ঢাকা, শনিবার ২৭, ডিসেম্বর ২০২৫ ০:১৭:০৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
১৯ বছর পর বাবার কবরের পাশে তারেক রহমান নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ার বার্তা তারেক রহমানের কোথায়, কোন কর্মসূচি গণভোটের পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালাবে সরকার কারাবন্দিদের ভোট দেওয়ার নির্দেশিকা জারি ইসির পুলিশের খোয়া যাওয়া অস্ত্র অধরা নির্বাচন ঘিরে আতঙ্ক

মশার যন্ত্রনায় নাকাল রাজধানীবাসী

অনন্যা কবীর | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০১:৫৬ পিএম, ৪ মার্চ ২০১৮ রবিবার

মশার যন্ত্রনায় নাকাল রাজধানীবাসী। বাসাবাড়ি, দোকানপাট থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সর্বত্রই  মশার দাপট চরমে। বছরে এ খাতে অর্ধশত কোটি টাকা খরচ হলেও কমছে না মশার অত্যাচার। বর্তমানের মশার উপদ্রব ভয়াবহ আকার ধারন করলেও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের এ ব্যপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই ।

 


দুই সিটি কর্পোরেশনের চলতি অর্থ বছরে মশা নিধনের বাজেট ৩৭ কোটি টাকা। এ পরিমান টাকায়ও মশা নির্মূল হচ্ছে না। বরং দিন দিন মশার যন্ত্রণা বাড়ছেই। ঢাকার বাসিন্দারা যেনো মশার কাছে অসহায়। রাতে তো বটেই দিনের বেলায়ও চলছে মশার অত্যাচার। মশারি টানিয়ে, কয়েল জ্বালিয়ে, ইলেকট্রিক ব্যাট কিংবা মশানাশক ওষুধ স্প্রে করেও রক্ষা মিলছে না। অথচ মশা নিধনে বছর বছর বরাদ্দ বাড়াচ্ছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি)। 

 

জানা গেছে, কয়েল জ্বালিয়ে, ওষুধ ছিটিয়ে, মশারি টাঙিয়ে মশার উপদ্রব থেকে নিস্তার পাওয়ার চেষ্টা করছেন নগরীর বাসিন্দারা। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। দিনে বাচ্চাদের মশারি টাঙিয়ে ঘুম পাড়াতে হয়। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের। রাতে তো বটেই দিনেও তাদের মশারির ভেতরে বসে পড়াশানা করতে হচ্ছে।

 

ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী ও উত্তরাসহ রাজধানীর অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে সর্বত্রই মশার উপদ্রব আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম কাগজে কলমে চললেও বাস্তবে দেখা মিলে না। বেড়ে গেছে মশার উপদ্রব। রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার মানুষ মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। বর্তমানে এসএসসি, দাখিল ও সমমানের সার্টিফিকেট পরীক্ষাসহ অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষা চলছে, মার্চ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। মশার অত্যাচারে পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। সন্ধ্যার পর কোথাও একটু বসার উপায় নেই।

 

মালিবাগের বাসিন্দা আসমা জেসমিন অভিযোগ করে বলেন, আমাদের এলাকায় সিটি কর্পোরেশন মশার ওষুধ ছিটায় না।  কোনো দিনও আমরা তা দেখিনি। মশার অত্যাচারে দিনে-রাতে চব্বিশ ঘন্টা মশারি ঝুলিয়ে রাখি। কিছুদিন অাগে এই মশার কামড় খেয়ে আমার পরিবারের প্রায় সবার চিকুনগুনিয়া জ্ব হয়েছিলো। সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বহীনতায় আমরা অবাক।

 

এদিকে অভিজাত এলাকা ধানমন্ডির স্থায়ী বাসিন্দা মুমতাজ সরকার বলেন, মশার যন্ত্রনায় ঘরে থাকা দায়। আমনারা আর নিউজ করে কি করবেন! সমস্যা তো সমাধান হচ্ছে না। যাদের দায়িত্ব মশা নিয়ন্ত্রন করা তারা তো ঘুমাচ্ছে। তাদের ঘুম ভাঙাতে পারবেন?

