নড়াইল: তনিমা আফরিনের ছাদ বাগানের সাতকথা
নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ০৮:৩৮ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার

নিজের ছাদ বাগানে তনিমা আফরিন।
নড়াইল জেলায় ছাদ বাগান মালিকদের মডেল তনিমা আফরিন। শখের বসে ছাদ বাগান করলেও এখন বাগান থেকে পরিবারের ফল-সবজির চাহিদা মেটাচ্ছে। পাশাপাশি গাছের চারা বিক্রি করে বছরে আয় করছেন লক্ষাধিক টাকা।
জানা গেছে, স্কুলজীবনে বিয়ে করা তনিমা আফরিনের (৪২) এইচএসসি পাস করে কলেজে ভর্তির পর আর লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি। সাংসারিক জীবনে অধিকাংশ সময়ই কেটেছে স্বামীর কর্মস্থলে। স্বামী নাজমুল হক সেনাবাহিনীতে ছিলেন। বছর তিনেক আগে অবসরে গেছেন।
স্বামীর বিভিন্ন জায়গার কর্মস্থলে তনিমা গড়ে তুলেছিলেন বেলকোনি বাগান। বর্তমানে নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন বিশাল আকৃতির ছাদ বাগান। নড়াইলের সব থেকে ভালো মানের ছাদ বাগানের মালিক এ গৃহিনী। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি এ শখের বাগান থেকে প্রতিবছর আয় করছেন লক্ষাধিক টাকা।
‘শখ থেকেই মূলত সেই বাগান করা শুরু। সেখান থেকে নেশা। আর এখন পেশা। বাগান থেকে আয় করতে হবে, পুরস্কার পেতে হবে এ চিন্তা কখনওই মাথায় ছিল না। অথচ অল্প সময়ে মিলেছে জাতীয় পুরস্কার।’
এই বাগান মালিক তনিমাকে দেখে নড়াইল শহরে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অন্তত শতাধিক ছাদ বাগান। তনিমা ইতোমধ্যে নড়াইলের ছাদ বাগান মালিকদের মডেল হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে।
শহরের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের খেলার মাঠের দক্ষিণ দিকে রাস্তার পাশে চারতলা ভবন। এ বাড়িটি তনিমা আফরিনের। তিনতলায় স্বামী ও দুই মেয়ে নিয়ে থাকেন জাতীয় কৃষি পুরস্কার পাওয়া তনিমা। এ বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন ছাদ বাগান।
গত বছর বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পেয়েছেন তনিমা আফরিন। কৃষিতে নারীর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ওই দিন ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এ পুরস্কার বিতরণীতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সূত্র জানায়, বাগান মালিক তনিমার মা তহমিনা হুসাইন ছিলেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা। শিশুকাল থেকে মাকে দেখেছেন নানা ফল ও ফুলের গাছ লাগিয়েছেন বাড়িতে। অফিস থেকে এসে পরিচর্যা করতেন। ওই সময় তার (তনিমার মা) কাছে অনেকে এসেছেন আবাদের পরামর্শ নিতে। এ পরিবেশে বড় হয়ে ছোটবেলা থেকেই গাছের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয় তার।
নড়াইল শহরে বাড়ি করার পর ২০১৬ সালে নিজ বাড়িতে চলে আসেন তনিমা। স্বামীর কর্মস্থল থেকে বাড়িতে আসার সময়ে ৩৮টি টবসহ গাছ নিয়ে এসেছিলেন। সেই টব দিয়ে তখন থেকে শুরু করেন ছাদে বাগান করা। অল্প অল্প করে গড়ে তুলেছেন বিশাল আকৃতির এ বাগান।
বাগান সমৃদ্ধ করতে দেশের নামকরা নার্সারিগুলোতে গিয়েছেন তনিমা। গিয়েছেন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ছাদবাগান দেখতে। সেখান থেকে ট্রেনে করে, বাসে করে অনেক কষ্টে জোগাড় করা ওই ছাদবাগানের চারাগুলো।
বর্তমানে ছাদবাগান সংক্রান্ত চারটি ফেসবুক গ্রুপ চালান তনিমা। যুক্ত আছেন এ সংক্রান্ত অর্ধ শতাধিক ফেসবুক গ্রুপে। এর মাধ্যমে চারা সংগ্রহ করেন, পরিচর্যা শেখেন, অন্যদের পরামর্শ দেন। বিভিন্ন জেলায় চারা বাজারজাতকরণও তার ফেসবুকের মাধ্যমেই।
