সাইদা খানম: আজীবন আলোকচিত্রি, মৃত্যুদিবসে শ্রদ্ধা
আইরীন নিয়াজী মান্না | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ০৪:১৬ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০২৫ সোমবার
সাইদা খানম: এক আজীবন আলোকচিত্রি
সাইদা খানম; দেশে প্রথম নারী ফটোগ্রাফার। তিনি যখন ক্যামেরা হাতে নেন, তখন এ দেশে কোনো মেয়ের পক্ষে ফটোগ্রাফার হওয়ার কথা চিন্তাও করা যেতো না। ঢাকা তখন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী হলেও এর চেহারা ছিল মফস্বল শহরের মতো। মেয়েরা তখন পথেঘাটে প্রকাশ্যে বের হতেন না। ঘোড়ার গাড়ির বন্ধ ঘেরাটোপে তাদের স্কুল-কলেজে যেতে হতো। সেই রকম একটি রুদ্ধ সময়ে ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে ঢাকা শহরের অলিগলি ঘুরে ছবি তুলতেন সাইদা খানম। বিষয়টা কিন্তু একবারে সহজ ছিলো না। এজন্য অনেক কাঠ-খর পোড়াতে হয়েছে তাকে। শত বাঁধা পেয়েও তিনি দমে যাননি। এগিয়ে গেছেন ভবিষ্যতের পথে।
আজ ১৮ আগস্ট এই কিংবদন্তি ফটোগ্রাফারের মৃত্যু দিবস। এদিন তাঁকে আমরা স্মরণ করছি শ্রদ্ধাভরে।
সাইদা খানম জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর নানার বাড়ি পাবনায়। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙা উপজেলায়। সাইদা খানমের বাবার নাম আবদুস সামাদ খান এবং মায়ের নাম নাছিমা খাতুন।
পাবনা শহরে যে কয়েকটি শিক্ষিত পরিবার ছিল, সাইদা খানমের নানার পরিবার তাদের একটি। তার নানা খান বাহাদুর মুহম্মদ সোলায়মান সিদ্দিক [১৮৭৩-১৯৫৩] ছিলেন ডিভিশনাল স্কুল ইন্সপেক্টর। ব্রিটিশ আমলে তিনি মেয়েদের জন্য পাবনাতে স্কুল স্থাপন করেছিলেন। নারী সমাজের অগ্রগতির জন্য তিনি খান বাহাদুর উপাধি পেয়েছিলেন। তৎকালীন নদীয়া জেলায় তিনিই প্রথম মুসলমান গ্রাজুয়েট। সাইদা খানমের নানি সৈয়দা রাহাতুন্নেসা খাতুনের [সম্ভাব্য ১৮৮৩-১৯১৩] হারমোনিয়াম ছিল। নানির এই সংগীত অনুরাগ সম্ভবত সাইদা খানমের রক্তের ভেতর প্রবাহিত হয়েছে। তার নানির মায়ের মা বাংলা, আরবি, উর্দু, ফারসি ও নাগরি–এই পাঁচটি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। মা হাসিনা খাতুনই [১৮৯৯-১৯৭৪] প্রগতিশীল ছিলেন। তিনি স্বদেশিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। হিন্দু বান্ধবীরা তার মায়ের কাছে অস্ত্র রেখে যেতেন। সেই অস্ত্র ব্যাগে ভরে বন্ধু যোগমায়া ঠাকুরকে সঙ্গে নিয়ে থানার সামনে দিয়ে নিরাপদে পাড় করে দিতেন।
সাইদা খানম ১৯৬৮ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরে আবার লাইব্রেরি সায়েন্সে স্নাতকোত্তর করেন ১৯৭২ সালে। পরবর্তীতে ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরিতে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি ছবি তুলতে শুরু করেন। তবে আলোকচিত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম হাতেখড়ি হয় বেগম পত্রিকাতে। বেগম পত্রিকায় তিনি কাজ শুরু করেন ১৯৫৬ সালে। পরবর্তীতে অবজারভার, মর্নিং নিউজ, ইত্তেফাক, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর ছবি ছাপা হয়।
এমনকি তিনি অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিত রায়ের ছবিতেও আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি সত্যজিত রায়ের তিনটি ছবিতে কাজ করেন। পাশাপাশি সত্যজিত রায়ের ছবিও তুলেছেন এই গুণী আলোকচিত্রী।
