ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:৪৭:০৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

শিশুর দুষ্টুমির জন্য আপনি দায়ী নন তো!

লাইফস্টাইল ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:২২ এএম, ৯ অক্টোবর ২০২৫ বৃহস্পতিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

‘আমার সন্তান খুব দুষ্টু, ওকে না মারা পর্যন্ত কথা শোনে না।’- এমন কথা প্রায়ই অনেক মা-বাবার মুখে শোনা যায়। কিন্তু সত্যিই কি সন্তানের গায়ে হাত তোলা কোনোভাবে যুক্তিসংগত? শিশু হয়তো খুব চঞ্চল, একবার বলা কথা শোনে না, উল্টো দুষ্টুমির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। কিছু না দিলে চিৎকার করে, জেদ ধরে, কখনো জিনিসপত্র ভেঙে ফেলে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক সময় অভিভাবকরা অধৈর্য হয়ে শিশুর গায়ে হাত দিয়ে বসেন। মার খাওয়ার পর হয়তো কিছু সময়ের জন্য সে শান্ত থাকে, কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবারও একই আচরণ দেখা যায়।

এখন একবার ভাবুন, শিশুটি কি জন্মের পর থেকেই এমন ছিল? নিশ্চয়ই না। শিশুর শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি মানসিক বিকাশও সময় নেয়। হামাগুড়ি দেওয়া বয়সে সে যেমন বুঝতে পারে না যে মেঝেতে থাকা কোনো জিনিস খাওয়ার উপযোগী নয়, তেমনি জানে না কীভাবে কিছু চাইতে হয়, না পেলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়, কিংবা মন খারাপের প্রকাশ কীভাবে করতে হয়। প্রতিটি বিষয়ই তাকে শেখাতে হয় ধীরে ধীরে, ভালোবাসা ও ধৈর্যের সঙ্গে।

অভিভাবকের আচরণের মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে শিশুর ব্যক্তিত্ব। যখন শিশু কোনো বিরক্তিকর বা অস্বাভাবিক আচরণ করে, তখন তাকে না বুঝে মারধর করলে তা তার পরবর্তী আচরণকে প্রভাবিত করে। শাসনের নামে শারীরিক আঘাত দেওয়া সন্তান ও অভিভাবক উভয়ের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

এই বিষয়টি বোঝাতে ধূমপানের সঙ্গে তুলনা করা যায়। যে ব্যক্তি কখনো ধূমপান করেনি, তার নেশায় আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। কিন্তু একবার ধূমপান করলে তা অভ্যাসে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। একইভাবে, একবার সন্তানের গায়ে হাত তুললে তা ধীরে ধীরে অভ্যাসে রূপ নেয়। হয়তো প্রথমে খেতে না চাওয়ায় মা চড় মেরেছেন, তাতে ওই মুহূর্তে খেয়ে নিলেও পরেরবার খাবার দেখা মানেই তার মনে ভয় ঢুকে যাবে।

জেন্টল প্যারেন্টিং, বোঝাপড়ার মাধ্যমে বড় হওয়া

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, শিশুকে লালন-পালনের অন্যতম কার্যকর পদ্ধতি হলো জেন্টল প্যারেন্টিং। যেখানে শিশুর আচরণের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় অভিভাবকের নিজস্ব আচরণ নিয়ন্ত্রণের ওপর। এই পদ্ধতিতে শিশুর আবেগকে শ্রদ্ধা করা, কারণ বুঝে ধৈর্য ধরে প্রতিক্রিয়া দেখানো এবং শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাত না করেই শাসন করা শেখানো হয়।

মনোবিজ্ঞানে প্যারেন্টিংয়ের চারটি ধারা রয়েছে- নেগলেক্টফুল, পারমিসিভ, অথোরিটেরিয়ান ও অথোরিটেটিভ।

একটি শিশুর উদাহরণ ধরুন, সে টেবিলের ওপর রাখা পানির বোতল ছুড়ে ফেলেছে।

পারমিসিভ অভিভাবক হয়তো শুধু বলবেন, “এমন করো না প্লিজ।”

নেগলেক্টফুল অভিভাবক দেখেও না দেখার ভান করবেন।

অথোরিটেরিয়ান অভিভাবক চিৎকার করবেন, শাস্তি দেবেন, এমনকী মারতেও পারেন।

আর অথোরিটেটিভ বা জেন্টল অভিভাবক বলবেন, ‘তুমি হয়তো খেলতে চাও, কিন্তু বোতল ফেললে আমরা পানি খাব কীভাবে? চল, বরং বল নিয়ে খেলি, দেখি কে আগে আনতে পারে।’ এভাবে শিশুর আবেগকে স্বীকৃতি দিয়ে যুক্তিসংগত সীমারেখা তৈরি করা যায়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বহুল আলোচিত ‘জেন্টল প্যারেন্টিং’ মূলত অথোরিটেটিভ প্যারেন্টিংয়ের আধুনিক রূপ। যার লক্ষ্য হলো শিশুকে আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করা এবং সীমা অতিক্রম করলে যুক্তিসংগত পরিণতি শেখানো।

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জেনিয়ার ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ড. ব্রায়ান রাজ্জিনো সিএনএন-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, ‘জেন্টল প্যারেন্টিং মানে শুধু আদরে বড় করা নয়, বরং এটি সন্তানকে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা শেখানোর কৌশল।’

শিশুকে আলাদা ব্যক্তি হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া, তার আবেগকে মূল্য দেওয়া। এসবের মধ্য দিয়ে শিশুর মধ্যে বাবা-মায়ের প্রতি আস্থা তৈরি হয়। সেই আস্থাই তাকে আত্মবিশ্বাসী, স্থির ও সহানুভূতিশীল করে তোলে। তবে এই পদ্ধতি সহজ নয়। বিশেষ করে যারা নিজের শৈশবে সহানুভূতি না পেয়ে এবং শারীরিক আঘাতকে শাসন জেনে বড় হয়েছেন, তাদের জন্য আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে সন্তানের সঙ্গে ধৈর্যশীল থাকা কঠিন হতে পারে। তবুও এটি সম্ভব, চেষ্টার মাধ্যমে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট থমাসের মনোবিজ্ঞানী ড. এনি পেজালো বলেন, একটি শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য চারটি উপাদান জরুরি- কাঠামো বা নিয়ম, ভালোবাসা ও উষ্ণতা, শিশুকে স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসেবে দেখা ও দীর্ঘমেয়াদে ধৈর্য ধরে গড়ে তোলার মানসিকতা।

সন্তান নিখুঁত অভিভাবক চায় না। সন্তান চায় এমন একজন মা বা বাবা, যিনি নিজে চেষ্টা করেন, ভুল হলে ক্ষমা চান, ভালোবাসা ও সহানুভূতির মাধ্যমে নেতৃত্ব দেন। তবেই শিশু শেখে- আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে, সীমা মানতে এবং মানুষ হিসেবে বড় হতে।