ঢাকা, রবিবার ০৭, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:৩৭:৩১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বিমান ভ্রমণে সক্ষম না হওয়ায় খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রায় দেরি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ফ্লাইটকে ‘ভিভিআইপি মুভমেন্ট’ ঘোষণা খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সব ধরনের সহযোগিতা করছে সরকার : প্রেস সচিব ভারতের পর্যটনরাজ্য গোয়ার নাইটক্লাবে বড় অগ্নিকাণ্ড, নিহত ২৩ ইন্দোনেশিয়ায় বন্যা-ভূমিধস: মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৯০০

নতুন ঠিকানায় মা হারা শিশু জায়েদ

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৩১ এএম, ২১ মে ২০২৪ মঙ্গলবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মায়ের মরদেহ জড়িয়ে ধরে পরিচয়হীন শিশুর কান্নার ছবি দেখে কেঁদেছেন দেশের মানুষ। কদিন আগেই তার নিজের পরিচয় মিলেছে, তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস একমাত্র অভিভাবক মামার কাছে ঠায় হয়নি শিশু জায়েদের। 
সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে রাস্তার পাশে পড়েছিল শিশু জায়েদ হোসেন ও তার মা জায়েদা খাতুন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর মায়ের মৃত্যু হয়। দেড় বছরের দুধের শিশু জায়েদ মায়ের বুকের দুধের জন্য করে আহাজারি। জায়েদ মৃত মায়ের বুকে কাঁদছে- এমন একটি ছবি নাড়িয়ে দেয় সবার হৃদয়। 

অবশেষে বিত্তশালী এক দম্পতির কাছে দত্তক দেয়া হলো সড়ক দুর্ঘটয় মাকে হারানো দেড় বছর বয়সী শিশু জায়েদ হাসানকে। ময়মনসিংহ জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডে দত্তক নিতে আগ্রহীদের আবেদন যাচাই বাছাই শেষে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বোর্ড কর্মকর্তারা।
রোববার (১৯ মে) দুপুর ১২টায় ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রথম দফায় সভা করেন জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের শিশু কল্যাণ বোর্ড। সভায় জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, সদস্য সচিব ও জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আ. কাইয়ুমসহ অন্যরাও উপস্থিত ছিলেন। 
যাচাই-বাছাই শেষে সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দফা সভায় দত্তকের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। সোমবার (২০ মে) গোপনীয়তা বজায় রেখে নতুন পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় জায়েদকে।
সূত্র জানায়, পরিচয় পাওয়ার পর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন নিহত জায়েদার ভাই রবিন মিয়া। পরে রবিন মিয়াকে বোনের মরদেহ বুজিয়ে দিলেও শিশু জায়েদকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়। ভ্যানচালক রবিন শিশুটিকে লালন পালন করতে প্রথমে সম্মতি জানান। পরবর্তীতে তিনি জায়েদের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজের অসচ্ছল পরিবারে নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। লিখিত অনাপত্তিপত্র পাওয়ার পর শিশু কল্যাণ বোর্ডের আহ্বানে দশটি পরিবার জায়েদকে দত্তক নিতে আবেদন করেন। এর মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা দিক গুরুত্ব দিয়ে দুইটি আবেদন বিবেচনায় রাখা হয়। নির্ধারিত সময় শেষে রোববার যাচাই-বাছাই শেষে বিত্তশালী এক দম্পতির কাছে দত্তক দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় শিশু কল্যাণ বোর্ড।

জায়েদের ভ্যানচালক মামা রবিন মিয়া বলেন, আমার অস্বচ্ছল পরিবারে তিনটি সন্তান রয়েছে। আমি চাই জায়েদের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ হোক। ভাগনের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি চাই আল্লাহ তাকে ভালো রাখুন।
জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সদস্য সচিব ও জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আ. কাইয়ুম বলেন, শিশুটির মামা রবিন লিখিত অনাপত্তিপত্র দেয়ার পর শিশু কল্যাণ বোর্ডের আহ্বানে দশটি পরিবার জায়েদকে দত্তক নিতে আবেদন করেন। এর মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা দিক গুরুত্ব দিয়ে কিছু শর্তের ভিত্তিতে বিত্তশালী এক দম্পতির কাছে দত্তক দেয়া হয়েছে। সমাজ কর্মকর্তারা নিয়মিত শিশুটির খোঁজ খবর নিবেন। শর্তের ব্যত্যয় ঘটলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে, গত ১০ মে রাত ৩টার দিকে ময়মনসিংহের ভালুকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয় জায়েদা খাতুন (৩০) ও তার দেড় বছর বয়সী শিশু জায়েদ হাসান। 

স্থানীয়রা প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ মে রাতে ৮টায় মারা যান জায়েদা। তবে তখনও তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এরপর অজ্ঞাত শিশুর কান্নাকাটি ও চিৎকারের ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। দুইদিন পর ১২ মে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন নিহত জায়েদার ভাই রবিন মিয়া। ওইদিন রবিন মিয়াকে জায়েদার মরদেহ বুঝিয়ে দিলেও শিশুটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়।

নিহত জায়েদা খাতুনের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দোররা বাজার উপজেলায়। প্রথম স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পর বাড়িতেই থাকতো জায়েদা। তিন বছর আগে অভিমান করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভালুকায় চলে যায়। কিছুদিন পর জায়েদা আবারও বিয়ে করেছে বলে মুঠোফোনে পরিবারকে জানায়। এরপর একাধিক বার বাড়িতে গেলেও কখনো স্বামীকে সঙ্গে নেয়নি। ভালুকা স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় থেকে কখনও গার্মেন্টসে, আবার কখনো জুতার কারখানায় কাজ করে সংসার চালাতো জায়েদা।