তিনি শুধু প্রকৃতি কিংবা সাংবাদিকতার প্রয়োজনে ছবি তোলেননি, ছবি তুলেছিলেন সময়ের প্রয়োজনে। যে কারণে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রাজনীতিবিদসহ শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের স্বনামধন্য ব্যক্তিদের তোলা ছবি তাকে বসিয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে।
এছাড়া তিনি তাদের ছবি তোলার পাশাপাশি তাদের সান্নিধ্যও লাভ করেছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, ইন্দিরা গান্ধী, রানি এলিজাবেথ, মাদার তেরেসা, মার্শাল টিটো, শেখ মুজিবুর রহমান, উত্তমকুমার, অড্রে হেপবার্ন, সৌমেন্দ্র নাথ ঠাকুর, কণিকা বন্দোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, জিয়াউর রহমান, মওলানা ভাসানী, বেগম সুফিয়া কামাল, মৈত্রেয়ী দেবী, মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, আশাপূর্ণা দেবীসহ অনেকে। এছাড়া পৃথিবীখ্যাত তিন চন্দ্রমানব নীল আর্মস্ট্রং, অ্যাড্রিন অলড্রিনস জুনিয়র ও মাইকেল কলিন্সের ছবিও তিনি তুলেছেন।
আগেই বলেছি প্রথম থেকেই আলোকচিত্রী হিসেবে পেশা গ্রহণের জন্য সামাজিকভাবে তাকে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি পাড়ি দিতে হয়েছে। সে সময় তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন খালা দেশের বিখ্যাত লেখক ও কবি মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, বড়বোন অধ্যক্ষা হামিদা খানম ও মহসিনা আলীসহ অনেকে। এছাড়া তাকে কাজ করার অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন এদেশের নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃত্ মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন ও ‘বেগম’ পত্রিকার সম্পাদিকা নূরজাহান।
সাইদা খানমের এক ভিন্ন মাত্রার ব্যক্তি হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান ছিল সে সময়ে ঢাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় স্টুডিও ‘জায়েদী স্টুডিও’র মালিক জায়েদী সাহেবের। সাইদা খানম যখন আলোকচিত্রীর পেশা গ্রহণ করেন, তখন এদেশে ছবি তোলার স্টুডিওর সংখ্যা খুবই কম ছিল। পুরো রাজধানী ঘুরে দুইটি স্টুডিওর খোঁজ পাওয়া যেত। এরমধ্যে ‘জায়েদী স্টুডিওই ছিল ঢাকা শহরের সবচেয়ে পরিচিত স্টুডিও। এই স্টুডিওর মালিক জায়েদী সাহেব সাইদা খানমের ফটো কম্পোজিশন সম্পর্কে স্পষ্ট ধ্যান-ধারণা দিয়েছেন। এছাড়া তিনি সাইদা খানমকে ছবি তোলা বিষয়ে প্রচুর বই পড়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তিনি আমেরিকা, জার্মানির ফটোগ্রাফি ম্যাগাজিন রাখতেন। এগুলো দেখেই ছবি তুলতে গিয়ে অ্যাপারচার এবং এক্সপোজার সম্পর্কে ভালো ধারণা পান সাইদা খানম।
নিজের কাজের পাশাপাশি সাইদা খানম বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান করে আলোকচিত্রে বাংলাদেশেকে তুলে ধরেন। তিনি সর্বপ্রথম ১৯৫৬ সালে আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। সাইদা খানম আলোকচিত্রী হিসেবে অংশ নিয়েছেন দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে।
১৯৭১ সালের আগে ঢাকার আজিমপুরে অস্ত্র হাতে প্রশিক্ষণরত নারীদের তোলা ছবি তাঁর আলোচিত কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বর্ষীয়ান এই আলোকচিত্র শিল্পীর তোলা ছবির প্রদর্শনী হয়েছে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, জাপান, ফ্রান্স, সুইডেন, পাকিস্তান, সাইপ্রাস ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে।
সত্যজিৎ রায়সহ দেশী-বিদেশী অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির ছবি তুলেছেন তিনি। শুধু বিদেশে নয়, ঢাকাতেও তিনি কয়েকবার একক ও দলীয় প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন।
