ঢাকা, শনিবার ২৪, মে ২০২৫ ৫:২২:০২ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
সন্ধ্যায় ১২ জেলায় হতে পারে ঝড়-বৃষ্টি আইপিএল: জমে উঠেছে প্লে-অফের লড়াই বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের সম্ভাবনা, হতে পারে বৃষ্টি ঈদের আগেই আসছে নতুন নকশার নোট ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে শক্তিশালী ভূমিকম্প ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, জানালেন রিজওয়ানা বি.বাড়িয়া: লাশবাহী অ্যাম্বুল্যান্সে ডাকাতি, নারীসহ আহত ৯ গাজায় খাবার নেই, খাবারের অভাবে শিশুসহ ২৯ জন নিহত ছুটির দিনে বায়ুদূষণে শীর্ষে রাজধানী ঢাকা গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না: আইএসপিআর রাবিতে আপত্তিকর অবস্থায় আটক ছাত্রী-শিক্ষক সাময়িক বহিষ্কার ঐক্য ভেঙে গেছে গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই: উমামা ফাতেমা ঈদ: ট্রেনের ২ জুনের টিকিট বিক্রি শুরু

ধ্রুব এষ: শিল্পসাহিত্যের ধ্রুবতারা

সোমা দেব | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:২১ এএম, ১ মে ২০২৫ বৃহস্পতিবার