 


জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পুকুর-ডোবা, নালা-নর্দমার কচুরিপানা ও ময়লা পরিষ্কার না করায় সেগুলো এখন মশা উৎপাদনের খামারে পরিণত হয়েছে। মশা নিধনের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। তবে অভিযোগ রয়েছে, ওষুধ স্প্রে করার জন্য প্রতি ওয়ার্ডে ৬ জন করে কর্মী থাকলেও কয়েকমাসেও তাদের কোন খোঁজ পাওয়া যায় না।

 


ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শেখ সালাহউদ্দিন বলেন, আবহাওয়া জনিত কারণে বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে মশা বাড়বেই এটাই স্বাভাবিক। আমরা ডিএসসিসি এলাকায় মশক নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করছি। সেই সাথে আগের বছরের তুলনায় এ বছর আমরা মশক নিধনে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ঔষধের ব্যবহার বৃদ্ধি করেছি।

 

 

তিনি বলেন, আগের তুলনায় মশা এখন বেশি শক্তিশালী। সেই কথা বিবেচনায় রেখে আমাদের ঔষধের ব্যবহারের কিছুটা পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। মশা নিধনে অতিরিক্ত মাত্রায় ঔষধ ব্যবহার করা হলে সেটা আবার মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

 


ঢাকা শহরের মশক নিধনের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ মশক নিবারণী দফতর। এই তিন প্রতিষ্ঠান মিলেও নগরবাসীকে মশার হাত থেকে রক্ষা করতে পারছে না। অথচ এ তিনটি নাগরিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর মশক নিধন খাতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে। যা নিয়ে নগরবাসীর অভিযোগের শেষ নেই।

 


মালিবাগ, খিলগাঁও, তালতলা, তেজগাঁও, মহাখালী, শান্তিনগর, সিদ্ধেশ্বরী, ফকিরাপুল, কমলাপুর, মানিকনগর, বাসাবো, মুগদাপাড়া,  ধোলাইখাল, মীর হাজীরবাগ, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, কামরাঙ্গীরচর, সূত্রাপুর, মোহাম্মদপুর, সায়েদাবাদ, রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল, মিরপুর, গাবতলী, দারুস সালাম, হাজারীবাগ, গোড়ানসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এ সমস্ত এলাকায় মশার উপদ্রব সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়াও নগরীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, ধানমন্ডিতেও বেড়েছে মশার উপদ্রব। অভিজাত এলাকাগুলোর বেশিরভাগ ফ্ল্যাট বাড়িতে জানালা-দরজায় নেট লাগানো থাকলেও রেহাই নেই মশার অত্যাচার থেকে। নিচতলা থেকে শুরু করে ২০ তলা পর্যন্ত সর্বত্রই মশার সমান উপদ্রব।

 


ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ রাখা হয় মশা নিধনের জন্য। বরাদ্দকৃত টাকা খরচও করে দুই সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু নগরীতে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা যায় না তেমন একটা।

 


অভিযোগ রয়েছে, মশার ওষুধ ছিটানো হয় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তাদের পছন্দের এলাকায়। কোথাও কোথাও ছয় মাসেও একবার দেখা যায় না আবার কোথাও মাসে দুই থেকে তিনবারও ওষুধ ছিটানো হয়। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি) উত্তর ও দক্ষিণের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, মশক নিধন কার্যক্রম চলছে। তবে তা দৃশ্যত নেই বলেই জানান ভুক্তভোগীরা।

 


জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জলাশয় রয়েছে প্রায় এক হাজার বিঘা। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণে রয়েছে ৪৮৭ বিঘা। এসব জলাশয়ে জমে থাকা কচুরিপনা ও আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ফলে শীত মওসুম এলে জলাশয়ের আবদ্ধ পানি দুর্গন্ধময় হয়ে মশার প্রধান প্রজনন স্থলে পরিণত হয়।

 


সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধনের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য ৫ থেকে ৬ জন করে কর্মী আছেন। তারা দিনে দুবার ওষুধ ছিটানোর কাজ করেন। তবে সিটি কর্পোরেশন এমন দাবি করলেও নগরবাসী তাদের দেখতে পান না মোটেও।