সাইদা খানম ১৯৭৩ সালে কলকাতায় ‘অল ইন্ডিয়া ফটো জার্নালিজম কনফারেন্সে’ বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করে প্রচুর প্রশংসিত হন। ১৯৮২ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ এশিয়ান গেমসে তিনি বেগম পত্রিকার প্রতিনিধিত্ব করেন।
সত্যজিৎ রায়ের বিভিন্ন সময়ে তোলা ছবি নিয়ে তিনবার আয়োজন করেন একক প্রদর্শনী।
তিনি নিজের তোলা মাদার তেরেসার ছবির প্রদর্শনী করার আয়োজন করেও দেশে বিদেশে প্রচুর প্রশংসিত হয়েছিলেন। তিনি ২০০০ সালে দৃক লাইব্রেরিতে ‘শান্তি নিকেতন ও কণিকা বন্দোপাধ্যায়’ শীর্ষক প্রদর্শনী করেন।
তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ পেয়েছেন নানা পুরস্কারও।১৯৫৬ সালে জাপানে আন্তর্জাতিক কোলন পুরস্কার পান তিনি।এছাড়াও পেয়েছেন জাপানের ইউনেসকো অ্যাওয়ার্ড, অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার, বেগম পত্রিকার ৫০ বছর পূর্তি পুরস্কার এবং বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সম্মানসূচক ফেলো ও একুশে পদক।
ছবি তোলার পাশাপাশি লেখালেখিও করেন তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো-ধুলোমাটি, আমার চোখে সত্যজিত, স্মৃতির পথ বেয়ে, আলোকচিত্রী সাইদা খানমের উপন্যাসত্রয়ী। বাংলা একাডেমি ও ইউএনএবির আজীবন সদস্য তিনি।
২০২০ সালের ১৮ আগস্ট এক শরতের রাতে রাজধানীর বনাণীর নিজ বাসায় মৃত্যু হয় এই দেশবরেণ্য আলোকচিত্রীর।
- লিভার ভালো রাখতে যে ৩ খাবার খাবেন
- আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল
- খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান
- ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’
- বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে
- বন্যায় সহায়তা
বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী - পুতিনকে জড়িয়ে ধরে স্বাগত জানালেন মোদি
- মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু
- নাসরিনের অধিনায়ক সানজিদা, সাবিনা-মাসুরারা অন্য ক্যাম্পে
- বিয়ে নিয়ে প্রথম মুখ খুললেন রাশমিকা
- হেলিকপ্টারে বিমানবন্দর যাবেন খালেদা
- আজ মধ্যরাতে লন্ডনে নেওয়া হবে খালেদা জিয়াকে
- খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে সম্মতি কাতারের
- খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা
- খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায়
- পুতিনকে জড়িয়ে ধরে স্বাগত জানালেন মোদি
- নাসরিনের অধিনায়ক সানজিদা, সাবিনা-মাসুরারা অন্য ক্যাম্পে
- খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা
- বিয়ে নিয়ে প্রথম মুখ খুললেন রাশমিকা
- হেলিকপ্টারে বিমানবন্দর যাবেন খালেদা
- খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায়
- আজ মধ্যরাতে লন্ডনে নেওয়া হবে খালেদা জিয়াকে
- ‘পরিবেশ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করছে সরকার’
- আগামী নির্বাচন নিয়ে জাতি গর্ব করবে : প্রধান উপদেষ্টা
- খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে সম্মতি কাতারের
- তলবের ১০ মিনিটেই হাজির জেডআই খান পান্না, চাইলেন নিঃশর্ত ক্ষমা
- মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু
- বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে
- খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান
- ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’

