ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ৯:০৬:০৬ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

ধর্ষণ নিয়ে ভারতে বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের কী বলেন

বিবিসি অনলাইন | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০২:৫৩ এএম, ২৫ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার

ভারতে সম্প্রতি দুটি শিশুকে ধর্ষণ করে হত্যার পরপর দুটো ঘটনা নিয়ে যে ধরণের জনরোষ দেখা গেছে, তার নজির বিরল। অনেক এসব বিক্ষোভে অভিভাবকরা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে গেছেন।


দিল্লিতে শিশু মনস্তত্ববিদ ড. সামির পারিখ বিবিসিকে বলেন, "শিশুর বয়স এবং বোঝার ক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে এ ধরণের ঘটনা তাদের শিক্ষিত করতে, সচেতন করতে ব্যবহার করা উচিৎ।"


ড. পারিখ বলেন, এসব বিষয় নিয়ে ভারতীয় বাবা-মায়ের তাদের ছেলেমেয়েদের কাছে আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি খোলামেলা। কিন্তু যতটা হওয়া উচিৎ ততটা নয়।"


শিশুদের ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানি নিয়ে তারা তাদের বাচ্চাদের কাছে কীভাবে কতটা আলাপ করেন - এ নিয়ে বিবিসির নিকিতা মানদানি ভারতের কয়েকটি শহরে কয়েকজন অভিভাবকের সাথে কথা বলেছেন -
মোনা দেশাই, ১১ বছরের এক মেয়ের মা, মুম্বাইয়ের বাসিন্দা


আমার মেয়ে এই বয়সেই অনেক পড়ে। রাজনীতি, সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে তার প্রচুর আগ্রহ। আমি চাইনা ধর্ষণ, যৌন হয়রানির খবরগুলো খুব বেশি যেন তার চোখে পড়ে। কিন্তু এখন আর উপায় নেই।


তার পাঁচ বছর বয়স থেকে মেয়েকে তার নিজের এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।


দু বছর আগে একটি বইতে `ধর্ষণে`র কথা পড়ে সে জানতে চায় এটা কী। আমি খুব স্পষ্ট করে বলিনি, কিন্তু বলেছি কেউ যখন অন্যের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার শারীরিক গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে সেটাই ধর্ষণ।


আমার মেয়ে এবং তার তার বন্ধুরা কাশ্মীরের ঘটনায় খুব কষ্ট পেয়েছে। কখনো কখনো সে আমাকে বলে, ঐটা কি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নাকি পৃথিবীটাই এরকম।



সুনয়না রয়, ১১ ও ৩ বছরের দুই ছেলের মা, ব্যাঙ্গালোরে থাকেন। আমি আমার বড় ছেলের সাথে কয়েকবার ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানি নিয়ে কথা বলেছি। আমি সবসময় তার সাথে মেয়েদের বিষয় নিয়ে কথা বলি। কারণ আমি মনে করি উচ্চবর্ণের হিন্দু ঘরের ছেলে হিসাবে মেয়েদের নিয়ে সমাজে যে সব উদ্বেগ রয়েছে তা তার জানা উচিৎ এবং তা পরিবর্তনের চেষ্টায় অংশ নেওয়া উচিৎ।


তিনি বলেন, নারী বিদ্বেষী কোনো কৌতুকও আমার ঘরে নিষিদ্ধ। আমি কোনো কিছু থেকে তাদের আড়াল করতে চাইনা, বরঞ্চ চাই তারা এসব নিয়ে আলোচনা করুক। অনেক সময় আমি কী বলি তারা সবকিছু বুঝতে পারেনা, কিন্তু তারা জানে কোন আচরণ তার মায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।


পারুল, চণ্ডীগড়, ১৪ বছরের মেয়ের মা। তার মতে, ধর্ষণ, যৌন হয়রানির মত বিষয় নিয়ে মেয়ের সাথে কথা বলা কঠিন। আমি চাই সে মানুষকে বিশ্বাস করুক, বন্ধুত্ব করুক, প্রেমে পড়ুক। কিন্তু একইসাথে তার নিরাপত্তা নিয়েও আমি চিন্তিত। বাসায় মাঝেমধ্যে দেরি করে ফিরলে আমি রেগে যাইনা, কিন্তু আমি তার জন্য সময় বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করি।


আমার সমস্যা হচ্ছে-আমি চাই সে বাস্তবতা বুঝুক, কিন্তু একইসাথে চাইনা যে তার ভেতর অহেতুক সন্দেহবাতিকতা তৈরি হোক।


ধর্ষণের খবর পড়ে মেয়ে আমাকে একদিন প্রশ্ন করলো-সব পুরুষই কি এমন? আমি তাকে বলেছিলাম, সমাজে কিছু কিছু মানুষ এমন। আমি চাই সে বিশ্বাস করুক যে পৃথিবীটা সুন্দর।

অখিলা প্রভাবকর, মুম্বাই, ১০ ও ৮ বছরের দুই ছেলের মা। তিনি বলেন, ওদের বয়স যখন চার কি পাঁচ, তখন থেকে আমরা ওদের শেখাচ্ছি কোনটি `খারাপ স্পর্শ` কোনটি "নিরপরাধ স্পর্শ", কীভাবে নিজের এবং অন্যের শরীরকে মর্যাদা দিতে হয়।


আমরা তাদের স্পষ্ট বলেছি- শরীরের কোনো কোনো অঙ্গ একবারেই ব্যক্তিগত। গোসল করানোর সময় বাবা-মা বা বড়জোর ডাক্তার ছাড়া আর কারোরই সেসব অঙ্গ স্পর্শ করার অধিকার নেই।
আমরা তাদের বলেছি যদি কোনো স্পর্শে অস্বস্তি হয়, তাদের স্পষ্ট করে `না` বলতে হবে।
তবে মিডিয়ার খবর পড়া বা দেখা নিয়ে আমি এবং আমার স্বামী ছেলেদের ওপর অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করি।

অরুনাভ সিনহা, দিল্লি, ১৫ বছরের ছেলের বাবা। 
অরুনাভ বলেন, বেশ ক’বছর ধরে আমি এবং আমার স্ত্রী ছেলের সাথে আপত্তি, অনাপত্তি, মেয়েদের সাথে গ্রহণযোগ্য আচরণ, সহিংসতা-এসব নিয়ে খোলামেলা কথা বলি।


তিনি বলেন, একটি বাচ্চা নানা দিক থেকে নানা ধরণের ধারনা পায়। ফলে অনেক কিছু তাদের কাছে ধোঁয়াশা হয়ে যায়। অনেক সময় রাজী-অরাজির বিষয়গুলো তারা বুঝে উঠতে পারেনা। তারপর রয়েছে হরমোনের তাড়না। ফলে আমরা খুব সচেতনভাবে তার সাথে এগুলো নিয়ে কথা বলি।


তিনি আরো বলেন,গত রোববার আমারা তাকে ধর্ষণ বিরোধী বিক্ষোভে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমরা তাকে বোঝাতে চেয়েছিলাম সে একা নয়, তার আশেপাশে বহু মানুষই তার মত করে ভাবছে। বাচ্চাদের মনে এই সাহসটা জোগানো খুবই জরুরী।