ফেসবুকে তার শুধু গাছের সঙ্গে মিতালী। ধ্যান-জ্ঞানে সর্বক্ষণ তার গাছ আর গাছ। সমৃদ্ধ ওই ছাদ বাগান থেকে তিনি চারা বিক্রি করেন।
তার এখান থেকে কিনে নেওয়া চারা থেকে অনেকেই গড়ে তুলেছেন ছাদবাগান। নিজে গিয়ে পরামর্শ দেন ছাদবাগান পরিচর্যার। এভাবে তার অনুপ্রেরণায় নড়াইল শহরের অনেক বাড়িতে বাগান গড়ে উঠেছে।
সরেজমিনে তনিমা আফরিনের ছাদ বাগানে যেয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের গাছগুলো প্রজাতি অনুযায়ী সারি সারি সাজানো। লোহার পাত দিয়ে র্যাক তৈরি করে, তার ওপর রাখা অধিকাংশ টব। সরাসরি ছাদের ওপরও রাখা আছে অনেক টব। উত্তর ও দক্ষিণ পাশে পাকা করে করা হয়েছে হাউজ। সেখানে মাটি দিয়ে লাগানো হয়েছে গাছ। প্রতিটি সারির মাঝে আছে গলিপথ। গলিপথ ও গাছগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। নেই কোনো ময়লা-আবর্জনা। এমনভাবে গাছগুলো সাজানো, সব গাছে পড়ছে রোদ। প্রতিটি গাছের পাশে যাচ্ছে দাঁড়ানো। সবুজের সমারোহ আলতো বাতাসে দোলা খাচ্ছে, সে এক অন্যরকম নয়নাভিরাম দৃশ্য।
দেশের নানা জায়গা থেকে জোগাড় করেছেন হরেকরকম ফুলগাছ। তাঁর ছাদে গোলাপই আছে ৪৫ প্রকার। ২০ প্রকার জবা ফুল, ৮ প্রকার কাঁটগোলাপ, ৫ প্রকার শাপলা, ১০ প্রকার রেইন লিলি। আছে ২৫ প্রকার অর্কিড। এ ছাড়া সারি সারি শোভা পাচ্ছে অ্যাডেনিয়াম, রঙন, বেলি, মাধবীলতা, পানচাটিয়া, হাসনা হেনা, নন্দিনী, মালঞ্চ, পদ্ম, কাঁটামুকুট, জার্বেরা, রজনীগন্ধা, গাদা, চন্দ্রমল্লিকা, পিটুনিয়া, গজানিয়া, পেঞ্জি, ক্যালুন্ডেলা, ভারবেরা ও স্কটসহ আরও দেশি-বিদেশী হরেক প্রজাতির নানা ফুলগাছ।
ফলগাছেও ভরপুর তাঁর ছাদ। আছে বারোমাসী ও মৌসুমী ফল। একই ফলের আছে টক ও মিষ্টি প্রজাতি এবং নানা রঙের। আছে আপেল, আঙ্গুর, মাল্টা, কমলা, কদবেল, ছফেদা, রয়েল, জামরুল, বাতাবি লেবু, কাগুজে লেবু, বেদানা, আম, তেতুল, ড্রাগন, কলা, লিচু, লংগন, পিসফল, আমড়া, পেয়ারা, শরুফল, কাউফল ও আখসহ আরও ফল।
সজিনা, পুঁইশাক, বেগুন, উচ্ছে, কলমিশাক, সবুজশাক, লালশাক, ডাটা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, টমেটো, সিম, লাউ, কুমড়া, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, শালগম, মুলা, পেঁয়াজ ও মরিচসহ নানা সবজির আবাদ করেছেন ছাদে। নিম, তুলসি, ননীফল ও অ্যালোভেরার মতো ওষুধী গাছও আছে। আছে ঘর ও বেলকনি সাজানোর মানিপ্লান্ট, স্নেকপ্লান্ট, পাতাবাহর, বেবিটিয়ারস, কইলাস ও স্পাইডারপ্লান্ট। চায়না বটগাছ, দেশি বটগাছ, পাকড় ও জেডপ্লান্টের মতো বনসাই গাছ শোভা পাচ্ছে তার ছাদে।
শহরের মহিষখোলা এলাকার ছাদ বাগান মালিক মাইমুনা রুনা বলেন, তনিমার বাগান দেখে আমিসহ শহরের অন্তত শতাধিক মানুষ ছাদ বাগান করেছি। নিজের বানানে ছাদ বাগান থেকে প্রাকৃতিক বিষ মুক্ত ফল পাচ্ছি। বর্তমানে আমার বাগানে অন্তত ১২ প্রকার ফল আছে।
শহরের আলাদাৎপুর এলাকার একটি ছাদ বাগানের রুমানা পারভীন কেয়া বলেন, তনিমার ছাদ বাগান দেখে ভোলো লাগে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কুড়িগ্রাম এলাকার নাজমুল হক লিজা বলেন, শখের বসে বাসার ছাদে ড্রাগনের বাগান করেছি। শখের বসে বাগান করলেও বাগান থেকে ড্রাগন ফল এবং চারা বিক্রি করে আয়ের সুযোগ রয়েছে। বেকার ছেলে-মেয়েরা ছাদ বাগন করে বেকার সমস্যার সমাধান করতে পারে বলে জানান তিনি।