প্রচ্ছদশিল্পী ধ্রুব এষ।।  ফাইল ছবি

প্রচ্ছদশিল্পী ধ্রুব এষ।। ফাইল ছবি

ধ্রুব এষ দাদাকে নিয়ে লেখা আমার মতো ক্ষুদ্রের জন্য অনেক সাহসের ব্যাপার। অত বড় মাপের মানুষ যিনি, তাঁকে নিয়ে আমার লেখা কি মানায়? তবু আমি কলম ধরেছি। কারণ আমার লেখালেখি জীবনের অন্যতম পথপ্রদর্শক তিনি। নিজের অজান্তেই দাদা যে আমাকে লেখালেখি করার পেছনে কতখানি সাহস যুগিয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন, ভূমিকা রেখেছেন তা তিনি হয়তো কখনোই জানতে পারবেন না। এই লেখাটির মাধ্যমে জানাতে চাই ধ্রুব এষ আসলে আমার জীবনে একটি ধ্রুবতারার মতোই, সন্ধ্যাকাশে জ¦লজ¦লে তারার মতো পথ হারানো এক নাবিককে পথের দিশা দিচ্ছেন, নিরাপদে তীরে পৌঁছানোর খবর জানাচ্ছেন। 
ধ্রুব এষ দাদার সাথে আমার পরিচয় ১৯৯৩ সালে। আমার বয়স তখন মাত্র এগারো বছর। পরিচয়টা সামনাসামনি নয়। বরং বইয়ের প্রচ্ছদে তাঁর নাম দেখেছিলাম। সেই সময় আমাদের বাড়িতে আমার মামা, তুতো ভাইবোনেরা খুব বইয়ের পোকা ছিলো। অন্যান্য অনেক বইয়ের সাথে হুমায়ুন আহমেদের বই পড়তো সবাই। আমরা কাড়াকাড়ি করে, পাঠ্যবইয়ের ফাঁকে রেখে গল্পের বই পড়তাম। আর বইয়ের মতোই আমাকে খুব টানতো বইয়ের প্রচ্ছদগুলো। হুমায়ুন আহমেদের বৃষ্টিবিলাস, পেন্সিলে আাঁকা পরী, এপিটাফ, কৃষ্ণপক্ষ, দরজার ওপাশে, এই আমি, হিমু সিরিজ, মিসির আলী সিরিজের বিভিন্ন বইয়ের প্রচ্ছদ দেখে আমি মুগ্ধ হতাম। প্রচ্ছদগুলো যিনি আঁকতেন তিনি ধ্রুব এষ। প্রচ্ছদ দেখে একটা মুগ্ধতা নিয়ে বই পড়া শুরু করতাম। মনে মনে ভাবতাম, একেবারেই ভিন্ন ধারার, গতানুগতিক ধারার বাইরে, এত আর্টিস্টিক প্রচ্ছদ যিনি আঁকতে পারেন তিনি নিশ্চয়ই ভীষণ গুণী। এগুলো ছিলো আমার ছোটবেলার, সেই স্কুলে পড়া বালিকার চিন্তাধারা। সেই মানুষটির সাথে দেখা করতে পারবো এই চিন্তা কখনো মাথায় আসেনি। উনি ছিলেন একেবারেই তারকা, সত্যি ধ্রুবতারা, মাটিতে নেমে এসে গল্প করতে পারেন এই চিন্তা করিনি কখনো। শুধু তাঁর অসাধারণ প্রচ্ছদগুলো টানতো যিনি প্রায় পঁচিশ হাজার বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন। 
ধ্রুবদা’র সাথে সরাসরি আমার দেখা হয় তাঁর পল্টনের বাসায়, ২০১২ সালে যখন ছোটদের প্রিয় ‘কিশোর লেখা’ পত্রিকার সম্পাদক আইরীন নিয়াজী মান্নার সাথে দাদার বাসায় কিশোর লেখার প্রচ্ছদ আনতে যাই। দাদার বাসায় গিয়ে আমি সত্যি অবাক। আমি ভেবেছিলাম তিনি নিশ্চয়ই ভীষণ রাশভারী, গুরুগম্ভীর হবেন, অত বড় মানুষ যিনি। অথচ দাদার আটপৌরে জীবনধারা দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না উনি এত বড় মাপের শিল্পী। এতটাই নিরংকার, আত্মপ্রচারবিমুখ, সদালাপী, হাসিখুশি দাদাকে দেখে মনে হচ্ছিলো নিভৃতে বসবাস করা একজন ঋষি। যিনি একমনে আত্মমগ্ন হয়ে শুধু কাজ করে চলেছেন। জাগতিক সুখ-দুঃখের বাইরের মানুষ তিনি। দাদার বাসা যেনো জ্ঞানী-গুণীদের তীর্থক্ষেত্র। আমার মতো ক্ষুদ্রকে যে দাদা মনে রাখেন এটাই আমার কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি। 
দাদা যে আমার জীবনের ধ্রুবতারা- তার সূচনা সেখানেই। আমি যখন কিশোর লেখা পত্রিকার জন্য কিশোর গল্প লিখেছি, সেসময় প্রচ্ছদ করতে গিয়ে দাদা হয়ত আমার লেখা গল্প পড়েছিলেন। তিনিই বলেন,‘সোমা বই করো। বইয়ের প্রচ্ছদ আমি করে দেবো।’ দাদার এই কথাটিই আমার লেখালেখির জগত আমূল পাল্টে দেয়। দাদার এই কথামনে হচ্ছিলো, আমি স্বপ্ন দেখছি। যে ধ্রুব দাদার প্রচ্ছদ দেখেছি বিখ্যাত সব লেখকের বইয়ে, ধ্রুব দাদার প্রচ্ছদে মগ্ন থেকেছি, ভেবেছি এত সুন্দর প্রচ্ছদ একজন শিল্পী কীভাবে করতে পারে? তিনি করবেন আমার মতো একজন লেখকের বইয়ের প্রচ্ছদ? তাও স্বেচ্ছায় করে দিতে চাইছেন, আমাকে লিখতে উৎসাহ দিচ্ছেন? লিখতে উৎসাহ দিচ্ছেন? এই অনুভূতিকেই বোধহয় স্বর্গীয় অনুভূূতি বলে। 
দাদার উৎসাহেই আমার প্রথম কিশোর গল্পের বই ‘নীল প্রজাপতি’ প্রথম প্রকাশিত হলো ২০২০ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। এরপর আরও আরও চারটি বইয়ের প্রচ্ছদ দাদা করে দেন। কিশোর গল্পের বই ‘পাখির জন্য ভালোবাসা’র পাশাপাশি ‘অন্যজীবন’, ‘জন্মপরিচয়’ ২০২১ সালের বইমেলায় এবং ২০২২ সালের বইমেলায় প্রকাশিত ‘বিয়ের একটি গল্প’ বইগুলোর প্রচ্ছদ ধ্রুব দা করে দিয়েছেন। এই বইয়ের নামগুলোও ধ্রুব এষদা’র দেওয়া। তিনি যখন প্রচ্ছদ আঁকেন তখন আমাকে আবার ফোন করতেন, তিনি যেরকম প্রচ্ছদ আঁকছেন আমি কি আমার গল্পে ঠিক সেই মেসেজটিই পাঠককে দিতে চাইছি কি না! প্রচ্ছদটা গল্পের সাথে মিলছে কি না তিনি নিশ্চিত হয়ে নিতেন। কতটা একনিষ্ঠভাবে কাজ করলে অত বড় মাপের একজন শিল্পী আমার মতো একজন ক্ষুদ্রের বইয়ের প্রচ্ছদ করার সময়ও এতটা যত্নবান থাকেন! 
ভীষণ অমায়িক, আত্মপ্রচারবিমুখ একজন মানুষ যিনি নিভৃতচারী, যিনি আড়ালে থেকে আমার মতো ক্ষুদ্রকে নিজের অজান্তেই লেখালেখিতে উৎসাহ দিয়ে যান, যিনি হয়তো আরও এরকম লেখক, শিল্পী তৈরির নেপথ্য কারিগর-তাঁকে নিয়ে আর আলাদা করে লেখার কিছু নেই। যা-ই বলবো, যা-ই লিখবো সবই তাঁর জন্য অনেক কম হয়ে যাবে। সেই ছোটবেলায় যার কাজে মুগ্ধ ছিলাম সেই আকাশের ধ্রুবতারা যখন মাটিতে নেমে এসে আমার মতো ক্ষুদ্রকে সাহিত্যকর্মে জায়গা তৈরি করে দেন, এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী আছে? তিনিই কিংবদন্তি প্রচ্ছদশিল্পী, শিশুসাহিত্যিক, বাংলা একাডেমী শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত ধ্রুব এষ। এই আকালে একজন সত্যিকারের মানুষ। 
 

সোমা দেব: গল্পকার ও প্রবন্ধকার, শিক্ষক-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

(লেখাটি ছোটদের প্রিয় পত্রিকা ‘কিশোর লেখা’র ধ্রুব এষ সংখ্যায় প্রকাশিত)