ঢাকা, শনিবার ১৩, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:৪৪:৩৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা বিশ্বে প্রতি ২০ নারীর মধ্যে একজন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ভোটে প্রার্থী হতে পারবেন না পলাতক ব্যক্তিরা ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান হাদির পরিবারের পাশে ডা. জুবাইদা রহমান

লেইছ-পুঁথির দোকানে ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ০৩:৩০ পিএম, ২২ মে ২০১৮ মঙ্গলবার

রাজধানীর নিউ মার্কেট-গাউছিয়া-চাঁদনী চক নারীদের প্রিয় মার্কেট। এই ত্রৈয়ী মার্কেট থেকে কেনাকাটা না করলে কোনো কিছুই যেন সম্পন্ন হয় না। আর তাই তো ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন বয়সী নারী ক্রেতারা ভীড় জমাচ্ছেন লেইছ, ফিতা, পুঁথি, কারচুপি, ইয়োগ, পাথরের দোকানগুলোতে।

 

গাউসিয়া, নিউ মার্কেট, চাঁদনী চকসহ প্রায় সব মার্কেটেই রয়েছে লেইছ, পুঁথি, কারচুপি, ইয়োগ, পাথরের দোকান। এখন রেডিমেট থ্রিপিস কেনার থেকে মেয়েদের ভীড় আর আগ্রহ দেখা গেল এসব দোকানে। মেয়েরা এসব আনুষঙ্গ নিজের পছন্দের ডিজাইন দিয়ে দর্জির কাছ থেকে বানিয়ে নিতে পারেন বিভিন্ন নকশা করা জামা। তাই তারা ভিড় করছেন এসব দোকানে।

 

এসব মার্কেটের লেইসের দোকান, ক্লথের দোকান ঘুরে দেখা গেল, অনেক রকমের বোতামের সমাহার বিভিন্ন দোকানে। যারা কিনতে এসেছেন আগেই ডিজাইন ঠিক করে আন্দাজ করে নিয়েছেন কয়টি বোতাম লাগবে। তারপর বেছে নিচ্ছেন পছন্দের বোতাম।

 

চাঁদনী চকের বিক্রেতা আফসানা বলেন, এবার প্রায় অনেক পোশাকের ডিজাইনে বোতামের ব্যবহার করা হয়েছে। ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় এখন বোতাম দিয়ে নকশা করা পোশাকের স্থান ওপরে।

 

বোতাম কিনতে আসা রোকসানা আমিন জানালেন, জামার ডিজাইনে লেইছ, জরি, চুমকির ব্যবহার অনেক সময় বেশ জবড়জং লাগে। সেদিক থেকে বোতাম দিয়ে ডিজাইন করা জামাগুলো আমার সবচেয়ে পছন্দের। জামার সাদামাটা লুক অনায়াসেই বদলে যায়, আবার কড়াভাবে চোখেও লাগে না। কাঠ, কড়ি, পুঁতি, মুক্তা, পাথর কিংবা কাপড়ের বোতাম ব্যবহার করা হয় পোশাকের ডিজাইনে। আকার ও নকশা বুঝে প্রতি পিস বোতাম এখানে বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে।

 

পুঁথির দেখা গেল হরেক রকম সমারোহ, হরেক রকমের প্রকারভেদ। পুঁথি মূলত তিন ধরনের হয়, ছোট, মাঝারি আর বড়। বর্তমানে অনেক মেয়েরা জামার মধ্যে পুঁথি ব্যবহার করছে। যেহেতু বিভিন্ন কালারের পুঁথি পাওয়া যায় সেহেতু ডিজাইনে বৈচিত্রতার ক্ষেত্রে এর অনেক চল।

 

ধানমন্ডি জিগাতলা থেকে এসেছেন এশিয়া রহমান। মনযোগ দিয়ে পুঁথি দেখছেন। এশিয়া বলেন,পুঁথির ঐতিহ্য আগে থেকেই। এখন তো অন্যান্য আরো অনেক কিছু বেরিয়েছে। তবে পুঁথি দিয়ে বানানো ড্রেসই আমার কাছে সবচেয়ে ভাল লাগে। দোকানে পাওয়া যাচ্ছে হরেক রঙের বাহারি পুঁথি। এর মধ্যে কাল, নীল, সাদা, গোল্ডেন, সবুজ রঙের চলই বেশি। পুঁথি সাধারণত জামার নীচের পার্টে, হাতায়, গলার সামনের অংশে, ওড়নাসহ জামার বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়। যে যার পছন্দমত নিজের জামাতে পুঁথি লাগায়।