ছাদ বাগানের মালিক তনিমা আফরিন বলেন, শুরুতে যখন সংসার খরচের টাকা দিতেন স্বামী। সেখান থেকে বাচাতাম। পাঁচ কেজি মাংসের জায়গায় দুই কেজি কিনেছি। ন্যূনতম দামের প্রয়োজনীয় কাপড় ছাড়া কাপড় কিনিনি। এভাবে সংসার খরচ থেকে বাচিয়ে গড়ে তোলা শখের এ বাগান। গত তিন বছর হলো চারা তৈরি করে বিক্রি করছি। এতে খরচ ওঠে, সংসার চলে। এছাড়া সংসারের প্রয়োজনীয় সবজি ও ফল তেমনটি কেনা লাগে না, বাগান থেকে উৎপাদন হয়। প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনদের সবজি ও ফল দেই। আবার গাছের চারা বিক্রি করে বছরে এক থেকে দেড় লক্ষটাকা আয় হয়।
অন্যদের পরামর্শ দিতে গিয়ে তনিমা আফরিন বলছিলেন, বাগান করতে প্রথম লাগবে ধের্য্য। আর সন্তানের মতো ভালোবাসা। আমার দুটি মেয়ে যেমন প্রিয়, গাছগুলোও ঠিক তেমনি প্রিয়। গাছ কিন্তু বোঝে তাদের প্রতি আন্তরিকতা। কয়েকদিন গাছের কাছে না গেলে কেমন যেন মলিন চেহারা হয়। পাশে দাঁড়িয়ে একটু পাতা নাড়াচাড়া করলে বা টবের ঘাস পরিষ্কার করলে আবার সতেজ হয়ে ওঠে।
নিজের একক আন্তরিকতায়ই গড়ে উঠেছে এ সমৃদ্ধ ছাদবাগান জানিয়ে তনিমা আফরিন বলেন, প্রতিদিন ৪-৫ ঘণ্টা ব্যয় করি ছাদে। প্রতিদিনই পানি দিতে হয়। ঘাস পরিষ্কার করতে হয়। পোকা লাগলো কি না তা দেখা। কোনটার কি খাবার লাগবে, কখন লাগবে। এগুলো বুঝে চলতে হবে। তাহলেই আসবে সাফল্য।
নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রোকোনুজ্জামান বলেন, তনিমা আফরিন একজন গৃহিনী হয়েও তার একক প্রচেষ্টায় দেশি-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফল ও নানা জাতের গাছ সংগ্রহ করেছেন। তা পরিচর্যা করে সফল হয়েছেন। ছাদে এত ধরনের ফসল আবাদ করা যায় তার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত তনিমা আফরিন। দিন দিন জেলায় ছাদ বাগানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
- আশুলিয়ায় স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের মরদেহ উদ্ধার
- নিউইয়র্কে প্রথমবারের মতো মঞ্চ মাতাবেন ইমরান-কনা
- প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ
- আজ বিশ্ব প্রবীণ দিবস
- মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট হলেন মোহাম্মদ মুইজ্জো
- সরকার কন্যাশিশুদের উন্নয়নকে গুরুত্ব দিচ্ছে: ইন্দিরা
- নারীর মজুরি পুরুষের চেয়ে কম হতে পারে না: ডেপুটি স্পিকার
- প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় অর্জন মানুষের ভালোবাসা: স্পিকার
- ওয়ানডে বিশ্বকাপে মাসকট ‘ব্লেজ’ ও ‘টংক’
- ডেঙ্গুতে সেপ্টেম্বরে রেকর্ডসংখ্যক মৃত্যু ৩৯৬
- ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ কোটি টাকার আমন ধানের চারা বিক্রির প্রত্যাশা
- বাঁধনের সিনেমায় শাহরুখ
- ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর
- ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে চাকরির সুযোগ
- মেছতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা ‘বেদনায় ভরা দিন’
- প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল এ চাকরির সুযোগ
- ভাই-বোনকে বাঁচিয়ে নিজে প্রাণ দিলেন সৌদি তরুণী
- বন্ধু তোমার পথের সাথিকে চিনে নিও, বন্ধু দিবস আজ
- ওমানে বাংলাদেশী এমপি আটক, পরে মুক্ত
- ওটিটিতে মুক্তি পেল ‘হাসিনা: আ ডটারস টেল’
- ঘুষ নিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা স্বামী, বরখাস্ত মেয়র
- কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস আজ
- অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ : যা বললেন নুসরাত
- শহীদ কবি মেহেরুন্নেসার জন্মদিন আজ
- ইবনে সিনা ট্রাস্টে চাকরি, আবেদন করুন দ্রুত
- জাতীয় শোক দিবস ও বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন করল `রিক`
- টুঙ্গিপাড়া বাংলাদেশের ইতিহাসের মানচিত্র
- ওয়ার্ল্ড বুক অব রেকর্ডসে কাশ্মিরের টিউলিপ গার্ডেন
- রোগ সারাতে এলাচ খান