ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:২৮:১৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

গ্রেপ্তার আতঙ্কে দুবাইয়ের শাসক পরিবারের সাবেক বউ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:৫৪ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০২৫ বুধবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে শাসক পরিবারের এক সদস্যের সাবেক স্ত্রী জয়নাব জাভাদলি গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সাবেক স্বামী শেখ সাঈদ বিন মাকতুম বিন রশিদ আল মাকতুম তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় পুলিশের কাছে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করার পর এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি। অভিযোগে বলা হয়েছে, জয়নাব তাঁদের তিন মেয়েকে অপহরণ করেছেন।

শেখ সাঈদ বিন মাকতুম বিন রশিদ আল মাকতুম দুবাইয়ের শাসকের ভাইয়ের ছেলে। ২০১৯ সালে জয়নাব জাভাদলির সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়। এর পর থেকেই শিশুসন্তানদের নিজেদের হেফাজতে রাখা নিয়ে সাবেক স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ চলছে।

গত কয়েক সপ্তাহে এই বিরোধ তীব্র রূপ নিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সন্তানেরা কখনো মায়ের কাছে আবার কখনো বাবার কাছে ছিল। দুজনই একে অপরের বিরুদ্ধে সন্তানদের অপহরণের অভিযোগ এনেছেন।

সবশেষ বিরোধের ঘটনাটি অনলাইনে এসে সরাসরি অভিযোগ করার কারণে জয়নাবকে সাইবার অপরাধের অভিযোগেও গ্রেপ্তার করা হতে পারে।

জয়নাব বলেছেন, তিনি ঝুঁকি নিয়েই কাজটি করেছিলেন।

ব্রিটিশ আইনজীবী ডেভিড হেই-কে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় জয়নাব বলেন, ‘আমি জানতাম, এটি আমার শেষ সুযোগ। কারণ, তাঁরা আর আমাকে তাদের দেখার সুযোগ দেবেন না। আমি সত্যিই ধরে নিয়েছিলাম যে এটি আমার শেষ সুযোগ। তাই আমি সরাসরি অনলাইনে এসে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলাম।’

জয়নাব জাভাদলি তাঁর দুবাইয়ের বাড়ি থেকে ভিডিও বার্তাটি দিয়েছেন। বলেছেন, কয়েক সপ্তাহ মেয়েরা বাবার সঙ্গে থাকার পর তিনি তাদের ফেরত নিয়ে এসেছেন।

জয়নাবের দাবি, ২০২২ সালে দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের সঙ্গে এক চুক্তির মাধ্যমে তিনি সন্তানদের নিজের হেফাজতে রাখার অনুমতি পেয়েছিলেন। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, সন্তানেরা ১৮ বছর পর্যন্ত তাঁর হেফাজতে থাকবে এবং তাদের জন্য একটি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হবে। মেয়েদের স্কুলের খরচ বহন করবেন তাদের বাবা।

আইনজীবী ডেভিড হেই বলেছেন, এসবের বিনিময়ে জয়নাবকে কিছু কাগজে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল। এসব কাগজে উল্লেখ করা ছিল—তিনি তাঁর পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আর কোনো কথা বলবেন না এবং কোনো কিছু আর সরাসরি সম্প্রচার করবেন না।

পরে আদালত সন্তানদের শেখ সাঈদের হেফাজতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। তবে জয়নাব জাভাদলি বলেন, তাঁর মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন, এতে দুবাইয়ের শাসকের সঙ্গে করা চুক্তির ওপর প্রভাব পড়বে না।

দুই মাস আগে পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি বজায় ছিল।

তবে হঠাৎ একদিন সন্তানদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাতের সময় জয়নাব একটি বার্তা পান। দুবাই পুলিশের মাধ্যমে সাবেক স্বামীর বার্তাটি তাঁর কাছে পাঠানো হয়েছিল। বার্তায় বলা হয়, সন্তানেরা সেদিন তাঁর (জয়নাব) সঙ্গে যাবে না। তিনি যেন অপেক্ষা না করেন।

এরপর কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সন্তানদের সঙ্গে জয়নাবের আর যোগাযোগ হয়নি। অবশেষে তাঁকে শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রে তিন ঘণ্টার জন্য সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়। ৮ নভেম্বর তিনি তাঁর গাড়িচালককে নিয়ে সেখানে যান। জয়নাব দাবি করেন, সুরক্ষাকেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে তিনি দেখেন তাঁর সন্তানেরা সেখানে নেই।

জয়নাব যখন ভবন থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন দেখেন সন্তানেরা তাঁর দিকে ছুটে আসছে।

সন্তানেরা চিৎকার করে বলছিল, ‘মা, আমাদের এখান থেকে নিয়ে যাও!’

জয়নাব তাঁর গাড়িচালককে বলেছিলেন, দরজা বন্ধ করে বাড়ি নিয়ে যেতে। তবে তাঁর অভিযোগ, সাবেক স্বামীর কর্মীরা তাঁদের পথ আটকে দিয়েছিল। তখনই তিনি লাইভস্ট্রিম খুলে সাহায্যের আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জানতেন, এতে আমিরাত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্বাক্ষর করা চুক্তি ভঙ্গের ঝুঁকি রয়েছে এবং গ্রেপ্তারও হতে পারেন। এরপরও তাঁর মনে হয়েছে, এটাই একমাত্র পথ।

জয়নাব তখন থেকে শিশুসন্তানদের সঙ্গে বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তিনি বলেছেন, গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে বাইরে যেতে সাহস পাননি। তাঁর তিন মেয়ের বয়স—নয়, সাত ও ছয়।

মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত কয়েকজন আমিরাতি কর্মকর্তার সঙ্গে বিবিসি যোগাযোগ করেছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে আদালতের নথিপত্র দেখে শেখ সাঈদের মনোভাব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

সর্বশেষ নথিতে ৮ নভেম্বরের ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, জয়নাব তাঁর চালকের সহায়তায় শিশুদের জোর করে তাঁর গাড়িতে উঠিয়েছিলেন এবং তাঁদের অপহরণ করেছিলেন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করার মধ্য দিয়ে জয়নাব তাঁর সাবেক স্বামীর মানহানির পাশাপাশি রাষ্ট্রের অবমাননা এবং রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।