 

এটির সাইজ অনুসারে দাম নেয় দোকানীরা। গাউসিয়ার পুঁথি দোকানের বিক্রেতা হাসানুজ্জামান বলেন,সব পুঁথির দাম সমান না। এককটার দাম একেক রকম। আবার মানেরও ব্যাপার আছে। বিভিন্ন পুঁথির দোকান দেখে দেখা গেল,ছোট সাইজের পুঁথির দাম ১ টাকা থেকে ১.৫০ টাকা,মাঝারি সাইজের পুঁথির দাম ১.৫০ টাকা থেকে ২ টাকা,আর বড় সাইজের দাম ২ থেকে ৩ টাকা। তবে মার্কেটভেদে দামের হেরফের দেখা গেল। যেখানে গাউসিয়ায় বড় সাইজের দাম চাওয়া হচ্ছে ২ থেকে ৩ টাকা,একই পুঁথি নিউ মাকের্টে ২ থেকে ২.৫০ টাকার মধ্যে।

 

মেয়েদের জামায় লেইছের ব্যবহার অনেক আগে থেকেই। একটি লেইছ জামার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিতে পারে অনেকগুণ। তাইতো মেয়েদের মধ্যেও লেইছ কেনার হিড়িক পড়ে গেছে। কি টাইপের লেইছ নেই এখানে। চিকন, মাঝারি, মোটা, রেশমি, মখমল, কাতান, ভেলভেট, পমপম আরও কত পদের। এক লেইছের দোকানে যেন পুরো সমাহার। এর মধ্যে থেকে মেয়েরা যার যার পছন্দমত লেইছ বেছে নিচ্ছে।

 

গাউসিয়ার লেইছের দোকানদান জব্বার আলী বলেন, একেক জনের রুচি একেক রকম। যার যেইটা ভাল লাগে হেইটা কিনতাছে। তবে কুশি কাটার লেইছের জনপ্রিয়তাই এখন সবচেয়ে বেশি বলে জানান বিভিন্ন দোকানের বিক্রেতারা।

 

চাঁদনী চকে লেইছ কিনতে আসা মমতাজ বেগম বলেন, আমি কাতানের স্টোন বসানো লেইছ খুজছি। এখানে পেয়েছি। তবে দামটা একটু বেশি মনে হচ্ছে। ওরা চাচ্ছে ৬০০ টাকা গজ। অথচ আমি দুই মাস আগেও কিনেছি ৪৫০ টাকা গজ।

 

যদিও এ অভিযোগ মানতে নারাজ বিক্রেতা শামসুল আলম। তিনি বলেন, এবারের ঈদে আরও ভাল জিনিস আনছি। আগেরটার লগে এটার মানের অনেক পার্থক্য আছে। দাম বেশি চামু কেন। আমরা তো বেচার জন্যই বয়ছি।

 

কুশি কাটা লেইছের দাম মানভেদে ৮০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। মখমলের লেইছ ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। লেইছ শুধু জামায় না,অনেকে শাড়িতেও লাগিয়ে থাকে।

 

আজিমপুর থেকে লেইছ কিনতে এসেছেন কানিজ ফাতেমা। বলেন,আমি দুটি শাড়ি কিনেছি। এখন পুশি কাটার লেইছ আর সুতি কাতানের লেইছ খুজছি।

 

বর্তমানে ইন্ডিয়ান কারচুপির পিছ বেশ জনপ্রিয় লাভ করেছে। ইন্ডিয়ান কারচুপিগুলো পিছের মত অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা ডেন্টাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আনিকা জাহান তুষ্টি এসেছেন নিউমার্কেটে, খুজছেন কারচুপির পিছ। কথা হল তার সাথে। বলেন, অনলাইনে ইন্ডিয়ান কারচুপির পিছ দেখেছি। তেমন একটা ভাল লাগেনি। তাই এখানে আসা। এ জামার উপর দিয়ে আমি অন্য ডিজাইন করব। তবে কারচুপির ভাল ইন্ডিয়ান পিস মার্কেটে খুব একটা চোখে পড়লনা। নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর বিপ্লব জানান, ইন্ডিয়ান কারচুপির অরিজিনাল কপি আসবো কয়েকদিনের মধ্যেই। এখন সাধারণগুলো আছে। ইন্ডিয়ানগুলোর দাম পড়বে ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত।

