ঢাকা, মঙ্গলবার ২৩, এপ্রিল ২০২৪ ১৮:২৯:৩১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
‘পদ্মশ্রী’ গ্রহণ করলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা কাতার-বাংলাদেশ ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই কয়েক ঘণ্টায় ৮০ বারেরও বেশি কেঁপে উঠল তাইওয়ান ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল মাকে অভিভাবকের স্বীকৃতি দিয়ে নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা নতুন করে ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি

মুক্তিবেটি কাঁকন বিবির সাতকাহণ

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:০৮ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ বুধবার

বীর মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবি।  ফাইল ছবি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবি। ফাইল ছবি।

কাঁকন বিবি। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের এক বীরযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা ও গুপ্তচর। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি পাকিস্তানী বাহিনীর বিপক্ষে মুক্তিবাহিনীর হয়ে ৫ নম্বর সেক্টরের গুপ্তচরের কাজ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে বীরপ্রতীক খেতাব দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। তবে এ বিষয়ে সরকারি ভাবে কোন গ্যাজেট প্রকাশিত হয়নি।

এই বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার লীপুর ইউনিয়নের ঝিরাগাঁও গ্রামে।

কাঁকন বিবি, আসল নাম কাঁকাত হেনিনচিতা। তিনি মুক্তিবেটি নামে পরিচিত। সুনামগঞ্জ জেলার খাসিয়া সম্প্রদায়ের এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার মূল বাড়ি ছিল ভারতের খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশের এক গ্রামে। ১৯৭০ সালে দিরাই উপজেলার শহীদ আলীর সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তার নাম পরিবর্তিত হয় এবং তার নতুন নাম হয় নুরজাহান বেগম। ১৯৭১ সালের ১৬ মার্চ তিনি এক কন্যাসন্তানের (সখিনা) জন্ম দেন। কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার কারণে স্বামীর সাথে তার মনোমালিন্য দেখা দেয় এবং এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে মৌখিক ছাড়াছাড়ি হয়। পরে এপ্রিল মাসে তার সাথে ইপিআর সৈনিক মজিদ খানের বিয়ে হয়। মজিদ তখন কর্মসূত্রে সিলেট ইপিআর ক্যাম্পে থাকতেন। দুই মাস সিলেটে স্বামীর সাথে বসবাস করার পরে তিনি পূর্বের স্বামীর ঘর থেকে সখিনাকে আনতে যান। মেয়েকে নিয়ে ফিরে আসার পরে তিনি স্বামীকে না পেয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার স্বামী বদলি হয়ে দোয়ারাবাজার সীমান্ত এলাকার কোন এক ক্যাম্পে আছেন।

স্বামীকে খুঁজতে বের হন তিনি। সীমান্তবর্তী ঝিরাগাঁও গ্রামে শহীদ আলী নামে একজনের আশ্রয়ে শিশুকন্যাকে রেখে দোয়ারাবাজারের টেংরাটিলা ক্যাম্পে যান তিনি। ১৯৭১ সালের জুন মাস তখন। পাকিস্তানী বাহিনীর কাছে ধরা পড়েন, তাদের বাঙ্কারে দিনের পর দিন অমানুষিকভাবে নির্যাতন করে তাকে ছেড়ে দেয় তারা। এরপরেই কাকন বিবি স্বামীকে পাওয়ার আশা ত্যাগ করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। জুলাই মাসে তার সাথে দেখা হয় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের। মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী তার সাথে সেক্টর কমাণ্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর শওকতের সাথে দেখা করিয়ে দেন। তার উপর দায়িত্ব পড়ে গুপ্তচর হিসেবে বিভিন্ন তথ্য জোগাড় করার। তিনি অসমসাহসিকতার সাথে বিভিন্ন রূপে পাকিস্তানীদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্যসংগ্রহ করেন। তার সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধারা অনেক সফল আক্রমণ চালান।

গুপ্তচরের কাজ করতে গিয়েই দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজারে পাক বাহিনীর হাতে পুনরায় ধরা পড়েন তিনি। এবারে একনাগাড়ে ৭ দিন পাকিস্তানী বাহিনী ও রাজাকারেরা তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। লোহার রড গরম করে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছেঁকা দেয়া হয়। মৃত ভেবে অজ্ঞান কাকন বিবিকে পাক বাহিনী ফেলে রেখে যায়। কয়েকদিন পরে জ্ঞান ফিরে আসলে তাকে উদ্ধার করে বালাট সাবসেক্টরে নিয়ে আসা হয়। সুস্থ হয়ে তিনি পুনরায় ফিরে আসেন বাংলাবাজারে। অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষিত হন মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর কাছে। এর পর তিনি সম্মুখ যুদ্ধ এবং গুপ্তচর উভয় কাজই শুরু করেন।

এরপরে প্রায় ২০টি যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন কাকন বিবি। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে টেংরাটিলায় পাক সেনাদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। এই যুদ্ধে তার দেহে কয়েকটি গুলি বিদ্ধ হয়। আজও উড়ুতে কয়েকটি গুলির চিহ্ন রয়ে গেছে।

দেশ স্বাধীন হলে কাকন বিবি দোয়ারাবাজার উপজেলার লীপুর ইউনিয়নের ঝিরাগাঁও গ্রামে এক ব্যক্তির কুঁড়েঘরের বারান্দায় মেয়ে সখিনাসহ আশ্রয় নেন। এর পরের প্রায় ২ যুগ তিনি ছিলেন সবার চোখের অন্তরালে। ১৯৯৬ সালে স্থানীয় সাংবাদিক বিষয়টি সকলের গোচরে নিয়ে আসলে দেশব্যাপী এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে এক একর খাস জমি প্রদান করেন। সিলেটের মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান তাকে ঐ জায়গার ওপরে একটি ছোট কুঁড়েঘর নির্মাণ করে দেন। এরপরের কয়েক বছর মোটামুটি ভাল কাটলেও পরবর্তীকালে অর্থাভাবে নিয়মিত চিকিৎসা করাতেও অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় তাকে।

১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী তাকে বীরপ্রতীক উপাধীতে ভূষিত করার ঘোষণা দেন। কিন্তু আজও তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়নি।

ব্রেন স্ট্রোক করে ২০১৭ সালের ২১ জুলাই ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কাঁকন বিবি। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের ২০ মার্চ গুরুতর অসুস্থাবস্থায় তিনি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর। ২১ মার্চ বুধবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে এখানেই মৃত্যুবরণ করেন বীর এই মুক্তিযোদ্ধা।