ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:০৮:২৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৬:৫২ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০২৫ শনিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যায় শ্রীলঙ্কায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় দিতওয়ার প্রভাবে শ্রীলঙ্কাজুড়ে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩২ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া এই ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১৭৬ জন। সরকার প্রাকৃতিক এই বিপর্যয় মোকাবিলায় শনিবার দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছে।

শ্রীলঙ্কার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র (ডিএমসি) বলেছে, বৈরী আবহাওয়ায় দেশজুড়ে ১৫ হাজারের বেশি বাড়িঘর ধ্বংস এবং ৭৮ হাজার মানুষকে সরকার পরিচালিত অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।

টানা এক সপ্তাহের প্রবল বর্ষণের পর সৃষ্ট বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিসানায়েকে জরুরি আইন জারি করেছেন। ডিএমসির মহাপরিচালক সম্পাথ কোটুউইগোদা বলেছেন, আমরা ১৩২ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি এবং আরও ১৭৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে মোতায়েন করায় উদ্ধার তৎপরতা জোরদার হয়েছে। শনিবার দেশটির সামরিক বাহিনী অনুরাধাপুরা জেলায় টানা ২৪ ঘণ্টার অভিযান চালিয়ে এক জার্মান পর্যটকসহ ৬৯ জন বাসযাত্রীকে উদ্ধার করেছে। এই অভিযানে হেলিকপ্টার ও নৌবাহিনীর নৌকা ব্যবহার করা হয়।

বাসের এক যাত্রী স্থানীয় হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, নৌবাহিনীর সদস্যরা রশি ব্যবহার করে বন্যার পানি পেরোতে সহায়তা করেছেন। পরে কাছের একটি বাড়ির ছাদে উঠতে সাহায্য করেন তারা।

শান্তা নামের ওই যাত্রী বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান। আমরা ছাদে থাকার সময় এর একাংশ ধসে তিনজন নারী পানিতে পড়ে যান। কিন্তু তাদের আবার ছাদে তুলে আনা হয়।’

তিনি বলেন, হেলিকপ্টারের প্রথম উদ্ধারচেষ্টা বাতিল করা হয়েছিল। হেলিকপ্টারের বাতাসে ছাদটি উড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। পরবর্তীতে নৌকায় করে তাদের উদ্ধার করা হয়।

দেশটির মধ্যাঞ্চলের বদুল্লা জেলার বিভিন্ন সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যে কারণে সেখানকার অনেক গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো যাচ্ছে না।

বদুল্লার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা মাসপান্না গ্রামের সামান কুমারা বলেন, ‘আমাদের গ্রামে দুজন মারা গেছেন। অন্যরা একটি মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে বাড়িতে অবস্থান করছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা গ্রাম থেকে বের হতে পারছি না,  আর কেউ ঢুকতেও পারছে না। কারণ সব রাস্তা ধসেপড়া মাটিতে বন্ধ হয়ে গেছে। খাবার নেই এবং পরিষ্কার পানিরও ঘাটতি আছে।’

কর্তৃপক্ষ বলেছে, দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে। বন্যায় বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে এবং পানি পরিশোধন কেন্দ্রগুলো ডুবে গেছে। অনেক এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

শনিবার ঘূর্ণিঝড় দিতওয়া দ্বীপদেশটির কাছ থেকে সরে গিয়ে উত্তরে ভারতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ভারতের চেন্নাই বিমানবন্দর ঝড়ের প্রভাবে ৫৪টি ফ্লাইট বাতিল করেছে। দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় প্রবল বর্ষণ ও তীব্র বাতাস বয়ে যেতে পারে।

মধ্যাঞ্চলের ক্যান্ডি জেলায় নতুন করে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। রাজধানী কলম্বো থেকে ১১৫ কিলোমিটার পূর্বের এই জেলার প্রধান সড়কের বিশাল অংশ পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

দেশটির সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি বিদেশে অবস্থান করা শ্রীলঙ্কানদের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য নগদ অর্থ পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে সরকার।

লঙ্কান কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হারিনি আমরাসুরিয়া কলম্বোভিত্তিক কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন এবং তাদের সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছেন। ভারত সবার আগে সাড়া দিয়ে দুটি বিমানে করে ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে। পাশাপাশি কলম্বোতে শুভেচ্ছা সফরে থাকা একটি ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ নিজেদের রেশন ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় দান করেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শ্রীলঙ্কায় প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং আরও সহায়তা পাঠানোর প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন।

২০১৭ সালের পর এটিই শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ওই বছর বন্যা ও ভূমিধসে ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। চলতি শতকের শুরুর পর থেকে শ্রীলঙ্কায় সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা গিয়েছিল ২০০৩ সালের জুন মাসে। সেসময় বন্যায় দেশটিতে ২৫৪ জনের প্রাণহানি ঘটে।