 

মেয়েদের জামায় বিভিন্ন সাইজের, বিভিন্ন রঙের পাথর বা স্টোন অত্যন্ত জনপ্রিয়। এখন পোশাকের বিপরীত বিভিন্ন রঙের পাথর ব্যবহার করে কনট্রাস্টও আনা হচ্ছে। পোশাকের নকশায়, ডিজাইনে পাথরের ব্যবহার যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা। বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেল, দুই ধরনের পাথর পওয়া যাচ্ছে। একটি প্লাষ্টিকের আর এক ধরনের জেনুইন। জেনুইন পাথর কি এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় চাঁদনী চকের আরেক দোকানদার মাসুদ মিঞার কাছে। তিনি বলেন, প্লাষ্টিকের পাথর কম দাম হইলে কি হইবো, এটার কোন গ্যারাণ্টি নাই। আর জেনুইন পাথর বলতে যে পাথরের রঙ উঠে না সেইটারে বোঝায়। অনেকে এখন জামার হাতায় স্টাইল করে পাথর বসায়। আবার অনেকে দুই হাতার মাঝখানে ধারাবাহিকভাবে পাথর বসায়। এত জামার মধ্যে বৈচিত্রতা ফুটে উঠে। দোকানে লাইজু নামের এক গৃহিণী বিভিন্ন রঙের পাথর কিনছেন। লাইজু বলেন, আমি সবসময় জামার মধ্যে পাথর লাগাই। তবে এবার জামার গলার মাঝখানে দেওয়ার জন্য মিলিয়ে মিলিয়ে পাঁচটি পাথর কিনেছি। পাঁচটি মিলিয়ে জামার গলায় লাগাবো। বিভিন্ন দোকানে পাথরের দাম বিভিন্ন। প্রতি পিস ৫ টাকা থেকে শুরু করে ১৫ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে।

 

হালের নতুন ও সর্বাধিক জনপ্রিয় ফ্যাশন হচ্ছে জামায় ইয়োগের ব্যবহার। একটি ইয়োগ একটি জামার পুরো লুককে আমূল পরিবর্তন করে দিতে পারে। তাই ইয়োগ কেনার দিকে মেয়েদের বেশি ঝোঁক লক্ষ্য করা গেল। ইয়োগ হচ্ছে কামিজের দুই হাতা আর গলার সামনে কারুকাজ করা সেট। এটি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন, পুঁথির ইয়োগ, কুশি কাটার ইয়োগ, এমব্রয়ডারি করা ইয়োগ। তবে কুশি কাটার ইয়োগই এখন বেশি জনপ্রিয়। হরেক, বাহারি কারুকাজকৃত ইয়োগের দিকে মেয়েদের বেশি ঝোঁক লক্ষ্য করা গেল। কান্তা,ডালিয়া, অর্পিতা। তিন বান্ধবীই এসেছেন ইয়োগ কিনতে। কিন্তু একেকজনের পছন্দ একেরকম। কান্তা কিনবেন পুঁথির ইয়োগ, যুক্তি হিসেবে বললেন, সেগুলো পড়ে আরাম। ডালিয়া আবার এমব্রয়ডারি ইয়োগ পছন্দ করছেন। তার খাড়া যুক্তি এমব্রয়ডারি ইয়োগ বেশ ফ্যাশনেবল। আর অর্পিতা বিগত দু বছর থেকেই কুশি কাটার ইয়োগ কিনছেন। অর্পিতা বলেন, সময়ের সাথে সাথে ট্রেন্ড পরিবর্তন হয়েছে। এখন এ টাইপের ইয়োগই বেশি চলে। আর এ টাইপের প্রচুর কালেকশন পাওয়া যায়। ফলে মনের ইচ্ছেমত কেনা যায়। ইয়োগের দাম কিন্তু এক নয়। পুঁথির ইয়োগের দাম ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে, এমব্রয়ডারি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, কুশি কাটার ইয়োগ ৫০০ থেকে শুরু করে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত। তবে উপরের পণ্য যে যাই কিনুন অবশ্যই একটু কষ্ট হলেও মার্কেট যাচাই করে কিনবেন। এতে দেখবেন খরচ অনেক কমে গেছে। বাচানো টাকা দিয়ে অন্য একটা ঈদের আইটেমও কিনে ফেলতে পারবেন।