আরও অনেককে তাদের স্বজনদের জন্য ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় সাতজন নিহত আর অন্তত ৬৬ জন আহত হয়েছেন।

কিন্তু হাসপাতালগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে শতাধিক মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। রবিবার বিকাল থেকে কমিউনিটি হাসপাতাল, আদ-দ্বীন হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিল রোগী ও তাদের স্বজনদের ভিড়।

আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরে আর কিছু মনে নেই:

ময়মনসিংহের একজন স্কুল শিক্ষক মোঃ কামাল হোসেন একটি কাজে ঢাকায় এসেছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে হেঁটে হেঁটে মগবাজার থেকে মৌচাকের দিকে একটি চশমার দোকানে যাচ্ছিলেন তিনি। এই সময় বিস্ফোরণের ধাক্কায় তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। কারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে, তা তার জানা নেই।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের বিছানায় শুয়ে তিনি বলেন, ''হঠাৎ করে একটা আগুনের গোল্লা এসে আমাকে ঘুরানো দিয়ে ফুটপাতের উঁচু জায়গা থেকে মেইন রাস্তায় ফেলে দিল। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই।''

তার জ্ঞান ফেরে হাসপাতালের বিছানায়। তার শরীরের অনেকটা অংশ পুড়ে গেছে। ডান হাতের কবজি ভেঙ্গে গেছে। এই সময় তার সঙ্গে থাকা নগদ ২০ হাজার টাকা, মোবাইল, জমির কিছু কাগজপত্রসহ একটি ব্যাগ ছিল। সেগুলো আর পাওয়া যায়নি।

বিস্ফোরণের সময় গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে ছিলেন আবুল কাশেম:

প্রায় ২৫ বছর ধরে বাসের ড্রাইভার হিসাবে কাজ করার পর দেড় বছর আগে ঋণ করে একটি বাস কেনেন ৪৫ বছর বয়সী আবুল কাশেম মোল্লা।

মগবাজারের বিস্ফোরণের সময় তার সেই বাসটি ছিল ঠিক ভবনের সামনে। বিস্ফোরণে বাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। গাড়ির স্টিয়ারিং ধরা অবস্থাতেই মারা যান আবুল কাশেম ।

আবুল কাশেমের ভাই মনিরুল ইসলাম বলেন, ''ঋণ করে ১১ লাখ টাকা দিয়ে আমার ভাই বাসটি কিনেছিল। সেই টাকাও শোধ হয়নি, বাসটাও পুইড়া গেল।''

গাজীপুরে এক মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। দুর্ঘটনার ঠিক আগে আগে তিনি স্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন।

পরে পরিবারের সদস্যরা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে এসে তার মৃতদেহ শনাক্ত করেন। স্টিয়ারিং হাতেই আবুল কাশেমের মৃত্যু হয়েছে বলে তারা শুনতে পেয়েছেন। সেই গাড়িটি এখনো পড়ে রয়েছে বিধ্বস্ত ভবনটির সামনে।

মোস্তাফিজুর মারা গেলেন ডাক্তার দেখাতে এসে:

ইউটিউবের একটি ইসলামিক চ্যানেলের উপস্থাপক ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। কবি নজরুল সরকারি কলেজের বাংলা তৃতীয় বর্ষের এই ছাত্র ঢাকার শনির আখড়ায় বসবাস করতেন।

তার খালাতো ভাই এস এম মনিরুজ্জামান মাহফুজ সাংবাদিকদের জানান, শনির আখড়া থেকে রবিবার বিকালে মালিবাগে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন। ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় ভবনটি থেকে শাটার এসে তার মাথায় আর শরীরে লাগে।

প্রথমে তাকে আদ -দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

একজন উদ্ধার কর্মীর বর্ণনা:

বিস্ফোরণের সময়, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় অমল চন্দ্র শীল সাগর তার নিজের সেলুনে কাজ করছিলেন। এই সময় বিকট একটি শব্দ শুনতে পেয়ে চমকে যান। বাইরে বেরিয়ে প্রধান সড়কে গিয়ে দেখতে পান, মেইন রোডের পাশে রাস্তার কাটা অংশে একজন মানুষ পড়ে রয়েছে, যার একটি কবজি নেই।

আশেপাশে আরও বেশ কয়েকজন পড়ে রয়েছেন। তখন তিনি ওই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে রাশমনো হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর ওই হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় তাকে নিয়ে আবার কমিউনিটি হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

এরপর আবার তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। এসে তখন দেখতে পান, একজন ভ্যানচালক আহত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তাকে নিয়ে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তৃতীয়বার ঘটনাস্থলে এসে অবশ্য আর কাউকে পাননি।

তিনি বলছিলেন, ''মুহূর্তের মধ্যে যে কীভাবে এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গেল, ভাবতেও পারিনি।''